পুরো মহল্লার দেয়ালে আমার ছবি লাগানো। আমার ছবি দেখে, আমার চোখ কপালে উঠে গেলো । সকালে ঘুম থেকে উঠে চায়ের দোকানে যাওয়ার সময়ই চোখে পড়লো। ছবির নিচে সুন্দর করে লেখা, “আমি শারীরিক অক্ষম, কোন হ্নদয়বান মেয়ে বিয়ে করতে চাইলে নিচের নাম্বারে যোগাযোগ করবেন” এতক্ষণ মোবাইল অফ করাই ছিলো। যে মাত্র অন করলাম কল আসতে শুরু করলো। কয়েক’টি ম্যাসেজ আসলো, ম্যাসেজ ইনবক্সে ঢুকেই দেখি একটা মেয়ে লেখলো , “ভাইয়া, আপনি অক্ষম, বিয়ে করে কি হবে? আপনার ছবি দেখে প্রেমে পড়ে গেছি। কিন্তু অন্য কিছুও দেখতে হবে। আর পড়লাম না নিচে কি লেখা, দেখি আরেকটা নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসলো, তাতে লেখা, ” ভাইয়া, আপনার জন্য কষ্ট লাগছে। হারবাল খেলে যৌবন ফিরে আসে। চেষ্টা করে দেখেন। আমার নাম্বারটা সেভ করে রাখবেন। কখনো ভালো হলে যোগাযোগ করবেন ” এইসব দেখে রাগে মন চাচ্ছে ড্রেনে পড়ে মরে যাই। পানির দুর্গন্ধ না হলে মরে যেতাম। কলের পর কল আসতেছে। একটা কল রিসিভ করলাম।
_ভাই, আমিও বিয়ের আগে আমারও এমন ভয় ছিলো। পরে হারবাল খেয়ে ঠিক হয়েছি। আমার সাথে যোগাযোগ করবেন, ঔষধ পাঠিয়ে দিবো।
_ভাইরে, তোর শালিকে আমার কাছে বিয়ে দিস। পরে দেখবো ঔষধে ভালো হয়েছে কিনা!
লোকটা কল কেটে দিলো। মোবাইলটা বন্ধ করে রাগে গেলাম চায়ের দোকানে। কোন হারামজাদা এমন করলো এটাই ভাবছি। চায়ের দোকানদারও হাসি দিয়ে বলে,
_রানা মিয়া, তোমার এই সমস্যা। আগে জানতাম না। খুব কষ্ট লাগতেছে।
_আরে মিয়া কে এই আকাম করছে ছবি দিয়ে এটাই ভাবছি।
_থাক, আর লুকাতে হবে না। মেয়ে পেয়ে যাবে চিন্তা করো না।
আর কোন কথা না বাড়িয়ে চা খেতে খেতে, মোবাইলটা অন করে ফেসবুকে ঢুকলাম। দেখি কয়েকটা গ্রুপে আমার ছবি দিয়ে যার যা খুশী লিখে যাচ্ছে। লজ্জায় নিজের আইডির সব ছবি ডিলেট করে দিলাম। যাতে কেউ না চিনতে পারে। গ্রুপের কয়েকটা কমেন্ট পড়ে জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা। বেশির ভাগই মেয়েরা লেখলো,
“যৌবন ছাড়া জীবন, লবণ ছাড়া তরকারি”
“কষ্ট পর, সুখ আসে। যৌবন না থাকলে, হারাবালে আসে। “
” এই জীবনে আবার বিয়ের শখ, হা হা হা “
এত ছোটো করে কমেন্ট করছে সবাই। কেমন লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না। সব গ্রুপে পোস্টে হা হা রিয়েক্ট পড়তেছে হাজার হাজার। চা খেয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে বাসায় চলে আসলাম। আসার আগে রাস্তায় কয়েকটি পোস্টটার ছিড়ে ফেললাম। সব জায়গায় লাগানো, কয়টি ছিড়বো? একটা পোস্টার নিয়ে আসছি বাসায়। বাসায় আসতেই মা কেমন আঁড় চোখে তাকালো। বাবা ততক্ষণে অফিসে চলে গেছে। মায়ের মোবাইল নিয়ে বসে বসে টিপছিলাম। আত্মীয় সবাই কল দিতেছে। আমি রিসিভ করলে সবাই সান্ত্বনা দেয়। মন চাচ্ছে গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাই। কে করলো এই কাজ? ভাবতে ভাবতে নিজের লজ্জাজনক পোস্টার নিজেই দেখছি। হঠাৎ চোখে পড়লো পোস্টারে নিচে লেখা, “জননী কম্পিউটার” সাথে ছোটো করে নাম্বারও দেওয়া আছে। এইবার পাইছি। হঠাৎ কল আসলো আমার কাছের বন্ধুদের। কল রিসিভ করতেই বলে, “আন্টি রানার মন ভালো আছে? সে আবার কষ্টে কিছু না করে যেনো। আমরা আছি তাকে বিয়ে করাবোই ” আমি বললাম, “হারামজাদা তোরা এই কাজ করলি, আমার নামে এত বড় বদনাম “
_আরে দোস্ত আমরা করি নাই। তোর বাসার নিচে আছি, আমাদের কাছে আয়। কলটা কেটে বাসা থেকে বন্ধুদের কাছে গেলাম। আবির, রাজু আমাকে দেখে হাসছে।
_তোরা দুটা এই কাজ করলি?
_না’রে আমরা করি নাই। আমরাও ফেসবুকে দেখেই এখন আসলাম তোর বাসার কাছে। দেখি, সব রাস্তার দেয়ালে লাগনো। (আবির)
_চল পোস্টারে দেওয়া ছাপানো দোকানে।
দুপুর ঘনিয়ে আসছে। প্রেমিকাকে কলও দেই না, লজ্জায়। হয়তো ও জেনে গেছে এতক্ষণে। পুরো মহল্লায় হয়ে গেছে। ফেসবুকে সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। সেই দোকানে এসে হাজির আমরা তিন বন্ধু।
_ এই পোস্টার আপনার দোকানেই বানানো হয়েছে?
_জি, সমস্যা কি? (দোকানদার)
_আমার ছবি দিয়ে এইসব বানানো, আবার সমস্যা কি?(আমি)
_দেখেন আমার কাজ, পোস্টার বানিয়ে টাকা নেওয়া আর কিছু না।
_কে বানালো নাম বলেন? (আবির)
_সিক্রেট, এইসব বলা যায় না। (দোকানদার)
রাজু রেগে গিয়ে দোকানদারের কলার ধরে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে ফেললো। দোকানদার ভয় পেয়ে গেছে। কোন অঘটন ঘটে যাবে।
_রিপা নামের একটা মেয়ে বানিয়েছে। তার নাম্বার আছে, কলেজ রোডে, বাসা নাম্বার-২০০ (দোকানদার)
রাজু কলার ছেড়ে দিলো দোকানদারের।
_রানা, রিপা এমন করলো!(আবির)
_আসল ঘটনা কি তা রিপার বাসায় চল দেখে আসি। (রাজু)
আমি ভাবতে পারছি না রিপা এমন করবে? আমার প্রেমিকা হয়ে! রিপাদের বাসায় আসতেই আমাদের বসতে দিলো। আসার পথে সবাই কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কাজের মেয়ে আমাদের চা দিয়ে গেলো। রিপা আসলো বসে মুচকি হাসি দিয়ে,
_সবাইকে কেমন টেনশনের ভিতর লাগছে?
_তুমি কিছুই জানো না? (আমি)
_কি হয়েছে?
_এই দেখো পোস্টার।
_এই কথা, আমিই বানিয়ে সব জায়গায় লাগিয়ে দিয়েছি।
_তুমি কেনো এত বড় সর্বনাশ করলে?
_প্রথম কোন মেয়ের সাথে টাংকি মারতে পারবে না।
সবাই তোমার থেকে দূরে থাকবে। আমার কোন ভয় নাই হারানোর। রিলাক্স মোডে থাকবো সবসময়। আর বড় কথা হলো, আমার সেলিব্রিটি হওয়ার খুব শখ। তাই এক ঢিলে দু-পাখি শিকার। তোমার নামে এইসব লিখে লাগিয়ে দিলাম রাস্তায় রাস্তায়। ফেসবুকেও সবাই তোমায় চিনে গেছে। মিনি সেলিব্রিটি হয়ে গেছো তুমি। এখন তোমায় বিয়ে করে ফেলবো আমি। আর সবাই বাহ্ বাহ্ দিবে। অক্ষম জেনেও বিয়ে করছি। আমিও সেলিব্রিটি হয়ে যাবো মহত্ত্ব মনভাব থাকায়, সবাই বলবে আমার মন অনেক বড়ো । বুদ্ধিটা কেমন হলো? রিপার কথা শুনে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেছি। জ্ঞান ফিরলে জানাবো বিয়ের কথা।
গল্পের বিষয়:
গল্প