আমার কাজিন রাইসার জন্মদিনের পার্টিতে এসে বেশ অবাক হয়ে গেলাম । রংবেরঙ ঝাড়বাতির আলোক সজ্জায় দামি সুট কোটের ভিড়ে টি শার্ট পড়া আমাকে বেমানান দেখাচ্ছে। তাই আমি বাধ্য হয়ে চুপটি করে এক কোণায় বসে রইলাম। একটু পরে খিয়াল করে দেখলাম মামা আর মামি আমার দিকে এগিয়ে আসছে। তাদের চোখ মুখ বেশ গম্ভীর টাইপ, আমার উপস্থিতি যে মামা মামি ভালোভাবে নেয়নি তার দৃষ্টান্ত ওনাদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। অবস্য কোনো মা বাবাই চায় না তাদের মেয়েকে যে ছেলে ভালোবাসে সেই ছেলে সে বাড়ির কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাক। তবে আমি মামার ভাগ্নে হবার কারণে আমাকে বের হয়ে যেতেও বলতে পারবে না এজন্য হয়তো তাদের মুখ টা গম্ভীর করে রেখেছে।
মামা আমার সামনে দাড়াতেই সালাম দিয়ে বললাম মামা কেমন আছেন.? মামা সালামের জবাব না দিয়েই অন্য দিকে মুখ করে চলে গেলেন অন্যান্য আত্বীয় স্বজনদের দিকে। আমি মাথা নিচু করে আবারো বসে পড়লাম। আসলে বর্তমান যুগের আত্বীয়তার সর্ম্পক গুলা অক্ষ্ণ রাখতেও সয় সম্পত্তি, বাড়ি, গাড়ি থাকা বেশ জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি যদি মধ্যেবিত্র হয়ে থাকেন, তবে আপনাকে অনেকেই সম্পত্তির মাপকাঠিতে আত্বীয় বলে পরিচয়ও দিতে চাইবে না। না দেখার অভিনয় করে অন্যদের সাথে গিয়ে হাত মিলাবে। যেমন টা আমার আর মামার ক্ষেত্রে ঘটলো। সে যাইহোক একটু দূরেই লক্ষ্য করে দেখলাম রাইশা কার সাথে যেন হাতে হাত রেখে কথা বলতেছে।বিষয় টা বুঝার জন্য গুটি গুটি পায়ে রাইশার সামনে এসে দাঁড়ালাম। রাইশা আমার উপস্থিতি বুঝতে পেরে ছেলেটির হাত ছেড়ে দিলো। আমি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে রাইশাকে বললাম,
:- রাইশা তোমার সাথে আমার কিছু দরকারি কথা আছে একটু এ দিকে আসবা প্লিজ। ছেলেটা কে রাইশা.? রাইশা কিছুটা কাপা কন্ঠে জবাব দিলো
:- ইনি বাবার বন্ধুর ছেলে, বাবা ওনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। রাইশার কথা শুনে মনে হলো পা থেকে আমার মাটি সরে যাচ্ছে। তারপরেও আমি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েই বললাম,
:- মানে কি এসবের.? তুমি তো এই ব্যাপারে আমাকে কখনো কিছু বলোনি.? জবাবে রাইশা বললো,
:- আমিও জানতাম না, তোমার আর আমার সর্ম্পক টা জানাজানি হবার পরেই আমি জানতে পেরেছি। আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,
:- তার মানে তুমি বিয়েতে রাজি হয়ে গেছো। রাইশা কিছুটা মুখ বাকা করে জবাব দিলো
:- হ্যাঁ আমি রাজি হয়েছি। তুমি তো জানোই আমাদের সর্ম্পক টা কখনোই আমার পরিবার মেনে নিবে না। আমার মনে হলো এর পরেও অনিশ্চিত একটা সর্ম্পক রাখা আমাদের ঠিক না।এতে তুমিও খুশি থাকতে পারবে না আমিও পারবো না। এজন্য আমাদের সর্ম্পক সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ঠিক না। ভালো হয়েছে তুমি আমাদের একসাথে দেখে ফেলেছো। আমি বললাম,
:- পাগলের মতো এসব কি বলতেছো রাইশা , একটা বার ভেবে দেখেছো তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো। কি নিয়ে বাঁচবো আমি.? রাইশা বললো,
:- দেখো মানুষকে সুন্দর ভাবে বেচেঁ থাকতে হলে অনেক সময়ই স্বার্থপর হতে হয়, আর এতে দোষের কিছুই নেই। তাতে কে মরে গেল কে বেচেঁ থাকলো এসব ভাবলে চলবে না। সুযোগ বার বার আসে না। রাইশার মুখের দিকে তাকিয়ে খিয়াল করে দেখলাম, সে কথা গুলো মন খুলে বলতেছে।
সে যে আমাকে ঠকালো তাতে রাইশার কোনো অনুসূচনা ফিল হচ্ছে না বরঞ্চ সে আমাকে ঠকাতে পেরে দারুণ খুশি হয়েছে।আমি রাইশাকে জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসি, আমি চাই না আমার জন্য রাইশার সুখের স্বপ্ন গুলো ভেঙে যাক। যাক না আমার স্বপ্ন গুলো ভেঙে তাতে কি, আমি যাকে ভালোবাসি সে তো সুখি থাকবে, তাতেই আমি খুশি। সবার স্বপ্ন তো আর পূরন হবার না। আমিও না হয় না পাবার দলেই থাকলাম। গেট দিয়ে বের হতে হতে ভাবতে লাগলাম মানুষ কতই না স্বার্থবাদি হয়, একটুখানি সুখ আর বিলাসিতার জন্য সাড়ে তিন বছরের ভালোবাসাও মানুষজনের কাছে অত্বহীন হয়ে দাঁড়ায়। তারা একটুখানি চিন্তা করেও দেখে না অপর পান্তের মানুষ টা এটার জন্য কুড়ে কুড়ে শেষ হয়ে যেতে পারে। সত্য কথা বলতে বর্তমান যুগে বিশুদ্ধ প্রেম ভালোবাসা নেই বললেই চলে। এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ৯৯.৯৯ লোক বিনা স্বার্থে মন থেকে ভালোবাসতে পারে না।
প্রায় সব্বাই নানা স্বার্থে একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়। আবার অনেকক্ষেত্রে আশেপাশে একটু খানি লক্ষ্য করলেই দেখা যায় একটা মেয়ের পাঁচ থেকে আটটা পযন্ত বয়ফেন্ড থাকে। শুধু যে মেয়েদের ক্ষেত্রে এমন টা হয় ব্যাপার তা নয় এটা ছেলেদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে হয়ে থাকে। কখনো ভাবিনি আমার ভালোবাসাতেও স্বার্থ নামের বীজের জন্য সব কিছু ভেঙে চুড়ে তচনচ হয়ে যাবে। তবে কি স্বার্থ ও ভালোবাসার একটি অংশ, নাকি মানুষ মাত্রই স্বার্থপর হয়.? উত্তর মিলাতে পারছি না ডিপ্রেশন বেড়ে যাচ্ছে। চার বছর পর_ অফিস শেষ করে ত্রিশ মিনিটের মতো ডাক্তারের চেম্বারের সামনে বসে আছি। এমন সময় নজর গেলে পাশের সীটে বসা মেয়েটার দিকে। লক্ষ্য করে দেখলাম মেয়েটি আর কেহ না সয়ং রাইশা। রাইশার দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখলাম তার সে রূপের বাহার আর নেই, চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে শরীরের অবস্থাও খুব একটা ভালো না আগের থেকে অনেকটা রোগা হয়েছে। সম্ভাবত ঠিকমতো ঘুমাতে পাড়ছে না র্দুচিন্তা তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। আমি নিরবতা ভেঙে বলে উঠালাম ,
:- আরে রাইশা তুমি এখানে?
রাইশা আমার দিকে ঘুড়ে তাকাতেই ভিতর থেকে ডাক্তার রাইশাকে ডেকে পাঠালো। রাইশার আম্মু রাইশা কে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করলো। আমিও ব্যপার টা বুঝার জন্য ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করলাম। ভিতরে গিয়ে বললাম আসতে পারি ম্যাডাম। ডাক্তার আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন,
:- জ্ব্রি স্যার আসেন আমি বললাম,
:- ডাক্তার ম্যাডাম আমি থাকাতে ওনাদের আবার কোনো অসুবিধা হবে না তো.? জেরিন বললো,
:- আরে না এসো তো। এবার জেরিন রাইশার আম্মুকে বললো
:- সরি আন্টি, আপনাদের অনুমতি না নিয়েই আমার স্বামিকে প্রবেশ করার অনুমতি দিলাম, অনেক্ষণ বসাই রাখছিলাম তো তাই আর কি। রাইশাদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওরা আমার দিকে অদ্ভিদ ভাবে তাকিয়ে আছে। আমি জেরিন ( ডাক্তার) এর পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকালাম। জেরিন রিপোর্ট চেক করে নিয়ে বললো,
:- কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি,
দেখেন সম্ভাবত প্রথম বাচ্চাটি নষ্ট করার সময় আপনার সন্তান ধারন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। আপনি আর কখনো মা হতে পারবেন না। এটা শুনার পর রাইশা রিপোর্ট নিয়ে কান্না করতে করতে জেরিনের চেম্বার থেকে বের হয়ে গেল। আমি জেরিন কে বললাম কি হয়েছে.? জেরিন বলল, মেয়েটার যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল সে ছেলের সাথে অবৈধ সর্ম্পক করার ফলে বিয়ের আগেই প্যাগনেন্ট হয়েছিল। তখন সন্তান নষ্ট করার জন্য সে মা হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে কিন্তু কষ্টের ব্যাপার টা হলো মেয়েটার স্বামী মেয়েটাকে বলে দিয়েছে সে সন্তান জন্ম দিতে না পারলে তার স্বামী আরেকটা বিয়ে করবে। আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললাম ,
:- তুমি জানো মেয়ে টা কে.? জেরিন বললো,
;- হুম জানি.। মেয়েটা তোমার এক্স গ্যালফেন্ড + কাজিন। আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,
:- আমি তো কখনো তোমায় রাইশার পিক দেখাইনাই বলিও নাই যে সে আমার কাজিন তারপরেও কিভাবে জানলে.?
জেরিন মুসকি হেসে বললো,
:- তোমাদের পুড়ানো আলবাম দেখে জেনেছি। আমি কিছুটা রাগ করে বললাম
:- তোমার সাথে আমার কথা নেই যাও এই বলে বাহিরে হাটতে লাগলাম। পিছন থেকে জেরিন মুসকি মুসকি হাসছে আর বলছে সরি। আমি রিক্সায় উঠে জেরিন কে তুলে নিয়ে আর কানে কানে বললাম
:- সরিতে কাজ হবে না, আমি বাবা হতে চাই।
জেরিন আমার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে বললো যা দৃষ্টু আমি নিজেই একটা বাচ্চা মেয়ে। আমি জেরিনের কথা শুনে জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। জেরিন এবার আমার হাসি থামিয়ে দিয়ে বললো,:- আচ্ছা কখনো যদি জানতে পাও আমিও রাইশার মতো তোমাকে বাবা ডাক শুনাতে পারবো না তখন কি করবে তুমি.? আমি রাস্তায় জেরিনের সাথে আর কোনো কথা বললাম না চুপ করে রইলাম। আমার চুপ করা দেখে জেরিন ও অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। বাসায় এসে জেরিন রান্না ঘরে রান্না করতে গেলো। আমি একটু পর রান্না ঘরে গিয়ে পিছন থেকে বললাম কেউ একজন চাইলে কিন্তু আমিও রান্নায় সাহায্য করতে পাড়ি। জেরিন কোনো কথা বললো না চুপ করেই দাঁড়িয়ে রইলো।
এবার আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না দৌড়ে গিয়ে জেরিন কে কোলে তুললাম। আর কানে কানে বললাম ভালোবাসি ভালোবাসি। আমার বউটা যদি কখনো মা নাও হতে পারে তবুও এ ভালোবাসা কমবে না বরং প্রতিদিন এ ভালোবাসা বেড়েই যাবে। জেরিন আমাকে চিমতে কেটে বললো, হুম জানি স্যার এখন ছেড়ে দাও অনেক কাজ পড়ে আছে। আমি বললাম না, একবার তো বাবা হবার চেষ্টা আমায় করতেই হবে। এসো চেষ্টা করি, এই বলে আমি জেরিনের খুব কাছে চলে আসলাম। জেরিন চোখ বন্ধ করে নিলো। এখন মাঝ রাত ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি জেরিন আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলছে ভালোবাসি ভালোবাসি,,
গল্পের বিষয়:
গল্প