ইন্দ্রলুপ্ত

ইন্দ্রলুপ্ত
ডুবাই থেকে ৮ বছর পর দেশে ফিরলাম।দেশে আসতে না আসতে আমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু হয়ে গেলো। তার উপর শীত মৌসুম চলছে। শীত মানে যেনো বিয়ের জোয়ার। কন কনে শীতের হওয়া, ভারী ভারী জামা কাপড় পড়া।
একদিন গোসল করে ৭ দিন পর বলা এইতো গত সপ্তাহ গোসল টা করলাম যেনো মনে হলো তার কথা শুনে গতকাল গোসল টা করেছে। এইসব কি আমার বন্ধুরা করে নাকি সবার কে যানে। তার উপর রয়েছে ভোরবেলা গরম গরম পিঠা সাথে শশুর বাড়ির আপ্যায়ন তো আরও বেশী মজাদার বলে অনেকের কাছ থেকে শুনেছি।
ছোটো থেকে আমার ভিতরে অজানা একটা রহস্য রয়ে গেলো সেইটা হলো মানুষ শীতকাল আসতে না আসতে সব অবিবাহিত প্রাপ্ত বয়স্ক বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যায়। তবে আমি কিন্তু এইসবে নেই বাবা-মা জোর করাতে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়েছি। আম্মা মেয়ে দেখে আর ভাবি কে সাথে করে নিয়ে যায় মেয়ের ভালো মন্দ যাচাই করার জন্য। আম্মার ধারনা একটা মেয়ে আর একটা মেয়ের ভালো খারাপ মূহুর্তে মধ্যে বুঝতে পারে সেজন্য হয়তো আধুনিক যুগে আধুনিক ভাবি কে নিয়ে আমার জন্য মেয়ে দেখা। আমি ঘরে বসে সারাদিন সময় কাটাতে হচ্ছে সব বন্ধু বান্ধব কাজে ব্যস্ত কারো সাথে তো তেমন কথা হয় না। সব মিলিয়ে একাই দিনকাল কাটাচ্ছি। আম্মা আজকে ও একটা মেয়ে দেখতে গিয়েছে সাথে ভাবি। ঘন্টা খানিক পর কল আসে আমার মোবাইলে,,,
– কি হয়েছে আম্মা কল দিলা যে? আম্মা উত্তেজিত কন্ঠে বলল,,
– তোরে তোর ভাবি কি ইমু নাকি রিমু মধ্যে ছবি দিবো দেখতি। আমি আম্মার কথা শুনে একটু হাসি দিয়ে বললাম,,,
– কার ছবি দিবে?
– মেয়ের ছবি দিবে। মেয়েটা মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর। দেখলে তুই রাজি হয়ে যাবি।
– আচ্ছা দেখে নেই আগে।
কিছুক্ষণ বসে ভাবছিলাম এতো প্রশংসা মেয়েটার যেহেতু তাহলে হয়তো মেয়েটা অনেক সুন্দর হবে ভাবতে ভাবতে মোবাইলে একটা ছবি আসলো। ইমু টা ওপেন করে যেই ছবি টা দেখলাম এক সেকেন্ড এর জন্য চোখ ফিরাইতে পারলাম না। মেয়েটার ছবি দেখতে দেখতে ১২ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেলো। ঠিক তখনই ভাবির মোবাইল থেকে পূনরায় কল আসলো। আমি মোবাইল টা কানে দিয়ে কিছু বলার আগেই ভাবি বলল,,,
– রাসেদ তুমি জলদি ফ্রেশ হয়ে নতুন যে শার্ট প্যান্ট রয়েছে সেইগুলো পরে চলে আসো এখানে। আমি কিছুটা বিস্মিত কন্ঠে বললাম,,
– হঠাৎ এতো জরুরি তলব? ভাবি হাসিমুখে জবাবে বলল,,
– আজকে মেয়েদের পরিবার তোমাকে দেখবে। জলদি চলে আসো একটু স্মার্ট হয়ে। আর আমি ঠিকানা টেক্সট করছি সেই ঠিকানা চলে আসো। ভাবির কথামতো একটু সেজেগুজে তৈরি হয়ে নিলাম। ভাবির পাঠানো ঠিকানা উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। একটা রিক্সা করে মেয়েদের বাড়ির নিচে নামলাম। ভাবি আগে থেকে নিচে উপস্থিত ছিলো। ভাবি আমাকে দেখে বলে উঠলো,,,
– তোমাকে আমি বলছি একটু সেজেগুজে আসতে সেইটা ও পারলে না।
– কি বলছ ভাবি এই প্রথম তোমার কথামতো সেজেগুজে আসলাম। আর তুমি কি না বলছ সেইটা হয় নি।
– কি সাজুগুজু করছ শুনি?
– শার্ট পরলাম হাতে ঘরি সুন্দর একটা জিন্স প্যান্ট আর কি বলো? এই বলে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। ভাবি আমার কথা শুনে কিছুটা বিচলিত কন্ঠে বলল,,
– থাক আর বলতে হবে না বিয়ের আগে যার সব পড়ে গেছে তাঁকে আর বলে লাভ কি? একটু যত্ন নিলে কি এমন হতো আল্লাহ যানে আজকে যদি এই টাক দেখে কেউ কিছু বলে। আর দাঁড়ি গোঁফ গুলো কি একটু কেটে আসা যেতো না?
– ভাবি এই টাক আমার অহংকার। টাক নিয়ে কেউ কিছু বললে করলাম না এই বিয়ে। আর দাঁড়ি আমার নবীর সুন্নত।
– হয়েছে হয়েছে আর ডং করতে হবে না পুরো মাথা জুড়ে স্টেডিয়াম করে রেখেছে আবার বলে অহংকার। দাঁড়ি ঠিক
আছে গোঁফ কিসের জন্য? তামিল হিরো সাজতে চাও তোমার দ্বারা সম্ভব না। চলো উপরে দেখি কি বলে মেয়ের পরিবার। এই বলে ভাবি আর আমি দু’জনে উপর উঠলাম কলিং বেল দিতে দরজা খুলে একটা মহিলা আমার দিক হা করে তাকিয়ে আছে। আমি কিছুটা বিস্মিত হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে সালাম দিলাম। পরে রুমে গিয়ে বসতে কে যেনো বলে উঠলো ছেলের মাথায় কোনো চুল নাই। তার উপর পুরো জঙ্গলের মতো দাঁড়ি এই ছেলের কাছে তোর মেয়ের বিয়ে দিলে তোর মেয়ে শেষ হয়ে যাবে। কথাটা কানে আসতে আমি মা’কে বললাম চলো এইখান থেকে। আমি উঠে যে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলাম কে যেনো পিছন থেকে ডেকে বলল,,,
– শুনেন। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি সেই মিষ্টি মেয়েটা যার ছবি কিছুক্ষণ আগে ভাবি আমাকে পাঠিয়েছে। আমি কিছুটা রাগী স্বরে বললাম,,,
– এই অপমানে কি আপনাদের হয় নি নাকি আরো করবেন? মেয়েটা করুণ স্বরে বলে উঠলো,,
– আমি খুবই দুঃখিত তবে আমার আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।
আমরা কি কিছুক্ষণ কথা বলতে পারি? মেয়েটার করুণ কন্ঠ শুনে ভাবি,মা দু’জনে বলল যা কথা বল। আমিও কথা বলার জন্য একটা রুমে চলে গেলাম। আমি মেয়েটার দিক তাকিয়ে আছি কি সুন্দর চোখ কি সুন্দর চুল পুরো মুখ জুড়ে মায়াবী ছোঁয়া। ঠিক তখনই মেয়েটা আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল,,,
– আই লাভ টাক।
আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম। এই মেয়ে কি বলছে কিছুই বুঝতে পারলাম না। পূনরায় আবারও শুনবার জন্য ইতস্ততভাবে জিজ্ঞেস করলাম,,,
– কি বললেন?
– বলছি আপনার টাক টা খুব ভালো সাথে আপনিও।
– আপনার সমস্যা হবে না?
– আরে নাহ,,, সমস্যা কিসের?
আমি এই কথা শুনে ও-ই দিনের ভিতরে মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলি তবে এখনো নাম টা জানা হলো না মেয়েটার।
মেয়েটাকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমি রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে ভেবে যাচ্ছি এই যুগে এতো ভালো মেয়ে পাওয়া ভ্যাগের ব্যাপার। আর যাই হোক আমার টাকের জন্য সব হয়েছে যদি পারতাম তাহলে আজ আমার টাক টা কে একটা কিস করতাম। বাহিরে দাঁড়িয়ে ভাবছি গিয়ে নাম টা জিজ্ঞেস করবো। দরজা খুলে দেখি মেয়েটা মস্ত বড় এক ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। আমার পায়ের শব্দ শুনে মেয়েটা খাট থেকে নেমে আসলো। আমি কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিক হঠাৎ করে মেয়েটা আমার পা ধরে সালাম করলো। আমি আরও বিস্মিত হয়ে যায় এই যুগে এই মেয়ে পাওয়া আমার টাকের সব কেরামতি। সাথে সাথে ফিল্মের একটা ডায়লগ বললাম”তোমার স্থান আমার পায়ে না আমার বুকে” এই বলে যেই বুকে টান দিয়ে ধরতে যাবো ঠিক তখনই কারেন্ট টা চলে যায়। পরে মেয়েটা বলল,,,
– আজকে আমার খুব ক্লান্ত লাগতেছে। আমি শুয়ে পরি?
– ঠিক আছে শুয়ে পরো।
আমি কেমন বোকা মেয়েটার নাম আর জিজ্ঞেস করা হলো না। পরে ভাবলাম সকাল হলেই জিজ্ঞেস করে নিবো। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মেয়েটা আমার পাশে নেই আমি ভাবলাম হয়তো রান্না সাহায্য করতে গেছে। ফ্রেশ হয়ে খাটে বসে যখন আলমারি দিক তাকিয়ে দেখি সবকিছু এলোমেলো হয়ে পরে আছে। নগদ ৭ লক্ষ টাকা সাথে ডুবাই থেকে নিয়ে আসা গহনাপত্র কিছুই নেই। পরে মা’কে জিজ্ঞেস করলাম,,,
– মেয়েটা কোথায়?
– মেয়ে কোথায় মানে? আমরা তো রান্নাঘরে ছিলাম আমি আর তোর ভাবি। আমরা ভেবেছি তোর স্ত্রী শুয়ে আছে।
তাহলে কি মেয়েটা এইসব করেছে? আমি পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজলাম কিন্তু কোথাও মেয়েটাকে খুঁজে পেলাম না। পরে বিছানার এক কোনায় ছোট্ট করে একটা চিরকুট লিখা। তা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম। প্রথমে আমার সালাম নিবেন। আপনার ভালোবাসা নিয়ে মজা করার সময়টুকু আমার কাছে নেই সেজন্য চলে গেলাম। আপনার টাকা আছে তবে টাক টার জন্য খুব বিশ্রি লাগে সেইটা বলবো না। আসলে আমি পুরো দমে এই পরিকল্পনা করেছি। যাকে বিয়ে করবো তার থেকে সব টাকা নিয়ে পালিয়ে যাবো এরপর আমার বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করে ২ জন সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা করে জীবন যাপন করবো।
এখন সেই পরিকল্পনা যে আপনি পড়বেন সেইটা তো আর জানা ছিলো না। অতএব সবকিছুর জন্য দুঃখিত আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেনো আপনার টাকা দিয়ে আমরা স্বাবলম্বী হয়ে চলাফেরা করতে পারি। আর যদি বাবা-মায়ের কাছে যান এইসব বলতে তাহলে পূনরায় আবারও বোকা হবেন কারন যাদের কে আমি বাবা-মা বলেছি তারা আমার পরিকল্পনার অপরিচিত কিছু সদস্য তাঁদের হিসাব মিটিয়ে দিয়েছি এখন তারা কোথায় সেইটাও জানি না। ভালো থাকবেন আর দোয়া করি আপনার টাকের ভাগ্যে একটা ভালো মেয়ে জুটুক। আল-বিদা। খুব রাগ নিয়ে মায়ের দিক তাকিয়ে নাক ফুলিয়ে জোরে জোরে মা’কে বলতে লাগলাম আমি বার-বার বলছি বিয়ে করবো না আর তোমাদের জন্য আজ এতো বড়ো ক্ষতি টা হলো।
এমন সময় আম্মা এসে ডাল খুঁটনি দিয়ে ২ টা পাছায় দিতে না দিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি ঘুম থেকে উঠতে না উঠতে মা বলতে লাগলো এ-তো জোরে চিৎকার দিয়ে কি বলছিস? আমি ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলাম কিছু না তবে কি এতোক্ষণ যাবত স্বপ্ন দেখলাম। মা এসে আমাকে বলল তোর টিফিন রেডি স্কুলের জন্য দেরী হয়ে যাচ্ছে জলদি যা। তার মানে আমি সবেমাত্র স্কুলে পড়ি। ভালো হয়েছে বিয়ের আগে থেকে সর্তক হয়ে গেলাম আর টাক হওয়ার আগেই বিয়ে টা করে নিতে হবে। টাকা পয়সা করতে করতে মাথায় পরে টাক, এরপর বেচারা বিলেত ঘুরে ও বিয়ের পরে না ডাক। টাকের আগে বিয়ে, তা না হলে বউ ভাগবে টাকা নিয়ে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত