রাত ১১টা বেজে গেল। নিশি এখনো আসছে না। আমি খাবার সাজিয়ে টেবিলে বসে আছি। নিশি প্রায়ই দেরি করে বাসায় ফিরে। ইদানিং একটু বেশিই দেরি করে। আমি একলা মানুষ বাসায় থাকি, সে খেয়াল একদম তার নেই।
স্ত্রীর আগে স্বামীর খেতে নেই। যুগ যুগ ধরে এমন নিয়ম চলে আসছে। আর কত অবহেলা সইবে পুরুষ জাতি? ঘর বালক হয়ে আর কত দিন রইবে তারা? আর কতদিন মুখ বুজে নারীর অত্যাচার সইবে? কয়েকবার ফোন দিয়েছিলাম। নিশি ফোন কেটে দিয়ে ম্যাসেজ দিয়েছে, ”ফিরতে লেট হবে। জরুরি কাজ করছি। ফোন দিয়ে বিরক্ত করবে না” ভালো ফ্যামেলি, উচ্চ শিক্ষিত, ভালো চাকরির মেয়ে দেখে ফ্যামেলি বিয়ে দিল। বিয়ের পর তিনমাস খুব ভালো কাটছিল সময়। নিশির অফিস ছুটি হবার পরই বাসায় চলে আসত। ছুটির দিনে ঘুরতে নিয়ে যেত। শপিং করে দিত। কিছুদিন ধরে নিশির কি যেন হয়েছে। অফিস ছুটি হয় বিকাল ৫টায়। এরপর সে কোথায় যায়, কি করে, তা আমি জানি না। জিজ্ঞেস করলেই ঝারি মেরে বলে, “কাজ ছিল। এত কৈয়ফত চাচ্ছ কেন! নারী মানুষ, অফিসের বাইরেও হাজারো কাজ থাকে। শুধু স্বামী নিয়ে বসে থাকলেই কি চলবে।”
ইদানিং নিশিকে প্রায়ই দেখি ফিস ফিস করে কার সাথে যেন কথা বলে। আমি জানতে চাইলে বলে, অফিসের দরকারী ফোন। সেদিন রুমে ফোন রেখে নিশি গোসল করছিল, হঠাৎ একটা এসএমএস এলো। দেখি, বিল্লাল নামে এক ছেলে ম্যাসেজ করছে “তোমার স্বামীকে ডিভোর্স দাও, আমি তোমাকে অনেক সুখ দিব। মিস ইউ ডিয়ার, উম্মা উম্মা চু চু চু কয়েকদিন আগে বললাম, ‘চলোনা কিছু কেনাকাটা করি। অনেকদিন হলো শপিং করিনা।’ নিশি ধমক দিয়ে বলল, ‘এত শপিং শপিং করো কেন। ঘরে থাকো, বছরে একটা লুঙ্গী আর ছেন্টো গেঞ্জীই যথেষ্ঠ।’ নিরবে মুখ বুজে সবই সহ্য করতে হয়। কাউকে কিছু বলতে পারিনা।
সেদিন বাবাকে ফোন করে সবকিছু বলেছি। বাবা আমাকে সান্তনা নিয়ে বলল, “মন খারাপ করিসনা। কি আর করবি, পুরুষ মানুষ হয়ে জন্মিয়েছিস, এটাই পুরুষের জীবন। সবকিছু মেনে নেওয়াই পুরুষের ধর্ম। বিয়ের পর স্ত্রীর বাড়িই স্বামীর একমাত্র সম্বল। তোর মায়ের অফিস থেকে আসার সময় হয়ে গেছে, চুলায় রান্না বসাবো। পরে ফোন করিস।” বলেই বাবা ফোন রেখে দিল। খাবার টেবিলে বসে থাকতে থাকতে হালকা চোখ লেগে গেছিল ঘুমে। হঠাৎ খেয়াল হলো, কলিং বেল বাজছে আমি দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দেখি, নিশি এসেছে। নিশি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে ঝাজালো কন্ঠে বলল, “জমিদারের ব্যাটা হইছ! কানের ছিদ্র ছোট হইয়া গেছে! কলিং বেলের আওয়াজ কানে ভিতরে যায়না! দরজা খুলতে এত সময় লাগে?” আমি মিন মিন করে বললাম, ‘চোখটা লেগে গেছিল, তাই দরজা খুলতে দেরি হয়েছে।’
নিশি আমাকে দরজার সামনে থেকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকল। বুঝতে পারলাম, নিশি আজকেও মদ খেয়ে এসেছে।” নিশি ঢলতে ঢলতে ঘামে ভেজা শাড়ী, ব্লাউজ, পায়ে জুতো নিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। কি আছে এই মদের মধ্যে। মানুষ এত বাজে জিনিস কি করে খেতে পারে আমার মাথায় আসেনা। মদের এমন পচা গন্ধ কি করে সহ্য করে কে জানে। আমি আস্তে আস্তে নিশির ঘামে ভেজা শাড়ী, ব্লাউজ চেঞ্জ করে দিলাম। প্লেটে ভাত নিয়ে বিছানায় নিয়ে বললাম, ‘উঠো, খেয়ে নাও।’ নিশি মাতাল কন্ঠে বলল, ‘বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। খুদা নেই।” আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়েছে। বাথ রুমে গিয়ে অনেকক্ষন কান্না করলাম। আমার জীবনটা কেন এমন হলো। কি এমন পাপ করেছিলাম, যার জন্য জীনটা এমন হয়ে গেল। কি চেয়েছিলাম, আর কি পেলাম।
নিশির প্রিয় খাবার, মুলা দিয়ে রুই মাছ ঝোল। কত যত্ন করে রান্না করেছিলাম, এক সাথে খাব বলে। কিন্তু পোড়া কপালে কি সে সুখ আছে। চোখ মুখে জল দিয়ে, না খেয়ে শুয়ে পড়লাম। নিশি ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। খুদায় ঘুম আসছে না আমার। বালিশে এপাশ ওপাশ করতে লাগলাম। কি পেলাম এই সংসারে এসে, অবজ্ঞা, অবহেলা, লাঞ্ছনা ছাড়া। কেন জীবনটা রাজু, মামুন, রাকিবের মতো হলো না চোখের জলে বালিশ ভিজে গেল। এভাবে আর কত দিন চলবে। আর কত পুরুষ এভাবে নির্যাতন সইবে। কতদিন? কতদিন?
গল্পের বিষয়:
গল্প