ঝগড়া সমগ্র

ঝগড়া সমগ্র
বরের সাথে ঝগড়ার ছলে বললাম,আমি ডিভোর্স চাই।তোমার সাথে থাকা আর পসিবল না। সে জিজ্ঞাসু নজরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,কি হইছে তোমার! আমি কি তোমাকে অত্যাচার করি? নাকি সারাদিন রাত ঝগড়া করি! ডিভোর্স কেনো চাইছো? মনে মনে বললাম,প্রবলেম তো এখানেই।কোনো ভাবেই তো তোমাকে দিয়ে ঝগড়া করাইতে পারি না।ডিভোর্সের ভয়ে যদি একটু কিছু পরিবর্তন হয়। প্রচন্ড রাগি গলায় বললাম,আমার ডিভোর্স চাই মানে চাই।তোমার মতো নিরামিষের সাথে ঘর করা অসম্ভব। সে একটা হাসি দিয়ে বলল,রাগ করে এসব বলতেছো তাই না! চলো তোমাকে নিয়ে বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি সব রাগ কমে যাবে। এতো মহাবিপদ! ডিভোর্স চাইছি,নিরামিষ বলে রাগ দেখাচ্ছি তাও আবার ভালোভাবে কথা বলতেছে! এর কি লাইফে কখনও একটু ঝগড়া করতে মন চায় না বউয়ের সাথে! এ কাকে বিয়ে করলাম আমি!!
জামাকাপড় গুছিয়ে বাপের বাড়ির দিকে রওনা হলাম এমন সময় পাশের বাসার ভাবির সাথে দেখা হতেই সে কাঁদতে কাঁদতে বলল,ভাবি জানেন আজকে আপনার ভাইয়ের সাথে তুমুল বেগে ঝগড়া হইছে।ঝগড়ায় তো আমি তার সাথে জিততেই পারি না ভাবি।সে কি ঝগড়া ভাবি কি আর বলবো আমি আপনাকে। হাদারামটার দিকে একবার তাকিয়ে বললাম,এগুলো দেখেও কি কিছু শিখতে পারো না! আমি বাপের বাড়ি যাচ্ছি তো তোমার তাতে কি! আমার পেছন পেছন হাঁটা শুরু করে দিছো।আরে একটু রাগ তো দেখাইতে পারো নাকি? তিনটা বছরে একদিনও ঝগড়া করলো না আমার সাথে ভাবি! এরকম হাসবেন্ড ও পাওয়া যায়!! ভাবি চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,কি বলেন ভাবি! আপনাদের ঝগড়া হয় না? মুখ বেকিয়ে বললাম,সেই জন্যই তো এইবার ডিভোর্স চাইছি ভাবি।এরকম নিরামিষ বরের সাথে কেমনে থাকা যায় বলেন?
ভাবি একটা হাসি দিয়ে বলল,আপনি যে কি বলেন না! এরকম হাসবেন্ডের খোঁজে আছি আমি।পেলেই একদম ওইটাকে ছেড়ে দিবো।ঝগড়াঝাঁটি আর ভালো লাগে না বুঝলেন তো।রাত নেই দিন নেই যখন তখন সিম্পল ব্যাপার নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দেয়।এটা করবা না ওটা করবা হ্যানত্যান।আপনি তো সেদিক থেকে ভীষন লাকি।এমন একটা বর যদি আমার হইতো! মহিলা হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।ভাবভঙ্গি সুবিধাজনক না বুঝতে পারা মাত্রই ব্যাগট্যাগ নিয়ে সোজা ঘরের ভেতরে চলে এলাম।একে রেখে এখন বাপের বাড়ি যাওয়াটাও রিস্ক দেখতেছি।
বর ফ্যালফ্যালিয়ে হেসে বলল,যেতে পারলে না তো আমাকে ছেড়ে! রাগ গলে জল হয়ে গেলো এক নিমিষেই।আজকে বরং আমি তোমাকে রান্না করে খাওয়াই।দুই এক দিন তো বউকে রান্না করে খাওয়াতেই পারি কি বলো?
একরাশ বিরক্তি নিয়ে বরের দিকে তাকিয়ে বললাম,তুমি কিন্তু ভেবে না যে আমি আমার ডিসিশন চেঞ্জ করছি।ডিভোর্স তো আমি দেবোই তোমাকে।শুধু ঐ মহিলার ভয়ে তোমাকে রেখে যেতে পারলাম না।নয়তো কে থাকে তোমার মতো হাদারামের সাথে!! সে হাসতে হাসতে বলল,ডিভোর্স ও দিবে আবার মহিলা আমার প্রেমেটেমে পড়ে যায় কিনা সেই ভয় ও পাচ্ছো।বউয়ের এমন ভালোবাসায় সিক্ত আমি আহা।
ইয়ে মানে মোটেও সেরকম কিছু না।আমি আসলে তোমাকে একটু টাইড দেয়ার জন্য থেকে গেলাম।তোমার সাথে আরো বোঝাপড়া বাকি আমার।রান্না শেষ করো তারপর মজা দেখাচ্ছি। রুমে গিয়ে বান্ধবীকে কল করে বললাম, তোর সাথে ভীষন ইম্পরট্যান্ট কথা আছে। ওপাশ থেকে বান্ধবী বলল,দোস্ত তোকে আমি ঘন্টাখানেক বাদে কল ব্যাক করছি।বরের সাথে তুমুল বেগে ঝগড়া লাগছে আমার।ব্যাটা সারাক্ষণ খালি ঝগড়ার তাল খুঁজে বেড়ায়।আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো আমি।তুই একটু ওয়েট কর প্লিজ রাখছি এখন। পরের দিন সকালে প্রচন্ড রাগি গলা নিয়ে সে আমাকে ডাকতে ডাকতে রান্নাঘরে এসে বলল,তোমার কাভার ফটোতে যে ছেলেরা লাভ রিয়েক্ট দিছে তাদের তুমি চিনো?
চোখ কপালে তুলে বললাম,চিনবো না কেন! ওরা তো আমার সেই স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড।কেনো কি হইছে?
সে গম্ভীর গলায় বলল,তোমাকে আর ফেসবুক চালাতে হবে না।ছেলেরা লাভ,ওয়াও রিয়েক্ট দিয়ে ভরে ফেলবে বউয়ের ছবিতে আর সেগুলো আমাকে সহ্য করতে হবে! আর হ্যা তোমার ওই অফিস কলিগ কি যেনো নাম তার! সে তোমাকে এতো ফোন দেয় কি করতে? অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,আর ইউ ওকে! তোমার কি শরীর ঠিক আছে! নাকি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কি সব বলে যাচ্ছো তখন থেকে! উনি আমাকে কল দেয় কাজের কথা বলার জন্য আর সেটা বড় জোর দুই থেকে তিন মিনিট।আর আমি তো তোমার সামনেই কথা বলি।হঠাৎ আবার কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হইছে তাতে!! ফেসবুকই বা কি দোষ করলো! সন্দেহ করো আমাকে? পাসওয়ার্ড আছে নিজের কাছে তাও! অসহ্য তো।তুমি তো আসলেই একটা ডিজগাস্টিং লোক।
সে একটা হাসি দিয়ে বলল,হইছে তো! ঝগড়া করার সাধ মিটছে নাকি আরো লাগবে? এক দিনেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে ডিভোর্স হতে খুব বেশি দেরি নেই।এখন থেকে রোজ এভাবেই ঝগড়া করবো আমরা ঠিক আছে!
বরের কথা গুলো গভীরভাবে ভাবতে শুরু করলাম,সবার হাসবেন্ডই ঝগড়া করে।সবাই তাদের হাসবেন্ডদের নিয়ে সেইজন্য যথেষ্ট বিরক্ত।কিন্তু আমার বর কখনও ঝগড়া করে না।কিছু বললেও রাগ করে না কোনো কিছু নিয়ে আমাকে প্যারাও দেয় না।আমার তো আসলেই লাকি ফিল হওয়া উচিত।নিজেকে কেমন এলিয়েন মনে হচ্ছে।আমিই বোধহয় পৃথিবীর একমাত্র বউ যে কিনা তার বর ঝগড়া করে না বলে ডিভোর্স চাইছে।ব্যাপারটা কেমন যেনো বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো না! ‘আসলে যাদের ঝগড়া হয় তারা চায় ঝগড়া থেকে মুক্তি পেতে আর যাদের কখনই ঝগড়া হয় না তারা ভাবে ঝগড়া বোধহয় অনেক মজার একটা ব্যাপার কিন্তু কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো না।আসলে বিবাহিত জীবনটাই বড় অদ্ভুত।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত