জোৎস্নাময় রাত

জোৎস্নাময় রাত
চন্দ্রালোকিত রাতের অপরূপ অভিনব নয়নভিরাম শোভা দেখেছিলাম জ্যোৎস্নাময় সেই রাতে, সে আর আমি মিলে। ভাগ্যক্রমে এক শুভ্র নির্মল জ্যোৎস্নার রাতে তাঁর আর আমার হয়েছিল হঠাৎ দেখা। জ্যোৎস্নার রূপ মাধুর্য অবলোকন করতে আমি যখন তন্দ্রাচ্ছন্নের মতো গভীর ধ্যানে নিবিষ্ট ছিলাম, অকস্মাৎ আমি কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম! পিছু ফিরে তাকাতেই দেখলাম বাড়িওয়ালার ছেলে। ভীষণ অবাক হলাম তাঁর এমন অদ্ভুত রকমের কর্মকান্ডে! সহসা আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে বিস্মিত আননে বললাম,
— কেন আপনি এভাবে আমার হাত ধরে রেখেছেন! আপনি আমার গায়ে স্পর্শ করলেন কেন? আমার বলা সেই কথাটা শুনে সে তেমনই সাবলীল কন্ঠে বললো,
—ইচ্ছে হলো তাই। তাঁর ওমন একটা কথা শুনে আমি হুংকার সহিত বললাম,
— এই যে ভাই, আমি কি সরকারি জিনিস নাকি! যে ইচ্ছে হলেই স্পর্শ করবেন আমাকে? আমার সেই হুংকার সহিত কথাটা শুনে সে আধো হেসে বললো,
— হুম সরকারিই বটে, তবে শুধু আমারই জন্যে। আমি চাইলেই তোমার যেখানে সেখানে যেমন ভাবে ইচ্ছে ঠিক তেমন করেই স্পর্শ করতে পারি। তাঁর বলা আর তাঁর সেই অদ্ভুত রকমের গভীর চোখের চাহনি দেখে আমি তাঁর থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলাম। কিয়ৎক্ষণ পরে সে আচম্বিত ভাবে বললো,
— বাই দা ওয়ে, আজ আমরা দুজনে মিলে উপভোগ করবো এই জ্যোৎস্নাময় অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা নিরব, নিরবচ্ছিন্ন নিস্তব্ধ রাতটাকে। তাঁর কথা শুনে আমি তখন অনমনীয় কন্ঠে বললাম,
— আপনার ইচ্ছে হলে আপনি উদযাপন করেন দীর্ঘ এই জ্যোৎস্না-স্নাত জ্যোৎস্নাময় রাতটাকে, আমি যাচ্ছি। আমি যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে গেলেই অচিরাৎ সে নিরেট কন্ঠে বললো,
— ওয়েট, কোথাও যেতে পারবা না তুমি। কথাটা বলেই সে হুট করেই ছাঁদের অনবরুদ্ধ দরজাটা রুদ্ধ করে দিলো। আমি তখন তাঁর দিকে তাকিয়ে উচাটন কন্ঠে বললাম,
— এমন করছেন কেন আপনি? প্লিজ যেতে দিন আমাকে। সে তখন স্মিত হেসে উদ্ভাসিত কন্ঠে বললো,
— উঁহুম এখন কোথাও যেতে দেব না তোমাকে। আজ তুমি আর আমি মিলে বিস্তর বিশাল অবারিত নক্ষত্রলোকের প্রজ্বলিত নক্ষত্রের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখবো। দেখতে চাই জ্যোৎস্নালোকিত রাতের অপূর্ব নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক অনিবর্চনীয় রূপ সৌন্দর্য।
কথাটা বলেই সে আমার হাত ধরে একেবারে ছাঁদের কর্নারে নিয়ে গেল। জ্যোৎস্নাময় রাতের অপূর্ব সৌন্দর্যের অপরূপ শোভিত শোভা সেই রাতের আগে আমি কখনোই কোনভাবেই দেখতে পাইনি! তাঁর সাথে ওই প্রথম দেখেছিলাম নির্জন নিস্তব্ধ বিভাবরীর বুকে চন্দ্রিমার শুভ্র নির্মল সমুজ্জ্বল প্রদীপ্তি। ঝিরিঝিরি বাতাস, নির্জন সন্ধ্যা সবকিছু মিলে এক চমৎকার ভালো লাগার অনুভব অনুভূতি! চন্দ্রকিরন যেন তাঁর অপূর্ব নয়নাভিরাম শুভ্র নির্মল নিষ্কৃতিপ্রাপ্ত তীব্র আলোকরশ্মি ঢেলে দিচ্ছে সবিস্তর ধরিত্রীর বুকে। সমস্ত নিসর্গ যেন জ্যোৎস্নার শুভ্রতায় আত্নলীন করছে! চাঁদের স্নিগ্ধ শুভ্র নির্মল আলোয় তাঁর মুখটা দেখে আমি মুগ্ধ! অভিভূত হয়েছিলাম। অপূর্ব অদ্ভুত মুগ্ধতা ছিলো তাঁর সুদর্শনীয় সৌন্দর্যে!
আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম মাতাল সমীকরণে। অবারিত অন্তরীক্ষের নিচে তাঁর কাছাকাছি পাশাপাশি থেকে জ্যোৎস্নাময় রাতটাকে আমার জীবনের সবচেয়ে অতুল্য রজনী বলেই অনুভব হচ্ছিলো। চন্দ্রময়ী যেমন করে বসুমতীর বুকে স্নিগ্ধতার স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে দিয়েছিল, ঠিক সেই একই ভাবে সেও আমার জীবনে ছড়িয়ে দিয়েছিল ভালোবাসার অতলস্পর্শ তীব্র মধুমাখা আলো। আলোয় আলোয় আলোড়িত করেছিল আমার পুরোটা জুড়ে। জ্যোৎস্নাময় সেই রাতে প্রকৃতিকে খুব মায়াবী লাগছিল। তবে তাঁর মুখপানে তাকিয়ে আমার মনে হচ্ছিলো যেন পৃথিবীর সব আবেশ মাখানো সৌন্দর্য এসে ভীড় জমিয়েছে শুধু তাঁরই মাঝে। আনন্দে পরিপূর্ণ হয়েছিল সেই মুহূর্তক্ষন। সে তখন আমার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বললো,
— ভীষণ মায়াবী এই রাত্রি তাই না? আমি তখন তাঁর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়েই চৈতন্যশূন্য ভাবে বলেছিলাম,
— এই রাত্রির চেয়েও যে অনেক বেশি মায়া মাখা আপনার মুখটা। ভীষণ অসংযত মায়াময় আপনার চেহারাটা।
সে তখন আধো হেসে বললো,
— আচ্ছা তাই! আমার মায়ায় কি তাহলে তুমি জড়িয়ে পড়েছ? তাঁর ওমন কথা শুনে আমি অতিশয় মাত্রাতিরিক্ত লজ্জা পেলাম। আর সে তো সেই তখন থেকেই নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমারই দিকে। তাঁর ওমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। না নড়তে পারছি আর না তাঁর দিকে তাকাতে পারছি। সে তখন আবারও আবেশ মাখানো কন্ঠে বললো,
— আচ্ছা লজ্জা পেলে তো তোমাকে দেখতে ভালোই লাগে, তুমি লজ্জা মাখা মুখেই থেকো সারাজীবন আমার সামনে। আর আমি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকবো শুধু তোমারই দিকে। হঠাৎ সে আমার খুব কাছে এসে আমার আঁখিতে আঁখি মিলিয়ে আবেগ মেশানো তীব্র কন্ঠে বললো,
— আমার হবে তো? আমি তখন তাঁর দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বললাম,
— যদি আপনি চান তাহলে আমি শুধু আপনারই থাকবো, হবো না তো অন্যকারো। সে তখন আমার হাতটা ধরে
সুপ্রভ আননে মনকাড়া এক হাসি হেসে আমার হাতটা তাঁর হাতের মাঝখানে আবদ্ধ করে বললো,
— আমি তো সেই কবে থেকেই তোমাকে পাওয়ার অপেক্ষায় অপেক্ষাকৃত হয়ে আছি। আজ মনে হয় আমার দীর্ঘদিনের তিক্ত অপেক্ষার অবসান ঘটলো। জানো অপেক্ষা প্রতীক্ষার প্রহর ভীষণ দীর্ঘ আর তিক্ত। খুবই যন্ত্রণাদায়ক। ভালোবাসার অতলস্পর্শ যে কী তীব্র গভীরতম দহন! আমি তখন প্রসন্নচিত্তে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললাম,
— কিন্তু অপেক্ষার প্রহর শেষে থাকে শুধুই আনন্দ আর অনাবিল অনিবর্চনীয় ভালোবাসা। সেই তীব্র গভীরতম ভালোবাসা এ জীবনে শেষ হবার না। সে তখন আমাকে তার বুকের মাঝখানে আবদ্ধ করে বললো,
— থাকবে তো সারাটাদিন, সারাটাক্ষণ সারাটাজীবন আমারই কাছে আমারই পাশে? আমার এলো মেলো মন আর অগোছালো ঘর গুছিয়ে রাখবে তো? আমি তখন তাঁকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
— আপনার ভালোবাসা পেলে আমি যে সব করতেই রাজি। সে তখন আমার কপোলে আলতো স্পর্শে চুম্বন করে বললো,
—আর তোমার ভালোবাসা পেয়েই তো বেঁচে থাকবো আমি।
এভাবেই শুরু হয়েছিল তাঁর আর আমার ভালোবাসার এক দীর্ঘতার দীর্ঘ অধ্যায়। জীবনের অজস্র দিবসরজনী মুহূর্তক্ষন অতিক্রম করেছি তাঁর সাথে। প্রতিটা মুহূর্তেই অজস্র অভিনব ভালোবাসার তীব্র স্পর্শে স্পর্শিত করেছে আমাকে। ঠিক এইভাবেই সারাটা জীবন আমি তাঁর ভালোবাসা পেয়েই বেঁচে থাকতে চাই এই ধরণীর বুকে। পরিপূর্ণ হতে চাই তাঁর অপ্রতিম অনবদ্য অবারিত ভালোবাসায়।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত