মুনতাহা

মুনতাহা
খুব সম্ভবত ছয় বছর আগে আমার একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়।নাম মুনতাহা।আমার রুমমেট ছিলো। কেন জানিনা, প্রথম অবস্থায় মেয়েটাকে আমার বিন্দুপরিমাণ সহ্য হতো না।বর্তমানে প্রেম ভালবাসা শব্দগুলো খুব কমসংখ্যক মানুষ পজিটিভভাবে নেয়।আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টা পুরো নেগেটিভ ছিলো।কারণ প্রেম ভালবাসা এগুলো আমি টোটালি বিশ্বাস করতাম না।আর এদিকে মুনতাহা ছিলো সেই রকমই একজন প্রেমিকা টাইপ মানুষ।
আমি অবাক হতাম মেয়েটাকে দেখে,আদিখ্যেতা মনে হতো আমার।ও ঠিক এরকম টাইপ ছিলো, এই যেমন, কোনো এসাইনমেন্ট তৈরি করছে যেটা খুব কম সময়ের মধ্যে তৈরি করে জমা দিতে হবে,এর মাঝে ফোন আসলে ও সবকিছু গুঁছিয়ে রেখে ছেলেটার সাথে ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতো।তারপর রাত জেগে এসাইনমেন্ট তৈরি করতো।পরেরদিন ভার্সিটিতে গিয়ে ঘুম ঘুম চোখে ক্লাস শেষ করতো। এসবের কোনো মানে হয় বলুন! সে এত বেশি ভালবাসতো ঐ ছেলেটাকে যার জন্য সারারাত জেগে কাজ করতেও তার কষ্ট হতো না।মাঝে মাঝে আমি ওকে বলতাম,ছেড়ে দে এসব।বর্তমানে প্রেম বলতে কিচ্ছু নাই।কেবল টাইমপাস! তবে মেয়েটাকে যতদিন ধরে চিনি তাতে বুঝতে পেরেছি মেয়েটা সচরাচর অসুস্থই থাকতো।শ্বাসকষ্ট ছিলো ওর।বিশেষ করে মাঝরাতে ওর শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হতো।
হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলাম, ছেলেটা মাঝরাতে ইনহেলার নিয়ে মেয়েটাকে দেখতে আসলো। সে রাতে ছেলেটার সাথে কথা বলার একপর্যায় মেয়েটার ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো, আর হাতের কাছে কোনো ইনহেলার ছিলো না।কারণ শেষ হয়ে গিয়েছে ওর ইনহেলার। এত রাতে দোকানও খোলা ছিল না। ঘন্টাখানেকের মধ্যে ছেলেটা ইনহেলার নিয়ে হাজির হয়।তারপর বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি ছেলেটার কাছ থেকে ইনহেলারটা নেই।তখনই লক্ষ্য করলাম,ছেলেটা কাঁদছে। সেদিনের পর থেকে আমি আর মুনতাহাকে আবিরের বিষয়ে কখনো ছেড়ে দে টাইপ কথাবার্তা বলতাম না।ছেলেটার নাম ছিলো আবির।ওদের একজনের প্রতি আরেকজনের যত্ন,ভালবাসা সবটাই আমাকে মুগ্ধ করতে থাকে ক্রমশ।মুনতাহার সাথে আমার ভালো বন্ধুত্বও গড়ে ওঠে।
সময় চলে যাচ্ছিলো দারুণভাবে। এরই মাঝে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় বাসা ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে আসি।চলে আসার পর কয়েকমাস মুনতাহার সাথে আমার যোগাযোগ হয়। তারপর নিজেদের ব্যস্ততায় আমাদের মাঝে আর খুব একটা যোগাযোগ হতো না।এরই মাঝে আমার বিয়ে হয়ে যায়। আজ অনেকদিন পর আমার হাজবেন্ড অর্থাৎ রূপমের সাথে বের হতেই আবিরকে দেখলাম।যদিও চিনতে আমার খুব একটা কষ্ট হয়নি।হাতে কামিনীর তোড়া ছিলো। ওর পথ আটকে দাঁড়াই।আমার ভীষণ খুশি হচ্ছিলো আবির ভাইয়াকে দেখে।এতদিনে নিশ্চয় মুনতাহা আর উনার বিয়ে হয়ে গেছে।বাচ্চাকাচ্চাও দুই একটা হয়তো আছে। আমি ভাইয়াকে প্রশ্ন করলাম,
–কেমন আছেন ভাইয়া? মুনতাহা কেমন আছে ? আপনারা বিয়ে করেছেন তো? জানেন, মুনতাহা কিন্তু আপনাকে অনেক বেশি ভালবা উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
–চলেন, মুনতাহাকে দেখবেন।
আমিও কোনো দ্বিধাবোধ না করে রূপমকে সাথে নিয়ে আবির ভাইয়ার সাথে হাঁটছি মুনতাহাকে দেখার উদ্দেশ্যে।
কিছু পথ অতিক্রম করে গন্তব্যে এসে থমকে যাই।একটা কবরের সাইনবোর্ডে বড় করে মুনতাহার নাম লিখা।বছরখানেক আগে কোনো এক রাতে সে হারিয়ে যায় এই পৃথিবী থেকে।
–আমাদের বিয়ের সবকিছুই ঠিকঠাক হয়েছিলো।দুই পরিবার মেনেও নিয়েছিলো।কিন্তু বিয়ের এগারো দিন আগে মুনতাহা সব বিচ্ছিন্ন করে চলে যায়। জানেন, ভালোবাসার মানুষকে পেতে হলে ভাগ্য লাগে।যেটা বিধাতা আমার ভাগ্যে রাখেনি। কথাটা বলে আজও আবির ভাইয়া কাঁদছে।ঠিক সেদিন রাতের মতো ই। আমারও চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পড়ছিলো।রূপম তার বুকে আমায় জড়িয়ে ধরে রাখলো।আমার কষ্ট হচ্ছিলো খুব মুনতাহা নামের মেয়েটির জন্য। ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত