বাবার শার্টের পকেটে সবসময় ২ টা পুরোনো একশো টাকার নোট রাখা দেখতাম। মানিব্যাগে থাকা টাকা বাবা খরচ করতো।কিন্তু শার্টের পকেটে থাকা সেই পুরোনো ২০০ টাকা বাবাকে কখনও খরচ করতে দেখিনি। খুব যত্ন করে সামলে রাখতো সবসময়। কেনো বা কি কারণে তা জানতাম না। মায়ের কাছে দু একবার জিজ্ঞাসা করে জানার চেষ্টা করেছিলাম। তবে মা ও এই পুরোনো টাকার রহস্য জানে না। শুধু এইটুকুই জানে, বাবা এই টাকা কাউকে ধরতে দেয় না। বা খরচ করার জন্য ভুলেও এই টাকা ব্যবহার করে না। খুব অদ্ভুত লাগতো ব্যাপার টা। এতো টাকা থাকা সত্ত্বেও এই পুরোনো দুটা নোট এতো যত্নে রাখার কারণ কী হতে পারে সেটা নিয়ে মাঝে মধ্যে মাথায় নানান ধরণের চিন্তা ঘুরতো। কারণ বাবা তো ভুলেও সেই দুটো নোট কাউকে ধরতে দিত না।
একদিন সকালে কলেজে যেতে অনেক দেড়ি হয়ে যায় এদিকে বাবার মানিব্যাগ খুজে সেখান থেকে বাস ভাড়া নেওয়ার মতো সময় ও ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে বাবার শার্টের পকেট থেকে সেই ২০০টাকার থেকে ১০০ টাকা নিয়ে নেই। বাসায় ফিরে এসে দেখি বাবা অফিসে যায়নি। ঘরের সবাই কী যেন খুজছে। পুরো ঘর তন্নতন্ন করে ফেলেছে খুজে। এদিকে বাবার চেহারাটা ম্লান। মাকে জিজ্ঞাসা করলাম কী হয়েছে। মা বললো বাবা নাকি তার শার্টের পকেটে থাকা একশো টাকা খুজে পাচ্ছে না। পুরো ঘর সবাই মিলে খুজেছে। তখন আমার মনে পরলো যে, সকালেই আমি সেই একশো টাকা সাথে করে নিয়ে যাই। তবে হ্যাঁ সেটা খরচ করা হয়নি।
ভাগ্য বশতঃ আমার ব্যাগে কিছু টাকা ছিল যার কারণে সেই টাকাটা খরচ করার প্রয়োজন হয়নি।ব্যাগ থেকে নোটটা বের করে বাবার হাতে দেই আর ভুলের জন্য ক্ষমা ও চাই। তবে বাবা কিছু না বলেই অনবরত চোখের পানি ফেলতে থাকে। মনে হচ্ছিল সেই নোটটা পেয়ে বিশাল কিছু ফিরে পেয়েছে। এই ২০০ টাকা এতো যত্নে রাখার কারনটা তাই বাবার কাছে জানতে চাই। “আচ্ছা বাবা এই ২০০ টাকা এতো যত্নে কেনো রাখো তুমি?” কী কারনে রাখো?বাবা এবার আমার দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকায় তারপর হুট করেই একটা প্রশ্ন করে বসে। “আচ্ছা মা তোকে যদি কেউ বিশ্বাস করে কিছু দেয় তুই কী তার বিশ্বাস ভাঙবি?” আমি তখন বাবাকে বললাম কখনোই না। কারন আমার শিক্ষা আমাকে সেটা করার অনুমতি দেয় না।
তখন বাবা মুচকি হেসে আমাকে তার পাশে বসিয়ে বললো, “জানিস এতো টাকা পয়সা আমার আগে ছিল না।” “চাকরির আশায় কত কী করেছিলাম বলে শেষ হবে না।” একবার ঢাকা চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য আসার কথা ছিল কিন্তু পকেটে ঢাকা আসার মতো এক পয়সা ও ছিল না।” তখন এক বন্ধু আমার শার্টের পকেটে ২০০ টাকা ঢুকিয়ে দিয়ে বলেছিল যাতে আমি ঢাকা আসি। তখন টাকাটা নিতে চাইনি, তাই সে বলেছিল আমার চাকরির প্রথম বেতন পেলেই সে তার প্রাপ্য টাকাটা নিবে। যখন বেতন পাই তার টাকাটা তাকে ফেরত দাওয়ার চেষ্টা করি। তবে দুর্ভাগ্য বশতঃ আমি আমার বন্ধুকে আর খুজে পাইনি।
শুনেছি জীবনে কিছু বড় করার উদ্দেশ্যে সেও ঘর ছাড়ে। আজও আমি সেই ২০০ টাকা পকেটে নিয়ে রাখি। হয়তো এই পৃথিবীর কোনো এক কোনায় তাকে খুজে পেলে তার প্রাপ্যটা তাকে ফিরিয়ে দিতে পারবো সেই আশায়।”বাবার কথাগুলো শুনে বেশ অদ্ভুত লাগে। খুব কম সংখ্যক মানুষ এমন বন্ধু পায় জীবনে যারা হয়তো খারাপ সময়ে পাশে এসে দাড়ায়।আজকাল এই দু সময়ের বন্ধুদের বরো অভাব।
গল্পের বিষয়:
গল্প