মাতৃত্ব

মাতৃত্ব
ভাবিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছিলাম একবুক আশা নিয়ে।ভেবেছিলাম,এবার অন্তত ভালো খবর পাবো একটা।ভাবির সমস্ত প্রেগন্যান্সির সিম্পটম দেখা গিয়েছিলো গত পাঁচমাস ধরে।পাঁচ বছর হয়ে গেছে ভাই ভাবির বিয়ে হয়েছে।কিন্তু বাচ্চা হয়নি এখনো।
এ নিয়ে ভাই ভাবিকে রোজ রোজ কতো কথার সম্মুখীন হতে হয়।তবে ভাইয়ের চেয়ে যে মানুষ টাকে বেশি হার্ট হতে হতো সে হচ্ছে ভাবি।আত্মীয়-স্বজনদের সবাই যেন ভাবি কে দোষারোপ করতো।মাকে এমন ভাবে বুঝাতো,বাচ্চা না হওয়ার জন্যই ভাবিই যেন দায়ী। তাদের কথায় মাও তাই নাতনির মুখ দেখতে না পাওয়ার সব হতাশা খেতে বসতে ভাবির উপর ঝাড়তো।ভাবির সাথে ভালো মুখে কথা বলাই যেন ভুলে যাচ্ছিল মা। এরই মধ্যে মার্চের শেষ সপ্তাহে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভাবির বমি,মাথাব্যথা,প্র্যাগনেন্সির যা যা আলামত তা দেখা দেয়। পিরিয়ড বন্ধ। পরিবারের সবার মধ্যে আনন্দ বয়ে গেলো।
আত্মীয়-স্বজন সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানো পর্যন্ত হলো।ভাই,ভাবী দু’জনে অনেক খুশি।মাও কম খুশি না, ভাবি কে ভারি কাজ করা থেকে বিরত রাখতে নিজেই প্রায় রান্নাবান্না করে ফেলেন। ছাঁদে কাপড়গুলো ভাবির বদলে মা শুকাতে দিয়ে আসেন,নতুন নাতনি আসবে বলে কাঁথা সেলাইয়ের বন্ধাবস্থা করেন।মার্কেট থেকে বাবা ভিবিন্ন খেলনার জিনিস কেনাকাটা করে নিয়ে আসেন। সবার মধ্যে যেন নতুন অতিথির আগমনে আনন্দের ঘুরে চলছিলো। এরই মধ্যে আজ ডাক্তার সব প্রেগন্যান্সির পরীক্ষা দেওয়ার পর জানালো এটা ফলস প্র্যাগনেন্সি।ভাবির চিৎকারে পুরো হাসপাতালে একটা নিস্তব্ধতা চাপা দিয়েছিল।সেই থেকে ভাবি নিরব।বাসায় আসা অব্দি কোন কথা বললেন না,সোজা রুমে চলে গেলো। ভাবী এভাবে চলে যেতেই মা উৎকন্ঠার সাথে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন
-কি হয়েছে বলবি তো??
-কিভাবে বলব বুঝতে পারছি না মা…. ডাক্তার বললেন…
-কি বললেন….
-কোন বাচ্চা নেই মানে চিৎকার করে উঠলেন মা,সব ভান ছিলো? মা ভান হবে কেন?
-সব রকমের সমস্ত সিম্পটম দেখা গেল,আর এখন এসব কি বলছিস কি….
-মা ডাক্তার বললেন এটা ফলস প্রেগন্যান্সি খুবই কম জনের এটা হয় এতে প্রেগন্যান্সির সব সিম্পটম দেখা যায় কিন্তু আসলে এটা প্রেগন্যান্সি নয় কোনো বাচ্চা থাকে না তারপর মা কেন জানি নিজের সুর বদলিয়ে বললেন,
– কেন হলো এইরকম বলতো??
– ডাক্তার বললেন এর আসল কারণ তো জানা যায় না তবে দীর্ঘদিন বাচ্চা না হওয়ায় মানসিক চাপ আর মা হওয়ার প্রবল ইচ্ছার জন্য পেশেন্ট মনে মনে নিজেকে সন্তানসম্ভবা ভেবে নেয় আর শরীরের সেই অনুযায়ী পরিবর্তন হয় সে রকমও হয়?কোন রকম বেশকম ছাড়াই?
–মা তাইতো দেখলাম। মেয়েটার উপর চাপ প্রয়োগ করে ভারি অন্যায় করেছি বল?
–হ্যা মা তাই তো করলে সবাই।সবাই ভুলে গিয়েছিলে যাকে দোষারোপ করছো সেও তোমাদের মতো মেয়ে মানুষ, তারো খুব ইচ্ছে করে অন্য মেয়েদের মতো মা হতে।বাচ্চার সাথে খেলতে,বাচ্চার মুখে মা ডাক শুনতে। এখন কি করি বলতো?সবাই কে তো বলে দিয়েছি আমাদের ঘরে নতুন নাতি আসতে চলেছে মায়ের প্রশ্নের জবাব আমারো ছিলোনা। বললাম, যে মানুষগুলো তোমাকে দুঃখ দিতে আসে তাদের জবাবও কিন্ত তোমার মুখে আছে মা। তোর ভাবির কি হবে রে?মেয়েটা কি সত্যি আর মা হতে পারবেনা?
–মা,ডাক্তার তো মা একেবারে হতে পারবেনা তা বলেননি, বলেছে ভাবীর সাথে ভালো ব্যবহার করতে।আর সবসময় খেয়াল রাখতে।আর প্রয়োজন মতো সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে যোগাযোগ রাখতে? সাইকিয়াট্রিস্ট কেন?ও কি পাগল হয়ে গেছে নাকি?
–মা,পাগল হবে কেন? যার অসুখ যেমন তার তেমন ডাক্তার দরকার। এতে পাগল হওয়ার কি আছে?আমরা সবাই ভাবির পাশে এসে দাড়ালে ভাবির যে মোহ সেটা অনেকটা কেটে আবার বাস্তবে ফিরে আসবে। তুই যা-ই বল আমার তো একটামাত্র ছেলে তার যদি সন্তান সন্তানাদি না হয় তাহলে কি হবে বলতো?মেয়েটার জন্য খারাপ আমারো লাগছে, তবে কি বলতো,খারাপ লাগাটাকে তো প্রশয় দিতেবপারবো না তাহলে আমার ছেলের ভবিষ্যতটা অন্ধকারে বেষ্টনী হয়ে যাবে। আমরা না হয় নাতি-নাতনি নিয়ে খেললাম না কিন্ত ভবিষ্যতে ছেলের যদি কোন নিশান না থাকে তাহলে হয় কি করে
বল?
এই বিষয়ে রাতে তোর বাবার সাথে কথা বলে দেখব আমি। এভাবে তো চলে না আর অন্য ব্যবস্থা হলেও তো করতে হবে, বলেই মা হন হন করে চলে গেলো। আমি মায়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম মাত্র। সবার দুঃখ সবাই বুঝলে হয়তো নিঃস্বার্থে দুঃখ ভাগ করে নেই কিন্তু মাতৃত্বের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুব ব্যাতিক্রম,মাতৃত্ব একটা নিঃস্ব মেয়ের মা হওয়ার আকুতি বুঝলেও নিজের সন্তানের স্বার্থ ছাড়া দুঃখিনীর দুঃখের ভার নিতে নারাজ।ওরা সন্তানের জন্য হয়ে ওঠতে পারে আগ্রাসী,অন্যের কাছে নিষ্ঠুর বর্বর।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত