পাত্রীকে হালকা মেরুন রংয়ের একটা শাড়ী পড়িয়ে আমার সামনে বসিয়ে দেওয়া হলো। নাম আয়েশা। পাশে ছিলো আমার মামা আর আম্মা। এসেছি মেয়ে দেখতে। কিন্তু এ কি! এতো ছোটখাট একটা হাতি।
মানুষ এতো মোটা হয় কেমনে। না জানি কত খায়। আমি একবার তাকিয়ে দ্বিতীয়বার আর তাকানোর সাহস পায়না। শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে মুখে দেব ঠিক তখনই মা আমাকে ইশারা করলেন উঠে পড়তে। মামা চিমটি দিলেন। তার মানে মেয়ে তাদের পছন্দ হয়নি। হওয়ার কথাও নয়, হবেই বা কেন। তাদের ছেলে হ্যান্ডসাম,সরকারী চাকরী করে নিশ্চয় এমন ৮০-৯০ কেজির একটা দানবকে বউমা হিসেবে মেনে নিবেন না। আচ্ছা ভাবী তাহলে আমরা আসি। ফোনে জানাবো সবকিছু। উঠে যাব এমন সময় আয়েশার চোখে চোখ পড়লো, চোখদুটো ততক্ষনে জলে ভরে গেছে। সমস্ত মুখটাতে মৃদু ঘাম জমেছে। হালকা গোলাপী মুখঅবয়ব। কেন জানি আমার নিঃশ্বাসের গতি বাড়তে লাগলো। রুম থেকে বের হতেই পাশের বাসার মহিলাগুলো বলাবলি করতে লাগলো,,এসেই চলে যাচ্ছে সবাই। আর বলেন না ভাবী মেয়ে যে একটা আস্ত হাতি।
কে বিয়ে করবে এমন মেয়ে। এবার দিয়ে বিশ পচিশটা বিয়ে ভাঙলো তার। এসব শুনতে শুনতে নিচে নেমে আসলাম। বাসায় পৌছানো মাত্র মা আর মামা হাসাহাসি করতে লাগলো। আমি চুপচাপ। এরপর অনেকগুলো সুন্দরী, রুপবতী মেয়ে দেখেছি কাউকেই পছন্দ হয়নি আমার। সারাদিন রাত কেবল আয়েশার কথা মনে হয় আমার। আয়েশা অশ্রুসজল চোখদুটোর কথা মনে পড়ে। এটা মায়া,করুনা নাকি ভালবাসা তা আমি জানিনা। সেদিন ওকে পার্কের ভেতর দিয়ে সরু রাস্তা বরাবর হাটতে দেখলাম। মেয়েটা একটু হাটছে আর হাপাচ্ছে। সমস্ত মুখজুড়ে ঘাম আর বিরক্তি স্পষ্ট। আমি আয়েশাকে যতই দেখছি, ততই কেন জানি ওর প্রতি আমার আর্কষন বাড়ছে।আমি ওকে সত্যিই ভালবেসে ফেলেছি।
বেশকয়েকদিন পর গেলাম ওদের বাসায়। কলিং দিতেই ওর আম্মু দরজাটা খুলে দিলো, কেমন আছেন আন্টি? ও রাফাত, ভালো বাবা। ভেতরে আসো দাড়িয়ে কেন? ঢুকতেই দেখি রান্নাঘরে রান্নায় ব্যস্ত আয়েশা। আসলে আন্টি আমি কিছু বলার জন্য এসেছি। আন্টি আমি দুঃখিত আগে যোগাযোগ না করার জন্য। আসলে আন্টি আমি আয়েশা বিয়ে করতে চাই। আমি এসেছি ওর সাথে একটু কথা বলার জন্য। আপনার যদি আপত্তি না থাকে। আয়েশার অনিচ্ছা সত্বেও ওর সাথে কথা বলার জন্য উত্তরের ঘরটাতে আসলাম। বেলকোনির গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছো ও।কি বলবেন বলুন। আমার অনেক কাজ পড়ে আছে। আমি সশব্দেউত্তর দিলাম,আপনাকে কি আমার পছন্দ হয়নি? আয়েশা তাকালো একটু। কোন কথা নেই। আয়েশা আপনাকে বিয়ে করতে চাই।
কথাটা শুনেই ও চলে যেতে উদ্যত হলো।আমি বাধা দিলাম। করুনাদেখাতে এসেছেন বুঝি। ওগুলো সাথে নিয়ে চলে যান। মেয়েটা এত রাগী আগে জানা ছিলোনা। খুব কষ্টে বাবা মা কে না জানিয়ে চার মাস ওর পেছন পেছন ঘুরে পরিশেষে বিয়েটা করতে পারলাম। উফ মনে হলো বিশ্বজয়ের আনন্দ। বাড়ির সবাই এখন মেনে নিয়েছে। আয়েশা এখন তাদের মধ্যমনি। আয়েশা রোজ আমার ফেরার অপেক্ষায় থাকে। আমার জন্য না খেয়ে বসে থাকে। নামায পড়ে পাচ ওয়াক্ত। বাড়ির সব কাজ সে একাই করে। আমার অসুস্থতায় সে ব্যথিত হয়,সারারাত জেগে থাকে। নামায পড়ে দোয়া করে। মনে হয় পৃথীবির সবচেয়ে সুখী মানুষের তালিকায় আমার নামটা থাকবে। এই আয়েশা শুনছো,,হুম এইতো। হঠাৎ তলব ভর দুপুরে। ঐ যে রায়হান সাহেব আছে না? চিনছো তুমি? কোন রায়হান সাহেব?
ঐ যে গতমাসে কলিগ হাসানের বিয়েতে গিয়েছিলাম। তোমাকে দেখে কটু কথা বলেছিলো। আমাকে বলেছিলো খ্যাত। এমন মেয়েকে কেউ কি বিয়ে করে! আয়েশা চোখটা নিচে নামিয়ে বললো,,হুম মনে পড়েছে। ,জানো রায়হান সাহেবের বউ পরকীয়া করে আজ একজনের হাত ধরে পালিয়ছে। রায়হান সাহেবের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলোনা। তুমি মনে হয় খুশী হয়েছো? শোন অন্যের কষ্ট দুঃখে, বিপদে পাশে থাকতে হয়। যাও এখনই খোজ নাও মানুষটার, তোমার না কলিগ তিনি। আমি আয়েশার কথা শুনে অবাক হই। মানুষ কিভাবে এতটা ভালো হতে পারে। এত গুনবতী কেমনে হয়। সারাদিনের একরাশ ক্লান্তি নিয়ে যখন বাসায় ফিরে আসি আয়েশার মুখটা দেখলেই সব ক্লান্তি নিমিষেই লুকিয়ে যায়।
আয়েশাদের মূল্য সবাই বোঝেনা। আধুনিকতা, সুন্দর গায়ের রং,চাকচিক্য পোশাক আর স্টাইলিশ মানুষ খুজি আমরা। কখনও কি ভেবে দেখেছি মানুষটার সাথে আমরা সুখী হব কিনা? আমৃত্যু একসাথে থাকতে পারবো কিনা? আমরা ভাবিনা এসব, আমরা বাহ্যিক চাকচিক্যে বিশ্বাসী, অন্তরে প্রবেশের ক্ষমতা আমাদের নেই। এই শুনছো কোথায় তুমি, ঔষধ রেখেছি টেবিলের ওপর খেয়ে নাও। নইলে জ্বরটা আরও বাড়বে। যাই ঔষধটা খেয়ে আসি,,না থাক। পরে খায়। ওর শাসন আর রাগান্বিত মুখটা দেখতে বড্ড ভালো লাগে যে।
গল্পের বিষয়:
গল্প