হরিচরণ মালো। জাতে কৈবর্ত্য, – নিম্নবর্ণের হিন্দু। জাতের সুবাদে মালোরা বংশপরম্পরায় মৎস্যজীবী, ধীবর। লোকে বলে, জেলে। রাতের নিশুতি প্রহরে গ্রামের মানুষ ঘুমে অচেতন থাকে; সেই প্রহরে মালোপাড়ার জেলের দল ঘুম ছেড়ে উঠে পড়ে; মাছ ধরার জাল আর সরঞ্জাম বয়ে অাঁধারের পথ ধরে; ডাঙা থেকে জলে গিয়ে নৌকোয় চড়ে; যায় নদী, বিল আর হাওরে মাছের সাক্ষাতে। জলে বসেই ওরা শুনতে পায় ঘুমভাঙা পাখির ডাক। দেখতে পায় সূর্যোদয়। কিন্তু মাছ ধরার ফাঁদ আর জালের দিকে চোখ রেখে ওরা থাকে অতন্দ্র ও নি©র্র্ণমেষ। রাতের অন্ধকার কাটার সাথে সাথে ওরা মাছের চুপড়ি ভরে ফিরে আসে ডাঙায়। ছোটে হাট ও বাজারে। সেখানে বসে নিজ নিজ ডালায় মাছ সাজিয়ে। বাজার ভাঙলে পর, ওরা বাড়ি ফিরে বউ-ছেলেমেয়ে নিয়ে মাছ শুঁটকি করতে দেয়। কখনো মাছ ধরার জাল মেরামত করতে বসে। মৎস্য ধরার পেশা তো কোনো চাকরি নয়, এ হলো নিজের ব্যবসা। গায়ে-গতরে খাটতে তো হয়ই। আবার, নিজের জমা পয়সা দিয়ে জাল ও নৌকা আর বাজারের দোকান কিনতে হয় এবং দরকারে মাছের জন্যে জলমহাল ইজারা নিতে হয় ওদের। গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীত বলে কিছু নেই; প্রতি মৌসুমে, প্রতি বছর, প্রতি মাস, সপ্তাহ ও প্রতিদিনেই ওরা জীবিকার জন্যে এইভাবে কাজ করে। এর বাইরে অবশ্য ধর্ম-কর্ম আছে, সংসার আছে, প্রেম-ভালোবাসা আছে, বিয়ে, জন্ম, মৃত্যু আছে। কিছু আনন্দ-ফুর্তি তো আছেই। সেসবও করতে হয়।
এতসব করে, আর যা-ই হোক, রাজনীতি করার ফুরসত ওদের হয় না। দেশভাগ হলো গিয়ে এক মস্ত বড় রাজনীতি। সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের আগে, এই থানার বহু হিন্দু এই বলে ভয় পেত যে, পাকিস্তান হলে ওদের মেয়েদের সতীত্ব থাকবে না। তাই ওরা ভারতে চলে যায়। কিন্তু হরিচরণের ঠাকুরদা বলেছিল, এইডা মোগো সাতপুরুষের ভিটা, তাই না? এইডা থুইয়্যা ভিনদ্যাশে যামু ক্যান?
বাস্তবিকই, মালোপাড়া থেকে দেশ ছেড়েছিল মাত্র দুটি ঘর। বাকি সবাই রয়ে যায়।
তখন হরিচরণের বয়স ছিল সাত বছর। ওর মনে পড়ে, ওর বন্ধু প্রশান্ত দেশ ছেড়ে চলে যাবার সময় খুব কান্নাকাটি করেছিল। হরিচরণও জানত প্রশান্তরা ভারতে চলে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশান্তরা যে চিরকালের মতো চলে যাচ্ছে; এবং আর কোনোদিনই ফিরে আসবে না, এ-কথাটা হরিচরণের কিশোর মাথায় ভালো করে ঢোকেনি। তাই চোখে জল এলেও হরিচরণ প্রশান্তর মতো কান্নাকাটি করেনি। কিন্তু কিছুদিন পরে, যেদিন ওরই জ্যাঠাতো এক দাদা প্রশান্তদের শূন্য ঘরবাড়িটির দখল নিয়েছিল, সেইদিন হরিচরণ হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিল। ওর কান্না শুনে ওর মা কৃষ্ণদাসী বলেছিল, কীরে হরি, তুই কান্দস ক্যান?
হরিচরণ কাঁদতে কাঁদতেই বলেছিল, কান্দুম না, মা? প্রশান্ত যে আর আইতো না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে কৃষ্ণদাসী মনে মনে বলেছিল, অত দেরি কইরা বুজলি! পাগল পোলা!
দুই
পাগল খ্যাতি পাওয়া খুব সহজ। সবাই যা করে, একজন কেউ তা না করলেই তাকে লোকে পাগল বলে। তবে পাগলামির নানা মাত্রা আছে। জরস হচ্ছে বদ্ধপাগল আর পরম হচ্ছে আদরের পাগল। কৃষ্ণদাসীর কাছে তার একমাত্র ছেলে হরিচরণ আদরের পাগল। এ রকম পাগলামি অবশ্যি হরিচরণ পরে আরো করেছিল। কিছুদিন নিজে থেকেই বইখাতা নিয়ে শ্রীদামপুর পাঠশালায় গিয়ে কিছু লেখাপড়া শিখেছিল। তবে একদিন জাত তুলে কথা বলেছিল এক মাস্টারমশাই। তার সাথে ঝগড়া করে হরিচরণ নিজেই একদিন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন আরো হরিচরণের বাবা ছেলেকে বলেছিল, ওরে তুই পাগলামি আর কত করবি? আরো কিছু বড় হয়ে হরিচরণ রাজনীতিতে নাম লেখায়। মানে সভা-সমিতি, মিছিল-টিছিলে যায়। চেঁচিয়ে জিন্দাবাদ-মুর্দাবাদ বলে। মালোপাড়ার লোকে বলে, হরিডা একটা পাগল!
তবে এ খারাপ কিছু নয়। দেশের ছেলে দেশ নিয়ে ভাববে না তো করবে কী।
মালোপাড়ার একদিকে নদী আর প্রায় তিনদিকেই মুসলমানপাড়া। এই নিয়ে বাবুগঞ্জ গ্রাম। ভাতে-মাছে বাঙালির কাছে মালোপাড়ার একটা কদর বরাবরই ছিল। দেশে কত গন্ডগোল হয়, কিন্তু হরিচরণ কোনোদিন মালোপাড়ার ওপর কোনো হাঙ্গামা হতে দেখেনি। বরং তার নিজের সুবাদেও মালোপাড়ার কদর যেন একটুখানি হলেও বেড়েছিল।
কিন্তু কিছুদিন হয় দেশের পরিস্থিতি কেমন অচল হয়ে উঠেছে। শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে চলছে সারা পূর্ব পাকিস্তান। মালোরাও বাদ নেই। পাকিস্তান সরকারের কথা বাঙালিরা শুনছে না, মানছেও না। তারা বেশ ক্ষেপে উঠেছে। নানা জায়গায় মিলিটারি তো আছেই। ঢাকা ও শহর এলাকায় সৈন্যদের সাথে ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের খন্ড লড়াই হচ্ছে। গুলিতে বাঙালিরা মারাও যাচ্ছে। মুজিবের সাথে ইয়াহিয়া আর ভুট্টোর বৈঠকও হবে-হচ্ছে। স্লোগান উঠছে, জ্বালো! জ্বালো! আগুন জ্বালো! জয় বাংলা স্লোগান তো আছেই।
গ্রামে-গঞ্জের বাজারও প্রায়ই বন্ধ থাকছে। সব দিন হাটও বসে না। হরিচরণ ছোটাছুটি করে। স্লোগান দেয়। কেবল তার বউ লক্ষ্মী কেঁদে-কেটে বারণ করে, নইলে হরিচরণ দিনরাত অসহযোগ আন্দোলনেরই কাজ করত। মালোপাড়ায় বুড়োরা জড়ো হয়ে কথাবার্তা বলে। সবার মুখই থমথমে। দিন কীভাবে চলবে, তারা বুঝতে পারে না। তাদের বুকের ভেতরে ভয় – সমুখে মাৎস্যন্যায়, অরাজকতার মহাদুর্যোগ আসছে।
পঁচিশে মার্চের তমিস্র রাতে সেই মহাদুর্যোগ নেমে এলো। ভোররাতে পাশের ঘরের শ্যামল বাইরে থেকে ফিসফিসিয়ে ডাকে, হরি! ও হরি! খবরদার! আইজ কিন্তু বাইর অইস না। মিলিটারি নামছে! মিলিটারি!
এরপরও বউয়ের বারণ অগ্রাহ্য করে সকালবেলা হরিচরণ ঘর থেকে বের হয়ে নদী পর্যন্ত হেঁটে চলে যায়। মালোপাড়ার অন্য কেউ ওর সাথে যায় না। পথ জনশূন্য, ঘাট জনশূন্য।পল্লিগ্রামে এমনিতেই শব্দটব্দ কম হয়। তাই ঢেঁকির শব্দই সবচেয়ে জোরালো শোনা যায়। আজ সেই শব্দও হরিচরণের কানে আসে না। এমনই নিরেট নৈঃশব্দ্য। চারদিকে কেবল একটানা ঝি-ঝি-ঝি!
দিন-তিনেক পরে আরেক আচানক ঘটনা ঘটে। হরিচরণ দেখে শহর ছেড়ে কয়েকটি পরিবার উত্তরপাড়ায় পৈতৃক বাড়িতে ফিরে এসেছে। উদ্বাস্ত্তর মতো। হরিচরণ ভেবে কূল পায় না, যদি মিলিটারি গ্রাম পর্যন্ত চলে আসে তবে গ্রামের মানুষ কোনদিকে যাবে! কোথায় লুকাবে! ভগবান! দোহাই তুমার এমন বিপদ তুমি দিও না!
চৈত্রের শেষ, নবান্নের সময়। কিন্তু বাংলার মাঠে মাঠে কৃষক ফসল তুলতে সাহস পায় না। মালোরা পুরোদস্ত্তর মাছ ধরেনি অনেকদিন। আগে ছিল অসহযোগ আন্দোলনের ডাক। এখন তো ঘাতক মিলিটারি। পাকিস্তানকে উদ্ধার করতে পশ্চিম থেকে উড়োজাহাজে চড়ে এসেছে এরা। মুজিবকে ধরে নিয়ে গেছে। ঢাকায় ট্যাঙ্ক চালিয়েছে, কামান দাগিয়েছে। বহু ছাত্রাবাস, মন্দির ও রাজারবাগে পুলিশ দফতর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। পশুপাখির মতো বাঙালিদের মেরেছে। হিন্দু পেলে তো কথাই নেই। এখনো মারছে।
এইসব খবরে মালোপাড়ায় মানুষের বুকের ভেতরে মৃত্যু-ত্রাস হয়; এমন যে, মানুষ পেটের ক্ষুধা ভুলে যায়। কিন্তু ক্ষুধা ভুলে থাকারও তো একটা শেষ সীমা আছে। নিশুতি রাতে সবাই বসে। আলাপ করে। নানা প্রশ্ন ওঠে। এমনি করে আর কতদিন চলবে? ভারতে চলে যাবো? কোন পথ দিয়ে যাবো? পথে পথে তো মিলিটারি। সীমান্তও বন্ধ। অপেক্ষা করতে হবে? কিন্তু আর কতদিন? ঘরে তো কিছু নেই। আর অন্ন হলেও কী বাঁচতে পারবো? মিলিটারি এলেই তো মেরে ফেলবে।
বউ-বাচ্চারা কাঁদে। হরিচরণ কয়েকজন সাহসী জেলেকে সাথে নিয়ে মাছ ধরে আনে। সবাই মিলে খায়। কিন্তু বাজারে নেবার কথা ভাবতেও সাহস পায় না। কদিন আগে বাজারের ওইদিকে কাকে যেন মেরে রেখেছিল। তার লাশটা শিয়াল-শকুনে খেয়েছে।
তিন
গ্রামে শান্তি কমিটি হয়েছে। উমেদ আলীর নেতৃত্বে। একদিন সে সদলবলে মালোপাড়ায় হাজির। সবাইকে ডেকে ঘোষণা করলো, কমিটিতে হরিচরণকে রাখা হয়েছে। গ্রামে শান্তি আসবেই। ইসলাম অর্থ শান্তি।
পরের দিন কমিটির সভা উমেদ আলীর বাড়িতে। হরিচরণ গেল সে-সভায়। তবে ওরা দু’জন ছাড়া আর কেউ এলো না। উমেদ আলী বললো, হরি, দরকারি কথাটা আমিই তোমাকে বলি। কথাটা হলো, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করো। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
তার মানে?
তুমি বুদ্ধিমান। চারদিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখো। পালাবার কোনো পথ আছে কি? দেখতে পাও? নেই। একদম নেই। এখন মিলিটারি এলে হিন্দু বলে নির্ঘাৎ গুলি করে মারবে। কী, ঠিক কি না? আমিও বাঁচাতে পারবো না। চেষ্টা করলে বলবে, আমি হিন্দুর দোস্ত।
হু!
তবে ভয় পেয়ো না।
পাবো না?
না। মুসলমান হও, বেঁচে যাবে।
কি – ক্কি!
হ্যাঁ। নিজে বুঝতে চেষ্টা করো। পাড়ায় গিয়ে সবাইকে বুঝাও।
কিন্তু মালোপাড়ার কেউ নিজেদের ধর্ম ছাড়তে রাজি নয়।
লক্ষ্মী তার স্বামীকে বলে, তুমার মাথাটা গ্যাছে! বুঝলা?
কৃষ্ণদাসী ছেলেকে বলে, বাবা তুই আর যা-ই করস অধর্মের কথা কইস না।
তখন হরিচরণ কেবল নিজেকে বোঝায়, আগে প্রাণ, পরে ধর্ম। প্রাণ না থাকলে, কীসের ধর্ম?
সে পরদিন উমেদ আলীর সাথে মসজিদে যায়। সেখানে ইমাম সাহেবের কাছে সজোরে কলেমা পড়ে, …লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ!
আপনি এখন কলেমা তৈয়্যবা পড়লেন। এতে বলা হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই; মুহাম্মদ হচ্ছেন আল্লাহর রসুল। আপনি কি এই কলেমা সাহেদাহতে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন?
করছি।
আলহাম্দুলিল্লাহ! এখন আপনি একজন মুসলমান। মুসলমান হিসেবে আপনার নাম রাখলাম আতাহার আলী। আর শুনুন, আপনি আজ জোহরের নামাজে শামিল হবেন। এরপর আপনাকে কলেমা ও নামাজ পড়া শেখানো হবে।
কয়েক দিন ধরে ইমাম সাহেবের কাছে এই নও-মুসলমান কলেমা ও নামাজ পড়া শেখে।
চার
গ্রাম থেকে বাজার দু-মাইল পথ। জেলের পরনে লুঙ্গি। গায়ে গেঞ্জি। কোমরে গামছা। মাথায় মাছের চুপড়ি নিয়ে অনেকদিন পর আজ সে বাজারে যাচ্ছে। গতরাতে সে একাই নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিল। মালোরা কেউ তার সাথে যায়নি। তবে মাছ সে পেয়েছে ঢের। তার চুপড়ি ভরে গেছে।
পথ প্রায় জনশূন্য। দুজন লোক বাজার থেকে ফিরতি আসছে। হন্হনিয়ে যায়। কথা বলে না। মাথায় বোঝা নিয়ে কথা বলার সুযোগ জেলেরও কম। তবে আর কয়েক পা এগোলেই তো বাজার।
রোখ্খো! হল্ট! হঠাৎ পেছন থেকে কর্কশ একটা কণ্ঠস্বর। উর্দুতে বলছে, থামো!
সে থমকে দাঁড়ায়।
কীধার্ যাতা হ্যায়? কোথায় যাও?
বাজারে।
ঘুমো! ঘুমো! ঘুরে দাঁড়াও!
মাথায় বোঝা নিয়ে জেলে ঘুরে দাঁড়ায়। এ চরাচরে কাউকে চোখে পড়ে না। কেবল দেখতে পায় তার সামনে উদ্ধত একজন সশস্ত্র সৈন্য। সৈন্যটির হাতের বন্দুকের নল তার দিকে তাক্ করা, – ডগায় শাণিত সঙ্গিন।
সৈন্যটি বলে, টোকরি ওৎরাও! চুপড়ি মাথা থেকে নামাও।
সে মাথা থেকে চুপড়িটা নামিয়ে নিজের সামনে পথের মাঝখানে রাখে।
ইস্মে ক্যায়া হ্যায়? এতে কী আছে?
মাছ।
মাছলি?
হঁ। মাছ।
তোম্ হিন্দু, ইয়া মুসলমান?
মুসলমান।
ক্যায়া নাম? নাম বোলো!
আতাহার আলী।
আচ্ছা, আব কলেমা পড়ো।
কলেমা? আইচ্ছা… কলেমা পড়তাছি… লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ! লা ইলাহা…
বাস্, বাস! আব্ লুঙ্গি ওঠাও।
লুঙ্গি!
হাঁ, হাঁ, লুঙ্গি ওঠাও।
বোকার মতো আতাহার আলী দুহাত দিয়ে নিজের লুঙ্গি তুলে ধরে। তার নুনু দেখা যাচ্ছে। সৈন্যটি মাথা নিচু করে তার সংকুচিত সেই নুনু যাচাই করে। মুখটা বিকৃত করে থুথু ফেলে। তারপর ক্ষেপে গিয়ে বলে, মুসলমান তো খৎনা কিউ নাহি কিয়া?
আ… আ… না… না!
মাতারচোৎ! ঝুট কহা। তু মুঝসে ঝুট বোলা। মাতারচোৎ! তু মুসলমান নাহি, হিন্দু হ্যায়। হিন্দু! তু হিন্দু হ্যায়! খোদাকা দুশমন!
পলকে জেলের অন্তস্তলটি শুকিয়ে গেল। প্রাণপণে সে বলতে চাইলো – না না,… আমি হিন্দু ছিলাম, ধর্ম বদল করেছি, এখন আমি মুসলমান। কিন্তু তার ভীত হিম বুক থেকে কোনো শব্দই বের হয়ে এলো না।
সৈন্যটা গন্ডারের মতো ছুটে এসে বন্দুকের সঙ্গিনটা সোজা ঢুকিয়ে দিলো আতাহার আলীর বুকে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটে এসে পড়লো সৈন্যটির মুখে।
আক্ক্! করে আতাহার আলীর গলা থেকে একটা বিকৃত শব্দ বের হয়ে এলো।
সৈন্যটা দ্রুত ওর সঙ্গিনটা টেনে বের করে নিতেই আতাহার আলী ধীরে ধীরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গেল। নিজের রক্তের প্লাবনে।
পাকিস্তানি সৈন্যটি নিজের বিতৃষ্ণ মুখটা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বাজারের দিকে চলে যেতে লাগলো। ফিরেও তাকালো না।
কিন্তু…
…যদি ঘাতক এই সৈন্যটি চলে না যেতো, বরং কান পাততো, তবে সে শুনতে পেতো, সাবেক হরিচরণ মালো ও এক্ষণে আতাহার আলী নিজের শেষ আয়ুটুকু ব্যয় করে অস্ফুট কণ্ঠস্বরে কলেমা তৈয়্যবা পড়ছে… লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু…।