প্রেগন্যান্সী কেয়ারিং

প্রেগন্যান্সী কেয়ারিং
বাইরে থেকে এসেই দেখি সানজিদা কাপড় ধুচ্ছে। অথচ সে গর্ভবতী। ওয়াশরুমের সামনে দাড়িয়ে ডাক দিলাম,
-সানজিদা তোমাকে কেউ কি বলছে কাপড় ধুইতে? তুমি তো জানো এখন প্রেগন্যান্ট, সিরিয়াস মোমেন্টে আছো। কাপড় ধোয়ার জন্য আমি আছি, মা আছে।
-বসে আছি তো তাই করছিলাম। তাকে এভাবে কাজে দেখে রাগ উঠে গেল। বললাম,
-চুপ তুমি রেস্ট করো বিছানায়। ভারী কিছু প্রয়োজন হলে আমাদের বলবে। কাপড় ধোয়াটা একটা চাপ। তাছাড়া পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় তো বেশি। আম্মা ভেতর থেকে আওয়াজ দিলো,
-রায়হান কি হয়েছে, বউকে ধমকাচ্ছিস কেনো? বউ প্রেগন্যান্ট তো! সুন্দর করে কথা বল।
-না আম্মা কিছু না ও কাজ করতে গিয়েছে বলছিলাম রেস্ট নিতে। অযথা হঠাৎ বিপদ হলে তখন কি হবে ভাবতে হবে তো। আমরা তো অসভ্য না যে তাকে কাজ করাচ্ছি, মারছি করতে বলছি। শুধু শুধু চাপ নিবে কেনো।
আম্মা এসে সানজিদাকে বললো,
-বউ মা কি হয়েছে? আমরা থাকতে তুমি কেনো কাজ করতে যাও, আমাদের জানাবা তো? আমরা তো মরে যায়নি। সব বুঝি তো। আসো বিছানায় বসো এই সময় কেয়ারফুলি চলার উচিত কেননা তুমি মা হতে চলেছো, বলো এখন কি কিছু খেতে মন চাই তোমার?
– না আম্মা।
-আরে বলো তো? লজ্জা পাচ্ছো মনে হচ্ছে?
– না আম্মা তা নয়। তবে মাঝেমধ্যে টক খেতে মন চাই আর কিছু না।
-এই রায়হান শুনছিস বউয়ের জন্য ১কেজি তেঁতুল নিয়ে আয় ভালো দেখে। বৈয়াম ভরে রাখলে বউমা খাবে যখন মন চাই।
-জ্বি আম্মা যাচ্ছি।
-শোনো বউমা ভারী কিছু লাগলে আমাদের বলবে ডাক দিয়ে। এখানে ভয়ের কিছু নেই, তুমি এমন কাজে হাত দিয়ো না যাতে ক্ষতি হয়। সবকিছুতে আমাদের জানাবা।
-জ্বি আম্মা ঠিক আছে, যা বলবেন তাই করবো। ২ঘন্টা পরে…
-শোনো বউ, সবসময় খালি তেঁতুল খেলে চলবে না। আমি জানি মেয়েদের টক খাওয়া অভ্যাস প্রচুর। টক জিনিস ঘনঘন খাওয়া ভালো নয় শরীরের জন্য। সো মাঝেমাঝে খাও, সবসময় না। বাইরে থেকে কিছু খেতে মন চাইলে রায়হানকে জানাও এনে দিবে।
-আচ্ছা। আম্মা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-রায়হান বউমা খাওয়ার জন্য কিছু চাইলে এনে দিস।
-ঠিক আছে আম্মা তোমার এত চিন্তা করতে হবে না। আমি তো আছি তার পাশে।
আম্মা রুম থেকে চলে গেলে দরজা বন্ধ করে সানজিদার পাশে গিয়ে বসলাম। খুব ছোট করেই বললাম,
-দেখি পেটে একটু কান পেতে শুনি। আমাদের বেবি আর কতদূর। বউয়ের উঁচু পেটে কান পেতে দিলাম। খুব ভালো লাগছে। মজা করে বললাম,
-এই তো বাবু খুব তাড়াতাড়ি তুমি চলে আসবা। ডাক্তার বলে দিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে নতুন অতিথি হয়ে আসবে। সানজিদা লজ্জা পেয়ে বললো,
-হয়েছে, মাথা সরাও।
-এই তো সরাচ্ছি আরেকটু বলি।
-হয়েছে, বলছো তো, বাবুও শুনছে। আর বলতে হবে না।
-ওকে বললাম না। এই সময় আমার চাচা বিদেশ থেকে ফোন দিলো ডুবাই তে থাকে, ফোন রিসিভ করলাম,
-হ্যালো চাচা আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছো চাচা?
-ওয়ালাইকুমুস সালাম, ভালো আছি রায়হান তুই কেমন আছিস?
-এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো চাচা।
-বউমা কই? বউমা কে ফোন দে একটু কথা বলি।
-এই তো পাশেই আছে। সানজিদাকে দিলাম মোবাইলটা,
-হ্যালো ছোট আব্বা আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?
-ওয়ালাইকুমুস সালাম, ভালো আছি বউ মা, তুমি কেমন আছো?
-এই তো ছোট আব্বা ভালো আছি।
-তা কি অবস্থা সুস্থ আছো তো আল্লাহর রহমতে, কোনো সমস্যা তো নেই?
-জ্বি নাহ ছোট আব্বা, ভালো আছি।
-শুকরিয়া, আচ্ছা আমি তো এক মাস পর আসতেছি, তোমার জন্য কি আনবো বলো?
-জ্বি, কিছু লাগবে না, আপনি সুস্থভাবে ফিরে আসুন এটাই কামনা করি।
-জানি তুমি বলবে না, যাই হোক আসার আগে রায়হানের থেকে জেনে নেবো কি লাগবে। রায়হানকে ফোনটা দাও।
মোবাইল আমার দিকে এগিয়ে দিলো,
-হ্যালো চাচা বলো।
-রায়হান, তাহলে আমি এখন রাখি আরেকদিন কথা হবে। বউয়ের দিকে খেয়াল রাখিস, আল্লাহ হাফেজ।
-হ্যা চাচা অবশ্যই, আল্লাহ হাফেজ।
সানজিদা আমার বউ, বিয়ে করেছি পারিবারিকভাবে দেড় বছর হলো। সানজিদা প্রেগন্যান্ট, ডাক্তারের ভাষ্যমতে আমরা দুজনই আর মাত্র দুইদিন পর বাবা মা হবো, যদি আল্লাহ চান। আমি একটা ব্যাংকে জব করি। সাত দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছি সানজিদার পাশে থাকার জন্য। কারন এসময়টা একজন স্বামী হিসেবে স্ত্রীর পাশে থেকে সাপোর্ট করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যা আমি চেষ্টা করছিলাম। সানজিদা কিন্তু মনের মতো শশুর-শাশুড়ী পেয়েছে। বাবা মায়ের এক ছেলে আমি, তাই বউয়ের প্রতি যত্নের শেষ নাই সবার যেন। রাত হয়েছে, আব্বা দোকান শেষ করে আসলো বাসায়,
-রায়হান বউমার কি অবস্থা। কোনো সমস্যা হয়নি তো?
-না আব্বা।
বাবা মা সবাই মিলে রাতের খাওয়া শেষ করলাম। নিজেই কিনে আনা ফলমূল কাটছিলাম সবার জন্য। কাটার শেষ পর্যায়ে অসতর্কতাবশত হাত একটু কেটে গেল। আমি জোরে ‘উফ’ করে উঠলাম। এদিকে আব্বা-আম্মা তা শোনে দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে, বউমার কি হয়েছে? সানজিদা জবাব দেয়,
-আমার কিছু হয়নি তো আপনার ছেলের হাত একটু কেটে গেছে। আম্মা বললো,
-ওওওও ভয় পেয়েছিলাম। আমি ভাবছি তোমার কিছু হয়েছে। আমার পাশ থেকে ফল গুলো নিয়ে সানজিদাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আব্বা একপাশে দূরত্ব বজায় রেখে আম্মা এক পাশে বসে খাইয়ে দিচ্ছে। কেটে গেল দুইদিন সানজিদা আমার দিকে তাকিয়ে আছে বেডে শোয়া অবস্থায়। নার্স এসে বললো,
-কনগ্রেচুলেশন মিঃ রায়হান আপনার মেয়ে হয়েছে। এদিকে আব্বা-আম্মা বসা থেকে দৌড় দিল সানজিদা ও নাতনীকে দেখতে। আব্বা বললো,
-কই, আমার নাতনীটা দেখি ওলে রে কাঁদে না। আমি কাছে গেলাম সানজিদার। দীর্ঘক্ষন থাকার পর বিকালে রিলিজ দিলে বাসায় গাড়ি করে নিয়ে আসলাম সানজিদাকে। বাকিটা বাহুডোরে করে ধরে হাঁটিয়ে ঘরে আনলাম। রাত হয়ে এসেছে, হঠাৎ দেখি বউ কাঁদছে আর চোখের পানি মুছছে। কেনোই বা কাঁদছে বুঝতে পারলাম না,
-সানজিদা কি হলো হঠাৎ, কাঁদছো কেনো?
-আমি এমন ফ্যামিলি পেয়েছি ভাবতেও পারিনি প্রেগন্যান্সিকালীন এত আদর, যত্ন করবে শশুর-শাশুড়ী, তুমি ছোট বাবা এক একটা যেন আমার রক্তের মতো। আর তোমার কথা থাক। বর্তমানে এমন পরিবার আছে ভাবা যায় না। সত্যি বলতে প্রেগন্যান্ট এর ব্যাথা, প্রসব বেদনা আমিই ফিলই করিনি। কাঁদছি এই জন্য যে এরকম ফ্যামিলি যদি খুব তাড়াতাড়ি হারিয়ে ফেলি তাহলে কি হবে?
-হয়েছে চুপ! এরকম কথা বলতে নেই। আল্লাহ যতদিন চাই আমরা আছি থাকবো পাশে একে অপরের। সানজিদার কান্না দেখে জড়িয়ে ধরলাম সেও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বিয়ের পর একটা মেয়ের স্বামীর বাড়ি ছাড়া আছেই বা কি? বর্তমান, ভবিষ্যৎ তো আমরাই। যে মেয়ে নিজের জন্মদাতা বাবা মাকে হুট করে ছেড়ে চলে আসে তার প্রতি অবহেলা নয়, আশা, ভরসা, ভালোবাসা থাকা উচিত সবসময় তাই মনে করি। অবশ্য এমনটা হয়না বেশিরভাগ পরিবারই অত্যাচার করে। তবে চাইলেই হয়।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত