সুহাদা সেজেগুজে মুখে হরেকরকমের ক্রিম মেখে, গাঢ় নীল শাড়ী পরে খাটের এক পাশে শুয়ে আছে তার বিপরীত পাশে আমি শুয়ে আছি।
সুহাদা আমার স্ত্রী হওয়ার পর ও দু’জন দুমুখো হয়ে শুয়ে আছি তার একটাই কারন প্রতিটা কথায় কথায় সে আমাকে সন্দেহ করবে। এই সন্দেহ টা সবশেষে সুহাদার জন্য ভালো হয় পুরো খাট জুড়ে সুহাদা হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকে আর আমাকে এক কোনায় থাকতে হয়। তার কারন সুহাদাকে একটা ছোটখাটো হাতির সাথে তুলনা করলে ও সম্ভবত ভুল হবে। সারাদিন ঘুম,খাওয়া আর আমাকে সন্দেহ ছাড়া কিছুই করে না। সেদিন রাত ১১ঃ৪৫ মিনিট হঠাৎ মোবাইলে একটা টুং করে মেসেজ আসলো। আমি মূহুর্তের মধ্যে জেগে যে মোবাইলটা ধরতে যাবো তেমনি আমার বা পাশ থেকে ভূমিকম্প মতো কেঁপে উঠলো সুহাদা। আমি মোবাইলের এক কোনায় ধরতে দেখি আর এক কোনায় আর একটা হাত। হাত দেখে সুহাদা কে জিজ্ঞেস করলাম,,,,
– এইটা আমার মোবাইল তুমি ধরলে যে? সুহাদা চোখগুলো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আর আমাকে বলছে,,
– তোমার মোবাইল বলেই ধরেছি এতো রাতে কে তোমাকে মেসেজ দিয়েছে?
– হয়তো কেউ মেসেজ দিয়েছে। এইটা আমার পারসোনাল তুমি দেখবে কেনো?
– পারসোনাল নাকি তোমার এক্স গার্লফ্রেন্ড?
– এক্স গার্লফ্রেন্ড মানে ? তুমি তো জানতে যে আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিলো না।
– ওরে আমার সহজ সরল বর প্রতিদিন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে পাশের বাড়ির ভাবি গোসল করে আসার পর জামা-
কাপড় ছড়িয়ে দেয় আর তুমি হা করে তাকিয়ে থাকো। আর আমাকে বিশ্বাস করাতে এসেছ যে তোমার এক্স ছিলো না। আমি এইসব ছাইপাঁশ বিশ্বাস করি না। আমি এখন মোবাইলের মেসেজ দেখবো।
– কিসের ভাবি কোন ভাবি? তোমার বাসায় থাকি বলে অকারণে দোষ দিচ্ছ।
যাইহোক আজ দরকার হলে যুদ্ধ হবে তবুও আমি বেঁচে থাকতে এই মেসেজ তোমাকে দেখতে দিবো না বলে দিলাম।
আমি আর সুহাদা মোবাইল নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে করতে এক পর্যায় মোবাইল টা হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম মোবাইল টার দিক অতি শখের একটা মোবাইল। তারপরও সুহাদা শান্ত না হয়ে ভাঙ্গা মোবাইল নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম,,,
– ভাঙ্গা মোবাইল টা কে ছেড়ে দেও।
– আমি যতক্ষণ না পযন্ত আসল তথ্য টা না জানতে পারি কোনো ছাড়াছাড়ি নাই। এইটার সবকিছু মেরামত করে দেখবো মেসেজ কার ছিলো।
– বিশ্বাস করো আমাকে।
– বললাম তো এই মোবাইল নিয়ে দরকার হলে আমি পুলিশের কাছে যাবো যেভাবে হোক আমাকে মেসেজ দেখতে হবে।
– এইখানে পুলিশ আসলো কেনো? আর এই মোবাইলে ডিসপ্লে এলাকায় পাওয়া যাবে না এর জন্য ঢাকা যেতে হবে।
– দরকার হলে আমি সেখানে যাবো।
– তোমার কি মাথা নষ্ট হয়েছে? কি সব বলছ? মোবাইল টা আমার কাছে দেও হয়তো আমার অফিস থেকে আমার কোনো বন্ধু মেসেজ দিয়েছে।
– আমি তোমার সেই বন্ধু টা কে দেখতে চাই এতো রাতে কিসের মেসেজ? আমার বাবার অফিস সেইটা আর কার এতো বড়ো সাহস এতো রাতো মেসেজ দেয়।
– দেখো এইবার কিন্তু খুব বারাবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। মোবাইল টা দিতে বলছি দেও।
– কি করবা তুমি শুনি? সাহস থাকলে টাচ করে দেখো।
সুহাদার মুখ থেকে হুমকি সরূপ কথা শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে যাই। কারন সুহাদা শরীর আমার শরীরের চেয়ে দ্বিগুণ মোটা সুতরাং আমার রাগ উঠলেও কিছু করতে পারবো না বরংচ নিজের বিপদ উল্টো ডেকে নিয়ে আসবো। এতসব ভেবে সুহাদার উদ্দেশ্য বললাম,,,
– তোমার সন্দেহ নিয়ে তুমি থাকো আমি তোমার সাথে আর থাকবো না। আমি আগামীকাল বাসায় থেকে বের হয়ে যাবো।
– যা যা,,, জানা আছে আমার। আমার বাবার টাকা সংসার চলে আমার বাড়িতে থাকা হয় আবার আমার উপর রাগ। দেখা যাইবো কোথায় যাস তুই!
– এইবার কিন্তু লিমিট ক্রসিং করেছ। তুমি থেকে সোজা তুইও চলে এসেছ।
– কিসের লিমিট ক্রস এর চেয়ে বেশী কিছু হবে।
সুহাদা রেগেমেগে রুম থেকে বের হয়ে অন্য রুমে চলে গেলো। আমি ও ভোরের অপেক্ষায় ছিলাম কখন এই বাড়ি থেকে বের হবো। যৌতুক নিয়ে বিয়ে করলে কিংবা ঘর জামাই থাকলে আরও কতকিছু শুনতে হয় এইটা তো কমই।
পরের দিন ভোর হতে না হতে পালানোর চেষ্টা করি কিন্তু বাহির থেকে লক করা দরজা। দরজা ধাক্কা দিতেই বিকট শব্দ হয় এতে করে সুহাদা কানে শব্দ চলে যায়। সুহাদা দরজার ওপাশ থেকে বলল,,,
– যতদিন না মোবাইল মেরামত না হচ্ছে ততদিন তুমি রুম থেকে বের হতে পারবা না। এই রুমে বন্দী হয়ে থাকবে। এমনে এমনে আমার বাবা তোমার মা বাবাকে এতো টাকা যৌতুক দিছে? যৌতুক নেওয়ার সময় তো খুব ভালো লেগেছে তোমার পুরো পরিবারের। খালি একবার মোবাইল টা অন হতে দেও কার মেসেজ সেইটা দেখে নেই তারপর দেখাচ্ছি যৌতুকের ঠেলা।
আমার চুপ করে থাকা ছাড়া আর কিছুই বলার ছিলো না। বাবা-মা’কে বললাম এতো করে আমি একটা জব করি তারপর বিয়ে করব কিন্তু তাঁদের সহ্য হয় নি মোটা অংকের টাকা দেখে লোভ সামলাতে না পেরে আজ আমাকে বিয়ে নামে বিক্রি করে দিলো। আজ আমি সুহাদার বাবার কেনা গোলাম। তাই যা ইচ্ছে সুহাদা বলে যেতে পারে। রুমে বন্দী আছি টানা একদিন। রুমের ভিতরে থেকে যেনো শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। জানালার পাশ দিয়ে দেখলাম ঠিক সন্ধ্যা নেমে আসলো আকাশের দিক তাকিয়ে বুঝতে পারলাম। রাত ৯ টায় হঠাৎ রুমের দরজা কে যেনো কড়া নাড়লো। তা শুনে যেনো কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেলাম। দরজার সামনে যেতে সুহাদা আমার দিক মোবাইল ছুঁড়ে মারলো। আমি কিছু না বলে সোজা দাড়িয়েছে। সুহাদা আমার দিক চোখগুলো বড়ো বড়ো করে তাকিয়েছে। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সুহাদা বলে উঠলো,,,,
– বেঁচে গেলে রবি অফিস থেকে মেসেজ এসেছিলো। আমি কিছুটা স্বস্তির স্বরে বললাম,,,,
– দেখলে,,, কি বলেছিলাম? আমাকে অকারণে সন্দেহ করেছ। সুহাদা নাক ফুলিয়ে রাগী স্বরে বলল,,
– সন্দেহ তো এখানেই শেষ হয় নি। এই মেসেজ রবি অফিস থেকে ছেলে নাকি মেয়ে মেসেজ করেছে সেইটা জানার পর বুঝতে পারবা। সুহাদার কথা শুনে জায়গা রিতীমতো বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম উপরে। কিছুদিন যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সুহাদা এইসব ভুলে যায়। আবারও নতুন সন্দেহ খুঁজার চেষ্টা করছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প