আজ বেষ্টফ্রেন্ডের হবু বরকে বিয়ে করলাম। জানি শুনতে অনেকটা অদ্ভুদ শোনায় কিন্তু সবই পরিস্থিতির স্বীকার কিছুক্ষণ আগের ঘটনা বিয়েবাড়ি অথচ কোনো শোর-গোল নেই কেননা বর পালিয়ে গেছে তার প্রেমিকার সাথে। বাবা লজ্জায় কোনো বলছে না। চারদিকে থম থম পরিবেশের মধ্যে হঠাৎ করে রাজিব আহমেদ বলে উঠে এ বিয়ে হবে আমার ছেলে ইসতিয়াকের সাথে হবে। তার এমন বার্তা তে আরেক ঝড় শুরু হল কেননা সবাই জানে ইসতিয়াকের বিয়ে মেহেরীনের সাথে ঠিক করা। সবার বারণ শর্তেও রাজিব আহমেদ কোনো কথা শুনতে চান নি। কেননা তার বেনের বোনের স্মমাণ রক্ষা করতে হবে। হ্যাঁ যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সে ফারহান আহম্মেদ। ইসতিয়াকের ফুপাত ভাই।
এবার পরিচয়টা দেই,,,,আমি সাবা রহমান অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। বাবা-মায়ের বড় মেয়ে। বাবা পলিটেশিয়ান ।আমার ভাই সাবিত ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে ।ছোট থেকে আমাকে বুঝানো হয়েছে বড় বলে সব কথা মেনে চলতে হবে,একদিন ছেঁড়ে চলে যেতে হবে তাই এত ভালোবাসার প্রযোজন নেই,আমি উল্টা পাল্টা কিছু করলে পরিবারের স্মমান নষ্ট হবে তাই পরিবারের কথা ভেবেই নিজের চাওয়া,পাওয়া,ইচ্ছা,আকাঙ্খাকে মেরে ফেলেছি। সত্যি বলতে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় যখন পরিবারের কেউ সাপোর্ট করেন না আমার এই অসহায়ত্ব কাটাতেই আমার লাইফে এসেছিল মেহেরীন।
ছোট থেকে কাত্তকে পাশে না পেলেও মেহেরীণ সবসময় আমার সাথে থাকত। এই ঘুণসুটিতে আমরা বড় হতে লাগলাম, ইন্টারে পরীক্ষা শেষে হঠাৎ করে আমাদের লাইফে ইসতিয়াক আসল মেহেরীনের সাথে তার আগে পরিচয় ছিল যার সূত্রে আমার ও পরিচয় হয়। মেহেরীণ শুধু আমাকে বলেছিল ইসতিয়াক তার ফ্রেন্ড আর ফ্রেন্ডের থেকেও বেশিকিছু তা আমার জানা ছিল না। কিন্তুু ইসতিয়াক খুব ফ্রেন্ডলি ছিল তাই আমার ও তার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায় সত্যি বলতে তাকে এক পর্যায়ে ভালোবেসে ফেলি। তখন ও ইসতিয়াক-মেহেরীনের সর্ম্পক অস্পষ্ট ছিল তাই আমার ভালোবাসার কথা তাকে বলিনি। মেহেরীন প্রায়ই ইসতিয়াকদের বাসায় যেত ওদের পরিবার ও মেহেরীনকে পছন্দ করত কিন্তুু এসব কিছুই আমার ছিল অজানা। একদিন মেহেরীন বলল-
—-জানিস আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সামনের মাসে!!
—-কী বলছিল?congratulation! তো কে সে?
—-আরে তুই চিনিস তাকে আর আমাদের ৩বছরের রিলেশনের পর ফাইনালি ইসতিয়াকের ফ্যামিলি রাজি হয়েছে।
আজ সব স্পষ্ট যে ওরা একে অপরকে ঠিক কতটা ভালোবাসে! কথাটা শোনামাত্র আমি ভেবে নিয়েছে আর যাই হোক ওদের লাইফে থেকে দূরে চলে আসব,কেননা ছোট থেকেই যে সব সময় সাথে ছিল তার কেড়ে নিতে পারবনা। তাই নিজের কষ্ট গুলোকে মাটি চাপা দিয়ে বিদায় জানিয়ে আসলাম। বাসায় আসতেই আরেক শক্ড খেলাম বাবা আমার বিয়ে ফারহানের সাথে ঠিক করেছে হ্যাঁ ও বলে দিলাম।কেননা আমি প্রেমে এতটাই পাগল ছিলাম যে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমার লাইফে কোনো সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি না।
দেখতে দেখতে বিয়ে দিন চলে আসল !সবার কও শোর-গোল কিন্তুু আমার কোনো অনুভূতি নেই কারন হয়তো জানি আবার জানি না।কিছু দিন আগে মেহেরীন-ইসতিয়াক সহ বাকী সব ফ্রেন্ডরা জানতে পারে আমি ইসতিয়াককে ভালোবাসতাম! সেই দিনই সব বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যায় সবার সাথে। অনেক কেঁদে ছিলাম সেদিন! কিন্তুু তা নিয়ে কারও মাথাব্যাথা নেই।আজ আর আমার কেও নেই,,সবার সামনে পুতুল হয়ে বসে আছি। পরের ঘটনা তো বল্লামই,,,,অনিচ্ছ্বা শর্তেও বিয়েটা হয়ে গেল সব ঝামেলা শেষে ইসতিয়াকদের বাড়ি আসলাম কিন্তু কেউ আমাকে মেনে নিতে রাজি নয়। বর্তমানে সাজ-সজ্জা বিহীন রুমে বসে আছি আর ভাবছি ইসতিয়াক আমাকে মেনে নিবে?সে ঘৃণা করে আমাকে! হঠাৎ করেই সে রুমে এসে হেঁচকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল সঙ্গে সঙ্গে কাচের চুরি গুলো ভেঙ্গে হাতে ঢুকে পড়ল।রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে বলল —–
—-মেহেরীণকে নিজের বোনের মত ভাবতিস না? তাহলে কীভাবে পারলি বোনের ভলোবাসা কেড়ে নিতে?আর ভালোবাসিস আমাকে তাই না?লজ্জা করল না?
—- বিশ্বাস করুন আমি নিরূপায় ছিলাম বাবার কথা ভেবে বিয়েটো……
—- ও এখন বাবার নাম দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছিস তুই না করলে বিয়েটো হতো না !
একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ তোর মত প্রতারককে আমি কোনো দিন ভালোবাসব না। আর বিয়ে করলেই ভেবেছিস সংসার করবি? সেগুঁড়ে বালি,,এক মাসের মধ্যে তোকে ডির্ভোস+মেহেরকে বিয়ে করব। বলে রুম থক চলে যায়। এদিকে আজ যেনো নিজেকে এতিম মনে হচ্ছে বিদায় জানানের সময় বাবা-মা একটা কথাও বলেনি হয়তো তাদের বোঝা কমেছে! কী দোষ ছিল আমার যার জন্য সবাই ছেড়ে গেল?অশ্রু যেন থামছেই না।সকালে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই দেখি সবাই অদ্ভুদ চাহনিতে দেখেছে শাশুড়ি আর ননদ বলে দিয়েছে আমাকে কোনো দিন বউ হিসেবে মানবে না। এভাবেই দিন যেতে লাগল যার জন্য এই নরকে আসলাম সেই বাবা সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। ইসতিয়াক কোনো কথা বলেনা কারণ সে আমাকে ঘৃণা করে।
দিন দিন শাশুড়ি আর ননদের অত্যাচার বাড়তেই লাগল আমাকে তাড়ানোর জন্য,,,,,আজ অনেক কষ্ট হচ্ছে কারণ ডাক্তার বলছে আমার কিডনি নষ্ট বেশি দিন বাঁচব না।কিন্তু খুশিও এইভেবে এবার মনে হয় সবাইকে মুক্তি দেয়ার সময় এসেছে। তাই শুভ ভাইয়াকে (ইসতিয়াকের বেস্টফ্রেন্ড) ফোন দিয়ে ডির্ভোস পেপার রেডি করতে বললাম। আজ মাসের শেষদিন পেপার নিতে ক্যাফেটেরিয়া গিয়ে দেখি ভাইয়া আর ইসতিয়াক ঝগড়া করছে কিন্তু কোনো? সাথে মেহেরীনও ছিল। উনি আমাকে দেখেই থাপ্পর বসিয়ে দিলেন দেয়ালের সাথে চেপে বলতে লাগলেন,,
—-তোর মত এত দুশচরিত্রা মেয়ে আমি দেখি নাই, আমার বন্ধুকে নিজের পক্ষ বাদিতা করতে দাড় করিয়েছিস। এতই যখন তোর জালা ছিল পতিতালয়ে যেতি।
—-এবার থাম কী বলছিস জানিস ওর,,,,,,(শুভ)
—-দেখলি…..
ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিল। আজ ওনার বলা কথাগুলো তীরের মত আঘাত করছে। অনেক কষ্টে উঠে ছলছল নয়নে মেহরীন-ইসতিয়াককে শেষ দেখে বেরিয়ে এলাম। রাস্তায় বেদিশা হয়ে হাটছি জনি না গন্তব্যে কোথায়,,,আজ মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে পরাজিত !নোনা জল গুলোও আমার কষ্টের কাছে হার মেনেছে !আজ শূন্যতা পুরো ঘিরে নিয়েছে আমায়। আজ আমিও হার মেনে নিয়েছি কেননা সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায়না আমারটা নাহয় অপূর্ণতায় থাক। জীবনে সবাই সব কিছু পায় না আমি ও পাইনি কারও ভালোবাসা!
কী দোষ ছিল যার কারণে বাব-মা কোনো দিন ভালোবাসেনি,কেও কোনো দিন আমার জন্য ছিল না! সারাটা জীবন একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কেঁদেছি তাও পাইনি। হয়তো এটাই আমার নিয়তি ছিল,,,,,,এসব ভাবতে ভাবতেই একটা গাড়ি ফুল স্প্রিডে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় আর মূহুর্তের মধ্যে চারদিকে রক্ত ছিটিয়ে পড়ে। আমার চোখের সামনে বার বার ইসতিয়াকের প্রতিছ্ববি ভেসে উঠছিল জানি না কেন? না ছিল ভালোবাসা,না ছিল মায়া,না ছিল বাধঁন তাই চোখ দুটো নিশ্বাসের সাথে বন্ধ হয়ে আসলো |
গল্পের বিষয়:
গল্প