:- ও হারু মিয়া খাড়াও না । জলিল ব্যাপারির কন্ঠ শুনে থেমে যান হারুন কৃষক ।
:- কই যাও হারু মিয়া?
:- বাড়ি যাইতেছি জলিল সাহেব।
:- ও বাড়ি যাইতেছো । হারুর বেটি তো ধাঁমড়ি হইছে না মিয়া?
:- হ হইছে জলিল সাহেব। হারুন কৃষকের কথা শুনে অাধ পাকা দাঁড়িতে হাত বুলানি দেয় জলিল ব্যাপারি।
:- তা মিয়া বেটির কি আইবুড়া করবা নাকি? লোকে কি কয় শুন না?
:- শুনি তো জলিল সাহেব কিন্তু কি করুম কন, বেটি পার করতে কমছে পয় বিঘা ধানের ঠ্যালা।
:- তাও ঠিক মিয়া । এত ট্যাকা কই, জমিও খালি আমনের তুমার আর কিছু পিজের।
:- এর লাইগা জলিল সাহেব আমি আর পাটায় জোর পাইনা বেটির বিয়েতে আগাইতে ।
:- কিন্তু বিয়ে হইলো গিয়া ফরজ বেটি ধাঁমড়ি হওনের পর যতদিন আইবুড়া থাকব বাপ মার দুজগের আগ তুত বাঁড়বো গিয়া। কথাটা শুনে হারুন কৃষকের হৃদয় কাঁপন দিয়ে ওঠে।
:- কন কি সাহেব! আইসলে আপনি মুরুব্বি হজও করছেব । আমাগো তো অত জ্ঞান নাই । কুরান হাদিছ অত বুঝে আহে না ।
:- যা কইলাম সত্য বুঝলা । মককা থেইক্কা শুনে আইছি।
:- তাহলে এহন কি করা যায়? নামাজ কালামও পড়ি নাই যুদি আবার দুজকের আগ বাড়ে তাইলে তো আর বাঁচন নাই।
:- বেটিরে বিয়া দাও চেহারা শুনতিও ভালা।
:-কিন্তু এত ট্যাকা ক্যামনে জুটাই। জলিল ব্যাপারি মনে মনে খুব খুশি হন।
:- তয় শোন মিয়া তুমারে ভালা একটা বুদ্ধি দেই।
:- কি বুদ্ধি জলিল সাহেব?
:- মাইয়রে কিছুদিনের লাইগা সৌদি পাঠাও।
:- সৌদি?! হেতো অনেক দূর অনেক খরচা লাগব । আর যাইয়া সমস্যা ক্যামনে ঠিক হইব?
:- শুনো মিয়া তুমার এত চিন্তা নাই। আমি খরচ বহন কইরা পাঠায় দিব। ওই হানে যাইয়া বছরখানেক আল্লার ঘরের কাছাকাছি বাড়ি বাড়ি পরিষ্কার করনের কাম করব হাতে ট্যাকাও আইবো, সোয়াবও কামাই হইব।
:- জলিল সাহেব আপনে দিবেন খরচা?! আপনে বড়ই দিলদার মানুষ । আপনের বড় মেহেরবাণী হয় আপনে মানুষ না ফেরেস্তা।
:- আরে মিয়া । গ্রামের বেটি কর্ম করলে তো আমাগোই সুনাম। হঠাৎ আলোচনার মাঝে উপস্থিত হন সমির মাস্টার । এখানকর শের খা সরঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
:- আরে জলিল মুরব্বি যে। কি খবর আপনাদের?
:- ভালা ভালা । ( জলিল তার উপস্থিতিতে অসন্তুষ্ট ভাব দেখাচ্ছে)
:- আরে মাস্টার সাহেব যে ।
:- হারুন ভাই কি অবস্থা? কেমন যায় দিনকাল?
:- আর ভাও দিনকাল বেটি ধাঁমড়ি হইছে বিয়া দিতে পারতেছিনা ট্যাকার জন্য।
:- কি বলো হারুন ভাই সবে ১৬ বছর হলো এতেই বিয়ের চিন্তা উঠে গেছে?
:- আরে মাস্টার মিয়া তুমি তো চক বোর্ড বুঝ ধর্ম কর্ম জ্ঞান তোমার আছে নাকি?
:- মুরব্বি ঠিকই বলছেন। তা কোনো পথ বের করছো হারুন ভাই?
:- হ ভাও জলিল সাহেব আমার মেয়েরে সৌদি পাঠায়বেন?
:- বলো কি ভাই? সত্যি নাকি মুরব্বি? জলিল ব্যাপারি এত ইতস্ত হয়ে হ্যা-সূচক মাথা নাড়ে।
:- তা মুরব্বি আপনি ওখানে পাঠায় দিবেন তাতে লাভ কি?
:- আরে ভাও কাজও দিবো তো ঠিক কইরা উনি।
:- বাব বাহ জলিল মুরব্বি আদম শ্রমের লাইসেন্স আছে নাকি আপনার । জলিল ব্যাপারি রেগে যান।
:- মিয়া মাস্টার তুমি কি মনে কর? আমার দোস্তর বেটার পাকা লাইসেন্স আছে বুঝলা ।
:- তা কবে থেকে পাঠায় সে? জলিল ব্যাপারি আমতা আমতা করে বলে
:- এইতো গত বছর থেকে ।
:- মেয়ে তো মুরব্বি আমরা পাঠাবোই কিন্তু আগে পুলিশে খোজ নিব, ব্যুরোতে খোজ নিব, বৈদিশিক আয় সংক্রান্ত অফিসে খোজ নিব তারপর।
:- আরে মিয়া গেলেই এরা ট্যাকা নিবো, হুদাই খরচ হইব।
:- হউক তাও মেয়েরে না জেনে বিদেশ পাঠাবো না । হারুন কৃষক চুপ করে দুজনের কথা শুনতেছে।
:- মুরব্বি সময় থাকতে সোজা হন মানব পাচারের ধান্দা শুরু করার আগেই বন্ধ করেন । রাগে ফুসতে ফুসতে স্থান ত্যাগ করেন জলিল ব্যাপারি।
:- চল হারুন ভাই বাড়ির দিকে যাই।
:- কিন্তু ভাও উনি যা কইল?
:- কান দিও না। চোরাভাবে আদম পাচার করার ধান্দা । সৌদি নিবে কি অন্য কোথাও জানি না। তবে নিয়ে নানা অমানবিক কাজ করাবে। নারী আর শিশু এদের প্রধান নিশানা।
:- কিন্তু ভাই প্রতি বচ্ছর তো অনেকেই যায়!
:- সরকারিভাবে এবং বৈধ লাইসেন্স প্রাপ্তরাই মানবশ্রম রপ্তানি করার অধিকার রাখে তারপরও প্রেরণের পূর্বে সব জেনে বুঝে নেয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ব্যুরো বা অন্য যেকোনো বৈদেশ সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া। খোজ নেয়া উচিত যেখানে কাজ দেয়ার অঙ্গিকার করছে সেখানে আসলেই কাজ আছে কিনা। তারপর প্রেরণ করতে হবে।
:- সত্যি তুমি না আইলে মাস্টার আমি অনেক বড় ভুল কইরে বসতাম। তারপর দুজনেই কথা বলতে বলতে যার যার বাড়ির দিক দিকে পা বাড়ায়।
গল্পের বিষয়:
গল্প