আজ আমার ছাত্রী রিমির বিয়ে। বাসায় গিয়ে পড়াতাম একটানা ৫ বছর। এখন অর্নাস সেকেন্ড ইয়ার। ছেলে বিসিএস ক্যাডার। হাতছাড়া করেনি পরিবার। রিমি ছোট্র একটা মেসেজ দিয়েছে আমাকে। ও লিখেছে,,,” এই বিয়েতে আমার মত নেই “। আমি আর কি বলবো। ভালো কোন পাঙ্জাবিও নেই আমার। মেসমেট জহিরের পাঞ্জাবিটা নিয়ে গায়ে চাপালাম। খুব যে মানিয়েছে তা বলা যাবে না।
চশমা খুজছি। চোখে দিলাম। যখন ওদের বাড়িতে গেলাম, দেখলাম ৪ তলা বাড়িটা নিয়ন বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাড়িতে কতশত মেহমান। ধনীদের সাথে নিজেকে মানানোটা বড্ড কঠিন। রাত প্রায় ১০ টা বাজতে চলল। ক্ষুধা লেগেছে একটু। এক টেবিলের কোনে বসলাম। হঠাৎ রিমি এসে আমার হাত ধরেছে আর বলছে,,,, ” কুৃত্তার বাচ্চা আমারে অন্য ছেলের হাতে তুলে দিয়ে তুই গিলছিস। ওঠ আজকে তোরে খুন করবো “। এই রিমিকে আমি কখনও দেখিনি,,, শুনেছি বড্ড রাগী। আমিতো অবাক,,, রিমির সাথে আমার এমন কোন সম্পর্ক নাই। আমি বললাম,,, ” কি বলছো এসব তুমি। আমি কি করলাম। থামো রিমি, বাড়ি ভর্তি মেহমান “।
— “‘এই কুত্তা তুই জানিস না আমি তোরে পছন্দ করি। আমি তোকে ছাড়া বাচবো না। তুই আমাকে কখনও বুঝেছিস। এই ছুরি দিয়ে আজ তোরে আমি খুন করবো “। ততক্ষনে বাড়ির সব মেহমান চলে এসেছে। রিমির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি কিছুই বলতে পারছি না। আমি রিমির আম্মুকে বললাম,,,,,আন্টি দেখেন আমি কিচ্ছু জানি না। ওর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আঙ্কেল প্লিজ,,, ওরে থামান। আমি এসবের কিছুই বুঝতে পারছি না “।
রিমি চিৎকার করে বলতে লাগল,,, ” তুই তো কিছুই বুঝিস না। তোরে ৫ বছর ধরে বুঝায়ছি। বুঝিসনি। আজও বুঝবি না। তুই কি ভাবছিস আমাকে আজীবন কাদাবি। কুত্তা তোরে আজ আমি শেষ করে ফেলবো। তুই জানিস না তোরে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। চল এখনই তুই আমাকে নিয়ে পালাবি। তোমরা যদি কেউ আমার কাছে আসো তবে নিজেকে এই ছুরি দিয়ে শেষ করে দেব “। আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। এই মেয়ে বলে কি। আমার মত বেকার, গরীব, অসুন্দর একটা ছেলেকে কেন কেউ ভালবাসতে যাবে। রিমি আবার ও বলে উঠলো,,,,,” এই কুত্তা চল,, এখনি পালাবি আমাকে নিয়ে। ঐ ব্যাগটা নে, ওতে আমার জামা কাপড় সব। চল পায়ে কি শিকড় গজালো। দেখি,,,,” বলেই আমার পায়ে ছুরি মারতে গেল । কোন রকমে বেচে গেছি। উপায় না পেয়ে ওকে নিয়েই বের হলাম। ও একটা গাড়ীতে ওঠালো। গাড়ীতে দেখি আমার বন্ধু অয়ন,আর রিমির কয়েকজন বান্ধবী। সোজা কাজী অফিস। আমি রিমিকে বললাম,,,, ” দেখো রিমি আমি বিয়ে করতে পারবো না। আমি বাসায় কি জাবাব দেব। আমার বাবা মা আছে ।
— ” তোর গুষ্টি কিলাই,, দে ফোন দে “। মায়ের ফোনে কল দিলো রিমি আর মাকে বললো,,, ” হ্যালো আম্মা আমি আপনার ছেলের বউ আজই আমরা বিয়ে করেছি। দোয়া করবেন কিন্তু “। পরে ফোনটা আমার হাতে দিলো আমি তার পর মাকে বললাম,,,, ” মা বলো। গাধারাম তুই বিয়ে করার সাহস পেলি কই থেকে। যাক কিছু একটা তো করেছিস। বউমাকে নিয়ে বাসায় চলে আসিস। আমি সব ব্যবস্থা করছি “। উপায় না পেয়ে বিয়ে টাও হয়ে গেল। রাত তখন ২ টা ছুই ছুই। আমি কাদছি,,,,, ভীষন কান্না।
রিমি কোন কথা না বলে পাশে এসে বসলো। আমার হাতটা ধরে বললো,,, আপনি খুশি হননি। আপনার ডায়েরিটা পড়েছিলাম। আমার প্রতি আপনার ভালবাসা প্রকাশভঙ্গি আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি পারতাম না এমন একটা ভালোবাসার মানুষকে হারাতে। আজ আমাদের কিছু নেই তাতে কি একদিন সব হবে। আর আমার বাবা সবই জানে।শুধু মা রাজি ছিলো না “। আমি ওর দিকে তাকাই,,,, আর দেখি ওর চোখেও জল। নিজেকে খুব সুখী মনে হচ্ছিলো এই প্রথম। কতকিছু চেয়েছি, পাইনি। আর আজ না চাইতেও পেলাম। শ্রেষ্ঠ উপহার। একসাথে হাটছি,,, মনে হচ্ছে পথটা অনেক দীর্ঘ তবে কঠিন নয়।
গল্পের বিষয়:
গল্প