বাবা চিল্লাচ্ছে ঘন্টাখানেক ধরেই, ‘ টিউশনি করাস তিনটা, তারপর আরও কি না কি করাস শুনলাম, এরপরেও বাসায় আইসা মাস শেষে টাকা চেয়ে রাগ দেখাচ্ছিস! লজ্জা করেনা? জমিদারী পেয়ে যাইনি আমরা! টাকা-পয়সা হিসেব করে খরচ করবি! যা এখন, টাকা নাই কোনো। ’ নীচু করা মাথা নিয়েই রুম থেকে বের হলাম, চুপ করে ঘর থেকে বের হয়ে সিড়ি দিয়ে নেমে মেইন গেট দিয়ে বের হবার আগ পর্যন্ত মাথাটা নীচু করাই ছিলো। রাস্তায় বের হয়েই চোখ গেলো একটু দূরের রহমান চাচার টি-স্টলে, বেশ ভীড় হয় রাতে। সেখানে আর থামতে মন চাইলো না।
ফুটপাতের পাশের সোডিয়াম বাতির ল্যাম্পপোস্টগুলো গুনতে গুনতে আগাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম টাকা চাওয়াটা হয়তো ভুলই হয়েছে। কিন্তু পরের মুহূর্তেই প্রয়োজনের কথা মনে পড়ে মন খারাপের মাত্রা যেন বাড়িয়ে দিলো। বুকের ভেতর শূন্যতার হাহাকার যেন হঠাৎ করেই উন্মাদ হয়ে উঠলো, প্রচন্ড জোরে চিৎকার করতে মন চাচ্ছিলো। রাত বেশি হওয়ায়, রাস্তায় মানুষও তেমন ছিলোনা, কিন্তু কেন জানি করতে পারিনি। বসলাম, ল্যাম্পপোস্টের গায়ে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম, মেঘ নাই আকাশে, চাঁদটা খুব সুন্দর দেখাচ্ছিলো জ্বলজ্বল করা সহস্র কোটি তাঁরার মধ্যে। কিন্তু তবুও সেই সৌন্দর্যের মাঝে নিঃসঙ্গতা খুঁজে পেলাম, খুঁজে পেলাম নীরবতা।
কি ভেবে যেন পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম, দেখলাম ২৩ টা মিসকল উঠে আছে আম্মুর। বাজে তখন রাত দেড়টা। এই মনের ভীষণ শূন্যতা নিয়েও পকেটে হাত পুরে হাঁটতে হাঁটতে ঢুলতে ঢুলতে বাসায় গেলাম। আস্তে করে রুমে ঢুকে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম। অনেকক্ষন ধরে এপাশ ওপাশ করেও ঘুম না আসায়, বুকশেলফ থেকে সাদাত হোসেনের ‘ নিঃসঙ্গ নক্ষত্র ’ বইটা নিয়ে পড়তে বসলাম, যতোবার পড়ি ততোবার যেন পড়তেই মন চায়।
হঠাৎ আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙলো, বইটা মুখের উপরেই পড়ে আছে, কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, নিজেও জানিনা। ভার্সিটি খোলা, তার উপর আবার প্রত্যাশার সাথে দেখা করতে হবে, প্রিয় রজনীগন্ধা চেয়েছিলো সেই কবে, আজও দিই নি।
ডিসেম্বরের প্রথম দিকে টিউশনি দুইটা হাতছাড়া হয়েছে, বাসায় জানেনা। গতো দুসপ্তাহে একটু বেশি ঘুরাঘুরি করায় মানিব্যাগ হালকা হয়ে আছে, তাই বাসায় পকেট খরচা চেয়েছিলাম। ধুর! আবার ওসব ভাবছি! তাড়াহুড়া করে উঠে পড়লাম। বের হলাম সুন্দর এক দিনের অপেক্ষায় বুক ভরা ও পকেট ভর্তি শূন্যতা নিয়ে।
একদিন বাসায় বসে কম্পিউটারে কি যেন ডিজাইন করছিলাম, ওহ হ্যাঁ! ব্যানার ডিজাইন করতে দিয়েছিলো কয়েকটা রাফিজ সাহেব, বিনিময়ে কিছু টাকা পাবো, তাই আর না করিনি। ডিসেম্বরের শেষ প্রায়, দু-তিনদিন আছে নতুন বছর আসার, টাকার খুব দরকার। ফোনটাতে তেমন কাজ করা যায়না, ঠিক করাতে হবে। সাধের ঘড়িটাও বন্ধ হলো কিছুদিন ধরে, সেটাও ঠিক করাতে হবে। মনে পড়লো একটা বই কেনার কথা, সেই কবে থেকে ভাবছি, টাকা ই তো নাই। এসব ভাবতে ভাবতে আবার কাজে মনোযোগ দিলাম। কিছুক্ষন পর প্রত্যাশার ফোন,
– হ্যালো…
: হ্যাঁ, প্রত্যাশা, বলো। কি খবর?
– খবর ভালোই আছে, আচ্ছা শুনো, পরশু তো থার্টিফাস্ট, না?
: হু।
– বের হতে মন চাচ্ছে একটু সন্ধ্যায়, আমাকে নিয়ে যেয়ো তো। ফুচকা খাবো, চটপটি খাবো আর ঘুরবো, কেমন?
: আচ্ছা, আচ্ছা। আচ্ছা আমি একটু কাজ করছিলাম, রাতে ফোন দেই?
– আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ।
: আল্লাহ হাফেজ।
ফোন রাখতেই মনে পড়লো যে ফোনে তো টাকা ই নাই, রাতে কিভাবে কল দিবো! তার উপর হাতে তেমন টাকা নাই, ঘুড়তে বের হবো কিভাবে! ভাবতে ভাবতে ডিজাইন শেষ করলাম, রাতে গিয়ে দিয়ে আসলাম রাফিজ সাহেবের কাছে। কিছু টাকা পেলাম, ভেবে দেখলাম এতে ফুচকা, চটপটির বিল, রিক্সা ভাড়া হয়ে যাবে পরশুর জন্য। অল্প কিছু টাকা ঢুকালাম ফোনে। বাসায় ফিরলাম। পড়ার টেবিলের সেই কোনার ড্রয়ারটাতে সাধের ঘড়িটা আরও কিছুদিন অযত্নে পড়ে থাকবে, ফোনও বেশি ইউজ করা যাবেনা কিছুদিন, বইটা পরে ই কিনবোনে না হয়!
সেদিন রাতে ঘুরলাম ভালো মতোই, অনেকদিন পর বেশ কিছুক্ষন কারো সাথে গল্প করলাম, মনটা যেন ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে। বেশ হতাশায় ছিলাম কিছুদিন যাবত। বেশি রাত হবার আগেই প্রত্যাশাকে বাসায় দিয়ে আমিও বাসায় ফিরে এলাম। গিফটের বায়না ধরে আছে প্রত্যাশা নিউ ইয়ারের! আর এদিকে আজকেই তো টাকা শেষ করে আসলাম, হাসতে হাসতে বাসায় ঢুকলাম। ফেসবুকেও বেশিক্ষন থাকতে পারলাম না নিউ ইয়ারের রাতে, হ্যাঙ করে ফোনটা শুধু! ফোন রেখে টেবিলের ড্রয়ারটা খুললাম, ডায়েরীর মাঝে কবে যেন শখানেক টাকা রেখেছিলাম, তা বের করলাম। বেশ কিছু রজনীগন্ধা কেনা যাবে প্রত্যাশার জন্য। প্রেম করিনা, বেশ ভাল বন্ধু আমরা, তবুও যেন ওর জন্যই সব কিছু আমার আর আমার জন্যেই যেন ওর সবকিছু।
রজনীগন্ধা দেখে অনেক খুশি ই হলো, ফুল কেনার সিদ্ধান্তটা ভাল ছিলো ভেবে বেশ গর্বই হলো নিজের উপর। এভাবেই টুকটাক মুহূর্ত জমতে জমতে ই পার হচ্ছিলো একেকটা দিন। টিউশনি পেয়েছি নতুন একটা, তবুও হাতে টাকা থাকে না, খরচ করে ফেলি। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন, বুক ভর্তি আশা, কতো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, কতো সুন্দর সুন্দর ঘুম কেড়ে নেয়া স্বপ্ন সব যেন বেশ কঠিন থেকে কঠিনই হচ্ছিলো দিনের পর দিন। জীবনটা অগোছালো হয়ে যাচ্ছিলো। তবুও যেন সবচাইতে সুন্দর করে গুছানো ছিলো আমাদের বন্ধুত্বটা। খুব সুন্দর করেই পার হচ্ছিলো এক একটা দিন। দেখতে দেখতে প্রত্যাশার জন্মদিন চলে এল, ১২ই ফেব্রুয়ারি।
ঠিক চলে আসে নি, তবে ফেব্রুয়ারি মাস শুরু হলো আরকি। গতো একমাস ধরে অনেক ভেবেচিন্তে খরচ করছিলাম আর কিছু কিছু করে টাকা জমাচ্ছিলাম। প্রয়োজনের খাতায় জমা হলো বেশ কিছু জিনিশের নাম, গিটারটার তার ছিড়ে গেছে, ওটা কিনতে হবে। একজোড়া জুতা কিনবো ভাবছিলাম। এলাকার ছোট ভাইয়েরা পিকনিক আয়োজন করতেছে, টাকা চেয়ে গেছে, টাকা আছে, দিতে পারব কিনা এখনও জানিনা। অ্যাকুরিয়ামের মাছ দুটো মরে গেছে, কিনতে হবে আবার। একটা হাসনাহেনার চারা কিনতে হবে। আম্মুকে এক জোড়া চুরি কিনে দিব ভেবেছিলাম। হেহে! আচ্ছা বাদ এসব, এত কিছু চাইলে হবেনা! সামনে বেস্ট ফ্রেন্ডের জন্মদিন! ওর জন্য অনেক কিছু করব এবার, একাই!
আমার কি কি লাগবে বা কি কি কিনতে হবে মানে প্রয়োজনীয় জিনিশগুলা ডায়েরীতে লিস্ট করে রাখি। ডায়েরীটা হঠাৎ খুলে দেখলাম বেশ বড়সড় ই হয়ে আছে সে তালিকা। এটা নতুন না, প্রিয় মানুষটার জন্য সবসময় ই নিজের সবটুকু আমি স্যাক্রিফাইস করে দিই। কেন জানিনা, তবে খুব যদি দম বন্ধও হয়ে থাকে তবুও প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারি প্রিয় মানুষটার মুখে হাসি ফোটাতে পারলে। ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ, প্রত্যাশার সাথে বিশাল ঝগড়া লেগেছে আমার দুদিন হলো। বিষয়টা বিশাল না, কেমন যেন একটু অবহেলা করা নিয়েই ঝগড়া। চব্বিশ ঘন্টা কথা না বলে থাকতে পারিনা দুজন দুজনের সাথে, কিন্তু দুদিন হবার পরেও আমি মেসেজ দেইনি! প্রত্যাশাও দেয়নি। রাগ, দুজনেই রাগ। তিনচারদিনের মাথায় ওর জন্মদিন নিয়ে ভাবতে বসলাম, ভাবলাম জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিয়েই রাগ ভাঙাবো। অনেক খুশি হবে সে। আমাকে শেষ কথা বলেছিলো, ‘ তুমি সবসময় রাগই করে থেকো, আর কিছু লাগবেনা, অনেক ভাল থাকবা। আমার কিছু হলে দেখতে এসোনা, রাগ কিন্তু তুমি! ‘ হেহে! মুচকি হাসলাম মেসেজটা আবারও দেখে, মাঝেমধ্যেই দেখি আর ভাবি যে দুদিন পর এত এত গিফট পেয়ে অনেক খুশি হয়ে ভুল করে জড়িয়ে না ধরে বসে আমাকে!
প্রত্যাশার সবকয়টা প্রিয় জিনিশ আমি কিনলাম। নিজের সাধগুলো ড্রয়ারে বন্দী থাকুক মাসের পর মাস, আগে প্রিয়। বেগুনী রঙের হিজাব কিনলাম একটা, বেগুনি রঙের পাতার একটা ডায়েরীও কিনলাম। একটা ঘড়ি কিনলাম ওর জন্য, বেশ সুন্দর লেগেছে আমার কাছেই। ওর ব্রেসলেট খুব পছন্দ, ওটাও কিনলাম। পায়েল কিনলাম দুরকমের। আর রুপোর নুপুর কিনলাম, ওর অনেক পছন্দ, বলেছিলো কবে জানি। ওর ফোনের ব্যাক কভারটা ময়লা হয়ে গেছে, নতুন একটা কিনলাম। ব্যাগে ঝুলানোর জন্য দুটো পুতুল আর একজোড়া জুতা কিনলাম। আমাদের সবচাইতে প্রিয় ছবিটা ফ্রেমে লাগালাম। প্রত্যেকটা গিফট বেগুনী নীল মিশ্রিত র্যাপিং পেপারে মুড়িয়ে নিলাম।
আজ ১১ তারিখ, বেশ রাত হয়েছে। ১২ টা বাজলেও আমি তাকে ওইশ করিনি, সকালে ফোন দিয়ে ক্যাম্পাসে চলে যাব। সেখানেই সারপ্রাইজ দিব। সকালে উঠে একুশটা সাদা গোলাপ ও তেপ্পান্নটা রজনীগন্ধা কিনবো। সব নিয়ে দাঁড়াব তার সামনে, ‘ শুভ জন্মদিন ’ ও ‘ Sorry ’ লেখা হার্ডবোর্ড সামনে নিয়ে। হাহ! কাল সারাটা দিন অনেক ভাল যাবে।
ও আমার একটা প্রিয় মানুষ, আমার মন খারাপের সঙ্গী। আমার প্রত্যেকটা আনন্দের সঙ্গী। আমার একটা ‘স্বপ্ন’। আমার জীবনের সৌন্দর্য। এই প্রথম এতোটা দিন তার সাথে কথা না বলে কাটিয়েছি, শুধু সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। তবে ওর খবর প্রতিদিনই নিয়েছি ওর বান্ধুবীর কাছ থেকে। কেমন আছে, কি করছে এসব না জেনে যে আমার জীবন থমকে থাকে। প্রকৃতি যেন এই পাঁচটা দিন অনেকটা বিষণ্ণ ছিলো। শূন্যতার গভীরতা যেন প্রত্যেকটা মুহূর্ত আমাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে। তাকে প্রয়োজনের এক বিশাল রাজত্ব যেন হৃদয়ে ভর করেছে। পাঁচটা দিনের প্রত্যেকটা বিন্দু মুহূর্ত কেটেছে তার অপেক্ষায়, তার জন্মদিনের অপেক্ষায়। তার জীবনের সবচাইতে সুন্দর দিন গড়ার অপেক্ষায়। আমি জানি সে কোনোদিন জানবে না আমার প্রত্যেকটা ছোট্ট থেকে ছোট্ট স্যাক্রিফাইস, জানানোর দরকারও নেই। কি দরকার, কতোটা ভালোবাসি এইটা জেনে যাবে তাহলে! জেনে গেলে সৌন্দর্য হারাবে। তবে একটা মানুষ শুধু একটা মানুষের জন্য এতো কিছু করতে পারে, তার হয়তো একটা উদাহরণও তৈরী হবে। সবকিছুর বিনিময়ে শুধু একটা হাসি ই তো চাই। কাল সকালেই সেই মুহূর্ত এসে ধরা দিবে। সব প্ল্যান ঠিকঠাক, ওর বন্ধুরা সব ঠিক করে রেখেছে।
রাতে ঘুম হবেনা জানি, তবুও চোখ বন্ধ করব, শুধু যে তাকেই দেখি বন্ধ চোখে। এক অনিশ্চয়তা নিয়ে যে জীবন পার করছিলাম তার প্রতিটা দিন এমন নিস্তব্ধতার অপেক্ষায় মোড়ানো থাকবে কে জানতো। কাল সত্যিই প্রিয় মানুষটা খুশি হবে, অনেক খুশি হবে। আর তার সেই হাসিটা দেখেই আমি এক জীবন বেহিসেবে কাটিয়ে দিতে পারব, বেহিসেবেই। || রাত ২:০০ টা, ১২/০২/২০১২|| পৃথিবী কতোটা নিষ্ঠুর তা হয়তো এক একজন মানুষের অপেক্ষাগুলো দেখলেই বুঝতে পারা সম্ভব। এত এত স্বপ্ন, এত এত সাধের অপেক্ষাগুলো অনিশ্চয়তায় মিলিয়ে দিয়ে প্রকৃতির মধ্য থেকেই কেড়ে নিয়ে চলে যায় অস্তিত্ব। পড়ে থাকে কিছু স্মৃতি, বিষণ্ণ বিকেলের ঝড়া পাতার মতো।
প্রত্যাশা সেদিন প্রথমবারের মতো ঠিকই আবীর ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরেছিলো, এতোকিছু পাওয়ার জন্য না, জীবন হারানোর জন্য। প্রত্যাশা সেদিন ঠিকই সারপ্রাইজ পেয়েছিলো অনেক বড়, আবীর ভাইয়া না, জীবনের কাছ থেকে। প্রত্যাশা সেদিন হাসে নি। প্রত্যাশা সেদিন চিৎকার করেনি। শুধু বুকের ভেতর একটা পৃথিবী ভর্তি স্তব্ধতা নিয়ে আবীর ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো। নীল রঙের উড়না টা পুরোটাই লাল হয়েছিলো আবীর ভাইয়ার রক্তে।
ক্যাম্পাসে আসার পথে প্রত্যাশার জন্য সারপ্রাইজ ভর্তি সিএনজি টা বাসের সাথে ধাক্কা লেগে ছিটকে যায় রাস্তা থেকে। দরজা ভেঙে রাস্তায় পড়ে থাকে প্রত্যাশার জন্য নিয়ে আসা প্রত্যেকটা নীলবেগুনীর উপহার। মুচড়ে যাওয়া তেপ্পান্নটা রজনীগন্ধা পড়ে থাকে রক্তাক্ত আবীরের বুকের উপরেই। হাত দুটি জড়িয়ে ধরা, রক্তলাল সে রজনীগন্ধায়। সেদিন শুধু প্রত্যাশা কাঁদেনি, কেঁদেছিলাম প্রত্যাশার পরিচিত আমরা সবাই, সারপ্রাইজ প্ল্যান শুধু প্রত্যাশা জানতো না, পুরো ক্যাম্পাস জানতো।
এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেলো। সব। সব। অনেকদিন আমি খেতে পারি নাই, ঘুমাতে পারিনাই, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে উঠেছি। তবে একজন এখনও ঠিক হয়নি, এখনও চিৎকার করে যায় প্রতিটা দিন, কেউ শুনতে পায়না। আওয়াজ চলে গেছে। চিৎকার গুলো সব হৃদয়ে জমানো। ভাগ্য ভালো প্রত্যাশা আওয়াজ করতে পারে না, এইরকম এক একটা আর্তচিৎকারে এক একটা পৃথিবী ফেঁটে যেত। উপরের কোটেশনের মধ্যের লেখাগুলা আবীর ভাইয়ার ফোনের নোটপ্যাড থেকে পাওয়া। প্রত্যাশাকে আজও দেখানো হয়নাই এইসব। কি দরকার আর দেখিয়ে। জীবন থেকে পাওয়া বিশাল সারপ্রাইজটা ই কি যথেষ্ট না, এক জীবন মানসিক রোগী হয়ে পার করে দেয়ার জন্য?
জীবন এরকমই। মাঝে মাঝে এমন কিছু উপহার দেয়, শূন্যতার হাহাকার শুনতে শুনতেই যেন এক জীবনের পুরোটা চলে যায় অবুঝ অপেক্ষায়। শুধু রয়ে যায় প্রত্যাশার মতো জীবন্ত লাশগুলা, প্রত্যেকটা গোধুলিলগ্ন বুক ভরা আর্তচিৎকার সাথে নিয়ে। আবীরের মতো আত্মাগুলা যেন কখনোই আর শান্তি পায়না, জীবনের সবটুকু আবেগ ঢেলে যে সময়ের অপেক্ষা তারা সাজায়, তা কি কোনোদিন পূর্ণ হয়? হয়না। তাদের অপেক্ষা কোনোদিন পূর্ণতা পায়না। জীবনটা এমনই, বড় অদ্ভুত। আর বয়ে চলে কিছু স্তব্ধ হওয়া জীবন, গল্প বলে যাওয়ার জন্য। আমি, সজীব, প্রত্যাশার বন্ধু।
গল্পের বিষয়:
গল্প