ছাত্রির নাম খাতায় তায়্যিবা লেখা থাকলেও আমি পড়লাম অ্যামিবা। একটু পর নাস্তা আসলো আমি ছোট ছোট গোল গোল পাকুড়া মনে করে মুখ ফসকে বলে ফেললাম একটু সস থাকলে ভালো হত। আমার ছাত্রি অবাক হয়ে বলল মিস আপনি বিস্কিট এর সাথে সস খান..? আসলে চা আর বিস্কিট দিয়েছিল। কথাটা শুনে ই লজ্জা পেয়ে গেলাম।
আসলে দোষটা আমার না। রিতাকে বলে ছিলাম আরো কয়েকটা দিন পর যাই নতুন টিউশনিতে। নাহ হবে না ছাত্রির নাকি পরিক্ষা তাদের আর্জেন্ট টিচার দরকার। এদিকে আমি চশমা ছাড়া খুব ভালো একটা দেখতে পাই না। একটু লজ্জা পেয়ে বললাম আসলে আমি চশমা আনতে ভুলে গেছি। একটা কাজে তাড়াহুরু করে বেরিয়ে ছিলাম তো চশমা নিতে ভুলে গেছি। যাই হোক প্রথম দিন খুব কষ্ট করে যতদূর রিডিং পড়া এভয়েড করে নিজের দক্ষতা দিয়ে অন্যভাবে ম্যানেজ করলাম। পরের দিনও এক ই সমস্যা! ছাত্রিকে বলে ই দিলাম, আসলে হঠাত রাতে বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল করিনি। ঘুমের মধ্যে চশমাটা খুলে আমার পিঠের নিচে চলে গিয়ে প্রায় চার টুকরা হয়ে গেছে। জোড়া লাগানোর মত কোনো সম্ভাবনা ই নেই।
তবে চশমা আমি অর্ডার করেছি আসতে সময় লাগছে কেন বুঝতে পারছি না। ছাত্রি বলল কোনো সমস্যা নেই মিস। এক মিনিটের মধ্যে ই আমি আসছি। বলে প্রায় এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে একটা চশমা হাতে নিয়ে ফিরল। বলল মিস আপাতত এখন এটা দিয়ে কাজ চালিয়ে নিন। ম্যাথ করতে হবে তো সামনে পরিক্ষা! যাওয়ার সময় আবার রেখে যাবেন। হ্যা, আমার ছাত্রিটা আবার খুব সিরিয়াস পড়ালেখা নিয়ে। আমার এরকম স্টুডেন্ট ই পছন্দ। কষ্ট কম লাগে পড়াতে একটু বললে ই বুঝে ফেলে। চশমা টা হাতে নিয়ে চোখে লাগিয়ে দেখলাম একদম প্রায় একদম আমার চশমার মত ই হবে পাওয়ার। যাক আপাতত কিছুক্ষন এই চশমা টা দিয়ে কাজ চালানো যাবে। ছাত্রিকে পড়িয়ে আবার আসার সময় রেখে আসলাম চশমা।
এভাবে দু তিন দিন এভাবে চলল। এদিকে আমি যেখানে চশমা অর্ডার করেছি সেখানে দোকান বন্ধ। দোকানীর নাম্বার ছিল আমার কাছে বার বার ট্রাই করলাম কল রিসিভ করার কোনো সম্ভাবনা ই দেখছি না। এদিকে আমি চশমার অর্ডারে ফুল পেমেন্ট করে দিয়েছি। বাকি রাখিনি টাকা হাতে ছিল তাই যদি পরে না থাকে হোস্টেল লাইফে অনেক ভুগান্তির স্বীকার হয়েছি এরকম।। তাই ফুল পেমেন্ট করা। অবশেষে বার বার কল দিতে দিতে হেটে হেটে ছাত্রির বাসায় পৌছে গেলাম। আজও বিমর্ষ মুখে বললাম আজকেও চশমা ধার লাগবে আমার। ছাত্রি আবারো মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল, No Problem মিস। চশমা হাতে আবার আসলো।
ছাত্রিকে পড়াচ্ছি তখন ই ফোন টা বেজে উঠল! সীমা ফোন দিয়ে বলল ইতি পরসু সেমিস্টার ফাইনাল।!
কথাটা শুনে রিতিমত মাথায় বাঁজ পরার মত অবস্থা। পড়ালেখা মোটামুটি গুছানো ই আছে কিন্তু আগের রাতের প্রিপারেশন + এক্সাম কিভাবে দিব। আর হুট করে ভার্সিটিতে কোনো একটা কারণে এক্সাম দিয়ে দিছে বলেছে কারণ পরে জানানো হবে। কথাগুলো শুনে আমার গলা শুকিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা । সীমার ফোন রেখে আবারো দোকানের আঙ্কেলের নাম্বারে ট্রাই করলাম এখন তো ফোন বন্ধ! কি করি। কোনো রকম টিউশনি টা শেষ করে হোস্টেলে ফিরলাম। টাকা যা আছে এক্সামের খরচে চলে যাবে। আর্জেন্ট চশমা কেউ দিতে পারবে না কারণ আমার চশমার পাওয়ার একটু বেশি সপ্তাহ খানেক সময় লাগে মাঝে একদিন সম্ভব না।
পরদিন টিউশনে গিয়ে আর কোনো রাস্তা না পেয়ে ভাবলাম ওই চশমাটা কয়দিনের জন্য ধার চেয়ে নিব। আর কোনো উপায় নেই চশমা ছাড়া আমার পরিক্ষার রেজাল্টও আসবে চশমার মত! ছাত্রি মম কে পড়াচ্ছি চশমা আমার চোখে ই আছে। ভাবছি কিভাবে বলি..! আর কার চশমা! যার ই হোক যে এই চশমা ইউজ করে সে একদিনও চশমা ছাড়া থাকতে পারবে না। আর যদি স্টুডেন্ট হয় আমার মত তাহলে তো আরো কথা নেই! এসব ভাবছি আর মনে মনে বলছি কিভাবে বলি! তারপরও লজ্জার মাথা খেয়ে যখনি বলতে যাব তখনি একদল মেহমান এসে হাজির ওদের বাসায়। স্টুডেন্ট এর মা এসে বললেন আজকের মত ছুটি দিয়ে দিতে মেহমান এসেছে। আমিও কথাটা বলতে গিয়েও আর বলতে পারলাম না ছাত্রিও ছুটি পেয়ে দৌড় দিল। কি করব কাল সকালে এক্সাম..! যা ভাবছি তাই কি করে ফেলব..! । বিসমিল্লাহ বলে চশমা টা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম। আগে তো পরিক্ষায় পাস তারপর অন্যকিছু।
চশমা ব্যাগে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। এমনিতে তেমন খেয়াল করবে না মেহমান ঝামেলা ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকবে। রাতে ঠিকমত প্রিপারেশন নিয়ে খুব ভালো একটা ঘুম দিয়ে সকালে পরিক্ষার উদ্দ্যেশে বেড়িয়ে পড়লাম। পরিক্ষার হলে যেতে ই দেখি আমার পাঁচ মিনিট লেইট! মানে কি! আমার ঘড়ির সময় পেছনে! মোবাইলেও খেয়াল করিনি পরিক্ষার সময় মোবাইল যথা সম্ভব দূরে রাখি..! হলে ঢুকতে যাব তখনি বেশ সুদর্শন একজন টিচার সামনে দাড়িয়ে নাম জিজ্ঞেস করলেন! দেরিতে আসার কারণ সহ পানচুয়ালিটির ভাষণ দিতে লাগলেন। আমি মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি কি একটা মিসিং লাগছে চেহারায়..! তবে যাই হোক উনাকে তো আগে দেখিনি। নতুন টিচার মে বি। আমার হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে একটা ধমক দিলেন।
আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে চোখ নামালাম। আমার হাতের ফাইল নিয়ে চেক করতে গিয়ে কি জানি মনে করে ফাইলটা অন্য একজনকে দিয়ে চেক করিয়ে আমাকে ঢুকতে দিলেন। যথারীতি নিজের সীট খুঁজতে লাগলাম। সীট খুঁজা পেছন থেকে শুরু করলাম কারণ পরিক্ষার হলে শান্তির জায়গা হল শেষ ব্রেঞ্চ পিছন থেকে গুতানোর কেউ থাকে না + টিচার থেকে দূরে। কিন্তু না আমার ভাগ্য এত ভালো না। সবসময় যেরকম হয় আরকি! যে পরিক্ষা ই দিতে যাই আমার সীট থাকবে সামনের টা তে। এটা কাকতালীয় নাকি ভাগ্যের লিখন তা নিয়ে আমার আফসোসের শেষ নাি..! এদিকে ফাস্টব্রেঞ্চে আমার সীট দেখে পাশের বান্দবীরাও মজা নিতে শুরু করল..! আর কিছু না ভেবে বসে লেখা শুরু করলাম।
একটু পর ই ওই টিচার মনে হল কোনো একটা সমস্যায় পড়ে গেলেন কেমন জানি হাপিতেস করছেন। আমি একেবারে কাছাকাছি বসায় না চাইলেও ব্যাপারটা এড়াতে পারলাম না। সৌজন্যতা বসত বলে ই ফেললাম স্যার কোনো হেল্প লাগবে..! স্যার কেমন ইতস্তত হয়ে বললেন না। আবার কেমন জানি করছেন এদিক সেদিক। এটেডেন্সি সীট + কিছু দরকারি কাজের কাগজ জমা স্যার কাকে জানি ডেকে পাঠালেন কিন্তু কেউ নেই বলে খবর আসল। অবশেষ স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বিশেষ করে আমার চশমার দিকে তাকিয়ে বললেন.. ৫ মিনিটের জন্য চশমাটা ধার নেওয়া যাবে। কাজ শেষ করে দিয়ে দিব। শেষে ৫ মিনিট একস্ট্রা দেওয়া হবে আমাকে। আসলে নাকি স্যারের চশমা খুঁজে পাচ্ছেন না কাল রাত থেকে হারিয়ে গেছে নাকি কেউ নিয়েছে তাও জানেন না।
কথাটা শুনে বুকটা ধক করে উঠল..! চাশমা ছাড়া কষ্ট আমি বুঝি..! কি করব ভেবে না পেয়ে বসে আছি। স্যার তাকিয়ে আছেন। অবশেষে ৫ মিনিটের জন্য ধার দিতে সম্মতি দিলাম। স্যর চশমা হাতে নিয়ে ই এক লাফে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালেন। এটা নাকি উনার চশমা। আমি নাকি চুরি করেছি..?! কথাটা শুনে আমারো রাগ উঠল বলবে অন্য কথা বল চুরি করেছি এটা বললেন কেন!? আশ্চর্য। আমিও বললাম এটা আমার চশমা। স্যার প্রমাণ সরুপ বললেন, চশমার একপাশে সুপারগ্লো লাগানো। ঠিক একপাশে তা দিয়ে জোড়া লাগানো সেটা আমি খেয়াল ই করিনি। তার মানে সে যাই হোক চুরি করেছি কেন বললেন তাও সবার সামনে! আমি ভীষণ অপমানিত বোধ করলাম। আমিও তর্ক চালিয়ে গেলাম এটা আমার চশমা বলে। যে কারো চশমায় এরকম থাকতে ই পারে আর উনার নাম তো এখানে লেখা নেই বললাম স্যার চশমা দিন আমি লিখব।
স্যারও নাছোড়বান্দা দিবে না এটা নাকি উনার চশমা স্বীকার করলে তারপর দিবে লিখতে। স্বীকার করা মানে ই তো চুরি করেছি সেটা মেনে নেওয়া..! তাও সবার সামনে! অসম্ভব! আমার সম্মানে আঘাত লাগে। কিন্তু আমি তো জানি এটা কিভাবে এনেছি। তারপরও তো জানিনা শিওর চশমাটা কার ! কখনো জিজ্ঞেস করিনি মম কে এটা কার চশমা মাথায় ই আসে নি। সে যাই হোক হারতে শিখিনি আমি। এটা আমার চশমা বলে আমি এক প্রকার তর্ক চালিয়ে গেলাম আমাকে চোর বলা…! অবশেষে স্যার মানতে ই রাজি না আমিও স্বীকার করতে রাজি না। অন্যদিকে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে দেখে আমিও এক ঝাপটায় চশমাটা হাতে নিয়ে দুই পার্ট করে ফেললাম স্যার আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে..! আমি বামচোখের অংশটা রেখে ডানপাশের অংশটা স্যারের হাতে দিয়ে বললাম,, ‘ সমাধান ‘। বহুকষ্টে একহাত দিয়ে ধরে কোনো রকম পরিক্ষা দিলাম। পাস করলে ই হবে ।
আমাদের চশমার অবস্থা দেখে আশেপাশের সবাই হাসছিল..! স্যারও কেমন জানি তাকাচ্ছিল.. এখনো অবাক হয়ে বসে আছে টেবিলে চশমার একপাস নিয়ে। হল থেকে বের হয়ে দেখি উপর থেকে স্যার আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে..! দেখে আমার রাগ লাগল.. ব্যাটা বজ্জাত ভালো করে পরিক্ষা দিতে দিলো না। অবশেষে আর মম মানে আমার স্টুডেন্টের বাসায় যাওয়ার আর সাহস হয়নি। যা বুঝার প্রায় বুঝে ই গেছি..! বেশ কয়দিন পর মোবাইলে ম্যাসেজ আসল আমার চশমার বাকি অংশটা ফিরত দিয়ে যান বাসায় এসে।
গল্পের বিষয়:
গল্প