মুমুর সবচেয়ে কাছের বান্ধবী নিশির আজ আঠারোতম জন্ম দিন। অনেক আগে থেকেই সমস্ত প্ল্যান প্রোগ্রাম সাজিয়ে রেখেছে নিশি। এ উপলক্ষে ওদের বাসায় সন্ধায় বার্থডে পার্টি। বান্ধবীদের সবাইকে সেখানে নিমন্ত্রণ করেছে নিশি। কড়া আদেশ বলে দিয়েছে সকাল-সকাল এসে যেন সবাই উপস্থিত হয়।
মুমুর নিজেও আর কদিন পর ১৮ বছর পূর্ণ হবে। নিশি দেখতে ছোটখাটো রোগা পাতলা হলেও বান্ধবীদের মাঝে সবার আগে আঠারো তে পা দিছেয়ে । এজন্য সবার মাঝে একধরণের ভালোলাগাও করছে। কারণ একজন মেয়ের আঠারো বছর হওয়া মানেই তার জন্য বিশের কিছু। এই আঠারোতম জন্মদিনের জন্য সবচেয়ে মুখিয়ে থাকে তারা।সব জন্মদিনের চেয়ে সেদিন অন্যরকম উত্তেজনা ও রোমাঞ্চ কাজ করে।একজন মেয়ে তখন নিজেকে পরিপূর্ণ নারী হিশেবে দাবী করতে পারে।সমাজ ও পরিবারের কিছু শিকল বাধা নিয়ম থেকে মুক্তি পায়, চলল বলনের ক্ষেত্রেও আগের চেয়ে কিছুটা স্বাধীনতা কাজ করে। মুমু ঠিক করে রেখেছে সেদিন সে জীবনের প্রথম শাড়ি পড়বে। মুমু ঘড়ির কাটায় তাকিয়ে দেখে ঠিক রাত ১২টায় বাজে । ফোন দ্রুত হাতে নিয়ে নাম্বার ডায়াল করে। কয়েকবার রিং হতেই ওপাশ থেকে রিসিভ হয় “হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,”হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ডিয়ার নিশি। হা-হা সবার আগে আমি উইশ করেছি তোকে।তাই না?” মুমুর খুব খুশিখুশি লাগছিল, সবার আগে উইশ করতে পেরেছে বলে।
-“উঁহু, তুই না” নিশি খিলখিল শব্দে হাসছে। “তুই সেকেন্ড। ” মুমুর মুখটা নিমিষেই গোমড়া হয়ে গেল।বলল, “ও তোর জান রাফিন বুঝি প্রথম উইশ করেছে?”
-“হ্যা।সে সব সময়ই প্রথম।আজ শুধু উইশ করেই সাথে সাথে কল কেটে দিয়েছে।কারণ অনেকেই তো কল দিয়ে উইশ করবে তাই। এই আব্বু কানাডা থেকে ফোন দিয়ে, রাখছি। শোন কাল কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবি।”
কথা বলা শেষে মুমু হতাশভাবে বিছানায় শুয়ে আছে।আজগুবি সব ভাবনা মাথায় ভর করেছে তাঁর।বান্ধবীদের মাঝে সে দেখতে সবচেয়ে সুন্দরী। কিন্তু তাঁর কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। সে একটু নাজুক স্বাভাবের বলেই কি এমন! স্মার্ট সুদর্শন ছেলেরা তাঁর সাথে কথা বলতে আসলেই কেমন যেন লজ্জায় কুঁকড়ে যায় সে। সরাসরি কোন ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারে না। চোখ থাকে অন্যদিকে অথবা পায়ের দিকে। এইজন্য হয়তো কোন ছেলে তাঁর সাথে বেশি ঘেঁষতে চায় না। এ নিয়ে বান্ধবীরা প্রায়ই হাসাহাসি করে।সোহানা একদিক তাকে রাগান্বিত স্বরে বলছিল, “নিয়াজ ভাই আমাদের ভার্সিটির ক্রাশ বয়।তুই নাকি ওর সাথে ভালভাবে কথাই বলিস নি?” মুমু কথার জবাব না দিয়ে মুচকিমুচকি হাসছিল। “দেখ ঢং তো আমাদের সাথেই করতে পারিস।আর কোন ছেলে কথা বলতে আসলেই চুপসে যাস! গ্যাঁইয়া মেয়ে কোথাকার।”
-“দ্যাখ আমি গ্যাঁইয়া মেয়ে না।”মুমু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। “আমি একটু নার্ভাস ফিল করি বলেই যা ইচ্ছা তাই বলবি?”
-“ওকে বাবা! যা তুই স্মার্ট মেয়ে।চল তোকে নার্ভাস কাটানোর কিছু বুদ্ধি দেই।” সোহানার বুদ্ধি তাঁর এখনো কাজে লাগেনি।এরপর থেকে কোন ছেলে আর তার সাথে ভাব জমাতেই আসেনি ভাবতে ভাবতে একটা সময় ঘুমিয়ে যায় মুমু।ঘুমের মাঝেই অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখে সে, উত্তেজনায় ঘুমন্ত চোখ দুটো নড়াচড়া করছে। হঠাৎ হঠাৎ মুচকি হেসে উঠছে শেষ রাতে মুমুর ছোট বোন ঝুমু এসে দেখে তাঁর আপু ঘুমের মধ্যে কাঁদছে। সে ভয়ে ভয়ে ডাক দিল, “এই আপু…”
নিশি বলেছিল একটু আগেভাগে আসতে, কিন্তু সাজগোজ করতে একটু দেড়ি হয়ে যাওয়ায় মুমু সন্ধ্যা ছয়টা এসে উপস্থিত হলো।এসে দেখে সব বান্ধবীরাই এসে পড়েছে। ভেবেছিল সবাই রাগরাগি করবে, কিন্তু নিশি এসে বলল, “ওমা একি সাজ দিয়েছিস তুই?” পাশ থেকে সোহানা বলল, “বাব্বারে! সাদা ড্রেসে একেবারে পরীর মত লাগছে। কোন ছেলে তোকে দেখলেই এক্কেবারে বেহুঁশ হয়ে যাবে।” সোহানার কথাটা বলার সাথে-সাথে অভিনয় করে দেখানোর ঢং দেখে নিশি হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। নিশি নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে বলল,”মুমু আসলেই তোকে অনেক সুন্দর লাগছে…” রাত দশটায় কেক কাটা হয়।তারপর থেকে নিশি এক এক করে সবার সাথে ফটো তুলছে।জন্মদিনে নিশির কিছু আত্মীয় স্বজনও এসেছে। এখন সে তাদের সাথের ফটো তুলছে। হইচই ভিড় ঠেলে মুমু ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়ায়।একটু দূরে দাঁড়িয়ে সবার আনন্দ উল্লাস দেখছে।
“এই যে আপনি কি পরী? আকাশ থেকে ভুলে হঠাৎ জমিনে এসে পড়লেন বোধ হয়?” মুমু ছেলেটার দিকে ভালভাবে তাকাতেই,”হ্যালো আমি মাহিম।আপনাকে অনেক্ষণ যাবৎ লক্ষ্য করছি,এখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছেন।” মুমু কি বলবে ভেবে পায়না। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে। ক্লিন শেভ,চোখ কেমন যেন মোহগ্রস্ত করার মত।ছেলেদের চোখও যে এত সুন্দর মায়াময় হয় তাঁর জানা ছিল না। কথা বলার সময় মাথায় চুল গুলোও দুলছিল। মুমু পরিষ্কার গলায় বলল, “না ভালো লাগছিল না তো, তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি।”
-“ও।আমারো আপনার মত হৈহল্লা ভাল লাগে না।তাই আমিও একটু দূরে দূরে আছি।” মুমু লক্ষ্য করল ছেলেটার সুন্দর পুরুষোচিত চেহারার সাথে কণ্ঠটাও অনেক মিষ্টি।কি সুন্দর করে কথা বলছে।
-“স্যরি আপনার নামটাই তো জানা হল না?”
-“মমতারিন মুমু।”
-“বাহ্।আপনার আর আমার মাঝে তো ভারি মিল!”
-“যেমন?”
-“এই যে দুজনের নাম M দিয়ে। হা.হা…,”হাসি থামতেই মাহিম গলার স্বর নরম করে বলল,”যাস্ট কিডিং আপনার সাথে একটু মজা করলাম।” মুমু মুচকি একটা হাসি দেয়।উপলব্ধি করছে এই প্রথম কোন ছেলের সাথে কথা বলতে তাঁর ভাল লাগছে।কোন রকম সংকোচ বোধ হচ্ছে না।
-আপনি কি নিশির ভার্সিটিতেই পড়েন?
-হ্যা।আমার দুজন স্কুল কলেজ ভার্সিটি একসাথেই আছি।
-বাহ্ আপনারা খুব লাকি!
-হ্যা।
সোহানা হঠাৎ লক্ষ্য করল মুমু আশেপাশে কোথাও নেই। একটু খোলা জায়গায় এসে চোখ বুলাতেই দেখে অপরিচত এক ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। সোহানা কাছে এসেই বলল, “এই তুই এখানে! তোকে কতক্ষণ ধরে খুঁজছি। আয় আমার সাথে।” সোহানা মুমুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । মুমু ঘাড় ফিরিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে, মাহিম মুচকি হাসি দিয়ে হাত নাড়িয়ে টাটা দিচ্ছে। মুমুর এই প্রথম মনে হল, সে এই ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেছে! ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে সবাই।কিন্তু যাকে নিয়ে কথা হচ্ছে সেই নিশিই আজ ভার্সিটিতে আসেনি। কথার ফাঁকে হঠাৎ সোহানা জিজ্ঞেস করল, “এই মুমু একটা কথা তোকে বলতে ভুলেই গেছি।সেদিন যে ছেলেটার সাথে কথা বলছিলি, সে কে রে?” মুমু অপ্রস্তুত ভাবে জবাব দিল, “কোন ছেলে?”
-“নেকামি হচ্ছে না?” সোহানা বিদ্রূপের একটা হাসি দিয়ে বলল,”এখন তো মনে পড়বেই না! দাঁত কেলিয়ে হেসে হেসে যখন কথা বলছিলি, তখন তো মনে হচ্ছিল ছেলেটা তোর জামাই বুঝি।”
-” দেখ সোহানা ফাজলামো করিস না।আমি একা একা দাঁড়িয়ে ছিলাম।হঠাৎ ওই ছেলেটা এসে আমার সাথে কথা বলে।এইটুকুই আর কিছুনা। “
-“ও আচ্ছা! ছেলেটার নাম কি? দেখতে কিন্তু কিউট আছে।”
ছেলেটার নাম মুমু ভাল করেই জানে।সেদিন রাত থেকেই চোখ বুঝলেই মাহিমের মুখ টা বার বার ভেসে উঠে।কিন্তু সে তাচ্ছিল্য ভাবে জবাব দিল,” কি জানি, মনে নাই।” সোহানার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মুমু উঠে দাঁড়ায়।মাহিমের কথা তুলতেই কেমন যেন অস্বস্তি লাগছিল তাঁর। ভার্সিটির গেইট দিয়ে বের হতেই চমকে যায় সে। দেখে মাহিম গেইটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।তাকে দেখেই মাহিম স্বস্তির একটা হাসি দেয়। মুমু কেমন যেন মোহের মত তাকিয়ে দেখছে।ওর গায়ে ঝকঝকে সাদা টি শার্ট।বাতাসে চুল গুলো উড়ছে,দেখতে ঠিক যেন দেবদূতের মত লাগছে ।
-“এই যে কেমন আছেন? এ দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। ভাবলাম আপনার ভার্সিটির সামনে যখন এসেই পড়েছি,আপনার সাথে দেখাটা করেই যাই।” মুমু কি বলবে ভেবে পায় না।সে শুধু ক্ষীণ একটা হাসি দিল।
-“আপনি কি আমায় দেখে লজ্জা পাচ্ছেন?” মুমু চাপা নিশ্বাস গোপন করে বলল, “না তো।”
-“বাসার দিকেই যাচ্ছেন?”
-“হ্যা।”
-“ওকে চলেন। আমিও এ রাস্তা দিয়েই যাব।”
পাশাপাশি দুজন হাঁটছে।মুমু প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছে অস্তিরতা কমানোর।মাহিম কে দেখার পর থেকেই কেন জানি বুকের ধড়ফড়ানি শুরু হয়ে গেছে তাঁর।সে কিছুতেই ভেবে পায় না, এটাই কি ভালোবাসার লক্ষণ। এক মাস পর। মুমু কাজি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মাহিম তাকে ফোনে বলেছে দশ মিনিটের মধ্যেই এসে পড়বে। মুমু হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে। ভাবছে, বাসায় নিশ্চয়ই এতক্ষনে সব জানাজানি হয়ে গেছে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় একটা চিঠি রেখে এসেছিল।চিঠির সারমর্ম এই, ‘বাবা আমি মাহিম কেই বিয়ে করব। যদি পার ক্ষমা করে দিও।’
মাহিমের সাথে তাঁর রিলেশন এক মাস পূর্ণ হয়েছে।এই এক মাসেই মনে হয়েছে ওকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকা সম্ভব না। একটা সময় মনে হচ্ছিল মাহিম তাকে যাদুর মত টানেছে।তাই মাহিম বিয়ের কথা বলতেই মানা করেতে পারেনি।
মাহিম ঢাকা ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট।এবার ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।মাহিম বলেছিল, “দেখো মুমু আমার ৬/৭ টা টিউশনি আছে।মাস শেষে যে অংকের টাকা পাই সে টাকা দিয়ে আমাদের টোনাটুনির সংসার বেশ চলে যাবে।”
কিন্তু মুমুর যত ভয় বাবাকে নিয়ে।বাবার বড় মেয়ে সে। বাবা কখনো তাঁর কোন ইচ্ছা অপুর্ণ রাখেনি। কিন্তু তাঁর বিশ্বাস মাহিমকে একদিন বাবা ঠিকি মেনে নিবে।
দুই মাস পর। বিয়ের কিছুদিন পরেই মুমু মাহিম কে নিয়ে তাঁর বাবার বাসায় উঠে।বাবার কথা তে বাসায় ফিরে আসলেও আস্তে আস্তে অশান্তি শুরু হয় জীবনে। মুমু প্রথমে ভেবেছিল বাবার বাসায় কিছুদিন থাকলেও, মাহিম কে বলবে বাসা ভাড়া করতে । কিন্তু মাহিম দিনের পর দিন এখানেই পড়ে আছে। ছোট বোন ঝুমু প্রায়ই খুঁচা মেরে কথা বলে। ‘কিরে আপু প্রেম করে বিয়ে করেছিস জামাই পালার জন্য?’ মুমু তখন চুপ করে থাকে কোন কথা বলে না। মাহিম তাঁর সাথে এত বড় প্রতারণা করেছে সেটা এখনো পরিবারের কেউ কে জানায়নি। মাহিম তাকে কসম করিয়েছিল, রিলেশনের খবর যেন নিশি কিছুতেই না জানে।তাই সে নিশিকে কিছুই জানায়নি এমনকি বিয়ের খবরটাও। মাহিম কে নিয়ে যেদিন বাসায় উঠে।তার কয়দিন পর নিশি বাসায় আসে। এসেই প্রথম কথাই, “তুই কাকে বিয়ে করেছিস? এই ছেলে সর্ম্পকে তুই কি জানিস?”
-“কেন কি হয়েছে?”
-“তুই একটা বারও আমায় জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না?” চোখ মুখ ক্রোধে ফেটে পড়ছে নিশির।নিজেকে একটু সংযত করে বলতে লাগলো, “দেখ এই ছেলে আমাদের দূর সর্ম্পকের আত্মীয়। কিন্তু ওকে আমারা আমার জন্ম দিনে ইনভাইট করেনি। আম্মুর কাছে এসেছিল একটা কাজের জন্য। যাবার সময় আম্মু ভদ্রতা করে বলেছিল, ‘আজ আমার মেয়ের জন্মদিন। তুমিও না হয় অনুষ্ঠানে থেকো।”
– “দূর সর্ম্পকের আত্মীয় তো কি হইছে?” এটা বলার পর নিশির কথা গুলো শুনার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
-“এইচ.এস.সি পাশ করতে না পারা এই ছেলেটা সেদিন আম্মুর কাছে একটা চাকরির জন্য এসেছিল।আম্মুর বাপের বাড়ির লোক তাই বুঝিয়ে শুনিয়ে বিদায় করেছিল।আর তুই কিনা এই ছেলের সাথে…ছি!” মুমু কথা গুলো মাহিম কে জানানোর পর, মাহিম তাকে নিলজ্জের মত বলেছিল, “তুমি আমাকে ভালোবাসো?নাকি আমার যোগ্যতা কে?” মুমুর সেদিন ইচ্ছে হয়েছিল বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মরে যেতে। কিন্তু এই ঘটনা গুলো সে তাঁর বাবাকে বলতে সাহস পায়নি। ভাবে, কোন মুখে সে বলবে? এমনিতেও বাবা এখন প্রয়োজন ছাড়া তাঁর সাথে কোন কথা বলে না।
বাবার সামনে পড়তেও লজ্জা লাগে।কেননা মাহিম সারাদিন বাসায় খায় দায় ঘুমায়।এটাই তার কাজ। সন্ধাবেলা বের হওয়ার আগে হাত খরচের টাকাও চায়। টাকা নেই বললেই বলে,”তোমার বাবার কাছ থেকে চেয়ে আনো। আর তোমার বাবার এত বড় বিজনেস। আমাকে সেখানে বসিয়ে দিলেই তো হাত খরচের টাকা আর চেয়ে নিতে হয় না। ” এর চেয়েও আরো খারাপ দিন আসবে মুমু কল্পনাও করেনি।একটা সময় বুঝতে পারে সে প্রেগন্যান্ট। সারাদিন মন খারাপ থাকে।সুন্দর জীবনটা এভাবে ধূলিসাৎ করার জন্য অনুসূচনা হয়। ওয়াস রুমে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে।পেটের বাচ্চাটার জন্য কষ্ট হয়। ভাবে, এই দুঃসময়েই কেনইবা একে পৃথিবী তে আসতে হল?”
চোখমুখ ধুয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই তাকিয়ে দেখে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি টা তাঁকে বলছে, “আঠারো বছর হলেই পরিপূর্ণ নারী হওয়া যায় না রে পাগলি? একটা মেয়ে যত বড় হয় ততো তার দায়িত্ব বাড়তে থাকে। একটা মেয়ে পরিপূর্ণ নারী হয়, সুস্থ মাতৃত্বে, বয়সের সাথে-সাথে নিজের জ্ঞানবুদ্ধিতে, বাস্তবিক ধ্যান ধারনায় বুঝেশুঝে পথ চলতে-চলতে। আর তুই তো বোকা মেয়ে। তোর মত মেয়েরা নিদিষ্ট একটা বয়সের ট্যাগ লাগিয়ে স্বাধীন ইচ্ছার নামে যা খুশি তা করে বেড়ায়। একটা সময় আবেগের বসে ফেঁসে যায়। আর যখন এটা উপলব্ধি করতে পারে তখন সঙ্গী হয় শুধু চোখের জল।” মুমুর বুক ধকধকানি শুরু হয়।কান্নার মত শব্দ করে। ভাবতে থাকে, ‘একটা চরম ভুল সিদ্ধান্তের জন্যই কি একটা মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট হয়?’ তার কান্নার আওয়াজ বাড়তেই থাকে। ভাবছে, এ ভুলের চক্র থেকে বের হওয়ার কি কোন সুযোগ নেই?
“এই আপু ঘুম থেকে ওঠ। মরার মত ঘুমাচ্ছিস কেন? আজ না নিশি আপুর বার্থডে।” ছোটবোন ঝুমুর ডাকে ঘুম ভাঙে মুমুর। খাট থেকে ধড়ফড় করে ওঠে দেখে বেলা ১২টা বাজে। নিশি বলেছিল সকাল সকাল আসতে।বান্ধবীর আঠারতম জন্মদিনে বেস্ট বান্ধবীই যদি লেট করে আসে ব্যাপারটাই খারাপ দেখা যায় । কিন্তু, এখন গোসল করবে,খাবে, তারপর যাবে পার্লারে,সেখানে গিয়ে সাজগোজ করে যেতে-যেতে সন্ধাপার হয়ে যাবে। “এই আপু তুই কাল রাতে ঘুমের ঘোরে কাঁদছিলি কেন?” ছোট বোনের কথা শুনে অবাক হয় মুমু।বলল, “কই না তো।দুষ্টুমি করিস না ঝুমু, যা তো এখান থেকে।”
-“না আপু।সত্যিই তুই কাঁদছিলি। ভেবেছিলাম তোকে ‘বোবা ধরা’ ধরেছিল। তাই তোর শরীরে ধাক্কা দিতেই তুই ধেমে যাস।”
-“কি জানি! হয়তো কোন দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম। মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পর অনেক স্বপ্নই মনে রাখতে পারে না সন্ধ্যা ছয়টায় মুমু নিশির বাসায় এসে পৌঁছে।ভেবেছিল আসতে দেরী হওয়ায় হয়তো নিশি কিছুক্ষণ বকাঝকা করে।কিন্তু কিছুই বলেনি। বরংচ ড্রেসআপের প্রশংসা করেছে। সোহানা তাঁকে অনেক্ষণ ধরে খুঁচাচ্ছে, “এত সুন্দর করে কোন পার্লারে সেজেছিস? কত নিল? বাহ্ যাই হোক, ওরা তোকে একদম পরীর মত সাজিয়ে দিয়েছে।”
রাত দশ টায় কেক কাটা হয়। নিশি যখন একে একে সবার সাথে ফটো তুলতে ব্যস্ত। মুমু একটু দূরে খোলা জায়গায় এসে দাঁড়ায়।হঠাৎ একটি ছেলে কাছে এসে বলল, “এই যে আপনি কি পরী? আকাশ থেকে ভুলে হঠাৎ জমিনে এসে পড়লেন বোধ হয়?” মুমু ছেলেটার দিকে ভালো ভাবে তাকাতেই,”হ্যালো আমি মাহিম সোহানা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখল, মুমু এক ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। সোহানা নিশির কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,” মুমু কার সাথে কথা বলছে! দেখতো ছেলেটা কে?” কিন্তু, নিশি সেদিকে লক্ষ্য না করেই বলল,” তাতে তোর কি? তুই তোর কাজ কর।” মুমু মন্ত্রমুগ্ধের মত ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।ভাবছে,কোথায় যেন দেখেছে ঠিক মনে পড়ছে না, এত চেনা চেনা লাগছে কেন? কি আছে এই ছেলেটার মাঝে, তাকে এভাবে চুম্বুকের মত টানছে কেন…
গল্পের বিষয়:
গল্প