-তোর ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে আর তুই কাঁথা মুড়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছিস হারামজাদী? বুকের উপর মায়ের তীব্র লাথিতে কাঁথা মুড়ে দেওয়া অবস্থায় খাট থেকে পড়ে গেলাম। যে মা কখনো আমায় একটা থাপ্পড় দেয় নি। সে মা আমাকে এলোপাতাড়ি লাথি মেরে যাচ্ছে বুকে মুখে যে দিকে পারছে। আমি ভ্যাবাচেকা হয়ে গেলাম কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। কোন মতে কাঁথাটা সড়িয়ে মা কে বললাম-
– হয়েছে টা কি? পাগল হয়েছে নাকি? মা চুলের মুটি ধরে তুলে বলে – কি হয়েছে? তোর খারাপ ছবি রাতারাতি নেটে ভাইরাল করছে ফকিন্নির ছেলেটা। মা কি বলছে বুঝতে পারছি না। আমার আবার খারাপ ছবি কি? আর এই নামে তো মা মিশুকে ডাকে। মিশু কি করবে? ও কি ভাইরাল করবে? আমার ভালো ওর চেয়ে ভালো কেউ বুঝে নাকি? আমিই তো ওর পুরো দুনিয়া। মা আমাকে আবার মারতে এলে ঠাম্মি আর কাকি মা এসে ধরে ফেলে। ঠাম্মি আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
– আরে করছো টা কি? এত বড় মেয়েকে এইভাবে মারে? মা এইবার খাটে বসে পড়ে। মা কাঁদছে, খুব বিশ্রী ভাবে মুখটা ছড়িয়ে কাঁদছে। আমি মাকে কখনো কাঁদতে দেখি নি। এইভাবে তো কখনো না। মাকে দেখতে খুব খারাপ লাগছে৷ মা মাথায় চাপড় দিয়ে বলছে কান্না করে করে –
-এই দিন দেখার জন্য এত পড়ালেখা শিখিয়েছি? যখন যা চেয়েছে তা দিয়েছি, সবার সাথে যুদ্ধ করে ওর পাশে থেকেছি। নিজের ডিপিএস ভেঙ্গে ওর জন্য দামী ল্যাপটপ এনে দিয়েছি। এই দিন দেখার আগে আমি বিষ খেয়ে মরে গেলাম না কেন?
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মাকে এইভাবে কান্না করতে দেখে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কি হয়েছে এখনো। আমার মোবাইল আমার কাছে নেই। কাল দাদা নিয়ে নিয়েছে। আমি আর মিশু এক সাথে পড়ালেখা করেছি। ছয় বছরে রিলেশন আমাদের। বাসায় সবাই জানে।কিন্তু বিয়ের বেলায় কেউ মানছে না। একটার পর একটা ছেলেপক্ষের কাছে আমাকে দেখিই যাচ্ছে। গত সপ্তাহে দাদার অফিসের সিনিয়র স্যার কে দেখাল। ওরা পছন্দ করে ফেলল। বেশ সাদাসিধা ঢোলা শার্ট ট্রাউজার আর মাথার সামনের দিকে খানিকটা চুল চলে যাওয়া পারফেক্ট মধ্যবসয়ী লোক। সবাই প্রায় উঠে পড়ে লেগেছে বিয়েটা হয়ে যাক। কিন্তু আমি পরশু দিন ওনার সাথে দেখা করে বলে দিয়েছি আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি বিয়ে দিলে পালিয়ে যাবো। উনি দাদাকে বলল-
-তোমার বোনের মত নিয়ে দেখানো উচিত ছিলো তোমার, ওর সাথে করতে হবে সংসার। ওর মতামতের দাম দেওয়া উচিত৷ দাদা সেদিন ভয়াবহ রেগে গিয়েছিলো। বাসায় এসে আমাকে অনেক কথা শুনায়, আমার মোবাইল নিয়ে নেয়, মিশুকে ফোন দেয়, এবং ওকে অনেক গালাগালি করে, আমি বারবার নিষেধ করছিলাম দাদাকে কিন্তু ও কথা শুনছিলো না। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। আমিও সবাইকে বললাম-
– আমি মিশুকেই বিয়ে করব। তোমরা বিয়ে দিলেও পালিয়ে যাবো। মানসম্মান দেখব না৷ না খেয়েই শুয়ে পড়েছিলাম। সকালে মায়ের এইভাবে আমাকে মারধর। কিছুই বুঝতে পারছি না। বাসায় সবার অবস্থা এই রকম। বাবা প্রেশার হাই হয়ে গেছে। দাদাকে দেখলাম কেমন বিধস্ত চেহেরা লাগছে। সবার নাম্বার একটার পর একটা কল এসেই যাচ্ছে। আমাকে এখনো কিছু টার্চ করছে না। আমি বুঝতে পারছি না কি এমন হয়েছে। মিশু যে কখনো এমন কিছু করবে না আমি শিওর। নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করি আমি ওকে।আর তেমন কিছু তো নেই ওর কাছে। মাঝেমধ্যে ছবি দিলেও সে তো সাথে সাথেই ডিলেট করেছে বলেছে। বাসায় কারো কিছু খাওয়া হয় নি দেখা যাচ্ছে।
আমি ঠাম্মিকে দিয়ে দাদার কাছ থেকে মোবাইলটা আনালাম। মনে মনে খুশি লাগছে ওর হয়ত অনেক গুলো মেসেজ থাকবে। আমাকে এখন ওর রাগ ভাঙ্গাতে হবে। খাটে আরাম করে বসে মোবাইল অন করে ডাটা অন করলাম। এমা এত নোটিফিকেশন কিসের আসছে? আমি ফেসবুক অন করতেই আতৎকে উঠলাম। মোবাইল হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেলো। আমি খাট নেমে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। ফেসবুকে আমার ছবি ভাসছে আমাকে যেন কেউ জোরে ধাক্কা দিলো, আমি দেওয়ালের সাথে লেগে বসে পড়লাম। খাট থেকে মোবাইলে স্কীনটা তখনো দেখা যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না কি এইসব? কে করল?
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইলটা নিলাম, খুব বাজে ক্যাপশনে আমার ছবি, বুকের,মুখের। স্নান করার পর বুকের উপর টাওয়াল দেওয়া ছবি। হাজার হাজার লাইক কমেন্ট শেয়ারে ভাসছে পুরো টাইমলাইনে। কে ওরা? কারা এত শেয়ার করছে? ছবি গুলো তো আমি মিশুকে দিয়েছিলাম, ও কি নিজে করছে? নাকি ওর আইডি হ্যাক হয়েছে?
আমার বুক ধুকপুক করছে, হাত পা কাঁপছে, পায়ের হাটুতে হাটুতে বারি খাচ্ছে, পেটের ভিতর মোচর দিচ্ছে। বুকে কেউ পাথর দিয়েছে মনে হচ্ছে। গলা শুকিয়ে গেছে লবণ পানি বের হচ্ছে গালে। মাথাটা ফাঁকা লাগছে, এখন পড়ে যাবো মনে হচ্ছে। আমি মিশুকে ফোন দিলাম, কয়েকবার রিং হওয়ার পর ধরল,
-হ্যালো, এই সব কে করেছে মিশু? তুমি কি খবর নিয়েছো?
– এতক্ষনে তাইলে ঘুম ভাঙ্গল তোর, আমি করেছি মা*। আমি মোবাইল কান থেকে সরিয়ে আবার নাম্বার দেখলাম। না সেইভ নাম্বারেই তো ফোন দিয়েছি।
– মানে?
– মানে আবার কি, রাতারাতি ভাইরাল হয় গেলি আর কি।
– কি বলছ এইসব? আর তুই -তোকারী করছো কেন?
– কেন? কাল যখন তোর ভাই আমাকে তুই -তোকারী করছিল তখন তুই কোথায় ছিলি। খুব পয়সায় দেমাখ না তোদের? যা দিসি সব শেষ করে। দেখা এইবার দেমাখ। আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। এত লেইম একটা এক্সকিউজে কেউ এমন একটা জগন্য কাজ করতে পারে? পরশু অবধি ভালোবাসি বলা ছেলেটা কিভাবে এক দিনে ভালোবাসার মানুষকে মাগী ডাকে? আমি তো উচ্চারণ ও করতে পারছি না শব্দটা। আমি আবার বললাম,
-তুমি কি পাগল হয়েছো? সব ডিলেট করো।
– হা হা, এখন কি আর এইসব আমার হাতে আছে?কত মানুষের কাছে ছড়িয়ে গেছে। ইনবক্সে ইনবক্সে খেলা হচ্ছে তোমায় নিয়ে। তোমার ভেজা চুলে টাওয়ালের ছবিটা কি ভাইরাল হলো মাইরি! কত জন যে আউট করছে কে জানে?
– মিশু-৷
-এই দেমাখ দেখাবি না, এখনো বিষ কমে নি? আরো আছে, ছাড়বো নাকি?
– মানে কি? তুমি এইসব কি বলছো? এইটা কি মুখের ভাষা? আর তুমি তো চাইতে ছবি গুলো। না দিলে রাগ করতে। তোমার রিকুয়েস্টে তো দিতাম। তুমি বলতে সাথে সাথে ডিলিট করছ।
– তোদের মতো মেয়েদের আমার চেনা আছে,সময় এলে যে উল্টে যাবি ঠিক জানতাম তাই তো রাখছি।
-মানে? দাদা তোমাকে গালি দিছে কারণ আমি তোমার জন্য ওর বস কে বিয়ে করব না বলেছি। তোমার জন্য কাল সারারাত সবার সাথে ঝগড়া করেছি আর তুমি? তোমার ও তো অনেক ছবি ছিলো কই আমি তো রাখি নি। মিশু এইবার উচ্চস্বরে হেসে উঠল।
-আরে গাধী মেয়ে অধরা সোনা, থাকলে বা কি করতে? ভাইরাল হয় মেয়েরা, কখনো দেখেছ ছেলেদের ছবি ভাইরাল হতে?
-তুমি সব ডিলিট করো, নইলে তোমার নামে কিন্তু কেইস করব।
– আমি করেছি যে প্রমাণ কি? কত ছেলে তো শেয়ার করল। কাকে কাকে ধরবে তুমি।
-এমন করছো কেন তুমি? আমি কি করেছি?
তোমাকে ভালোবাসি বলে বিশ্বাস করেছি এইটা আমার দোষ? মিশু ফোন কেটে দিলো। মোবাইল বন্ধ করে দিলো। এমন চেহেরা ওর, আমি চিন্তায় করতে পারছিলাম না। আমি ছবি গুলো দেখলাম। কমেন্ট গুলো পড়লাম। এত শেয়ার? এত বাজে কমেন্ট? সব কমেন্টে অশ্লিল কথা বলে হাসির ইমু দিয়ে যেন অনেক বড় কিছু করে ফেলেছে এমন ভাব? আমি কয়েকটা পড়ে আর পারলাম না৷
আমার দিন কিভাবে কাটতে লাগলো আমি জানি না। আমি আস্তে আস্তে ভয় পেতে শুরু করি, আতঁকে উঠি। কমেন্ট গুলোর কথা মনে পড়লে গা ঘিন ঘিন করে। বাথরুমের বালতিতে মুখ ডুবিয়ে চিৎকার করি। কেন? কেন এমন করলে? মিশুর কথা মনে পড়ে আবার মূহুর্তে ওর সে সব বাজে কথা মনে পড়তেই প্রথমে গা জ্বালা দিয়ে উঠে তারপর রাগ হয়। তারপর অনুভূতি ভোতা হয়ে যায়। অসহায় লাগে। আমি যে মানুষ টার জন্য পুরো পরিবারকে ভিলেন বানিয়েছি। আজ সে ভিলেন আর পুরো পরিবার আমায় রক্ষা করার চেষ্টায়। বাবা বের হয় না অনেক দিন। ভালো ভার্সিটিতে পড়ালেখা করার কারণে আমায় নিয়ে বুক ফুলিয়ে চলা বাবাটা কেমন করে মুখ লুকিয়ে বাঁচছে। এরচেয়ে মরণ ভালো, এমন একটা চিন্তায় যখন দিন কাটছিল। একরাতে দাদা এলো রুমে। দাদা আস্তে করে মাথায় হাত রেখে বলল-
– নিজেকে দোষ দিস না। আমি সব ঠিক করে দিবো। সব বন্ধ হয়ে গেছে, আমি সব বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু যাদের ইনবক্সে- দাদা আর বলতে পারছে না। এই দাদাকে সারাজীবন প্রেমের ভিলেন মানতে আসা আমি ওর চোখের নিজে কালো কালিতে যেন আজ ওকে হিরো লাগছে। দাদাকে শেষ মনে হয় সেভেনে থাকতে জড়িয়ে ধরেছি। আজ উঠে ঝাপটে ধরলাম। আমি কান্না করছি, দাদা মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।
-একদম ভেঙ্গে পড়বি না। আমি আছি তো, চল খেয়ে নিবি। কত দিন ঠিক মতো খেতে আসিস না। চল, আজ আমরা পিজ্জা বানাই, খাবি?
আমি কাঁদতে কাঁদতে মাথা নেড়ে সায় দিই। ভাই-বোন রান্না ঘরে গিয়ে কাজ করাতে মা কাকি উঠে আসে। আমাদের দেখে যেন ওর একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে। সবাই আসে। সবাই আমার হাসিতে আবার জোরে হাসে। সবাই আমায় বুকে টেনে নেয়। এরমধ্যে আরো খুশি যোগ হয়, তখন দাদা বস আবার বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। আমার এইবার না করার কোন জো নেই। মা বাবা এখন একটা খুটি পেলো যেন সবার মুখ বন্ধ করার৷ তাই সবাই তারাতারি বিয়ে টা দিয়ে দিতে চায়। আমার কিছু বলার নেই। তারপর ও দাদার বস রিজভী আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি গেলাম। উনি আমাকে একটা রেস্টুরেন্ট এ বসালেন। আমি ভীষণ ভয় লাগছে এই বুঝি কেউ বাজে কথা বলবে। চিনবে। উনি আমার অস্বস্তিটা বুঝে বললেন।
-চিন্তা করো না, এইসব জিনিস মানুষ দুইদিনে ভুলে যায়। মনেই থাকে না এরা কি দেখল,কি বলল।
-আপনি কি আমায় দয়া করে বিয়ে করছেন? উনি হেসে বললেন,
-আমি জানতাম তোমার মনে এই প্রশ্ন থাকবে তাই আজ দেখা করতে আসতে বলেছি। আমি তোমায় দয়া করছি না। আমি তোমাকে কিছু কথা বলব। তা শুনে যদি তোমার দয়া হয় বিয়ে হবে নইলে না। উনি বলতে শুরু করলেন।
– দেখো আজকাল এই যে দুই মিনিটে কোন মেয়ের ছবি ফেসবুকে নেটে এত ভাইরাল হয়ে যায়, এর পেছনে কারণ টা কি কেউ একবার খুঁজে? এদের কাছে খুব মজার জিনিস। ছেলেরাই করে এইটা, কিন্তু যখন কোন মেয়ে ধর্ষিত হয়,তখন এরাই আবার ব্যানার হাতে রাস্তায় নামে ফেসবুকে ঝড় তুলে। কিন্তু এরা কারণ খুঁজে না। কখনো দেখেছো কোন ছেলের ছবি ভাইরাল হয়েছে? না, কারণ ছেলেরা ছেলেদের এইসব দেখে মজা পাবে না। মেয়েদের রুচিবোধ আসলেই এখনো এত নামে নি যে ওরা এইটা করবে। ভাইরাল মানে কি? সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। এইটা হয় কিভাবে? এক জন থেকে পাঁচ জন দেখে সে পাঁচ জন থেকে পাঁচ পাঁচ করে পঁচিশ জন। এইভাবেই বাড়ে। কিন্তু যদি প্রথম জনেই এইটা শেয়ার না করতো। অন্য কেউ দেখত না। সে যদি প্রশ্ন করতো এইটা ঠিক না, তাহলে সবার কাছে পৌছাঁত না৷ কিছু কিছু পেইজ বা গ্রুপে শুধু মাত্র লাইক কমেন্টে মজা নেওয়া জন্য, বিনোদনের জন্য এইটা এপ্রুভ করে। ওরা যদি প্রশ্ন করত এপ্রুভ না করতো কেমনে অন্যরা দেখতো?
এইবার আসবে মেয়েদের ব্যাপারটা? মেয়েটা কেন দিলো? যে ছেলেটা একটু আগে রিকশায় করে বান্ধবীকে নামিয়ে দিয়ে এলো সন্ধ্যা হয়ে গেলো বলে, তারা ও বলবে কেন? যে ছেলেটা মাত্র শুয়ে শুয়ে বান্ধবীর সাথে ভিডিও কল শেষ করল সে ও বলবে কেন? উত্তর বিশ্বাস, তোমাকে যেমন কেউ বিশ্বাস করে রাস্তা পার হলো, ওড়না ছাড়া ভিডিও কলে কথা বলল, তেমনি কোন মেয়ে কাউকে বিশ্বাস করেছে। বাসায় কোন লোক আসলে মেয়েরা দরজা খোলার আগে ওড়না খুঁজে নেয়, সে মেয়ে কতটা বিশ্বাস করলে বুকের উড়না সরিয়ে কাউকে ছবি দেয় সেটা কেউ একবার ভাবে? এতে মেয়েদের দোষ একটাই কেন বিশ্বাস করল?
সবাই কিন্তু আবার এক না। ছেলেরা যেমন এইসব নোংরা খেলায় মাতে তেমনি ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে যাওয়ায় জীবন্ত লাশ হয়ে একশ একটা নীল পদ্ম বুকে নিয়ে বাঁচে অনেকে। এরাই পুরো দুনিয়ার সাথে লড়ে যাবে শুধু কারো ভালোবাসার জন্য। কিন্তু অন্য মেয়ে, এরা তো খেলনা। দুইদিন শুধু দুইদিন, এরপর এরা ভুলে যাবে, মেতে উঠবে অন্য কিছু ভাইরাল করতে, মনেই থাকবে না কি ছিলো টাইমলাইনে? কে কি কমেন্ট করছিলো, প্রোফাইলে চলে যাবে অনেক দূরে। ভুলে যাবে। সবাই ভুলে যাবে। ভুলবে না শুধু সে ভাইরাল হওয়া মেয়েটি। আসলে আমিও হয়ত এই আমাদের পুরষতান্ত্রিক নোংরামি টা থেকে বের হয়ে আসতে পারতাম না।
যদি আমার বোনটাকে না হারাতাম। সে ও এমন কিছুর শিকার হয়েছিলো। সে যুগে ফেসবুক ভাইরাল ছিলো না। পাড়ার ছেলেদের কাছে ভাইরাল হতো। তখনে ছেলেদের মধ্যে হয়ত বিবেক ছিল। যা এখনকার ছেলেদের মধ্যে নেই। একজনকে দেখাখালে তখন অন্য জন ধরল কোথায় পেলি এই ছবি? এইটা তো অমুকের বোনের ছবি।এইভাবে ছড়ানোর আগেই আমার হাতে এলো। আমি তোমার দাদার মতো হয়ত ভালো ভাই ছিলাম না। যে বোন কে বলতে পারিনি, আমি তো আছি। সে নিজেকে শেষ করে দিলো। আমি পারি নি রক্ষা করতে। একটানা কথা গুলো বলে পানি খেলেন উনি। আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অনেকক্ষন পর উনি বললেন,
-আমি সাধারণ, হিরো নয়। আমি তোমায় জন্য শাড়ি গয়নায় ভরিয়ে রাখতে পারবো না। গোলাপ এনে লাগাতে পারবো না মাথায়। কিন্তু মাসের বাজারটা আমি ঠিক করে রাখব। কথায় কথায় রোমেন্টিক আমি নয়,তবে তোমাকে একা ফেলে যাব না। ঝামেলা হলে মা কে বলব ক্ষমা করে দাও, তোমাকে বলব মানিয়ে নাও, যদি এরপর তুমি আমাকে দয়া কর বিয়ে করতে চাও তোমার ব্যাপার।
আমি কিছুই বলতে পারলাম না। বিয়ে হলো, সবাই খুশি। অনেক দিন হয়ে গেলো। কেউ কিছু বলে নি আর ভাইরাল হওয়া ছবি নিয়ে। বছর পাঁচেক পার হলো, ছেলে হলো, সবাই ভুলে গেল সব। শুধু ভুলতে পারি নি আমি, এখনো মধ্যরাতে নাকে মুখে পানি ঢুকে নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে এমন মনে হয় সেইসব ছবিতে কমেন্ট করা সে সব কথা গুলোর কথা মনে পড়লে। আমি ক্লান্ত শরীরে হালকা নাক ডাকা লোকটার দিকে তাকাই, সত্যিকারের প্রেমিক গুলো কি সাধারণের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে তাই না? ঢোলা শার্ট আর ট্রাউজার সাধারণ জুতাতে নয়টা পাঁচটা অফিস শেষেও যখন ভালো দামে পাওয়া ফ্রুটস গুলো আনতে ভুলে না তাদের মধ্যে আমরা প্রেমিক খুজঁতে ভুলে যাই, এত সাধারণ হয় তারা। সেদিন ফেসবুকে মিশু অন্য আইডি থেকে নক দিয়ে কথা বলেছিলো। আমি ওকে কোন প্রশ্ন করি নি। ও বলেছিলো-
-তোমাকে আমি ভুলতে পারি নি। তাচ্ছিল্য সুরে আমিও বলেছিলাম-
-আমিও তোমায় ভুলতে পারি না, এখনো আসো মধ্যরাতে দুঃস্বপ্ন হয়ে।
– এখনো মনে রেখেছো সেসব? ক্ষমা করো নি আমায়?
– ভুলে গেছো তুমি তাই না? তোমার তো মনে রাখার কথা ছিল না।
আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি অনেক আগে। এখনো রোজ প্রার্থনা করি তোমার জন্য। সে সব ছেলেদের জন্য যারা শুধু মাত্র মজা করার জন্য এইসব নোংরা খেলায় মেতে উঠে। আমি প্রার্থনা করি, তুমি বিয়ে করে সুখী হও। তোমার স্ত্রী তোমার প্রিয়তমা হোক। ভাইরাল হওয়া এই মেয়ে তোমায় আর্শীবাদ করি, তোমার ঘর আলো ক
গল্পের বিষয়:
গল্প