দুপুরে ঘুমিয়ে ছিলাম আর কখন যে বিকাল হয়ে গেল খেয়ালই ছিল না। হঠাৎ দেবিকার ফোনের আওয়াজে আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। আসলে আজ ওর সাথে দেখা করার কথা ছিল আর দেবিকা আমার অনেক কষ্টে পটানো একটা মাত্র জি এফ। আসলে বাংলাদেশে চাকরীর যেমন অসুবিধা তেমনি ভাল ছেলেদের কপালে জি এফ জুটাতে পারাটাও অসুবিধাই বলা যায়। আমি চোখটা ভাল করে পরিষ্কার করতে করতে ফোনটা রিসিভ করলাম।
— হ্যালো দেবিকা বলো।
— আচ্ছা কয়টা বাজে কোন খেয়াল আছে? সারে ৪টায় তোমার দেখা করার কথা আর এখন ৪টা বাজে। কিন্তু একটা ফোনও দিলে না। কোথায় তুমি আমায় ফোন দিয়ে তাড়া দিবে আর এখানে আমি তোমায় তাড়া দেই। এটা কেমন ব্যাপার?
— আসলে আমি তো রাস্তায় আছি তো। কিন্তু জ্যামে আটকে গেছি। আরো তো ৩০ মিনিট আছে। আমি ঠিক সময়ই পৌছে যাবো।
— ও আচ্ছা তারাতারি আসো।
আমি ফোনটা রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। আমি তারাতারি রেডি হতে লাগলাম। কারন আমরা যেই কফি শপে দেখা করবো ওইটা আমার বাসা থেকে আধা ঘন্টার রাস্তা। তবে দেবিকার বাসা থেকে ১৫ মিনিটেই আসা যায় তাই আমরা দেখা করলে এই কফি শপেই দেখা করি। আমি ফ্রেশ হয়ে বাসা থেকে বের হতে হতেই ১৫ মিনিট চলে গেল। তারপর অটুতে উঠে রওনা দিলাম আর ঠিক মাঝ রাস্তায় এসে জ্যামে পরলাম। এখন তো সত্যি সত্যি জ্যামে পরলাম। কেন যে ফোনে মিথ্যা বলতে গেলাম? তারাতারি অটুর ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে পায়ে হেটেঁই রওনা দিলাম। তারপর জ্যাম শেষ করে আবার রিকশা নিলাম। শেষ পর্যায় ঠিক ৫টা বাজে বাজে অবস্থায় কফি শপে গেলাম। দেখতে পেলাম একটা কর্ণারে দেবিকা বসে কফি খাচ্ছে। আমি ওর সামনের সিটে গিয়ে বসলাম কিন্তু ও আমার দিকে একবার তাকিয়ে আর তাকাচ্ছেও না। মনে হয় অনেক রেগে আছে। তাই বললাম…
— ওই শুনো না, আসলে হয়েছে কি জানো? আমি রাস্তা দিয়ে আসার সময় তিনবার জ্যামে পরি তো তাই আসতে এতোটা লেট হয়েছে। সরি
— (দেবিকা চুপ করেই আছে)
— ওই কিছু বলবে না। এই দেখো আমি কান ধরছি।
— ঠিক আছে কানে ধরতে হবে না। আমি এসেছি মাত্র পাচঁ মিনিট হলো আর আমি রাগী নি।
— এতো দেখি আমার চেয়ে বড় আইলসা।
— মানে?
— না কিছু না। তোমার আসতে লেট হয়ে ছিল কেন?
— তোমাকে যখন ফোন দিয়ে আসার কথা বলি তখন আমি মাত্র সাজতে বসে ছিলাম।
— তাই তো দিন দিন এতো সুন্দর হওয়ার রহস্য কী?
— ওই তুমি এভাবে কথা বলো কেন?
— আমি তো স্পষ্টবাদী মানুষ আর কখনো মিথ্যা বলি না।
— ঠিকই বলেছো। তোমাকে ফোন দেওয়ার আগে আমি তোমার ছোট বোন দিশাকে ফোন দিছিলাম। ও বলে তুমি ঘুমিয়ে ছিলে আর এখন চাপা মারো।
— রাগ করো না প্লিজ। আসলে মেয়ে পটাতে হলে ছেলেরা একটু মিথ্যা বলেই। আর যে মিথ্যায় কোন সমস্যা হয় না সে মিথ্যা কোন মিথ্যাই না।
— ধুর তোমার সাথে রিলেশন করাটাই আমার সব চেয়ে বড় বোকামী। তুমি থাকো আমি চললাম।
— আরে কই যাও।
দেবিকা রাগ দেখিয়ে চলে গেল। আমি ওর পিছন পিছন গিয়েও ওরে আটকাতে পারলাম না। আসলে মেয়ে হয়েছে একটা? পুরো আমার থেকে আপডেট ভার্সন। আমাকে অনেক চাপের মাঝে রাখে আর নিজের মর্জি মত চলে। এতো কষ্ট করে আসাটা বৃথা গেল। আমি কফি শপের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম আর দেবিকা চলেই গেল। রাতে রুমে শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পরছিলাম। কিন্তু দেবিকাকে খুব মনে পরছিল। তাই ভাবলাম একটা ফোন দেই। এমনি বিকালে ওরে একটু বেশি রাগিয়ে দিয়েছি। এখন যদি আমি ওর রাগ না কমাই তাহলে হয়ত আরো রেগে যাবে। ফোন দিতেই ফোনটা রিসিভ করে নিলো। কিন্তু চুপ করে আছে তাই কথাটা আমিই শুরু করলাম।
— ওই এখনও কি আমার উপর রাগ করে আছো?
— জানি না।
— ও তার মানে এখনো রাগ করে আছো। আচ্ছা বিকালের ব্যাপারটার জন্য আমি সরি তো।
— আমি বিকালের ব্যাপারটা নিয়ে রাগ করে নেই।
— তাহলে?
— কাল একটা স্পেশাল দিন আর তুমি আমায় এটা নিয়ে কিছু বলো নি।
— কাল কী?
— কাল পহেলা বৈশাখ।
— ও পহেলা বৈশাখ। এটা এমন কি স্পেশাল দিন বলো তো? একটু সাজাসাজি আর ঘুরাঘুরি।
— ও তাই না। ওকে এখন ফোন রাখো।
— আরে আরে রেগে যাচ্ছো কেন? কাল তো আমরা দেখা করবো তাই না।
— না করবো না।
— ওই আবার রাগ করছো কেন? প্লিজ দেখা করো না। আগামীকাল আমি তারাতারি চলে আসবো প্রমিস।
— সকাল ঠিক ৯টায় বটমূলের কাছে মেলা বসবে। সেখানে বাসন্তি রংয়ের পাঞ্জাবীটা পরে চলে আসবে।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো। আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না। বুঝা যাচ্ছে মহারানী অনেক রেগে আছে। কাল যদি সময়ের একটু উনিশ বিশ হয় তাহলে হয়ত সত্যি সত্যি ব্রেকআপ করে দিতে পারে। সকালে তারাতারি ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। আসলে আমাদের বাসার পাশের বাসায় একটা পরিবার থাকে আর সেই পরিবারে একটা ছোট বাচ্চা আছে। সময় অসময় শুধু কান্না করে। আজও তার বিপরীত হয় নি। ঠিক সাড়ে সাতটায় আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। এরপর দেবিকার কথা মত বাসন্তি রংয়ের পাঞ্জাবী পরে বেড়িয়ে পরলাম। রাস্তায় অনেক ছোটরা ঘুরাঘুরি করছে আর অনেক কাপলও। তাই আজ আর রিকশা নিলাম না বরং হেটেঁই চলে গেলাম। ১০ মিনিট আগেই পৌছেঁ গেলামা বটমূলের সামনে। আর অনেক বড় মেলাও জমেছে। আর এই দিকে গান আর নাচের অনুষ্ঠান চলছে। আমি দেবিকাকে ফোন দিলাম। ফোন দিতেই মেডাম ফোনটা রিসিভ করে বলল..
— রাজ তুমি কোথায়?
— আমি তো বটমূলের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি কোথায় আছো?
— তুমি ১০ মিনিট ওয়েট করো আমি রিকশায় আছি, আসতেছি।
আমিও ফোনটা কেটে দিয়ে অনুষ্ঠান দেখায় মনযোগ দিলাম। তখন একটা মেয়ে আমার সামনে এসে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। দেখে তো মনে হচ্ছে মেলায় ঘুরতে এসেছে কিন্তু আমার সামনে কি? তারপর অনেকটা তাকিয়ে থেকে বলল..
— ভাইয়া আপনার ফোন থেকে কি একটা ফোন দিতে পারি?আসলে আমার ফোনের টাকা শেষ।
— কিন্তু আপনাকে তো চিনি না আর অচেনা কাউকে বিশ্বাস করাটাও ঠিক না।
— ভাইয়া এভাবে বলবেন না। আসলে আমার বয়ফ্রেন্ড আসার কথা কিন্তু আমার ফোনে তো টাকা নেই তাই ফোন দিয়ে জানতে পারতেছি না ও এখন কোথায়? আর এখানে আপনাকে দেখে ভদ্রলোক মনে হলো তাই আপনার থেকে ফোনটা চাইলাম।
— ওকে ঠিক আছে কিন্তু আমার সামনে দাঁড়িয়েই ফোনটা করেন।
— ওকে।
এরপর আমার ফোন থেকে ও ফোন করলো কিন্তু ওই মেয়ের নিজের ফোনটাই তো বেঁজে উঠলো। আমি কিছু বলতে যাবো তখনই ও কান্না করতে শুরু করলো। আজব তো, এখন আবার কি হলো? চারপাশের মানুষরা আমাদের দুইজনকে দেখতে লাগলো।
— আরে আপনি কান্না করছেন কেন?চার পাশের লোকেরা দেখছে তো।
— লোকজন দেখার জন্যই তো কান্না করছি।
— মানে?
— মানে আপাতত আমার বয়ফ্রেন্ড আসা পর্যন্ত আপনি আমার বয়ফ্রেন্ডের দায়িত্ব পালন করবেন। আমার সব খরচ বহন করবেন।
— এইসব কি ফাজলামী হচ্ছে? আমি কিন্তু আপনাকে বিশ্বাস করে আমার মোবাইল থেকে ফোন করতে দিয়েছি।
— যাই হোক, যদি এখন আপনি আমায় নিয়ে না ঘুরেন আর আমার খরচ বহন না করেন তাহলে আমি চেঁচিয়ে মানুষ জড়ো করবো আর বলবো আপনি আমায় জোর করে বাসা থেকে তুলে আনছেন।আর তাছাড়া আপনার ফোন থেকে আপনি মাঝে মাঝেই আমায় ফোন দিয়ে বিরক্ত করতেন।
— এসব কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।
— ঠিক ভুলের বিচার আমি করবো না। এখন আমায় নিয়ে ঘুরবেন নাকি মানুষ ডাকবো।
— ওকে আসুন ( চাপে পরে)
আমার মোবাইলটাও মেয়েটা নিজের কাছে রাখলো। আমি এ কোন সমস্যায় পরলাম রে। আর এদিকে দেবিকা আসার সময়ও হয়ে গেছে। দেবিকা যদি আমায় দেখে নেয় তাহলে অনেক ঝামেলায় পরে যাবো।
আমি মেয়েটার পিছন পিছন ঘুরতে লাগলাম। আর মেয়েটা যেন মুক্ত বিহঙ্গের মত এক দোকান থেকে আরেক দোকানে যেতে লাগলো। এরপর একটা মেয়েদের সাজার দোকানে গিয়ে কানের দুল পছন্দ করতে লাগলো। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলতে লাগলো কোনটা ওরে ভাল লাগবে। এরপর আমি বিরক্ত হয়ে বললাম “যা খুশি পছন্দ করেন, আমায় বলছেন কেন?” আর ঠিক এই কথাটার কারনে মেয়েটা কানের দুল আর কিছু জিনিস নিলো আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল ” দেন গো বিলটা মিটিয়ে দেন।” আমি ওর কথায় পুরো শকড। আমার কপালে এ কোন মুসিবত এসে জুটলো। তারপর বাধ্য হয়ে বিলটা মিটিয়ে দিলাম। টাকা গুলো নিয়ে এসে ছিলাম আমি আর দেবিকা শেষ করবো বলে কিন্তু মাঝখান থেকে এই কোন মেয়ে এসে সব টাকা শেষ করছে। কিছু বলতে গেলেই ভয় দেখায়। তখনই আমার ফোনটা বেজেঁ উঠলো। মেয়েটা ফোনটা ওর ব্যাগ থেকে বের করে দেখে দেবিকা ফোন দিয়েছি। আমি বললাম ফোনটা দিতে। কিন্তু মেয়েটা বলল ” আপনি কোন কথা বলবেন না, যা বলার আমিই বলবো। “তখন মেয়েটা ফোনটা রিসিভ করে স্পিকারে দিলো।
— হ্যালো রাজ তুমি কোথায়? আমি তো অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে আছি।(দেবিকা বলল)
— রাজ এখন আমার সাথে ঘুরতেছে। আপনি একটু ওয়েট করেন, আমার ঘুরা শেষ হলে আমি রাজকে আপনার কাছে দিয়ে যাবো।
— ওই আপনি কে? আর রাজকে ফোনটা দেন।
— সরি ফোনটা দেওয়া যাবে না।
বলেই মেয়েটা ফোনটা কেটে দিলো। আমার রাগটা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে লাগলো। ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে শরীরের জোরে একটা চড় বসিয়ে দেই। বেয়াদপ মেয়ে একটা। আর এই দিকে দেবিকা ফোন দিচ্ছে। তখন আমি রাগ নিয়ে বললাম…
— আপনি কিন্তু এবার বেশি বেশি করছেন? আমি দেবিকাকে ভালবাসি। আপনার কারনে আমার রিলেশন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
— চুপ চাপ হাঁটেন নয়ত..
— নয়ত কি হে? ভয় দেখাচ্ছেন হুম। আপনি আমার মোবাইল রাখলে রেখে দেন, আমি দেবিকার কাছে যাচ্ছি।
— আরে এতো রিয়েক্ট করছেন কেন? বললাম তো আমার বি এফ চলে আসলে আপনাকে আপনার দেবিকার কাছে যেতে দিবো। চলেন তো আমাকে ফুসকা খাওয়াবেন। এখান থেকে যাওয়ার কোন উপায় পাচ্ছি না। এক রকম বাজে ভাবে ফেঁসে গেলাম। আমি মেয়েটার পিছন পিছন ফুসকার দোকানে গেলাম। তখন মেয়েটা দুই প্লেট ফুসকা অর্ডার দিলো কিন্তু নিজেই দুই প্লেট খেতে লাগলো। এই দিকে আমি যে একটা মানুষ আছি এটা মনে নেই। শুধু বিল দেওয়ার সময় বলবে ” এই যে বিলটা দিয়ে দেন। ” আমার মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল। মেয়েটা ফুসকা খাওয়া শেষ করতেই আমার দিকে তাকায়ে বলল..
— এই যে বিলটা দিয়ে দেন? আমি বিলটা মিটিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে আসলাম। এরপর ও বলল..
— চলেন না নাগরদোলায় চরী।
— মাথা খারাপ না। এইসবে আমি উঠি না আমার মাথা ঘুরায়।
— হা হা আপনি ছেলে হয়ে এটায় উঠতে ভয় পান আর নাকি রিলেশন করেন।
— রিলেশন করা আর এটায় উঠা আলাদা।
— হইছে এবার চলেন তো উঠি। আমি আপনার পাশে বসবো আর আপনাকে শক্ত করে ধরে রাখবো যেন পরে না যান।
— না।
আমি না করলেও এক পর্যায়ে মেয়েটার জোরাজোরিতে বাধ্য হলাম উঠার জন্য। আমি উঠেই শক্ত করে রেলিং ধরে রাখলাম আর মেয়েটি আমার হাত ধরে আছে। নাগরদোলা ঘুরানো শুরু করার সাথে সাথে মেয়েটা চিৎকার মারলো। আমি তো ভয়ে উঠতে চাই নি কিন্তু এই মেয়ের ভয় পাওয়া দেখে আমার মনের ভয়ই কেটে গেল। উঠার সময় বলে ভয় পায় না আর এখন চিৎকার মেয়ে আমার কানটাই নষ্ট করে দিচ্ছে। নাগরদোলায় চড়া শেষ করে আসতেই মেয়েটি আমার দিকে তাকিয় বলল…
— দেখলেন তো আমি কিন্তু একদমই ভয় পাই না।
— ঠিকই বলেছেন। শুধু আপনি একবার চিৎকার মারার পর বাকি চিৎকার একটাও শুনতে পারি নি। মনে হয় আমার বাম পাশের কানের পর্দাটাই গেছে।
— হুহহ। আমি আর কোন কথা না বলে মেয়েটার পিছন পিছন চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম। হঠাৎ মেয়েটা বলল..
— কি হলো এতো চুপচাপ কেন?
— কিছু না।
— একটু আগেও তো দেবিকা দেবিকা করছিলেন আর এখন ঠান্ডা হয়ে গেলেন কেন?
— ঠান্ডা হবে না তো কি করবো? এতক্ষনে হয়ত দেবিকা চলেই গেছে আর আমার সাথেও রিলেশন শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।
— আপনার ভাবনা ভুলও হতে পারে।
— চুপ করেন তো। আপনার মত মেয়ের মুখ থেকে আমি দেবিকার কথা শুনতে চাই না।
— দেখুন আমি কোন খারাপ মেয়ে না আর আমাকে এভাবে কথা শোনাবেন না।
— আপনাকে কথা শোনাবো না তো কি আপনায় পূজা দিবো।
–( মেয়েটি হাসতে লাগল)
— দেখুন একদম হাসবেন না। আপনার নাম জানি না কিন্তু আপনার সাথে বাধ্য হয়ে ঘুরতে হচ্ছে। দয়া করে আমায় মুক্তি দিন।
— ওকে ওকে আপনায় মুক্তি দিবো তার আগে একটা শর্ত আছে।
— কি শর্ত?
— আমার সাথে বসে একটা আইসক্রিম খেতে হবে।
— ওকে চলুন।
এরপর ওর সাথে একটা আইসক্রিমের দোকানে গেলাম আর বসে আইসক্রিম খেতে লাগলাম। আর তখন মেয়েটি বলল..
— আচ্ছা একটা কথা বলবো?
— কখন থেকে তো বকবক করেই চলেছেন। বলেন কি বলবেন?
— আমার নাম জানার ইচ্ছা কি হয় না?
— প্রথম দিকে ইচ্ছা হলেও এখন আর হচ্ছে না।
— সত্যি
— হুমম
এরপর আইসক্রিম খাওয়া শেষ হতেই মেয়েটার ফোনটা হয়ত বেঁজে উঠলো। মেয়েটা ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করলো। কে ফোন দিছে আমি দেখে ফেলবো বলে মেয়েটা নিজের ফোনটা বাকিয়ে রিসিভ করলো আর বলল ” তুমি দাঁড়াও আমি আসছি “। হয়ত মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড হবে। আমাকে বলল….
— বিলটা মিটিয়ে দিন তারাতারি। আমার বয়ফ্রেন্ড চলে এসেছে। আমায় যেতে হবে।
— যাক মুক্তি পেলাম।
তারাতারি বিলটা মিটিয়ে দিয়ে আমি মেয়েটাকে বায় বলে বটমূলের অনুষ্ঠানের দিকে যেতে লাগলাম আর তখনই মেয়েটা আমায় পেছন থেকে ডাক দিলো।
— এই যে শুনে যান।
— আরে আবার পিছু ডাকছেন কেন?
— আপনার মোবাইল টা তো নিয়ে যান।
— হুম আপনি চুর হলেও মানুষ ভাল।
— মানে?
— না এটা একটা কথার কথা আর কি?
— ওকে যান, আশা করি আবার দেখা হবে।
— আমি ভুলেও চাই না আপনার সাথে আর দেখা হোক।
— ওকে দেখা যাবে।
আমি দৌঁড়ে অনুষ্ঠানের সামনে গেলাম। কিন্তু সেখানে দেবিকা নেই। থাকার তো কথাও নয়। এতক্ষন তো কেউ আর কারো জন্য অপেক্ষা করে থাকবে না। আমি ফোনটা বের করে দেবিকাকে ফোন দিলাম। কিন্তু অবাক হলাম দেবিকা সাথে সাথে আমার ফোনটা রিসিভ করলো। আর আমায় বলল…
— মেয়েটার সাথে তোমার ঘুরাঘুরি শেষ হয়েছে তো।
— তুমি কোথায় বলো আমি এখনি আসছি।
— আমার সাথে দেখা করার কি তোমার প্রয়োজন আছে?
— প্লিজ একটা বার দেখা করো। আমি অনেক খারাপ ভাবে ফেঁসে গেছিলাম।
— ওকে তাহলে বটমূলের পাশের নদীর ঘাটে চলে আসো। আমি ফোন না কেটেই সোজা দৌঁড় দিলাম আর দেখি দেবিকা বসে আছে। আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম। আর ও অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখছে।
— দেবিকা তোমার হয়ত রাগ করাটা স্বাভাবিক কিন্তু আমার কোন দোষ ছিল না আর মেয়েটাকে আমি চিনিও না। এরপর আমি সবটা খুলে বললাম আর আমার কথা গুলো শুনে দেবিকা বলল…
— মেয়েটার নাম কি?
— জানা হয় নি। মেয়েটা অবশ্য বলে ছিল মেয়েটার নাম জানার আমার কোন ইচ্ছা আছে কি না? কিন্তু মেয়ের প্রতি তো আমার কোন ইচ্ছাই ছিল না।
— ও আচ্ছা।
— তুমি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছো?
— একদমই না।
— এতো কিছু হয়ে গেল আর একটুও রাগো নি।
— হুমম রাগি নি। আর তোমার জন্য সেই কখন থেকে এখানে বসে অপেক্ষা করছি। আর মেয়ের নামটা কিন্তু আমি জানি।
— মানে?
— ওর নাম হলো প্রেমা।
— তুমি কেমন করে জানো ওর ব্যাপারে?
আমি দেবিকার দিকে তাকিয়ে রয়েছি আর দেবিকা হাসতেছে আর আমার পাশে এসে একজন বসলো। আমি তাকিয়ে আরো শকড খেলাম। এটা তো ওই মেয়েটাই। তখন আমি মেয়েটাকে কিছু বলতে যাবো তখন দেবিকা বলল…
— প্রেমা আমার ছোট বোন হয়। আর তোমাকে ও দেখতে চেয়ে ছিল তাই আজ ওরে নিয়ে এসেছি। ও চেয়ে ছিল তোমাকে একটু অন্যরকম সারপ্রাইজ দেওয়া যাক। তাই প্রেমা আমার সাথে বসে রাতে এই প্ল্যান করে। আমি তো পুরো অবাক ওদের প্ল্যানের কথা শুনে। প্রেমা আর দেবিকাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর আমি ভাবছি এতদিন আমি মানুষদের বোকা বানাই কিন্তু আজ তো আমি নিজেই বোকা হয়ে গেলাম।
গল্পের বিষয়:
গল্প