গত রাতে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। এরকম কখনো হয় না। হয়নি জীবনে কখনো। কাল রাতে হয়েছিল। কেন হলো এরকম? অনেকক্ষণ বিছানায় স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। আর অনেক প্রশ্ন এলো। সারাটা মন কী রকম ফাঁকা ও উদাস হয়ে গেল। বিষণ্ণতায় ভরে গেল সারাটা ঘর। মনের ভেতর কীরকম হাহাকার হতে লাগলো।
এই ঘরে একা থাকে রাশেদ। বেশ নতুন ঝকঝকে অ্যাপার্টমেন্টের একটা সাইডে এই ঘরটা ভাড়া নিয়েছে দশ হাজার টাকায়। অন্য মূল ঘর থেকে আলাদা। অ্যাটাচড টয়লেট আছে। ছোট মাপের। তবে পরিচ্ছন্ন। হাওয়া-বাতাস আছে। আলো আছে। তিনতলার ঘর। সবুজ পর্দাঢাকা ঘরটিকে মনের মতো সাজিয়ে নিয়েছে। একটা সিঙ্গেল খাট, রাশেদের মতো নিঃসঙ্গ, কিন্তু এ-খাটই একমাত্র ভরসা, তাকে রাতে সঙ্গ দেয়; আপন ও একান্তজনের মতো আশ্রয় দেয়। আর আছে মেরুন রঙের স্পেনের কম্বল। দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা। কালো ঘড়ি। ডিজিটাল। দাম দুহাজার টাকা। অন্ধকারেও বেড়ালের চক্ষুর মতো জ্বলজ্বল করে সময় জানান দিতে ভুলে যায় না। রাশেদ শুয়ে-শুয়ে দেখতে পায়। তার শুয়ে-শুয়ে সময় দেখতে ভালো লাগে। যে-সময় জীবন থেকে হারিয়ে যায়, যে-সময় ক্ষমাহীন, যে-সময় অমোঘ ও নৈর্ব্যক্তিক, সে-সময়কে অলস শুয়ে-শুয়ে অবলোকন করতে একরকম দার্শনিকতা পেয়ে বসে রাশেদকে। যদিও সে খুব গভীরভাবে নিটসে, দেকার্তে, এরিস্টটল, প্লেটো জীবনে কোনোদিন পড়েনি। ফ্রয়েডও পড়েনি। বার্ট্রান্ড রাসেল পড়েনি; কিন্তু আবার পড়েছেও। অনিচ্ছাসত্ত্বেও পাঠ্যসূচিতে এঁদের সম্পর্কে, এঁদের লেখা, এঁদের চিন্তাধারা পরীক্ষায় পাশের জন্য
পড়তে হয়েছে। ওটাকে পড়া বলে না। অনার্সে ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন ছিল অন্যরকম প্রতিযোগিতা। ছাত্র হিসেবে ভালোই ছিল রাশেদ। পেয়েছিল অনেক মেধাবী কিন্তু দুর্বোধ্য শিক্ষক। অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ম্যাক-মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী, দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম, আত্মভোলা আবদুর রাজ্জাক, অল্প সময়ের জন্য প্রচন্ড মেধাবী ড. মীজানুর রহমান শেলী প্রমুখকে। গতকালের স্বপ্নের কথা মনে পড়লো। আবার ধুপধাপ করে ভয় জড়িয়ে ধরলো তাকে, জলোচ্ছ্বাসের ছবি এলো, রাশেদ পদ্মার ঢেউয়ের নিচে হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। স্পিডবোটটা লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা খেল, তারপর আরেকটা স্পিডবোট, প্রচন্ড সংঘর্ষ, তারপর আর কিছু মনে নেই। সে চিৎকার করে বলতে লাগল, আমি বাঁচতে চাই, প্লিজ আমাকে বাঁচান। আমি সাঁতার জানি না। কে যেন তাকে বাঁচিয়ে তুলল। রাশেদ তখন বলছে এবং অবিশ্রান্ত কেঁদে-কেঁদে বলছে, আমি বাঁচতে চাই না, আমি বাঁচতে চাই না…
তারপর ঘুমটা ভেঙে গেল।
গতকাল থেকে, আজ সকাল পর্যন্ত, মনটা কেমন ঝিম মেরে আছে। আজকের দুপুরের ঘটনাটা রাশেদকে অনেক ব্যথিত করেছে। অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছে। গতকালের স্বপ্নের চেয়ে বেশি। স্বপ্ন তো ছায়া-ছায়া, প্রতিচ্ছবি, যার কোনো অস্তিত্ব নেই, যা পরে হারিয়ে যায়, স্মৃতির মতো। কিন্তু দুপুরের ঘটনাটা বাস্তব। আরিফ স্পষ্ট বলে ফেলেছিল। ওভাবে কেউ বলে না। আরিফ বলে। অনেকটা অভিযোগ। প্রবল অভিযোগ। রাশেদের ভালো লাগেনি। অথচ অর্পিতাকে রাশেদই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল আরিফের সঙ্গে। বলেছিল, সম্ভব হলে ভালোবেসো, ওর কেউ নেই।
– কেন? অর্পিতার কণ্ঠে বিস্ময়।
– মানে কেউ নেই এখন। একা।
– বিয়ে করেনি?
– করেছিল। টেকেনি।
– তারপর, আর করেনি? এতোটা বছর একা?
– তারপর কিছুদিন আগে দ্বিতীয়বার…
– সেটা কী হলো?
– টেকেনি।
অর্পিতার বিস্ময় সীমাহীন, যেন আরিফের জীবনের অলিগলিতে আলো ফেলতে চাইছে। জীবনের সবকিছু আলোতে ভেসে ওঠে না। কিছু-কিছু অন্ধকার থেকে যায়। আর এ এক আলো-ছায়ার মায়াবী খেলা। ঠিক জীবনের মতো।
অর্পিতা অস্থির। অধৈর্য। তার অপেক্ষার তর সয় না। সে আরো কিছু জানতে চায়। বুঝতে চায়। আরিফ সম্পর্কে আরো অনেক জানার আছে। তারপর সিদ্ধান্ত। যে-মানুষটির সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, তাকে জানতে হবে। তার অতীত, যে-অতীত হয়তোবা অতীত নয়, অর্পিতা জানতে চায়। রাশেদ অর্পিতার ভালো বন্ধু। তিন বছর আগে, হয়তোবা তারও অনেক আগে, একটা ট্রেনিং সেমিনারে দেখা রাশেদের সঙ্গে। সেমিনারে রাশেদ ছিল দীর্ঘকায় সুদর্শন। মানুষটির প্রতি এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ অনুভব করেছিল কেন যে জানে না। তার কথা, তার হিউমার, তার রসালাপ, পাওয়ার পয়েন্ট বিষয়বস্ত্ত তুলে ধরা, তার বডি ল্যাংগুয়েজ, তার মুভমেনট, তার মায়াবী চাহনি, তার রঙ্গরস পুরো শ্রেণিকক্ষের সবাইকে কীরকম মোহাবিষ্ট করে ফেলেছিল। পরে অনেককে জিজ্ঞেস করে অর্পিতা জেনেছিল, প্রায় সবারই, পুরুষ কিংবা নারী, একরকম মোহ জেগেছিল।
দিনব্যাপী সেই তো পরিচয়। আবার কার্ডবিনিময়। অন্যথায় ওয়ার্কশপে দেখা আবারো। সেদিন রাশেদ সীমারেখা ভেঙে বেশ খুনসুটি করছিল। আজো কানে ভাসে। রাশেদ বলেছিল – এখনো একা আছেন? বনলতা সেনের দেশের মেয়ে, কী করে একা আছেন? কোনো জীবনানন্দ দাশ যদি না পাওয়া যায়, তাহলে আমি প্রক্সি দেবো।
– তাহলে তো ভালোই হয়। আপনি কি এতই সুলভ? আপনার অসম্ভব ব্যস্ততা, আপনার র্যাটরেস, আপনার বন্ধুবান্ধব, আপনার অনুষ্ঠান, আপনার টক শো…
সব কাটছাঁট করবো, যদি বনলতা সেনকে পাই।
খুব শব্দ করে অর্পিতা হেসে উঠেছিল। তখন সকাল। শুরু হবে ওয়ার্কশপ। প্রস্ত্ততি চলছে। কেউ এসে পৌঁছায়নি। গুলশানের একটি চমৎকার হোটেলের ট্রেনিংরুম অপরূপ সাজে সুসজ্জিত। সাদা পোশাকের বেয়ারারা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। সব শিক্ষার্থী এসে পৌঁছায়নি। অর্পিতা একটু আগেই এসেছে।
এভাবে কখন পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, কখন বন্ধুত্ব থেকে সহৃদয়তা, কিন্তু প্রণয় নয়। ভালোবাসাও নয়। তবে একটা স্নিগ্ধ সম্পর্কের সেতু দুজনের মাঝে গড়ে উঠেছিল। অর্পিতা নিয়মিত কোনোদিন টেলিফোন করেনি, কখনো সেভাবে যোগাযোগ রাখেওনি। তারও ব্যস্ততা। মিরপুরের একটি কর্মজীবী হোটেলে থাকে। কাজ করে এনজিওতে। মাঝেমধ্যে ফিল্ডওয়ার্কে ঢাকার বাইরে যেতে হয়। যশোরে বুড়ো মা-বাবা একা। ভাইবোনরা দেশের বাড়িতে। সে-ই একমাত্র উপার্জনের উৎস। ভাইটা কিছু করে না। বেকার। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাবার চোখে ছানি। কলকাতায় চিকিৎসার জন্য শংকর নেত্রালয়ে নিয়ে যেতে হবে। মা অসুস্থ। সর্বক্ষণ একটা টেনশনে কাটে অর্পিতার। তার নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় নেই।
ভালোবাসা এসেছিল জীবনে। ছেলেটি ভালো, সুদর্শন। কিন্তু হৃদয়ে অনেক ময়লা। সবকিছুতেই হস্তক্ষেপ, এটা করবে ওটা করবে না।
এরপর আর কোনো পুরুষের দিকে এগিয়ে যায়নি। পৃথিবীর সব পুরুষকে একই রকম মনে হয়। কেউ আলাদা নয়। পুরুষ এসেছিল, অর্পিতা সবার ভেতর একই রকম পুরুষ খুঁজে পেয়েছিল। সেই চিরকালের পুরুষ। রাশেদের ভাষায় মেল শভেনিজম পৌরুষের অহঙ্কার। রাশেদকে একটু-একটু করে জেনেছিল। এ যেন এক নতুন মহাদেশ আবিষ্কারের মতো। পুরুষের ভেতর একটু অন্যরকম উদারতা আছে, সহৃদয়তা আছে, হিংসা আছে কি? তবে আরিফের আছে। আরিফ এ সীমারেখাটি অতিক্রম করতে পারেনি। রাশেদ পেরেছিল।
আরিফ সরাসরি অর্পিতাকে বলেছিল, তুমি রাশেদকে টেলিফোন করবে না, কোনোরকম যোগাযোগ করবে না।
অর্পিতার ভালো লাগেনি। যে পরিচয় করিয়ে দিলো, তাকে কখনো প্রয়োজনেও টেলিফোন করা যাবে না। এ কী করে হয়? রাশেদ তো এরকম নয়। এত হিংসা পুরুষের মনে? আরিফ খুব পজিটিভ। সেদিনই ডেকেছিল রাশেদকে। ওদের একটা অন্তরঙ্গ আড্ডার জায়গা আছে। অর্পিতার বান্ধবীর বাড়িতে, তেজগাঁও, খুব দুপুরে, কিংবা ম্লান বিকেলে, প্রায়ই রাশেদ আর অর্পিতা আড্ডা দিত।
রাশেদ বললো, সব কথা খুলে বলো, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাকে তোমার টেলিফোন করতে হবে না। তুমি আরিফকে নিয়ে ব্যস্ত থাকো।
– না, আমি পারবো না।
– কেন পারবে না? আরিফ তো মানুষ হিসেবে ভালো।
– যদি ভালোই হয়, তাহলে দু-দুটো বউ চলে যায় কেন?
– না, যায়নি তো।
– তাহলে বললে যে তুমি, ডিভোর্স হয়েছে।
– না, আমি তো সে-কথা বলিনি।
– কী বলেছ?
– আমি বলেছি, প্রথম বউ, মাত্র বিশ বছর বয়স, আরিফের তখন সাঁইত্রিশ বছর বয়স, ছেড়ে চলে গেছে, এক উড়নচন্ডী চালচুলোহীন তরুণ গানের মাস্টারের সঙ্গে।
– আর পরেরটা?
– সেটা তো এখনো ফয়সালা হয়নি। তবে শিগগির ডিভোর্স হয়ে যাবে।
– এসব আমি শুনতে চাই না। লোকটাকে আমার ভালো লাগে না।
– কেন ভালো লাগে না। আরিফ কিন্তু মানুষ হিসেবে ভালো।
– না, কেমন যেন কাঠখোট্টা।
– তুমি কী কবি চাও? তুমিও তো নিরামিষ টাইপ। কদিন আমাকে টেলিফোন করেছো?
– না, আমি কিছু চাই না। আমি তোমার বন্ধুত্ব ছাড়তে পারব না রাশেদ। দু-তিনবার দেখা হলো অথচ আরিফের ভেতর কোনো প্রাণ খুঁজে পেলাম না। ভদ্রলোক কেমন যেন?
– কেমন?
– আমি জানি না।
– জানতে চেষ্টা করো। ভালো লাগবে।
– মানে, তুমি আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইছ না।
– এটা কী করে হয়! তুমি আরিফের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে, আমার সঙ্গেও।
– ওর সঙ্গে, কেন জানি আমার মনে হচ্ছে হবে না।
– কেন হবে না? তোমরা দুজনই নিরামিষ। দুজনই কাটাকোটা কথা বলো। দুজনেই প্রাণহীন। দুজনের মাঝেই কবিতা নেই।
– আমার মাঝে বুঝি প্রাণ নেই? তবে কেন এলে আমার কাছে? প্রতি সপ্তাহে, প্রতিটি দুপুর; ভুলে গেছ?
– আরিফ আসলে মানুষ হিসেবে ভালো। বন্ধু হিসেবেও ভালো। ট্রাই টু এক্সপ্লোর হিম।
– আমি পারব না। তুমি আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করো না। আমি আরিফকে বলব না কিছু।
– তা কী করে হয়? আমি তোমাকে ছাড়ব না।
কিন্তু জীবন যেরকমভাবে চলার কথা, একই সরলরেখা ধরে রাশেদের জীবন, অর্পিতার জীবন, আরিফের জীবন যদি চলত তাহলে ঘটনা অন্য খাতে বইত। এক দুপুরে আরিফ সরাসরি টেলিফোন তুলে রাশেদকে বলল, তুমি এতটা বিশ্বাসঘাতক? তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। সেদিন আমার বাসায় এসে তুমি অর্পিতার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছ। ছিঃ, তুমি এতটা খারাপ।
রাশেদ এ-কথার সরাসরি উত্তর না দিয়ে নীরবে নিজের ভেতর নিজের রক্তক্ষরণ দেখেছিল। পরে, অর্পিতাকে টেলিফোন করে বলল, অর্পিতা এ তুমি কী করেছ? তুমি আরিফকে এসব কী বলেছ? আমি আর কোনোদিন তোমাকে টেলিফোন করব না। এই শেষ।
– বিশ্বাস করো, আমি ওভাবে বলিনি। তিন-চারবার আরিফের বাসায় গেছি। সে-ই ডেকেছে, তবু সে সাড়া দেয়নি। তাই আমি ওর ভেতর জেলাসি তৈরি করার জন্য এসব বলেছি। আমি এক্ষুনি টেলিফোন করে…
সেই থেকে, সেই দুপুর থেকেই রাশেদ মনমরা হয়ে আছে।
এদিকে আবার গতকালের দুঃস্বপ্ন। কেমন যেন ব্যথিত ও নিরানন্দে ভরে গেল জীবন। সবকিছু বেশ ভালোই চলছিল। হঠাৎ অর্পিতাকে আরিফের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, আরিফের বাড়াবাড়ি, রাশেদের দূরে সরে যাওয়া – সবকিছু ঠিকঠাক ছকেবাঁধা গল্প নয়। হঠাৎ সেলফোন বেজে উঠল।
স্ক্রিনে ভেসে উঠল যে-নামটি, তাকে রাশেদ প্রত্যাশা করেনি এই অবেলায়। হিসাব অনুযায়ী বৃহস্পতিবার, উইকএন্ডে, অর্পিতা সচরাচর টেলিফোন করে, অন্য কোনো দিন নয়। কখনো আগের দিন রাতেও করে।
অর্পিতা বলল, আরিফের সঙ্গে কথা হয়েছে। সে আমার পা ধরে মাফ চেয়েছে। তোমাকে একটু সময় দিতে হবে আজ।
– আমি পারব না। আমার খুব ব্যস্ততা।
– আধঘণ্টা মাত্র। আমি অন্যায় করেছি। আমি তোমার পা ধরে মাফ চাইব। প্লিজ এই সুযোগটা থেকে আমাকে বঞ্চিত করো না।
বিকেল তখন সন্ধ্যার সঙ্গে অভিসারে মেতে ওঠার প্রস্ত্ততি নিচ্ছে। তেজগাঁওয়ে অর্পিতার বান্ধবীর বাসায় একটা ঘর আছে, সেখানে তারা অন্তরঙ্গ আড্ডায় কাটাত প্রায় প্রতিটি সপ্তাহ। আজো সেখানে এলো রাশেদ।
অর্পিতা প্রতিবারের মতো আজো আগে এসে পৌঁছেছে। আজ সে পরেছে নীল শাড়ি, রাশেদের প্রিয় রং, কপালে লাল টিপ, ঠোঁটে প্রিয় খয়েরি লিপস্টিক। দরজা খুলতেই পা জড়িয়ে ধরল অর্পিতা, চোখ দিয়ে বিন্দু-বিন্দু অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আর সে-অশ্রুতে যেন ভেসে যাচ্ছে আরিফের সমস্ত স্মৃতি, পেছনে ফেলে আসা এক দুঃস্বপ্ন। রাশেদ দুহাতে তুলে ধরল অর্পিতার ম্লান মুখ, যেন বাংলা চলচ্চিত্রের একটি ক্লোজ শট, তারপর তার দুঠোঁটে ঢেলে দিলো জীবন, এক গভীর তৃষ্ণার্ত জীবনের সমস্ত পিপাসা, সেখানে অন্য কেউ আর নেই, কোনো আরিফ নেই, থাকবে না কোনোদিন।