সরকারি চাকুরী

সরকারি চাকুরী
আমার শ্বাশুড়ি আমাকে অনেক মেরে অজ্ঞান করে দেয়। জ্ঞান ফিরার পরেই নিজেকে বিছানায় অনুভব করলাম। দেখি আমার ছোটো ননদ, আমার মাথার কাছে বসে পানি দিচ্ছে। আমি কিছু বলার আগেই, ননদ বলে, “ভাবি, কেমন লাগছে এখন?
জবাবে কিছু না বলে চুপ করে আছি। ননদ আবার বলে,”ভাবি, আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হয়! মা তোমায় শুধু মারে কিছু হলেই। তোমার বাবাকে বলে দাও। সব কিছু দিয়ে দিতে। তা হলে আর এভাবে রোজ মার খাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। ননদের কথার ভিতর ভালবাসা অনেক লুকিয়ে আছে। আমার স্বামী ও শ্বাশুড়ি কখনো ভালবাসা দেয় নি। বিয়ে হলো মাস ছয়েকের মতো। এর ভিতরই কত যে অত্যাচার করছে, আমার শরীর ও ননদটা জানে। ননদের নাম সোহানা। নিজের শরীরটা কোন রকম টেনে বসে সোহানা’কে জড়িয়ে ধরে বসে আছি। সোহানার বয়স এবার ১৩হবে। সিক্সে পড়ে। এত অল্প বয়সে সব বুঝে, বুঝলো না শ্বাশুড়ি ও স্বামী। বিয়ের সময় আমার বাবা বলে ছিলো ঘরের সব জিনিস দিবে আর জামাইকে একটা ভালো মটর সাইকেল কিনে দিবে, উপহার স্বরুপ সব।
মটর সাইকেল কিনে দিয়েছে পুরো আড়াই লাখ টাকা দিয়ে। ঘরের জিনিস পত্র কিনে দিলে, এখন খরচ হবে ৫-৬লাখ। বিয়ের সময় বরপক্ষের মানুষের খাবার খাওয়াতে, খরচ হয়েছিলো ৩লাখের মতো। সব কিছু দিতে হিমশিম খেয়েছে জানি। বাবা বলে ছিলো, ঘরের সকল আসবাবপত্র বানাতে দিয়েছে, বিয়ের পরই পাঠিয়ে দেবে । আমি জানি বানাতে দেয় নাই । ছেলে সরকারি চাকুরী করে। তাই, হাত ছাড়া করে নাই আমার পরিবার। সব দিয়েই বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যায়। পুরো শরীরে ব্যাথা করছে। আমি জানি বাবা বিয়ের সময় বলা জিনিস পত্র দিতে পারে নাই।সেটার রাগই শ্বাশুড়ি, কোন কাজের ভুলের উপর ঝাড়ে আমার উপর। একটু আগেই চুলায় বসানো দুধ, পড়ে যায়। আমি কেনো সময় মতো চুলার গ্যাস কমিয়ে দেই নি। দুধ পড়ে যায়। আর এই কারণেই শ্বাশুড়ি লাগাতার মারতে থাকে, যার ফলে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই।
একটু বিশ্রাম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে আছি। শ্বাশুড়ি খাবার খেয়ে, ওনিও হয়তো শুয়ে আছে। ননদ তার রুমে। আমার আর খাবার খেতে মন চাচ্ছে না, এই দুপুরবেলায়। প্রতিদিন কোন সামান্য কিছু নিয়ে গায়ে হাত তুলে শ্বাশুড়ি। আবিরও কোন কিছু নিয়ে হাত তুলে। তার মায়ের অত্যাচারের কথা বললে সে বলে, ঠিক আছে। মেয়েদের সোজা রাখতে মারতে হয়। আবিরের অনেক রাগ মেয়েদের প্রতি। বিয়ের আগে বেকার থাকার সময়। সুরাইয়া নামের একটা মেয়েকে অনেক ভালবাসে। আর বেকার বলে সেই মেয়ে আরেকজনের হাত ধরে চলে যায়। সেই মেয়ে নাকি আবিরের সাথে সম্পর্ক রাখার সময়ই কত ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখে। আবির জানতো না। আবিরকে ছাড়ার পরই নাকি সব জানতে পারে।
তারপর থেকেই আবির, মেয়েদের ভোগের সামগ্রীই ভাবে হয়তো। রাতেই আমাকে প্রয়োজন আর কিছু না। একটা সুরাইয়ার জন্য আমার জীবনটা শেষ। ওই বেয়াদব মেয়ের জন্য আমি আজ স্বামী ও তার পরিবারের ভালবাসা থেকে বঞ্চিত। শুয়ে ভাবছি সব কিছু। তখনই শ্বাশুড়ির ডাক, ” কেয়া, ভাত খেয়ে নে। আসরের পরই রাতের খাবার বানিয়ে ফেল” আমি জবাবে বললাম, “খাবার খাবো না ” ওনি আর কিছু বলছে না। আবির পুলিশের হাবিলদার। সরকারি চাকুরী,। আমার পরিবার সরকারি চাকুরী শুনেই বিয়ে দিয়ে দেয়। আর সহ্য হচ্ছে না, এইসব। আমিতো ভালবাসতাম না কাউকে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম পড়াশোনা করে । সেটা হয় নি আর। কল দিলাম বাবা’কে । কল রিসিভ করেই বলে
_কিরে কেমন আছিস? অনেক ভালো তাই না?
_অনেক ভালো? সরকারী চাকরি করা লোকের বউ বলে কথা!
_এই জন্যই সরকারি চাকুরীওয়ালা দেখে বিয়ে দিয়েছি।
_আমার বিয়ের সময় দেওয়া ঘরের জিনিসপত্র কবে দিবে?
_ওইসব আর দিবো কি করে? জামাই যেহেতু চাকুরি করে। এইসব নিবে নাকি আর!
_তার মানে দিতে পারবে না?
_বিয়ের সময় বলেছিলাম, যাতে বিয়ে’টা হয়ে যায় শুধু। এইসব দিবো না।
আর কিছু বলার আগেই কল’টা কেটে দিলাম। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো এভাবেই অত্যাচার সহ্য করতে হবে। কখনো বলতে পারবো না পরিবারকে। সরকারি চাকুরী দেখে বিয়ে দিলো যে! আসরের সময় আর রান্না বসালাম না। শ্বাশুড়িকে বললাম পারবো না। ওনি দুটা চড় দিয়ে চলে গেলো। সন্ধ্যা নেমে আসলো। স্বামী আসবে রাত ১০টার দিকে। শ্বাশুড়ি নিজেই রান্না বসালেন। আমি নিজের রুমেই বসে আছি অন্ধকারে। একটা চিরকুট লিখে ঝুলে পড়লাম ফ্যানের সাথে। চিরকুটে লিখে গেলাম, ” সরকারি চাকুরী দিয়ে জীবন সুখ নয়। সুখী হতে হলে, অনেক ভালবাসা দরকার। পেটভরে খাবার খেলেই কেউ সুখী হয় না।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত