তা ভাবি নতুন বউ বাবার বাড়ি থেকে কি কি নিয়ে আসলো?
শাশুড়ি মা:- কি কি আনবে মানে?
আন্টি:- না মানে কি কি নিলেন আপনারা মেয়ের বাড়ি থেকে?
মা:- ভাবি আমরাতো বাজারে তুলিনি ছেলেকে। যে মেয়ের বাড়ি থেকে এটা সেটা নিয়ে আসবো। আমাদের ঘরে কোন মেয়ে নেই তিনটাই আমার ছেলে। তাই বাড়িতে মেয়ের দরকার ছিলো বলেই ওকে নিয়ে এসেছি।
আন্টি:- না মানে এখনকার দিনেতো কিছু না নিলেও মেয়ের বাড়ি থেকে অনেক কিছু দেয়। আসলে সমাজে একটা অবস্থান বলে কথা আছে না।
মা:- রিয়া তুমি আমাদের জন্য একটু চা নাস্তা নিয়ে আসো।
আমি সেখানে চলে আসলাম কিচেনে, গত রাতেই আমি এ বাড়িতে এসেছি। নিজের কল্পনার চেয়েও ভালো পেয়েছি আমার শ্বশুর বাড়ি। বিশেষ করে আমার শাশুড়ি। আসলে শাশুড়ি বললে ভুল হবে। মা পেয়েছি এক ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছি আর এ বাড়িতে এসে মা পেয়েছি। ভাবতে ভাবতে চা রেডি হয়ে গেলো আমি চা আর নাস্তা নিয়ে ডাইনিং রেখে মা আর আন্টিকে ডাক দিলাম। দুজনেই কথা বলতে বলতে ডাইনিং এ আসলো। আমি নাস্তা দিয়ে চলে যাবো এমন সময় মা আমার হাত টেনে ধরে বললো পাশে বসো। আমি একটা চেয়ার টেনে উনার সাথেই বসলাম।
মা:- ভাবি আল্লাহ আমাদের কোন কিছুর অভাব দেয়নি। আর রিয়ার বাবারও কোন কিছুর কমতি নেই। উনি নিজের মেয়েকে অনেক কিছুই দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমরা নেইনি। আপনি বললেন না সমাজে আমাদের একটা অবস্থান আছে। সেই অবস্থানের কথা চিন্তা করেই বলেন আর ভদ্রতা বা সচেতনতা যা কিছুই মনে করেন না কেন। সব দিক থেকে বিবেচনা করেই আমরা নিজেদের ছোট না করেই আমরা কোন রকম লেনদেনে যাইনি। আর আমার বাকি দুই সন্তানের বিয়েতেও কোন রকম লেনদেন করবো না। বরং আমি আমার সন্তানদের এটাও বলে দিবো যে দেনমোহরের টাকাটা যেন সবার আগে পরিশোধ করে। মায়ের কথা শোনে পাশের বাড়ির আন্টির মুখটা শুকনো হয়ে গেলো। মা আবার বলতে শুরু করলো ভাবি আপনার ঘরেও তো একটা মেয়ে আছে। মাশাআল্লাহ দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি লেখাপড়াতেও ভালো।
কাল যখন আপনার মেয়েকে বিয়ে দিতে যাবেন তখন যদি লাখ লাখ টাকা মেয়েকে সাজিয়ে দিতে হয় তার সংসার সাজিয়ে দিতে হয়। তখন কতটা কষ্ট লাগবে একবার ভেবে দেখেছেন? হ্যাঁ হয়তো সব কিছুই করে দিবেন এমনকি ভালো পাত্র হলে এখান সেখান থেকে টেনে টুনে এনে হলেও তাকে বিদায় করবেন। কিন্তু সেই ঋণ শোধ করতে হলেও একটা সময় লাগবে। অনেক কষ্ট হবে ভাবি।
আন্টি:- আপনি ঠিকই বলেছেন ভাবি আসলে এভাবে ভেবে দেখিনি আমি। আজ আপনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন।
মা:- ভাবি মন খারাপ করবেন না আসলে আমাদের উচিৎ সচেতন হওয়া। সবাইকে সচেতন করা। আর সচেতনার শুরুটা নিজের থেকে নিজের ঘর থেকে করা উচিৎ। তাহলেই দেখবেন সমাজ পরিবর্তন হয়ে যাবে।
আন্টি:- অবশ্যই ভাবি আপনার কথা ভীষণ ভালো লাগলো আজ তাহলে আসি। অন্য এক সময় এসে জমিয়ে আড্ডা দেয়া যাবে। বলতে বলতে উঠে চলে গেলেন আন্টি।
মা:- শোন রিয়া অনেকে অনেক কথা বলবে কখনো তা নিয়ে মন খারাপ করবে না। বরং যদি খুব বেশী খারাপ লাগে আমাকে বলবা। আমি তোমাকে সাপোর্ট দিবো। মনে রাখবে তুমি শুধু এ বাড়ির বউ না এ বাড়ির সম্মান। তোমাকে কেউ কিছু বলা মানে আমাকে বলা। আর এ পরিবারে যারা আছে সবাই তোমার আপনজন।
আমি:- জ্বি মা।
মা চলে যেতেই চোখ বেয়ে পানি পড়তে শুরু করলো। মনে মনে বলতে শুরু করলাম মা তো এমনই হয়। সত্যিই আমি অনেক ভাগ্যবতী এতো সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছি। গত রাতে যখন বাসর ঘরে স্বামী এসে আমাকে দেন মহরের টাকা গুলো হাতে তুলে দিয়ে বললো চলো নামায পড়ে নেই। তখনি মনটা ভরে গিয়েছিলো। আমি টাকা গুলো উনার হাতে দিয়ে বলেছিলাম। টাকা দিয়ে কি হবে? সে বলেছিলো তোমার নিজের মত করে খরচ করবে। আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম। টাকা দিয়ে কি সংসার হয় বলেন? সংসারতো দু’জন মানুষের মনের মিলে হয়।
উনি বলেছিলো পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে দেখবে সব কিছু ভালোই হবে।
যেদিন আমাকে দেখতে গিয়েছিলো, সেদিনই উনার বাবার একটা কথা আমার খুব ভালো লেগেছিলো। কেউ একজন বলেছিলো যৌতুক কতটাকা নিবেন। উত্তরে বলেছিলেন বাজার থেকে মাছ কিনতে আসিনি। ঘরের জন্য লক্ষী নিতে এসেছি। যা লক্ষ কোটি টাকায় পাওয়া যায় না। মেয়ে নম্রভদ্র শিক্ষিত নামাযি আমাদেরতো আর কিছু চাই না।
সত্যিই এতো ভালো স্বামী আর সংসার পেয়ে নিজেকে আজ বড় ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।
কে বলে সুখ বহুদূরে, আমিতো মনে করি সুখ লুকিয়ে রয়েছে প্রতিটা মানুষের মনের মাঝে। ভালোবাসা ছিনিয়ে নিতে হয়না। বরং ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসাকে জয় করা যায়। আল্লাহর কাছে এখন শুধু একটাই প্রার্থনা যতদিন বেঁচে আছি, এ বাড়িতে মেয়ে হয়ে সবার হৃদয় জয় করেই যেন বেঁচে থাকতে পারি।
গল্পের বিষয়:
গল্প