“ব্যাট টা আমার তাই আমি আগে ব্যাটিং করবো” গতকাল বিকালে বাবার সাথে মেলায় গিয়ে একটা ব্যাট কিনে এনেছি। অবশ্য ব্যাট টা কেনার জন্য অনেক কান্না করতে হয়েছে। বাবা বার বার বলেছে আমি এতো ছোট বয়সে ব্যাট দিয়ে কি করবো? কিন্তু নিজের ব্যাট থাকলে মাঠে আলাদা একটা ভাবই থাকে। তাই বকা আর মার দুইটা খেয়েই ব্যাট টা কিনলাম। আজ সকালে মাঠে এসেই সবার সাথে খেলতে শুরু করলাম। হঠাৎ শুভ বলল…
— ওই রাজ তুই দুইবার আউট হয়েছিস। এবার আমাদের খেলতে দে।
— কি বললি?( ব্যাট টা দেখিয়ে বললাম)
— না না তুই খেল। তোর পর কিন্তু আমি ব্যাটিং করবো।
এভাবে মাঠে রাজত্ব করেছি। অবশ্য আমার ইচ্ছা বাদে আমার ব্যাট কাউকে ধরতে দেই নি আর সব সময় আমি এক নাম্বারে ব্যাটিং করেছি। আজ আমায় বাবা স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে যাবে। ইশশ কত্তো মজা হবে। আমি তো ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে বসে আছি। গতকাল রাতে আমার জন্য একটা ব্যাগ কিনে আনছে। কত্তো সুন্দর ব্যাগ। ব্যাগে আবার টম এন্ড জেরির ছবিও আছে। সকালের খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাবার হাত ধরে স্কুলে গেলাম। সেখানে কত্তো ছেলে মেয়ে ভর্তি হয়েছে আর সবার জামা কাপড় এক রকম। ছেলেরা সাদা শার্ট আর ব্লো রংয়ের হাফ পেন্ট আর মেয়েরা সাদা শার্ট আর ব্লো রংয়ের জামা। বাবা বলেছে আমাকেও তাদের মত জামা বানিয়ে দিবে। ভর্তি নেওয়ার সময় মেডাম আমাকে বই দেখিয়ে প্রশ্ন করলো আমি অ অা ই ঈ চিনি কি না। আমি সব গুলোর ঠিক উত্তর দিয়ে ছিলাম। তাই আমাকে ভর্তি করে নিলো। আর আমার রোল নং বলে দিলো ১০০। বাসায় এসে দৌড়ে মাঠে গেলাম বন্ধুদের জানাতে যে আমি ভর্তি হয়ে গেছি।আমি বললাম…
— নয়ন জানিস আমি ভর্তি হয়ে এসেছি। আমার রোল নং ১০০ হয়েছে।
— হা হা আমার রোল ১০ বুঝেছিস।আমি তোর থেকে ভাল।
— এ্যা বললেই হলো। আমি তোর চেয়ে ভাল। দেখিস না ১০টাকার চেয়ে ১০০ টাকা বড়।
— হুমম তাও ঠিক।
তারপর সবাই মিলে বাসায় যাওয়ার জন্য হাঁটতে লাগলাম। তখন নয়ন আমাদের থেকে তারাতারি হাঁটতে ছিল। তখন আমি বললাম…
— নয়ন শুন
— কি হয়েছে?
— তুই এতো তারাতারি হাটছিস কেন?
— সবার আগে হাঁটলেই ভাল।
— কে বলেছে? জানস না “আগে হাঁটলে বাঘে খায় আর পিছে হাঁটলে টাকা পায়”।
আমার কথা শুনে সবাই দেখি আমার পিছনে এসে টাকা খুজতে লাগলো আর এই দিকে আমি দৌড়ে সবার আগে বাসায় পৌঁছে গেলাম। হি হি সবাইকে বোকা বানানো কত্তো মজা। সকালে বাবার কাঁধে চড়ে স্কুলে গেলাম। সবার মত জামা কাপড় পরে আমিও স্কুলে এসেছি।বাবা আমায় সিটে বসিয়ে দিয়ে চলে গেল আর ২ টাকার একটা নোট দিয়ে গেল। এভাবে ক্লাস করতে লাগলাম আর সব বন্ধুরা মিলে দুষ্টামী করতে লাগলাম। হঠাৎ একদিন ক্লাসে ঢুকতে যাবো তখনই একটা মেয়ের সাথে মাথায় বাড়ি খেলাম। ইশ কানি নাকি দেখে চলতে পারে না। আমি বললাম…
— ওই মেয়ে দেখে হাটতে পারো না।
— নিজে দেখে চলতে পারো না।
— হইছে এবার তোমার মাথাটা সামনে আনো।
— কেন?
— কারন মাথায় মাথায় একবার বাড়ি লাগলে শিং উঠে।
তারপর মেয়েটার সাথে আমার মাথা দিয়ে বাড়ি মেরে ক্লাসে বসলাম। তারপর একটু পর মেডাম এসে ক্লাস করাতে লাগলো। আমাকে দাঁড় করিয়ে বললো “আয় আয় চাদঁ মামা” কবিতাটা বলতে কিন্তু আমি বলতে পারি নি তাই আমাকে বেত দিয়ে ৩টা বারি মারছে। এরপর আমি কান্না করতে করতে বাসায় গেলাম। বাসায় আসতেই মা বলল…
— কিরে বাবা কান্না করছিস কেন?
— মা মেডাম আমায় মারছে। আমি আর স্কুলে যাবো না।(কান্না করতে করতে)
— কেন মারছে?
— আমি কবিতা বলতে পারি নি।
— কবিতা না পারলে কি আদর করবো? কত্তো করে বলি দুপুরে একটু ঘুমা তাহলে রাতে পরতে পারবি। তুই তো দুপুরে ঘুমাস না আর তাই রাতে পড়তে পারিস না। এরপর মাও একটা থাপ্পর মেরে খেতে বসালো।
এভাবে দিন গুলো চলতে লাগলো আর বড় হতে লাগলাম। এখন স্কুল জীবনের ৪টা বছর পার করে ফাইভে উঠেছি। প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে দুষ্টামী করতে করতে স্কুলে যাই আর তারপর প্রাইভেটে পড়ি। আমরা স্কুলে ৩ জনের বসার বেঞ্চে ৪ জন বসে ক্লাস করি। এখন আমার রোল নং ৬৭। আর আমি “খ” শাখার প্রথম স্টুডেন্ট। আর ধরতে গেলে আমিই ক্লাসের ক্যাপ্টেন। একবার টিফিনের সময় অনেক বৃষ্টি হচ্ছে তাই বাড়িতে খেতে যেতে পারছি না। তখন আমার এক বন্ধু ব্যাগ থেকে একটা বোতল বের করলো।তখন আমি বললাম…
— এটা কি রে?
— এটা হলো “টাইগার”। টিভিতে দেখিস না এটা যে খায়।
— হুমম
— খাবি নি?
— তাহলে দে। ও আমারে খেতে দিলো।
— ইশশ ঔষুধের গন্ধ আছে। এইসবই মানুষ খায়।
— রাজ তুই এইসব খেতে পারবি না। তুই এখনো বাচ্চা।
— আচ্ছা আমিও একদিন খেয়ে দেখাবো।
আমি আর খাই নি। তারপর বাসায় এসে বাবাকে বললাম এটা কিনে দিতে। বাবা আমায় মানা করে দিলো। বাবা বলল এইসব যেন কখনো না খাই কিন্তু স্কুলে গেলেই বন্ধুরা আমায় খ্যাপায়। তাই একদিন টাকা জমিয়ে খেয়ে নিলাম। আর সবাইকে দেখিয়ে দিলাম।
এভাবে আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান চলে আসলো। সবাই রঙ্গিন রঙ্গিন নানান জামা পরে আসলো। আমাদের নাকি স্কুল থেকে বিদায় নিতে হবে। খুব খারাপ লাগছে। বড় বড় স্যাররা আমাদের জ্ঞান দিতে লাগলো। আমাদের বললো কিভাবে হাই স্কুলে গিয়ে সবার সাথে চলতে থাকবে। এভাবে আমাদের ফাইভের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল আর আমাকে হাই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলো। এখানে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আমার রোল হয়েছে ০৯। এখন বুঝতে পেরেছি যত কম রোল নং হয় ততই ভাল। এখানে সব কিছু নিয়ম মেনে করতে হয়। সকালে ঘুমিয়ে আছি তখন মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো..
— কিরে রাজ ঘুম থেকে উঠে এখন রেডি হয়ে স্কুলে যা।
— মা আরেকটু ঘুমাই না।
— তারাতারি উঠ না ৯টা বেজে গেছে।
— ভালো লাগে না তারাতারি ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে গেলাম। ইশশ স্কুলের শার্ট টা নোংরা হয়ে গেছে।
— মা আমি এই শার্ট পরবো না।
— বাবা আজকে এটা পরে যা। আজ স্কুল থেকে আসলে ধুয়ে দিবো নে।
— ভাল লাগে না এই সাদা শার্ট পরতে।
— একদিন মিস করবি এই সাদা শার্ট টাকে।
— ভুলেও না। কোন মতে এই স্কুলের জীবন পার করতে পারলেই হবে। বিরক্তকর জীবন।
— পরে বুঝবি এই সময়টা তোর জীবনের সেরা জীবন ছিল।
আমি কোন মতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেড়িয়ে গেলাম। বাসায় থাকলেই মা বলে আমি নাকি স্কুল জীবন আবার মিস করবো। প্রতিদিন এই সাদা শার্ট পরতে বিরক্ত লাগে। এভাবে বিরক্ত জীবন নিয়ে ২ বছর পার করে আজ ক্লাস এইটে উঠেছে। আর এবার নাকি আমাদের জে.এস.সি দিতে হবে। ভাল লাগে না। আমাদের থেকেই কি PEC আরJSC শুরু করতে হবে? আমাদের এখন স্কুলের ক্লাস ছুটি হওয়ার পরও স্পেশাল ক্লাস হয়। একদিন বাসা থেকে টিফিন করে মাত্র স্কুলে আসলাম। স্কুলে আসতেই দেখি সবাই বসে কথা বলছে।আমি ব্যাগটা রেখে তাদের কথায় যোগ দিলাম। এখন বুঝতে পারলাম যে এখানে চুরি করার মতলব চলছে। আর তাও কাঁঠাল চুরি। অবশ্য হেড স্যারের ভয়ে অনেকে বললাম চুরি করবো না কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই রাজি হলাম।
ক্লাস শুরু হতে আর ১০ মিনিট আছে আর আমরা সবাই ক্লাস বাদ দিয়ে কাঁঠাল চুরি করতে বেড়িয়ে পরলাম। তারপর একটু ঘুরে একটা কাঁঠাল পেরে নিলাম। আর কাঁঠাল নিয়েই দৌড়। পিছনে এক লোক দৌড়ে আসছিল কিন্তু আমরা বললাম আমরা নাইনে পরি। অবশ্য এর কারনে আমাদের বড় ভাই নাইনেদের নামে বিচার করা হয়। আর আমরা কাঁঠাল এনে ক্লাসের মাঝেই যে যার মত খেতে শুরু করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আঠার কারনে আটকে যাই। এদিকে স্যার ক্লাসে এসে আমাদের কান্ড দেখে ক্লাস না করেই চলে গেল। আর আমরা এবার কি করবো বুঝতে পারছি না?
অনেকে অবশ্য বালু দিয়ে হাত পরিষ্কার করার চেষ্টা করি কিন্তু কোন লাভ হয় না। তারপর এক বাসার থেকে সরিষার তেল খুজে হাত পরিষ্কার করি।
এভাবে জে.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে ক্লাস নাইনে উঠি। আর সব চেয়ে বড় ব্যাপার হলো আমি বাদর ছাত্র হয়েও সাইন্স বিষয় নেই। অবশ্য এতে অনেকে রাগ আবার অনেক খুশি হয় কিন্তু সময়ের মায়া জ্বালে মনে হয়েছিল সাইন্স আমার জন্য পারফেক্ট। এখন থেকে ছেলে আর মেয়েদের এক সাথে ক্লাস শুরু হয়।আসলে এই স্কুলের নিয়ম হলো সিক্স,সেভেন আর এইটে ছেলে মেয়েদের ক্লাস আলাদা আলাদা। কিন্তু নাইন আর টেনের ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাস এক সাথে। একদিন আমরা কয়েক জন বন্ধু মিলে স্কুলের ড্রেস বাদে অন্য ড্রেস পরে স্কুলে যাই আর আমাদের যা ইচ্ছা তাই বলে। আর সব চেয়ে বড় কথা হলো প্রতিদিন লাইনে দাঁড়িয়ে শপথ আর জাতীয় সংগীত গাইতে বিরক্ত লাগে।
একদিন লাইনে দাঁড়িয়ে আছি আর সামনে থেকে শপথ বলছি “আমি শপথ করিতেছি যে আমি যেন স্কুলের নিয়ম কানুন মেনে চলতে পারি ও বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি “। আর পিছনে দাঁড়িয়ে আমরা বলতাম “আমি শপথ করতেছি যে আমি যেন তারাতারি এই স্কুল পার করিয়া যাইতে পারি আর লাইনে দাঁড়াতে না হয়। ” মাঝে মাঝে এইসবের জন্য ধরা খেয়ে মারও খেয়েছি। এমন কি সব ছেলেরা মিলে মাঠ পরিষ্কারও করেছি আর মেয়েরা ৩ তলা থেকে শুধু হাসতো। আবার যখন মাঝে মাঝে মেয়েদের হাতে ঝাড়ু দেওয়াতো তখন আমার মজা নিতাম।
এভাবে দুষ্ট মিষ্টি দিন গুলো ভালই কাটছিল। একদিন ক্লাসে বসে আছি কিন্তু হেড স্যার ক্লাস করাতে আসছে না। আসলে আমরা হেড স্যারের নাম দিয়েছি “নগেন ডাস্টার “। ওনি আমাদের রসায়ন ক্লাস নেয়। একদিন প্রায় ক্লাস শেষ হওয়ার সময়ও ওনার আসার খবর নেই। তখন আমরা সবাই মিলে স্যারের বসার স্টিলের চেয়ার ভেঙ্গে বাইরে বিক্রি করে দেই। তারপর বাইরে থেকে ঝালমুড়ি কিনে আনি। ঝালমুড়ি কিনে আনতেই দেখি স্যার ক্লাসে চলে এসেছে।
— কোথায় গিয়েছিলে তোমার ক্লাস রেখে?
— স্যার আপনার জন্য ঝালমুড়ি কিনতে গিয়ে ছিলাম।
— তাই নাকি।
তারপর স্যারকেও ঝালমুড়ি দিলাম। আর ওইদিন স্যার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্লাস করে ছিল। ইশশ সেই দিনটা যে কত্তো ভাল লেগেছিল বলতে পারবো না। আর মনে মনে বলছিলাম “ওরে নগেন তোমার চেয়ার বিক্রি করেই তোমারে ঝাল মুড়ি খাওয়ালাম “।
একবার বাংলা ক্লাসে একটা মেডাম প্রতিদিন আমাদের হাতের লেখার জন্য মারতো। ক্লাসে এসেই পিটাতো। আসলে ইংলিশ, গনিত,রসায়ন,পদার্থ আর উচ্চতর গণিত বইয়ের লেখা শেষ করতে করতেই অনেক সময় পার হয়ে যেত তাই আর বাংলা দেখতে পারি না। সেই কারন নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন কপালে এই মার জুটেই। একদিন সব ছেলে মেয়ে রেগে যাই।আর স্কুলের অফিসে আর ক্লাসে যত বেত আছে সব আমরা লুকিয়ে রাখি। ওইদিন ইচ্ছে করে কেউ হাতের লেখা লেখি নি। তাই বলে “কে কে হাতের লেখা করি নি দাঁড়াতে “। আর আমরা সবাই দাঁড়িয়ে যাই। মেডাম অবাক হয়ে যায় আর আমাদের দুই জনকে বলে বেত নিয়ে আসতে। তাই আমরা যেখানে বেত লুকিয়ে রেখে ছিলাম সেখান থেকে সব বেত নিয়ে আসি। সাথে ছোট ছোট বাঁশ নিয়ে আসি।
ওইদিন মেডাম অবাক হয়ে যায় কারন ওনাকে আমরা বুঝাতে চেয়েছি আমরাও মানুষ। এরপর থেকে তেমন আর মার খাই নি আর ওনিও দরকার ছাড়া মারেন নি। যখন জীবন থেকে নাইন পাশ করে টেনে উঠি তখন শুরু হয় জীবনের আসল খেলা। আর রাজনৈতিক হরতাল তো আছেই। এই হরতালের কারনে আমাদের শিক্ষা সফরে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। আর পড়ার চাপ দিনকে দিন বাড়তেই থাকে। তবে এর মাঝে একটা মেয়ের প্রেমে আমি পড়তে থাকি। তবে অবাক হওয়ার ব্যাপার হলো ক্লাস ওয়ানে যে মেয়ের সাথে আমি ধাক্কা খেয়ে ছিলাম তার প্রেমেই আমি পরি কিন্তু পরে জানতে পারি ওই মেয়ে নাকি অন্য কোন ছেলের সাথে রিলেশন করে। এরপর আর কোন মেয়েকে আমার ভাল লাগে নি।
আমাদের নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ হওয়ার সময় আমি বন্ধুদের কথায় ফেসবুকে আইডি খুলি। যা আমার জীবনে একটা কাল হয়ে দাঁড়ায়। এস.এস.সি পরীক্ষার সময়ও আমি ফেসবুকে সময় দিতাম। আর এর চক্করে আমার রেজাল্টও খারাপ হয়। অবশ্য আমাদের এস.এস.সি এর বিদায় অনুষ্ঠানে স্যার আমাদের এইসব থেকে দূরে থাকার কথা বলে ছিল। কিন্তু আমি ওনাদের কথা শুনি নি আর রেজাল্ট খারাপ করি।
আসলে স্কুলে আমার এস.এস.সির রেজাল্ট দেখতে যাওয়ার দিন ও বুঝতে পারি নি যে আমার স্কুল জীবনের শেষ দিন ছিল । এরপর একটা প্রাইভেট কলেজে পড়তে থাকি। অবশ্য কলেজের দিন গুলো স্কুলের থেকেও রঙ্গিন ছিল তবুও স্কুলের মত লাগতো না। কলেজ লাইফে নিজেকে বড় বড় লাগতো। অবশ্য কলেজে উঠে স্কুলের সম্পর্কে অনেক কথাই বলতাম তবে ভুলতে পারতাম না ফেলে আসা দিন গুলো। কলেজ জীবনেও কম দুষ্টামী করি নি তবে স্কুল জীবনের মত না।
এরপর কলেজ জীবন শেষ করে ভার্সিটি জীবনে প্রবেশ করি। ভার্সিটি হলো যেখান থেকে এক একটা ছাত্রকে কাজের যোগ্য করে গড়ে তোলা হয়। স্কুলে একটা স্যার একবার বলে ছিল ” যখন তোমরা ক্লাস প্রথম শ্রেনীতে পরো তখন তোমরা একটা গাছের শাখা প্রশাখা হয়ে যাও। তোমাদের ক্লাসটা হলো গাছ আর তোমরা সবাই হলে শাখা প্রশাখা। প্রতি বছরের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ওই গাছ থেকে অনেক পাতা ঝড়ে পরবে মানে ফেল করবে। এমন ভাবে তোমরা ক্লাস দশম শ্রেনীতে আসবে। তখন খেয়াল করে দেখবে ক্লাস প্রথম শ্রেনীর অনেকেই তোমার সাথে দশ বছরের জার্নিতে নেই। কেউ কেউ ঝড়ে গেছে আবার কেউ নতুন যোগ হয়েছে। আর দশম শ্রেনী পার করলে সেই গাছের আর অস্তিত থাকে না”। আজ সেই কথাটা বড্ড মনে পরে। এভাবে ভার্সিটি জীবনটা পার করে একটা চাকরীতে জয়েন করে নেই। অবশ্য এর মাঝে কারো সাথে দেখা হলে হাই হ্যালো বলেই কথা গুলো সীমা বদ্ধ থাকতো। এখন আমি চাকরী করি আর আমাদের সাথের অনেকেই হয়ত ডাক্তার,কেউ ইঞ্জিনিয়ার,কেউ লেখক,কেউ বেকার,কেউ শিক্ষক আবার কেউ বিয়ে করে ঘর জামাই।
আজ অফিসে আসার পর এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায় আর নিজের ফেলে আর দুষ্টু মিষ্টি দিন গুলো মনে পরে।
স্যারকে কি আজব নামেই না ডাকতাম?পিটিতে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতের জায়গায় কি কি গান না গেয়েছি?সাদা শার্ট নিয়ে কত কথাই না বলেছি তবে সব চেয়ে বড় সত্যি হলো “মা তুমি সত্যি বলেছো। আমি আমার সাদা শার্ট টা খুব মিস করি। আর একটা বার যদি সেই শার্ট টা আলমারি থেকে খুঁজে পেতাম। জানো মা সাদা শার্ট কেন তারাতারি ময়লা হতো? আসলে মাঠে ধুলা বালিতে খেলতাম,দেয়াল টপকে স্কুল পালাতাম, কলম নষ্ট হয়ে যেতো। প্রতিটা সেকেন্ড মনে পরে মা। আমি আবার ফিরতে চাই সাদা শার্ট গায়ে দিয়ে সেই স্কুল মাঠে “।
গল্পের বিষয়:
গল্প