অফিসের বাম পাশের ওয়াশরুমের দিকে যেতেই চোখে পড়লো- সিনিয়র বয়স্ক স্টাফ আসলাম সাহেব জুনিয়র মহিলা স্টাফ সামিয়ার সাথে ধস্তাধস্তি করছে। বিষয়’টা খুব ভালো ঠেকলো না আমার কাছে, আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে লক্ষ করলাম- বারবারই লোকটা মেয়েটার শরীরের বিভিন্ন অংশে হাত দেবার চেষ্টা করছে। বাকি অনেক কিছু দেখার আগেই জোরেশোরে কাশি দিলাম। ব্যস! লোকটা টি স্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হয়ে গেলো, তার বেশ কিছুক্ষণ পর মেয়েটা বের হলো। মেয়াটার চোখ- মুখ থেকে পানির ফোঁটা বেয়ে বেয়ে পড়ছে তার সাথে নিজের ইজ্জত রক্ষা করার শেষ সম্বলের কষ্ট’ও। সারা অফিসের ওই অংশে কেউ বেশি একটা আসেনা। পরিত্যক্ত একটা জায়গা!
আজ অফিসের অন্যান্য ওয়াশরুম’গুলো বন্ধ থাকায় এক প্রকার অনিচ্ছা সত্বেও এটা’তে আসি। কিন্তু এমন একটা দৃশ্য চোখে পড়বে তা ছিলো অকল্পনীয়। কোনোরকম প্রয়োজন সেরে অফিসে গিয়ে বসে রইলাম। কোনো কাজেই মন বসছে না। অফিসে বস ব্যতীত আমিই সবার সিনিয়র। আসলাম সাহেবকে আমি খুবই শ্রদ্ধা করতাম কারণ তিনি আমার বাবার বয়সী, কিন্তু বাবার বয়সী লোকটা এমন একটা কাজ করবে! ভাবতেই সমস্ত শরীর অদ্ভুতভাবে নাড়া দিয়ে উঠলো। তাছাড়া সামিয়া মেয়েটা অফিসে নতুন জয়েন করছে, মেয়েটার চালচলনে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েই মনে হয়। তাহলে এমন কোনো করছিলো তারা? কালিম সাহেব আমার খুবই কাছের মানুষ, আমার চাকরী’তে জয়েন করার ছয়মাস পর তিনি অফিসে জয়েন করেন। ওনাকে রুমে ডেকে পাঠালাম।
বিষয়টা নিয়ে ওনার সাথে অনেকক্ষণ আলাপ করলাম। কালিম সাহেব জানালো- প্রায় ছয়মাস যাবৎ সামিয়া মেয়েটা চট্টগ্রামের প্রজেক্ট নিয়ে আসলাম সাহেবের তত্ববধানে কাজ করছে। তারা গতমাসে অফিসের কাজে তিনদিনের জন্য চট্টগ্রামে’ও গিয়েছিলো। কালিম সাহেবের সাথে বেশি কথা না বাড়িয়ে রাতে ওনাকে বাসায় চলে আসতে বললাম। রাত সাড়ে সাতটায় আমি আর কালিম সাহেব ঠিকানা অনুযায়ী সামিয়ার বাসায় গেলাম। প্রথমে সামিয়া ব্যাপারটা নিয়ে মুখ খুলতে চাইলো না। যখন সামিয়া’কে জানালাম আজ সকালের সবটুকুই আমি দেখেছি, তখন মেয়েটা অশ্রু ছেড়ে দিয়ে বলা শুরু করলো- ” প্রায় বছর খানেক আগে একটা চাকুরী আমার জন্য অনেক দরকার ছিল, ঠিক তখনি মোটামুটি ভালো বেতনে চাকুরী’টা জুটে যায়। নিজের মত করে কাজ করছিলাম, সবকিছু ঠিকভাবে যাচ্ছিল।
ছয়মাস পর চট্টগ্রামের একটা প্রজেক্টে আমার কাজ পড়ে আসলাম সাহেবের সাথে। তিনি আমার এবং তামীম সাহেবের বস। আমি অফিস টাইম শেষ হবার পরও কাজ শেষ না হওয়ার কারণে একটু দেরী করে বের হতাম। তখন লক্ষ করতাম আসলাম আমার জন্য গাড়ি নিয়ে নিচে অপেক্ষা করে। আমাকে বাসায় দিয়ে আসার জন্য জোরাজোরি করে। আমি ওনাকে বড় ভাই মনে করে নির্দ্বিধায় তার সাথে বাসা পর্যন্ত যেতাম। আমাদের মধ্যে এক প্রকার স্নেহযুক্ত সম্পর্ক গড়ে উঠে, যে সম্পর্কের মাঝে আমার মধ্যে ছিলোনা কোনো প্রকার দুর্বলতা। বেশ কিছুদিন পর তামীম সাহেব অসুস্থ থাকায় আমি আসলাম সাহেবের সাথে অফিসের কাজে চট্টগ্রাম যাই, সেদিন রাতেই আসলাম সাহেব সুকৌশলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে আমার সাথে কিছু আপত্তিকর ছবি তোলে।
তারপর শুরু হয় হুমকি- ধমকি, বিভিন্ন উপায়ে নিজের অসৎ উদ্দেশ্য সফল করার নানারকম কৌশল। বারবার শুধু ছবিগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি। অনেক সময় নিজের মান- ইজ্জতের কথা চিন্তা করে অনেক কিছু থেকে বিরত থাকি। প্রতিবাদ করতে পারিনা, ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। ‘একটা সুস্থ মানুষ কিভাবে হঠাৎ এতোটা বিকৃত হতে পারে তা আমার জানা ছিলোনা’ অথচ ওনার আমার বয়সী একটা মেয়েও আছে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! প্রায় হাতজোড় করে আকুতি করেছিলাম যাতে করে ছবিগুলা ডিলিট করে দেওয়া হয়, কিন্তু ওনি বলেছে- ওনার নাকি শেষ লালসা পূরণ হওয়ার আগে এগুলো ডিলিট করতে পারবে না। চাকরী’টাও ছাড়তে পারছিলামনা কারণ একদিকে বাবার প্রতি সপ্তাহে একটা করে থেরাপি দেওয়া যার মূল্য ছয় হাজার টাকা ।
অন্যদিকে নিজের জীবনের সবচেয়ে দামী জিনিষ হারানোর ভয়। মাস শেষে পরিবার অধীর আগ্রহে আমার টাকার অপেক্ষায় থাকে, যেটা দিয়ে চলে সংসার। গতমাসে অফিস থেকে পনেরো দিনের ছুটি নিয়েছিলাম শয়তান’টার কবল থেকে বাঁচতে। রোজই কোনো না কোনোভাবে বিরক্ত করবেই! কখনো শারীরিক কখনো মানসিক। আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়ি। কিন্তু ছুটির মধ্যেও দৈনিকই ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করত সে। অমুক জায়গায় তমুক জায়গায় দেখা না করলে সবকিছু কিন্তু ফাঁস করে দেওয়া হবে। বাধ্য হয়ে দেখা করতে যেতাম সেখানে, সেখানেও নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে সে। জীবন’টা নিজের কাছেই নরকের মতো মনে হচ্ছিল দিনদিন। সবশেষ আজকের ঘটনা! নিজ চোখে দেখছেন নিশ্চয়??”
আমি আর কালিম ভাই অনেক বুঝিয়ে রাতেই আসলামের নামে মামলা করাই, সামিয়াকে বলে দিয়েছিলাম- মামলার সময় সব খুঁটিনাটি তথ্যও উপস্থাপন করার জন্য। পরদিন সকাল আসলাম সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়, অফিস থেকেও তাকে সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু আসলাম সাহেবের প্রতি তার স্ত্রীর খুব স্বচ্ছ ধারণা আমাকে অনেকটাই বিস্মৃত করে দিয়েছিলো- “তার স্বামী’কে নাকি মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে” তাহলে আমার নিজ চোখে দেখা দৃশ্যের আশপাশ জুড়ে কি শুধুই ছিল ধোঁয়াশা……
গল্পের বিষয়:
গল্প