মাঝে মাঝে নিজেকে খুব বেশি এক্সট্রা অর্ডিনারি মনে হয়। একটা মানুষ কিভাবে এতো মেধাবী হতে পারে আমার ভাবনায় আসে না। কি এমন আছে যে জিনিসটা আমি পারিনা? ভালো গল্প লিখি,গান গাইতে পারি,নাচতে পারি,সিনেমায় অভিনয়ও পারি। খেলাধুলায় ফাস্ট,পড়ালেখায় ভালো,মারামারিতেও খুব ভালো। গাড়ি চালাতে পারি,বিমান চালাতে পারি,জাহাজ চালাতে পারি,ট্রেনও চালাতে পারি। একসাথে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার ডিগ্রী নিয়েছি যেটা আজ পর্যন্ত কেউ পারেনি।
আমি ক্যালকুলেটর দিয়ে ফেসবুক চালাতে পারি,বড় বড় ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারি,যেখানে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে ভয় পায় সেখানে আমি উল্টা দিকে সাইকেল চালাতে পারি। এইতো কিছুদিন আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আমাকে তাদের দেশে নিয়ে যেতে চাইলো। তাঁর কথা হলো আমাকে বাংলাদেশ সরকার ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারছে না। যদি কাজে লাগাতে পারতো তাহলে আমি বাংলাদেশকে সব দিক থেকে নাম্বার ওয়ান পজিশনে নিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু তবুও আমি আমেরিকার মতো দেশের প্রেসিডেন্টকে না বলে দিয়েছি। যারা নাকি পৃথিবী শাসন করে তাদের না করে দিয়েছি। কারণ ভবিষ্যতে তো পৃৃথিবীটা আমার আয়ত্তেই থাকবে।
এতো কিছুর পরও আমার একটা জিনিসই করা হয়নি। প্রেম করা হয়নি,কোনো মেয়েকে ভালোবাসা হয়নি। চাইলেই তো হাজার হাজার মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারি। কিন্তু আমি যেমন মেধাবী, খুব বেশি এক্সট্রা অর্ডিনারি। আমি যাকে ভালোবাসবো যার সাথে প্রেম করবো সেও আমার মতোই খুব বেশি মেধাবী হবে। কিন্তু বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি এরকম কাউকে পাইনি,যে অন্য সবার থেকে আলাদা। অনেক খোঁজার পরে আমার একটা সুইট,কিউট গার্লফ্রেন্ড হয়। সেই গার্লফ্রেন্ডের আবার কিউট একটা বয়ফ্রেন্ড আছে। এতোই কিউট যে,কি আর বলবো। আমি যদি মেয়ে হতাম তাহলে আমি নিজেই তাঁর সাথে প্রেম করতাম। ওই কিউট বয়ফ্রেন্ড এর আবার সুন্দরী একটা গার্লফ্রেন্ড আছে,যেটা আমার গার্লফ্রেন্ড এর চেয়েও সুন্দর তবে এক্সট্রা অর্ডিনারি আমার টাই।
যেই ছেলেটা ভবিষ্যতে পৃৃথিবী শাসন করবে সেই ছেলেটাই এখন প্রেমে ব্যস্ত। তবে সে তাঁর মেধাকে ঠিকই কাজে লাগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ভালোবাসাটা এতো গভীর যে কি আর বলবো। উহ,এতো গভীর ভালোবাসা যে লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ এরা যদি দেখতো তাহলে আমাদেরকে বিশ্ব প্রেমিক ঘোষণা করতো। আমি যেই জিনিসটা আমার গার্লফ্রেন্ড কে দিবো সেটা সে তাঁর কিউট বয়ফ্রেন্ড কে দিবে। সেই বয়ফ্রেন্ড আবার সেটা তাঁর সুন্দরী গার্লফ্রেন্ডকে দিবে। এটাই হয়ে আসছে আমাদের মাঝে। দেশটাকে কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় সেটাই ভাবছিলাম। এমন সময় আমার দুষ্টু মিষ্টি কিউট গার্লফ্রেন্ড ফোন দেয়।
জান,সোনা,বাবু তুমি কি করো?
– তোমাকে নিয়েই ভাবছিলাম
– কি ভাবছিলে?
– এইতো তোমাকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়,এসবই আর কি।
-কালকে তো আমার জানের জন্মদিন
-কোন জান?
-জাহিদ
-ও তোমার সেকেন্ড বয়ফ্রেন্ড
-হুম
-আমাকে কি করতে হবে?
-কালকে ওর জন্মদিন আমরা একসাথে পালন করবো। ও আমার কাছে একটা জিনিস চেয়েছে। আর তুমিতো জানো তোমার কাছ থেকে কোনো কিছু নিলেই কেবল আমি তাকে সেটা দেই। নিজ থেকে কিছু দেইনা।
-কি দিবা?
-কালকেই বলবো,আজকে রাখি,ও ফোন দিচ্ছে।
আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ড তানিয়া,তানিয়ার বয়ফ্রেন্ড জাহিদ,আর জাহিদের গার্লফ্রেন্ড নুসরাত জন্মদিনে অংশ নিয়েছি। জন্মদিনের উপহার হিসেবে জাহিদ তানিয়ার কাছে একটু চুমু চেয়েছে। আর সেটা আমাকে করতে হবে। আমি তানিয়াকে চুমু খাবো, তানিয়া জাহিদকে,জাহিদ নুসরাতকে। এভাবেই চলে আসছে সবকিছু। তবে আজকের টা ভিন্ন। আমি তানিয়ার গালে চুমু খেলাম কিন্তু তখন জাহিদের মন খারাপ।
তানিয়া বুঝে ফেললো জাহিদ গালের চুমুতে খুশি না। তাই আমাকে বাধ্য হয়েই লিপ টু লিপ চুমু খেতে হলো। জাহিদও খুশিতে গদ গদ করে উঠল। তারপর তানিয়া জাহিদকে, জাহিদ নুসরাতকে চুমু খেলো। আমরা খুব এনজয় করলাম।
আমরা তিনজন খুশি হলেও নুসরাতকে দেখে মনমরা মনে হলো। এর আগে যা কিছু দিয়েছি। গিফট,টাকা পয়সা সবকিছু নুসরাত নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। কিন্তু আজকের জিনিসটা সে নিজের কাছে রাখতে চাচ্ছে না। আমি যেমন আমার গার্লফ্রেন্ড তানিয়াকে চুমু খেয়েছি। তানিয়া যেমন তাঁর বয়ফ্রেন্ড জাহিদকে চুমু খেয়েছে। জাহিদ যেমন তাঁর গার্লফ্রেন্ড নুসরাতকে চুমু খেয়েছে। ঠিক সেভাবেই নুসরাতও কাউকে চুমু খেতে চায়। তাই আমরা ওইদিন সিদ্বান্ত নিলাম। যতোদিন পর্যন্ত নুসরাতের জন্য আরেকটা বয়ফ্রেন্ড খুঁজে না পাবো ততোদিন পর্যন্ত আমাদের সবার সাথে ব্রেক আপ। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও যখন নুসরাতের জন্য ভালো কাউকে পেলাম না। তখন বাধ্য হয়েই আমাকে তাঁর বয়ফ্রেন্ড হতে হলো।
আমরা চারজন মিলে একটা মেসেঞ্জার গ্রূপ খুললাম। যেখানে আমাদের কথা হতো সবসময়। তারপর আমরা সবাই সবাইকে স্বাধীন ঘোষণা করলাম। যার যতো ইচ্ছে প্রেম করতে পারবে। আমরা কেউ কাউকে বাঁধা দিবো না। কিছুদিন যাওয়ার পর সবাই অনেক গুলো করে বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করলাম। তানিয়া দুই মাসে তিনশো, জাহিদ দুইশো, নুসরাত তিনশো জোগাড় করল। আর আমি তো এক্সট্রা অর্ডিনারি। আমি দুইমাসে দুই লাখেরও বেশি গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে ফেললাম। এরা আমাকে এতোই ভালোবাসতো যে তাদের যদি বসতে বলতাম তাহলে তারা বসে পড়তো,যদি খাইতে বললে খাইতে বসতো। এমন কি মরতে বললে মরতেও বসবে।
ভাবলাম এতোগুলো গার্লফ্রেন্ড দিয়ে কি করবো? তখন মাথায় আসলো বাংলাদেশের সিংগেল ছেলে মেয়েদের কথা। একটা গ্রূপ খুললাম আর নাম দিলাম সিংগেল থেকে ডাবল হওয়ার গ্রূপ। আমার দুইলাখ গার্লফ্রেন্ড কে গ্রূপে যুক্ত করলাম। যদি কোনো সিংগেল ছেলে আমাকে রিকুয়েস্ট করতো তাহলে তাকে প্রেম করিয়ে দিতাম। এই কাজে তানিয়া জাহিদ,নুসরাত আমাকে অনেক সাহায্য করতো। পরে আরো অনেকেই এই কাজে যুক্ত হয়। সিংগেল ছেলে মেয়েদের ডাবল করার দায়িত্ব নেয়। সিংগেলদের কে একাকিত্ব জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে ডাবল করে নতুন জীবন দান করার জন্য আমি নোবেল পুরস্কার পেলাম।
নোবেল পাওয়ার পর মনে হলো আমার লিস্টে অনেকেই আছে যারা সিংগেল। অনেকেই বলতে সবাই সিংগেল। সারা দুনিয়ার মানুষকে সিংগেল থেকে ডাবল করে দিয়েছি অথচ আমার লিস্টের ছেলে মেয়ে গুলো এখনো সিংগেল। নিজের ওপর খুব রাগ হলো। তাই ভাবলাম আজকেই এখনই আমার লিস্টের সবার জন্য একটা করে বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড বরাদ্দ করবো। ঠিক এমন সময় মায়ের ঝাঁটার বাড়িতে আমার ঘুমটা ভেঙে গেলো। স্বপ্নটাও শেষ হলো না। আমার দুঃখ একটাই আমার লিস্টের গুলারে ডাবল করতে পারলাম না। আফসোস এরা সারাজীবন সিংগেলই থেকে যাবে, কোনোদিন ডাবল হতে পারবে না।
গল্পের বিষয়:
গল্প