সকালে ব্রাশ হাতে নিয়েই মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল শান্তর।পেস্ট আর খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। রুমমেট তানভীর আজকাল বড়ই জালাচ্ছে এটা ওটা নিয়ে। সকাল সকাল পেস্ট টা কোথায় রেখেছে কে জানে! অবশ্য তানভীর পেস্ট এর বিকল্প একটা আবিষ্কার করেছিল গতমাসে।খালার চুলার কয়লা ছাই আর কি কি যেন মিশিয়ে এক প্রকার মাজন বানিয়েছিল।তার ধারনা এসব প্রাকিতিক জিনিশ ব্যাবহারে দাত উজ্জ্বল হয়।এ নিয়ে খালার চেঁচামেচি ও কম ছিল না।
অবশেষ এ মেসের সদস্যদের মহা উতসাহে ব্যাবহার করা সে মাজন অচিরেই আগের জায়গায় ফিরে গেল। পাশের রুমে রেজাউল উচ্চস্বর এ কোরান পাঠ করছে। সে হুজুর মানুষ। মাদ্রাসায় থাকতে নাকি তার সুমধুর কন্ঠ দ্বারা মানুষ কে বিমোহিত করে রাখতো।এতে অবশ্য পাওনা টাকার পরিমাণ টাও নেহায়েত কম ছিল না। এখন নাকি অন্তর এ সেই জেল্লা পায় না। তবুও খোদার কালাম এর রেওয়াজ টা নিয়মিতই করে সে।তার থেকেই পেস্ট নিয়ে দাত মাজা শুরু করে শান্ত।উপর নিচ আর ভেতরের তালুর দিকে ভাল করে মাজে সে। দাতের হলুদ দাগ আবার সম্পা একেবারেই সহ্য করতে পারে না।ও সম্পার কথা তো বলাই হয় নি।সম্পা হলো শান্তর গফ।ক্যাম্পাস এ র্যাগ দেয়ার সময় পাশের পুকুরে পা পিছলে পরে গিয়েছিল শান্ত।
তা দেখে সম্পার সে কি হাসি! সেই হাসি দেখেই সাতার কাটা থামিয়ে দেয় শান্ত।তারপর থেকে শুরু। যদিও সম্পার চেহারা উপজাতিদের মতো।তানভীর আবার শান্তকে সম্পার ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছে।তার ধারনা উপজাতি চেহারার মেয়েরা ৪২০ টাইপের হয়। তা নিয়ে অবশ্য ভাবার অবকাশ পায় নি শান্ত।তার আগেই প্রেম হয়ে গেছে। এটা তো আর বলে কয়ে আসে না। আজ সকাল ১০ টায় টাকলা মামুন স্যার এর ক্লাস। তারপর ই সম্পার সাথে দেখা করতে হবে। এদিকে প্রশাবের বেগ পেয়েছে শান্তর।প্রশাব কই করা যায় সে বিষয় ই ভাবছে আপাতত। এই একটা জিনিশ ই সে চেপে রাখতে পারে না। সম্পার সামনে এ নিয়ে একবার খুবই বিব্রত হয়েছিল সে। আগেরদিন এর কিনে আনা শর্টস টা পড়া ছিল বলেই রক্ষা। ম্যাস এর পিছনে গিয়ে আপাতত বিপদ বিসর্জন দিয়ে আসলো।মেস এর পিছনে একটা মেয়েদের মেস আছে।
একটা ছোট চুল এর মেয়ে প্রায়ই এদিকে তাকিয়া থাকে। সে কি শান্তকে দেখে নাকি আকাশ দেখে তাই বা কে বলতে পারে! তবে তানভীর নিশ্চিত ভাবে বলেছে যে মেয়েটা সবাইকেই দেখে! কি জানি? ট্যারাও হতে পারে। আজও তাকিয়ে আছে! হায় হায়! দেখে ফেললো নাকি আবার! শান্তর অবশ্য এত লাজ লজ্জা নেই। সে কি বোরকা পরে থাকবে নাকি! স্বাধিনতা বলে তো কিছু একটা আছে নাকি! চোখে পরদা করলেই হয়।রেডি হয়ে এসে ক্লাস করছে শান্ত। ক্লাস এ মিমির সাথেই ভাল কথা হতো আগে।ওর একটা বফ আছে।আশিক নাম।একেবারেই দেখতে পারে না ওকে। বান্ধবির আবার বফ থাকতে হবে কেনো! ওর বফ আসলে ওর সামনে নিজেকে কেমন পিওন পিওন লাগে।আপাতত ওর সাথে কথা বন্ধ। তাই ক্লাস পার করাই মূখ্য। শান্ত লিটন এর দোকানে বসে আছে সম্পার জন্য।মেয়েটা এতো দেরি করে! কান্ড জ্ঞান নেই নাকি নিজের ফর্মালিটি বজায় রাখে কে জানে! এটাই হয়তো নিয়ম।
-শান্ত
-হুম
-কি ভাবছো?
-ভাবছি একটা বই লেখবো
-কি বই
-কিভাবে পাওনা টাকা আদায় করা যায় তা নিয়ে
– তুমি নিজেই তো নিজের পাওনা আদায় করতে পারো না
– তাই তো লেখবো
– তুমি আবার হিমুর ভং ধরেছো?
– কিভাবে বুজলে
– তোমার পায়ে জুতা নেই।নিশ্চয় খালি পায়ে হাটা শুরু করেছো
– না।সোহেল এর জুতা পরে এসেছিলাম।নিয়ে গেছে।
-ও আচ্ছা। বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।কাল ই বিয়ে
-হুম
-হুম কি?
-ভাবছি
-কি ভাবছো?
-ভেবেছিলাম গাজার ব্যাবসা শুরু করবো। এখন তো মনে হয় গাজার দাম কমে গেসে। অন্য লাইন ধরতে হবে
-ফাইজলামি করবানা একদম।কিছু একটা করো।
-আমার একটা কাজ ই করার আছে।
– করো
– আচ্ছা।
বলেই শান্ত মেস এর দিকে হাটা দিল। সব মেনে নেয়া ছাড়া এখন কিছুই করার নেই। প্রথম দেখার পর এ সম্পার প্রতি যেভাবে তাকিয়ে ছিল শান্ত আজ শান্তর দিকেও সম্পা সেভাবে তাকিয়ে আছে। কেবল ছলছল চোখে। আচ্ছা সম্পার কি ওই প্রথম দিনের ইংলিশ এ বলা কয়েকটা লাইন মনে আছে? শান্তর কিন্তু ঠিকই মনে আছে।
What’s a love
At
First site?
I kept
Thinking about u
All night
I want this moment
Till last
Forever,
hold you
In my arms
Leave you never.
আজ আকাশে অনেক সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে।শান্ত গুনগুন করে গা গাইছে। আমার বাড়ির সামনের ঘরে একটা চাদের টুকরা আছে আফসোস সে চাদের জ্যোৎস্না পাই না আমি কাছে।
ক্ষুধা লেগেছে শান্তর। মানিব্যাগ এ অবশ্য টাকা নেই।খুচরা টাকা যা ছিল তার সবই গতকাল মেস এর মেনেজার নিয়ে গেছে। এই বিপদকালিন সময় এর জন্য অবশ্য তানভীর মুরি চানাচুর একটা বয়ামে ভরে রেখেছে। ছেলেটা অনেক কাজের। এত বুদ্ধি যে কই পায়। শান্তকে সহজেই বুজতে পারে।তবে অনেক সময় অনেক কিছু বুজলেও কিছু বলে না। শান্ত রুমে ঢুকেই বয়াম এর মুড়ি চিবাতে শুরু করলো।আর টেবিল এর বিছানো পেপার এ আঁকিবুঁকি শুরু করলো।তানভীর অবশ্য প্রথমেই বুঝে গেছে কি হয়েছে। শান্ত বলে গেসিলো সম্পার জরুরি তলব এর কথা। তানভীর এ বিসয়ে বেশ অভিজ্ঞ।প্রায় প্রত্যেক জেলায় ই মনে হয় একটা করে গফ আছে তার। শান্তর হাতে একটা নতুন শার্ট দিয়ে বললো
– তাড়াতাড়ি পড়ে নে। ৭ টায় লঞ্চ
-বুজলাম না
-বুজতে হবে না। তোর ফুটকিফাটকি প্যান্ট টা ধুয়ে শুকিয়ে রেখেছি।আর টুকটাক কিছু গুছিয়ে নে।পটুয়াখালী যাচ্ছি আমরা।সেখানে ত্রিপ্তি আমাদের রিসিভ করবে।তারপর কুয়াকাটা।
-কিছুই বলে না শান্ত।তানভীর এক কথার মানুষ। ওর মুখের উপর কথা না বলে ঘুছিয়ে নেয় সব
লঞ্চ এ হকার দের হাটাহাটি চিল্লাপাল্লাতে টিকা যাচ্ছে না।তাই শান্ত আর তানভীর ছাদ এ দাঁড়িয়ে আছে। হু হু বেগে বয়ে চলা বাতাস টা যেন শান্তর বুকের কান্নাটাকেও বের করে আনতে চাচ্ছে। শান্ত তখন জিজ্ঞেস করলো
-আমরা কুয়াকাটা কেন যাচ্ছি?
– কাল তো এই শহরটা তোর থাকবে না রে।
কাল এ শহরটাই তোর কাছে অক্সিজেনহীন দুসপ্ন মনে হবে।তাই দূরে যাচ্ছি।সমুদ্রের খোলা হাওয়ায় সব কস্ট ধুয়ে মুছে যাবে। হঠাত ই তানভীর কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে শান্ত। তানভীর ও বাধা দেয় না।কাদুক।কেদে কেদে কষ্ট গুলা ঝেড়ে ফেলুক।শহরের আকাশ টা ওর সাথে বেইমানী করলেও নদির খোলা হাওয়া ওর সাথে বেইমানী করবে না।কস্টগুলা বয়ে যাবে নদীর স্রোতের মতো। একবার কোন বড়ভাই যেন বলেছিল “মেয়ে গেলে মেয়ে পাবি,বন্ধু গেলে বন্ধু পাবি না” সেটা এতদিন এ ভালই বুঝেছে তানভীর। শান্তর কান্নাতে তাই বাধা দেয় না।ছেলেটা একটু কেদে নিক।একটু পরে চাঁদপুর ঘাট এ নেমে ইলিশ মাছ ভাজা খাবে। ফোলা ফোলা চোখে খেতে নিশ্চই খারাপ লাগবে না।
গল্পের বিষয়:
গল্প