কে আসে অন্ধকারে

এনামুলের মৃত্যুশোক তখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি আমরা। বিশেষ করে রওশন একদমই মেনে নিতে পারছে না ভাইয়ের মৃত্যু। সে আর এনামুল যমজ। যমজ ভাইবোনদের একজন আরেকজনকে ছেড়ে গেলে অন্যজন সেই শোক সামলাতেই পারে না। রওশন সারাক্ষণ কাঁদে, কথাবার্তা প্রায় বলেই না। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। ছেলের শোক সামলে মা এখন রওশনকে নিয়ে ব্যস্ত। যেভাবে দিনরাত কান্নাকাটি করছে, খাওয়া-দাওয়া করছে না, ঘুমাচ্ছে না, গোসল করছে না, অর্থাৎ নিজের দিকে তাকিয়েই দেখছে না, এই মেয়ে নিয়ে না অন্য বিপদ হয়!

রওশনের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। এনামুলের মৃত্যুর জন্য বিয়ের ডেট পিছিয়ে গেছে। ওর হবু বর, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদরাও রওশনকে নিয়ে চিন্তিত।

এনামুলের মৃত্যুর পর রওশনকে নিজের রুমে রাখা হচ্ছে না। আমরা সবাই এবং কাছের আত্মীয়-স্বজন নানা রকমভাবে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছি। কোনো সান্ত্বনাতেই কাজ হচ্ছে না। মার পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করে ঠিকই, আসলে ঘুমায় না। চোখ বুজে পড়ে থাকে। মাঝরাতে উঠে মা দেখেন বিছানায় বসে নিঃশব্দে কাঁদছে রওশন। সেই কান্না দেখে মাও কাঁদেন।

এই  অবস্থা  কাটাতে  দেড়-দুমাস  লেগে গেল। রওশন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে লাগল। আমরাও ধাতস্থ হয়ে উঠছি। আরো মাস তিনেক সময় রওশনের বিয়ের জন্য নেওয়া হবে। ততদিনে সে নিশ্চয় পুরোপুরি সামলে উঠবে ভাইয়ের শোক।

এ সময় একদিন হামিদ মামা এলেন। তিনি প্রায়ই আসেন আমাদের বাড়িতে। এনামুলকে প্রচন্ড ভালোবাসেন। যতদিন হাসপাতালে ছিল এনামুল, হামিদ মামা সারাক্ষণই থাকতেন এনামুলের সঙ্গে। নিজের সংসার, ব্যবসা-বাণিজ্য ফেলে ভাগ্নেকে বাঁচাবার প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন। আঠারো দিন হাসপাতালে থেকে শেষপর্যন্ত এনামুল চলেই গেল।

সেদিন ফাগুন মাসের পূর্ণিমা রাত। আমাদের গেন্ডারিয়ার বাড়ির ছাদের ওপর সার্চলাইটের মতো জ্বলছে চাঁদ। হামিদ মামা থাকেন মুন্সীগঞ্জ শহরে। সেখানে তাঁর বাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়ের জামাই শ্বশুরবাড়িতেই থাকে। মামার ওষুধের বিজনেস দেখে। মামি খুবই সংসারী মানুষ। এত নিপুণভাবে সবদিক সামলান, সংসারে মামা যদি দিনের পর দিন না-ও থাকেন, কোনো অসুবিধা হয় না।

এই সুযোগটা মামা নেন। ইচ্ছে হলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। প্রকৃত অর্থে তিনি একটু সংসার উদাসী মানুষ। নিজ পরিবারের চেয়ে অন্যদের নিয়ে তাঁর বেশি চিন্তা। আত্মীয়-স্বজন কে কোথায় কেমন আছে, কারো অসুখবিসুখ হলো কিনা, কোনো না কোনোভাবে এইসব খোঁজখবর নিচ্ছেন, তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন।

আমার মা তাঁর বড়বোন। বোনের ছেলেমেয়েরা তাঁর জান। প্রতিদিনই বোন আর ভাগ্নে-ভাগ্নির খবর নেওয়ার জন্য একবার অন্তত ফোন করবেন, সপ্তাহে একবার অন্তত আমাদের বাড়িতে আসবেন। আসেন সাধারণত সন্ধ্যার দিকে। রাতটা আমাদের সঙ্গে কাটিয়ে পরদিন সকালে চলে যান। কারো অসুখবিসুখ হলে বা অন্য কোনো বিপদ হলে মামিকে ফোন করে বলে দেন, আমার আসতে দু-চারদিন দেরি হবে। ব্যস। মামি তাঁর এই স্বভাব জানেন বলে ওই নিয়ে আর কথা বলেন না।

মামার উন্নতি যা হওয়ার বিয়ের পরই হয়েছে। আগে ছোটখাটো একটা চাকরি করতেন। লঞ্চ কোম্পানির ম্যানেজার। ঘুষের চাকরি। তাঁর কোম্পানির লঞ্চ ছিল বারোটা। প্রতিদিন সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে কোনোটা, কোনোটা এসে ভিড়ছে। লঞ্চের সারেং আর কেরানিরা প্রতিদিনই কাঁচা পয়সা কামাচ্ছে। যাত্রী দুশো হলে দেখাচ্ছে দেড়শো। বাকি যাত্রীর ভাড়া মেরে ভাগ করে নিচ্ছে তারা। মামা এই রহস্য জানেন। তিনি হাতেনাতে ধরতে শুরু করলেন। লোকগুলো তখন তাঁকে কিনে ফেলার চেষ্টা করল। সরাসরি বলল, লঞ্চপ্রতি একশ টাকা করে প্রতিদিন তিনি পাবেন। মামা নীতিবান লোক। ওইসব ধান্ধায় গেলেন না। কিছুদিন পর দেখা গেল কোম্পানির প্রায় সবাই তাঁর পেছনে লেগেছে। অর্থাৎ কাকের রাজ্যে একটি ময়ূরকে টিকতে দেওয়া হবে না। সব কাক একত্র হয়ে ঠোকরাতে থাকবে। ঠোকরাতে ঠোকরাতে বাধ্য করবে উড়ে পালাতে।

মামারও সেই দশা হলো। একসময় চাকরি ছেড়ে দিলেন মামা। পরে আমাদের কাছে গল্প করতেন, বুঝলি, চাইলেই বড়লোক হয়ে যেতে পারতাম। দিনে বারোশো টাকা ইনকাম হলে মাসে কত? ছত্রিশ হাজার টাকা। বেতন পেতাম আট হাজার। সবমিলিয়ে চুয়াল্লিশ হাজার টাকা। ভাবতে পারিস, অত টাকা মাসে রোজগার করলে কী অবস্থা হতো আমার! বাইশ-তেইশ বছর আগে এরকম রোজগার, আমি তো বড়লোক হয়ে যেতাম। ঢাকায় দু-চারটা বাড়ি হতো, গাড়ি হতো, জীবন চলত রাজার হালে। কিন্তু ঘুষ শব্দটা শুনলেই আমার ঘৃণা লাগে। ঘুষের টাকা পকেটে নিলে অস্বস্তিতে মরে যেতাম আমি। আত্মায় কালো দাগ পড়ে যেত। দরকার নেই ওসব টাকার। তারচেয়ে হালাল রোজগার করে বেঁচে থাকব, কম খাব, কম পরব তাই ভালো।

বিয়ের পর নিজের ভাগের জমি বিক্রি করে মুন্সীগঞ্জ শহরে ওষুধের ব্যবসা শুরু করলেন মামা। দিনে দিনে উন্নতি হলো তাঁর। বাড়িঘর হলো, মেয়ে শিক্ষিত হলো, ভালো ঘরে বিয়ে হলো। মামার জীবন পরিচ্ছন্ন সুন্দর, ঝামেলামুক্ত। নিজে সুন্দর প্যান্ট শার্ট পরে, মাথায় সাদা গোল টুপি, তাঁর মতো করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ ওর বিপদে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। এনামুলের শরীর খারাপ শুনে আমাদের বাড়িতে এসে দিনের পর দিন থাকতেন। আমাদের চেয়ে অনেক বেশি দেখাশোনা, সেবাযত্ন এনামুলের করতেন। তেইশ বছরের এনামুলকে গোসল পর্যন্ত করিয়ে দিতেন।

যমজ বলে জন্মের পর থেকেই রোগা, কমজোরি ছিল এনামুল। পেটের অসুখ লেগেই থাকত, ভালো খাবার খেয়ে হজম করতে পারত না। কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার প্রতি বেজায় লোভ ছিল। দূর-দূরান্তের লতায় পাতায় আত্মীয়দের বিয়েশাদিতে চলে যেত, বন্ধুবান্ধব ছিল বিস্তর, তাদের বাড়ির অনুষ্ঠানাদিতে গিয়ে ইচ্ছেমতো খেত। তারপর দেখা গেল রাতে আর ঘুমাতে পারছে না। গ্যাসে পেট ফুলে গেছে, চোঁয়া ঢেকুর উঠছে। মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খাচ্ছে। এনামুলের এই অবস্থা দেখে রাগে গজগজ করতেন মা। কথা না শুনলে তো এরকমই হবে! এত লোভ ভালো না। যে-খাবার হজম হয় না তা খাওয়ার দরকার কি! এখন মরো গ্যাস হয়ে!

এনামুল সঙ্গে সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করল, এবারের মতো ভালো হলে আর কোনোদিনও মায়ের কথার অবাধ্য হবে না। যেসব খাবার হজম হয় না সেসব খাবার মুখেই দেবে না।

কিন্তু সেদিনের মতো পেট সামাল দিতে পারলে, তিন দিনও পার হতো না, যেই কে সেই। মার কাছে করা প্রতিজ্ঞা আর মনেই নেই। বেমালুম ভুলে নিজের মতো চলতে লাগল।

আমরাও নানা রকমভাবে তাকে বোঝাতাম, সে খুবই বিনয়ী ভঙ্গিতে মাথা নাড়ত, হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে, আর করব না। ওইটুকুই। বাড়ি থেকে বেরুলেই ভুলে যেত সব।

শেষ পর্যন্ত ডায়াবেটিস ধরা পড়ল এনামুলের।

ডায়াবেটিস রোগীদের নানা রকম বিধিনিষেধের মধ্যে থাকতে হয়। প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটা, খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোল, মিষ্টির ধারেকাছে না যাওয়া। বাড়িতে এসব মানার চেষ্টা করত এনামুল। ওটা ছিল আমাদেরকে বুঝ দেওয়ার জন্য। কিন্তু রাতের বেলা চুপি চুপি ফ্রিজ খুলে মিষ্টি খেত। আমাদের রহিমা বুয়া দু-চারবার দেখেছে। মাকে বলেছে, আমাদেরকে বলেছে। ওই নিয়ে যখনই এনামুলকে আমরা ধরেছি, নির্মল মুখে হেসেছে। আরে না! বুয়া মিথ্যা কথা বলছে। ডায়াবেটিস হলে যে মিষ্টি খাওয়া যায় না, তোমরা কি মনে করো আমি তা জানি না? আমি খাই না, সত্যি, মিষ্টি একদম খাই না।

আমরা যা বোঝার বুঝে যেতাম।

মা প্রায়ই দুঃখ করে এনামুলকে বলতেন, আমার পাঁচ ছেলেমেয়ে সবাই মানুষ হলো, শুধু তুই হলি না। তোদের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে কী কষ্ট করে আমি সবাইকে মানুষ করলাম, শুধু তোকে পারলাম না। ইন্টারমিডিয়েট পাসটা পর্যন্ত করলি না। তোর জীবন কীভাবে কাটবে রে? কী করবি ভবিষ্যতে? শরীরও ভালো না। আমি না থাকলে কে দেখবে তোকে?

এনামুল হয়তো তখন সুন্দর শার্ট প্যান্ট জুতো পরে বাইরে যাচ্ছে। সুন্দর জামাকাপড়ের প্রতি তার খুব লোভ ছিল। মার কথা শুনে হাসত। ভবিষ্যতেরটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে। তুমি এত চিন্তা করো না তো!

একটা পর্যায়ে ব্লাড সুগার আর কন্ট্রোলই করতে পারছিল না এনামুল। আঠারো-উনিশের নিচে নামতই না। কয়েকবার বারডেমে রাখা হলো তাকে। ইনসুলিন নিচ্ছিল প্রতিদিন। তাও বোধহয় ঠিকমতো নিত না। এক সকালে চোখ উল্টে গেল তার, কথা জড়িয়ে গেল। হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পর দেখা গেল হাত-পা বাঁকা হয়ে আসছে, কথা বন্ধ হয়ে গেছে। চোখ উল্টে মুখ দিয়ে ফেনা উঠছে। শান্তিনগরের পরিচিত একটা ক্লিনিকে নেওয়া হলো। ডাক্তাররা বললেন, এখানে এই রোগীর চিকিৎসা হবে না, ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান।

আমরা সবাই তখন দিশেহারা, পাগলের মতো অবস্থা। সে ডায়াবেটিসের রোগী, বুদ্ধি করে যে বারডেমে নিয়ে যাব সেই চিন্তাই মাথায় এলো না। নিয়ে গেলাম ঢাকা মেডিক্যালে। ডাক্তাররা বললেন, কোমায় চলে গেছে। ডায়াবেটিক কোমা।

কয়েকদিন ঢাকা মেডিক্যালে রাখা হলো এনামুলকে কিন্তু তার কোনো উন্নতি হলো না। এক তরুণ ডাক্তার পরামর্শ দিলেন, বারডেমে ট্রান্সফার করুন। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় বারডেম অতুলনীয়। আমাদের এখানে ভালো চিকিৎসা আসলে হচ্ছে না।

বারডেমে ট্রান্সফার করা হলো এনামুলকে। আইসিইউতে থাকল কয়েকদিন। একসময় জ্ঞান ফিরল ঠিকই কিন্তু কথাবার্তা অসংলগ্ন।  পেছনে ফেলে আসা জীবনের অনেক খুঁটিনাটি হঠাৎ হঠাৎ বলতে শুরু করত। বলে যাচ্ছে তো বলেই যাচ্ছে। থামার নাম নেই। আর কথাও যেন একটু জোরে বলছে। আমরা ভুলে গেছি, অতি তুচ্ছ ঘটনা, মনে রাখবার কোনো কারণ নেই, এমন ঘটনা হুবহু বলে যাচ্ছে।

হামিদ মামা তখন চবিবশ ঘণ্টা এনামুলের সঙ্গে। আমাদের মতো তিনিও এনামুলের কথা শুনে বিস্মিত হতেন। এ কী করে সম্ভব! এতকিছু কী করে মনে আসছে ওর!

একসময় আইসিইউ থেকে ওয়ার্ডে দেওয়া হলো এনামুলকে। আঠারো দিন পর বিকেলের মুখে মুখে সে মারা গেল। তার বেডের চারদিকে পর্দা টেনে দিল নার্সরা। আমরা চার ভাইবোন, মা, হামিদ মামা, আমরা সবাই কাঁদতে লাগলাম। রওশন প্রায়ই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিল। তাকে সামলাচ্ছিল তার হবু বর গোলাম মওলা।

আমাদের ভাইবোনদের সিরিয়ালটা এই রকম, প্রথমে আমি, তারপর এনামুল আর রওশন, তারপর সাইদুল, সবার ছোট আসমু। আমার এখন সাতাশ বছর বয়স। এমবিএ করে একটা ব্যাংকে ঢুকেছি। রওশন অনার্স পড়ছে। সাইদুল পড়ছে কলেজে, আসমু ক্লাস নাইনের ছাত্রী। বাবা নেই ঠিকই কিন্তু অবস্থা তেমন খারাপ না আমাদের। গেন্ডারিয়াতে দশ কাঠার ওপর বাড়ি। পাঁচ কাঠার মতো জমিতে চারতলা একটা বিল্ডিং। বিল্ডিংয়ে আটটা ফ্ল্যাট। চারতলার দুটো ফ্ল্যাট মিলিয়ে একটা করে আমরা থাকি। বাকি ছ’টা ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া। ভাড়ার টাকায়ই সংসার চলে যায় আমাদের। তার ওপর গ্রামে ধানের জমি আছে। বছরের চাল আসে গ্রাম থেকে।

কিছুদিন হলো গেন্ডারিয়াতে ডেভেলপার ঢুকেছে। আমাদের পুরনো বাড়িটা বেশ একটা নামকরা কোম্পানি নিতে চাচ্ছে। ন’তলা বিল্ডিং করবে। নিচতলায় পার্কিং আর বাকি আটতলার একেক তলায় তিনটা করে ফ্ল্যাট। মোট চবিবশটা ফ্ল্যাটের অর্ধেক, বারোটা ফ্ল্যাট পাবো আমরা। যতদিন বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ না হবে ততদিন অন্যত্র ভাড়া থাকব। ভাড়ার টাকা কোম্পানি দেবে, এ ছাড়া নগদ দেবে সত্তর-পঁচাত্তর লাখ। তার মানে বড়লোক হয়ে যাব আমরা।

কিন্তু মা রাজি হচ্ছেন না। ডেভেলপারদের কথা উঠলেই বলেন, তোর বাবা এই বাড়ি করেছিলেন। আমি যতদিন বেঁচে আছি এই বাড়ি যেমন আছে তেমনই থাকবে। আমি মারা যাওয়ার পর যা ইচ্ছা তোরা করিস। আমরা সব ভাইবোন নানা রকমভাবে তাকে বোঝাচ্ছি, কাজ হচ্ছে না।

এই অবস্থায় এনামুলের মৃত্যু সবকিছু আরও উল্টোপাল্টা করে দিল।

মামা এলে রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে আমরা ছাদে গিয়ে বসি। চারদিকে কোমরসমান উঁচু দেয়াল ঘেরা ছাদ। জ্যোৎস্না রাতে ছাদে বসে নানা রকম গল্প করেন মামা। আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনি। গল্পে গল্পে অনেকটা রাত হয়ে যায়, আমাদের ঘুমই পায় না।

মামা গল্প করেন খুব সুন্দর ভঙ্গিতে। শুনতে ভালো লাগে।

এনামুল মারা যাওয়ার পর ছাদে আর ওঠাই হয়নি আমাদের। আজ মামা এসেছেন, তার ওপর পূর্ণিমা রাত। মামাই বললেন, চল ছাদে গিয়ে বসি। আজ এনামুলকে নিয়ে এমন একটা ঘটনা তোদের বলব, শুনে তোরা হতবাক হয়ে যাবি।

মাকে বললেন, আপা, তুমিও চলো।

চিলেকোঠায় কয়েকটা ফোল্ডিং চেয়ার থাকে। ছাদে এসে চেয়ারগুলো পেতে দিল সাইদুল। আমরা সবাই গোল হয়ে বসলাম। চাঁদের আলোয় প্রত্যেকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি প্রত্যেকের মুখ।

রওশন বলল, বলো, কী ঘটনা এনামুলের?

মামা বললেন, ঘটনাটা আমাকে ছাড়া কাউকে বলেনি এনামুল। ও যেদিন মারা গেল সেদিন, মানে ওই সময়টায় ওর তো জ্ঞান ছিল না, চোখ বুজে পড়েছিল। শরীর ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসছে। হঠাৎ দিশেহারা ভঙ্গিতে চোখ খুলল। কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল মুখে, তবু বলল…

মা বললেন, কী বলল?

আর একটু আগে থেকে বলি, তা হলে ঘটনা তোমরা বুঝতে পারবে। সাত বছর বয়স পর্যন্ত ও ছিল মার কাছে। আমাদের গ্রামে। আমিও তখন বাড়িতেই থাকি। আপা থাকেন ঢাকায়। মা জান দিয়ে ভালোবাসত এনামুলকে। এনামুলও ছিল নানির ভক্ত। নানি বলতে পাগল। নানিকে ছাড়া থাকতেই চাইত না। এজন্য ওকে নিজের কাছে নিয়ে রাখতেন। ক্লাস টুতে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে তখন পড়ছে এনামুল। সেবার প্রচন্ড শীত পড়েছে। মাঘ মাস। গ্রাম দেশের লোকে বলে ‘মাঘের শীত বাঘের গায়’। অর্থাৎ মাঘ মাসের শীতে বাঘের মতো প্রচন্ড শক্তিশালী জীবও কাবু হয়ে যায়। বিকেল হতে না হতে ঘন হয়ে পড়ে কুয়াশা। সন্ধ্যার পর পাঁচহাত দূরের জিনিসও দেখা যায় না। সকালবেলা মনে হয় মোটা সাদা চাদরে চারদিক ঢাকা পড়ে আছে। রোদ ওঠে দেরি করে। রোদ ওঠার পর আস্তে ধীরে কাটতে থাকে কুয়াশা। মা এত যত্ন করেন এনামুলের, মোটা জামাকাপড় পরিয়ে, পুতুলের মতো করে ঘরে বসিয়ে রাখেন। রোদ না ওঠা পর্যন্ত ঘর থেকে বের করেন না। মা আছেন এনামুলকে নিয়ে। তাঁর ধ্যান, জ্ঞান সব এনামুল। ওই বয়স থেকেই পেটের অসুখটা এনামুলের ছিল। কখনো কখনো রাতে টয়লেটে যাওয়ার দরকার হতো। মা ওর জন্য বারান্দার দিককার এককোণে ব্যবস্থা করেছিলেন। কারণ আমাদের অতবড় বাড়ি। টয়লেটে যেতে হয় বাগান পেরিয়ে। রাতের বেলা এনামুল ভয় পেতে পারে এজন্য ওই ব্যবস্থা। বাড়িতে বাঁধা কামলা আছে ফইজু। সে থাকে বউ নিয়ে। তখনো বাচ্চাকাচ্চা হয়নি ওদের। ফইজু ক্ষেতখোলার কাজ করে, তার বউ ফুলি করে সংসারের কাজ। সংসারের কাজে অবশ্য দুজন মানুষ ছিল। ফুলি তো ছিলই, আর ছিল পারু। সে আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। এতিম মেয়ে। মা-বাবা কেউ নেই। এজন্য মা তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। পরে আমরাই তাকে বিয়েশাদি দিয়ে দিয়েছি।

পারুর কথা শুনে মা হঠাৎ বললেন, ও হামিদ, পারু কি এখনো ফরিদপুরেই থাকে?

হ্যাঁ আপা। স্বামী মারা গেছে। তিনটা ছেলে পারুলের। ছেলেরা কাপড়ের ব্যবসা করে। অবস্থা বেশ ভালো।

আহা কতদিন পারুলের সঙ্গে দেখা হয় না। পারুলরে একবার ঢাকায় আসতে বল। কয়েকদিন থেকে যাক আমার কাছে।

ঠিক আছে আপা। আমি ফোন করে দেবো।

রওশন অস্থির হয়ে আছে এনামুলের কথা শোনার জন্য। বলল, মামা বলো, আসল ঘটনা বলো।

এই তো বলছি মা। ওই মাঘ মাসের এক রাতে, বেশ অনেক রাত, কাশতে কাশতে ঘুম ভেঙে গেল এনামুলের। তারপর কাশি আর থামে না। যেন বুক গলা চিড়ে বেরুচ্ছে কাশি। দম আটকে আটকে যাচ্ছে। এনামুলের কাশিতে মা আর পারু তো উঠেছেই, আমিও উঠে গেছি। এমন কাশি হচ্ছে কেন? মা দিশেহারা গলায় পারুকে বললেন, পারু, তাড়াতাড়ি সরিষার তেল গরম কর। গরম তেলের সঙ্গে রসুন কেটে দে। তাড়াতাড়ি।

ততক্ষণে ফইজু, ফইজুর বউও উঠে গেছে। এনামুলকে নিয়ে বেশ একটা হুড়োহুড়ি শুরু হলো। গরম তেল রসুন বুকে-পিঠে মালিশ করতে লাগলাম আমি। কিন্তু কাশি কমছে না। এনামুল নিস্তেজ হয়ে আসছে। শ্বাস ফেলতে পারছে না। মা কান্নাকাটি শুরু করলেন। হায় হায়, এনামুল তো মারা যাবে। ও হামিদ, তাড়াতাড়ি জলধর ডাক্তার রে নিয়া আয়। ফইজু, হাফিজরে ডাকো, হেলাল গনি মিন্টুরে ডাকো। সবাই মিলে যাও, তাড়াতাড়ি জলধর ডাক্তাররে নিয়া আসো।

তোরা তো জানিসই আমার দুই চাচা। বাবা মারা গেছেন, দুই চাচা আর তাদের ছেলেমেয়েরা আছে বাড়িতে। পুরো বাড়িতে এনামুলকে নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়ে গেল। ঘুম ভেঙে গেছে সবারই। সবাই এসেছে আমাদের ঘরে। মেজোচাচা বললেন, হামিদ, দেরি করিস না। তাড়াতাড়ি রওনা দে। চার-পাঁচজন যা। টর্চলাইট হারিকেন নিয়ে যা প্রত্যেকে।

সেই রাত দুপুরে জলধর ডাক্তারকে গিয়ে তুললাম আমরা। প্রায় মাইলখানেক দূরে তাঁর বাড়ি। মধ্যবয়সী ডাক্তার। সব শুনে ডাক্তারি ব্যাগ নিয়ে এলেন। ইস, কী যে ঠান্ডা সেই রাতে! গরম কাপড় যার যা আছে পরেছি। পায়ে মোটা মোজা, জুতা। মাথায় উলের টুপি। চাদর, মাফলার। কোনো কিছুতেই যেন শীত মানছে না। জলধর ডাক্তারও ওরকম কাপড়চোপড়ই পরেছেন। বাড়ি এসে দেখি একই অবস্থা এনামুলের। কাশতে কাশতে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। জলধর বাবু খুবই ভালো ডাক্তার। একটা ইনজেকশান দিলেন এনামুলকে। দিয়ে বললেন, আমাকে ঘণ্টাখানেক থাকতে হবে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে অবস্থা না বদলালে আর একটা ইনজেকশান দিতে হবে। পারুর দিকে তাকিয়ে বললেন, এককাপ চা দাও।

দ্বিতীয় ইনজেকশান দিতে হলো না। তার আগেই কাশি বন্ধ হলো এনামুলের। ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল সে। পরদিন সকালে একদমই ভালো। জলধর ডাক্তার কী একটা লিকুইড ওষুধ দিয়ে গেছেন। ওটা খাওয়াতে হবে তিনবেলা।

মা বললেন, আমার মনে আছে রে হামিদ, সবই মনে আছে। তখন তো আজকের মতো অবস্থা ছিল না। ঢাকা থেকে বিক্রমপুর যেতে সারাদিন লাগত। সদরঘাট থেকে সকাল ছ’টার লঞ্চে চড়লে, সন্ধ্যাবেলা মাওয়ার ঘাট। মুন্সীগঞ্জ চাঁদপুর ঘুরে যেত লঞ্চ। ওই ঘটনার পাঁচ-সাতদিন পর হঠাৎ করেই এনামুলকে নিয়ে তুই আর মা ঢাকায় চলে এলি। তখনই ঘটনা জানলাম। মা বললেন, ও যেহেতু আমাকে ছেড়ে থাকতে পারে না, দরকার হলে আমিও বছরে দু-চার মাস ঢাকায় থাকব, কিন্তু এই ছেলেকে গ্রামে রাখা যাবে না। শরীরের যা অবস্থা ওর, কখন কী বিপদ হয়!

মামা বললেন, কিন্তু একটা কথা তোমাদের কখনও বলা হয়নি। এনামুল শুধু আমাকে বলেছিল। প্রথমবার বলল ওই সাত বছর বয়সে। অবশ্য আমিই ওকে বলেছিলাম, কথাটা কখনো কাউকে বলিস না বাবা। তোমরা তো জানোই,  ও আমাকে কী ভালোবাসত, আমি যা বলতাম তাই শুনত। কখনও কাউকে বলেনি।

সাইদুল অস্থির গলায় বলল, কিন্তু কথাটা কী?

বলছি রে বাবা। পরদিন সকালে রোদ ওঠার পর গরম চাদরে জড়িয়ে এনামুলকে কোলে নিয়ে উঠানের রোদে বসে আছি আমি। এনামুল হঠাৎ বলল, মামা, কাল রাতে আমি যখন কাশছিলাম, সেই ফাঁকে দেখি, যখনই কাশতে কাশতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে তখনই চারদিক কালো অন্ধকারে ভরে যায়। হারিকেন জ্বলছে ঘরে, তাও একটা না, দুতিনটা হারিকেন, আমি দেখি কোথায় হারিকেনের আলো, সব অন্ধকার। ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর সেই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসছে বোরখার মতো কালো কাপড়ে শরীর ঢাকা বিরাট লম্বা চওড়া একজন মানুষ। শরীরের মতো মুখও কালো কাপড়ে ঢাকা। শুধু চোখ দুটো দেখা যায়। সেই চোখ টর্চলাইটের মতো জ্বলছে। মাঝে মাঝেই আমার কাছে আসছিল সে, আবার সরে যাচ্ছিল। এরকম অনেকবার দেখলাম মামা। আর ওই অবস্থায়ও ভয়ে আমার শরীর কাঁপছিল। ডাক্তার ইনজেকশান দেওয়ার পর, আমার কাশি যখন কমল, দম বন্ধ ভাবটা থাকল না, আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল, তখন দেখি, চোখ আরও বড় করে, আরও কঠিন করে আমার দিকে সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

শুনে আমরা স্তব্ধ হয়ে গেলাম।

মা বললেন, আমি বুঝেছি। ও কী দেখেছিল! ও দেখেছিল ওর মৃত্যু। খুব কাছে এসে মৃত্যু সেবার ফিরে গেল ওর কাছ থেকে। ওকে নিতে পারল না।

আসমু বলল, সাত বছর বয়সে ভাইয়া এত গুছিয়ে তোমাকে সব বলতে পেরেছিল, মামা?

মামা বললেন, আমি যেভাবে তোদেরকে বললাম, এতটা গুছিয়ে কি আর বলেছে! ও বলেছিল ওর মতো করে।

একটু থেমে মামা বললেন, আমিও বুঝেছিলাম ও কী দেখেছে! সাবধান করে দিলাম, কথাটা যেন সে আর কাউকে না বলে। সে যা দেখেছে ওটা খুবই ভয়ের জিনিস। ওই নিয়ে জনে জনে বললে ওর ক্ষতি হবে। মানে ওকে ভয় দেখানো।

রওশন বলল, অন্য কাউকে বললে অসুবিধা কী ছিল?

হয়তো কিছুই হতো না। মা শুনলে ভয় পেয়ে যেতেন। বোধ হয় এটাই কারণ। মার কথা ভেবেই হয়তো এনামুলকে আমি মানা করেছিলাম। এই ঘটনার দশ বছর পর সেই জিনিস আবার দেখল এনামুল।

এবার কথা বললাম আমি। তাই নাকি?

হ্যাঁ, সেবারও আমি এনামুলের সঙ্গে। শাজাহান সাহেবের বাড়িতে গেছি ওকে নিয়ে, কাজ সেরে বেরিয়ে আসার সময় ঘটল ঘটনা। ওই বাড়িটা অদ্ভুত টাইপের। ঢুকতে হয় কলাপসিবল গেট পেরিয়ে। তারপর গাড়ি রাখার খোলা জায়গা, ওপাশে বিল্ডিং। একটা আনাড়ি ড্রাইভারকে দেওয়া হয়েছে গাড়ি পার্ক করতে। গরুটা না বুঝে এমন স্পিড তুলল গাড়িতে, এনামুল বিল্ডিং ঘেঁষে বেরুচ্ছিল, গাড়িটা গিয়ে ধাম করে লাগল ওর দুপায়ের হাঁটু বরাবর। আমি চিৎকার শুরু করলাম। এনামুলের দুই হাঁটু চুরমার হয়ে গেল।

মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। সেবার সাত মাস ভুগল ছেলেটা। পঙ্গু হাসপাতালে থাকল তিন মাসের মতো। আহা রে, কী কষ্ট পেয়ে গেল আমার এই ছেলেটা!

রওশন তখন কাঁদতে শুরু করেছে। মা ওকে বুকের কাছে টেনে নিলেন।

মামা বললেন, হাসপাতালে বসে এনামুল আমাকে একদিন বলল, মামা, গাড়িটা যখন ওভাবে আমাকে মারল, ঠিক তখন আমি সেই ছেলেবেলার দৃশ্যটা আবার দেখলাম। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসছে সেই মূর্তি। শুধু তার চোখ দুটো দেখা যায়। কটমট করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। যতক্ষণ জ্ঞান ছিল, আমি শুধু ওই দৃশ্যই দেখলাম। আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে আর দেখি সে একটু একটু করে পিছাচ্ছে। ওটা কে মামা? একবার সাত বছর বয়সে আর একবার সতেরো বছর বয়সে কেন আমি একই দৃশ্য দেখলাম!

বললাম, তুই তোর মৃত্যুকে দেখেছিস বাবা।

আমার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল এনামুল। বললাম, তবে কথাটা কাউকে বলিস না। কেন বললাম জানি না। শুনে এনামুল উদাস গলায় বলল, না মামা, বলব না।

মামা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এনামুল যেদিন মারা গেল, আমি ওর পাশে বসে আছি। আর কেউ নেই। এনামুল চোখ বুজে পড়ে আছে। এমন নিস্তেজ, যেন চোখ খোলারও শক্তি নেই। আমি একটা চেয়ার নিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। হঠাৎ একসময় যেন ভয়ানক কোনো স্বপ্ন দেখে জেগে উঠল সে, এমন দিশেহারা চোখে তাকাল। ভাবলাম আমার দিকে তাকিয়েছে কিনা। দেখি না, আমার দিকে ওর চোখ না, চোখ পায়ের দিকে। যেমন দিশেহারা চোখে তাকিয়েছে, তেমন দিশেহারা গলায় বলল, কে, কে আপনি? এই যে কালো আলখেল্লা পরে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার মুখ দেখতে পাচ্ছি না, শুধু চোখ দেখা যায়! কে আপনি? এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন? না না, আসবেন না, আমার কাছে আসবেন  না। আমি ভয় পাচ্ছি, আমি খুব ভয় পাচ্ছি। আপনি যান, আপনি চলে যান।

মামা কান্না সামলানো গলায় বললেন, তারপরই সব শেষ।

আমাদের সবার চোখে তখন পানি। রওশন কাঁদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে, মা কাঁদছেন শব্দ করে।

ফাগুন পূর্ণিমার চাঁদ তখন কী সুন্দর জ্যোৎস্না ঢেলেছে পৃথিবীতে। সেই চাঁদের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হলো, এই সুন্দর জ্যোৎস্না আমরা সবাই দেখছি, শুধু এনামুল দেখছে না। সে চলে গেছে কোন অন্ধকার জগতে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত