রক্তচোষা গার্লফ্রেন্ড

রক্তচোষা গার্লফ্রেন্ড
জান তুমি তো আমাকে কোনদিন কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওনা। সবার বয়ফ্রেন্ড কত ভালো। সপ্তাহে দুইদিন ঘুরতে নিয়ে যায় । আর তুমি মাসে একদিনও নিয়ে যাওনা।
-বাবু,সবার বয়ফ্রেন্ড বড়লোক।
তোমার টা হচ্ছে গরীব বয়ফ্রেন্ড। তাঁর কাছে এতো টাকা নাই যে তোমাকে প্রতিদিনই ঘুরতে নিয়ে যাবে,সাথে তোমাকে খাওয়াবে। আর তুমিতো খাইতে বসলে মাশাল্লা। কি আর বলবো। ওইটুকু পেটে ওতো খাবার কিভাবে যায় আমার মাথায় ধরে না।
-তাই বলে তুমি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেনা? তোমার কাছে টাকাটাই বড় হয়ে গেলো?
-জান,তোমার বাপের তো অনেক টাকা। কোনো অভাব নাই,ওগুলো তো ভবিষ্যতে আমারই হবে। কিছু টাকা ধার দাও পরে দিয়ে দিব। তাহলে তোমাকে প্রতিদিনই ঘুরতে নিয়ে যাবো।
-তোর আমার বাপের টাকার প্রতি নজর পড়ছে। সবাই নিজের বাপের টাকা দিয়ে গার্লফ্রেন্ড লালন পালন করে। আর তুই গার্লফ্রেন্ডের বাপের টাকা দিয়ে গার্লফ্রেন্ডকেই পালতে চাস। আমি ওতো বোকা নই যে নিজের বাপের টাকা খঁরচ করে তোর সাথে প্রেম করবো। তোর সাথে একমাসের জন্য ব্রেকআপ।
– সোনা,তুমি ভুল বুঝতেছো। আমি ওভাবে বলিনাই।
– তুই যে ভাবেই বলিস না কেনো তোর সাথে ব্রেকআপ।
অতঃপর একমাসের জন্য আমার গার্লফ্রেন্ড উধাও। একমাস পর। জান, তুমি তো আগের মতো আমাকে আর ফোন দাওনা। আগে ফোন দিয়ে সারারাত কথা বলতা। আর এখন দুই মিনিট কথা বলেই রেখে দাও।
– আমার জান পাখিটা দেখি সব মনে রাখে। লাস্ট তোমার আমার ফোনে কথা হয়েছে পাঁচশত বিশ মিনিট। তার মধ্যে আমি ফোন দিয়েছি চারশত পঞ্চাশ মিনিট। আর তুমি দিয়েছো মাত্র সত্তর মিনিট। তুমি আমার থেকে তিনশত আশি মিনিট পিছিয়ে।
– আরে গার্লফ্রেন্ড রা কি টাকা খঁরচ করবে নাকি? তুমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখো সব বয়ফ্রেন্ডরাই গার্লফ্রেন্ড কে কল দেয়। আর কিছু কিছু বলদ বয়ফ্রেন্ড আছে তারা তো গার্লফ্রেন্ড এর ফোনে লোড পর্যন্ত দিয়ে দেয়। আর তুমি কিনা এই সামান্য জিনিস টাও হিসাব করো।
– হুম হিসাবে তো করতেই হবে। ভালোতো আর আমি একা বাসিনা তুমিও তো বাসো। তাই ভেবেছি দুজনেই সমানে সমান ভাগ করে নিবো। যেহেতু আমি তোমাকে প্রোপোজ করছি। সেহেতু একশত মিনিট কথা বললে আমি ষাট মিনিট বলবো আর তুমি চল্লিশ মিনিট বলবা। আমার জান পাখিটার জন্য বিশ টাকা বলি দিলাম। তুমি আমাকে কেমন ভালোবাসো বুঝা হয়ে গেছে।
-তুমিও আমাকে কতো ভালোবাসো সেটা বুঝা হয়ে গেছে। একশর জায়গায় মাত্র চল্লিশ দিচ্ছি আর আমি ষাট নিচ্ছি। সেটাও তোমার কাছে বেশি হয়ে যাচ্ছে।
-তোর মতো এতো ছেঁচড়া বয়ফ্রেন্ড আমার লাগব না। তোর সাথে ছয়মাসের জন্য ব্রেকআপ। ছয়মাস পর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে আবার দেখা। জান তুমিতো এখন চাকরি কর। চল আজকে শপিং এ যাই। আমাকে একটা শাড়ি কিনা দিবা। সেই শাড়ি পড়ে তোমার সাথে তোমার হাত ধরে পূরো ঢাকা শহর ঘুরবো।
-তুমি তো শাড়ি পড়ে হাঁটতেই পারো না। শুধু শুধু আমার টাকাগুলো নষ্ট করবে কেনো? তার থেকে ভালো একশ টাকা দিয়ে একটা গেঞ্জি আর তিনশ টাকা দিয়ে একটা প্যান্ট কিনে দেই। তাহলে তুমি এগুলো পড়ে দৌড়াতে পারবে।
-তুই কি আমাকে শপিং নিয়ে যাবি নাকি সেটা বল? এতো নাটক করোস কেনো? অবস্থা বেগতিক দেখে শপিং নিয়ে যাই। অতঃপর আর কি? আমার পাঁচ হাজার টাকা গার্লফ্রেন্ড নামক হাতিটার পেছনে খঁরচ হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলাম এর শোধ আমি তুলবো একদিন। কিছুদিন পর। জান তুমি চাইলে কিন্তু আমাকে শার্ট, পাঞ্জাবি ইত্যাদি গিফট করতে পারো।
-না সোনা,এখন না। এখন হাত একেবারে খালি। পরে কিনে দিব।
-আমার কালকে জন্মদিন। আর তুমি আমার ইচ্ছে টা পূরণ করবেনা?(ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল)। মনে হচ্ছে কাজ হয়েছে।
-আচ্ছা চল, তবে পছন্দ করবো আমি।
-ওকে ময়না পাখি।
অতঃপর শো রুমে যাওয়ার পরে। জান দেখো এটা কতো সুন্দর। হাতে নিয়ে দেখি দাম মাত্র চারশত টাকা।
-না জান হবেনা এটা। আমি একটা দুইহাজার টাকা দামের শার্ট হাতে নিলাম। দেখো তো এটাতে আমাকে ভালো মানিয়েছে না?
-হুম, অনেক সুন্দর মানিয়েছে। দাওতো দেখি শার্ট টা। হাতে নিয়ে দাম দেখে গার্লফ্রেন্ড আমার অজ্ঞান হবার মতো অবস্থা।
-আরে এটার কালার ভালো না। এটা পড়লে তোমাকে জোকার লাগবে। অন্য টা দেখো। আরেকটা পনেরশত টাকার টা হাতে নিয়ে বললাম। দেখো এটা আমাকে কতো সুন্দর মানিয়েছে। এটাই আমার জন্য পারফেক্ট হবে।
-এই তোমার কি হয়েছে?
আগে তোমার পছন্দ কতো উঁচু ছিল। আর এখন কতো নিচে নেমে গেছে তোমার চয়েজ। এটা তুমি কিভাবে পছন্দ করলে? মানুষের তো একটা রুচি থাকে। তোমার সেটাও নেই। অতঃপর আমার পছন্দ বিসর্জন দিয়ে গার্লফ্রেন্ডের পছন্দে দুইটা তিনশ টাকার শার্ট উপহার পেলাম। এভাবেই কিছু গরিব বয়ফ্রেন্ড এর রক্ত চুষে বেঁচে আছে হাজারো বড়লোক গার্লফ্রেন্ড।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত