একজন মা

একজন মা
রিতা এবার বড় হয়েছে, মেয়েটার আলাদা একটা রুম দরকার। এটা কি তুমি বুঝতে পারছো ? স্ত্রী শায়লার কথা শুনে হাবীব শান্ত ভঙ্গিতে তাকালো। রুম দরকার হলে পাশের রুমে গিয়ে ঘুমালেই তো হয়। কি হলো এ’রকম চুপচাপ তাকিয়ে আছো কেন ? হাবীব হাসিমুখে বললো, বিষয়টা চুপচাপ থাকার। তাই চুপচাপ। রিতা পাশের রুমে দাদীর সাথে ঘুমালেই তো সব সমাধান হয়ে যায়। শায়লা উচু গলায় ধমকের স্বরে বললো, এই বুড়ির সাথে আমার মেয়ে থাকবে কেন ? হুম, কেন থাকবে। পারলে বুড়িকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসো। যতো সব ঝামেলা, দিয়ে আসলে ঝামেলা দূর হবে।
কথা শুনে হাবীব একই সাথে বিস্মিত এবং হতভম্ব হয়ে গেলো। শায়লা পাগল হয়ে গেলো নাকি ? বলছে কি এসব ? আমার মাকে দিয়ে আসার কথা কিভাবে বলতে পারলো! হাবীব দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে হতাশ গলায় বললো, তুমি কি সত্যিই চাও আমার মা বৃদ্ধাশ্রমে থাকুক ? কেন চাইবো না! থাকলে কি হবে ? কতো মানুষের বাবা-মায়েরাই বৃদ্ধাশ্রমে থাকে। রিতা টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছে। বাবার সাথে মায়ের ঝগড়া দেখে খাওয়া বন্ধ করে প্লেটে হাত ধুয়ে ফেললো। বাবাকে রিতা অনেক পছন্দ করে। মা কখনো ঝগড়া করে বাবাকে কিছু বললে রিতা এটা মেনে নিতে পারে না। রিতা ভেজা হাত গামছায় মুছে খাবার টেবিল থেকে উঠে বাইরে চলে আসলো। রিতা বের হওয়ার সাথে সাথে বিষণ্ণ মন নিয়ে হাবীব নিজে ও বাইরে বেরিয়ে গেলো।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধা, রিতার কোন খোঁজ নেই। শায়লা বেগম আশেপাশের সবগুলো বাড়ি খুঁজে ও রিতাকে খুঁজে পেলো না। মেয়েটা ভাত খাওয়া শেষ না করেই যে উঠে গেলো। এখনো আসছে না কেন ? মেয়েটা বাইরে বের হলো কখনোই এতো দেরি করে না। আজকে মেয়েটার হলোটা কি ? মাগরীবের আজান দিতেই শায়লার বুকটা কেঁপে উঠলো। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে হাবীবের মনে অস্থিরতা শুরু হয়ে গেলো। স্ত্রী শায়লাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলো। চেষ্টায় কাজ হচ্ছে না। শায়লা শব্দ করে চোখের পানি ফেলছে।
রাত দশটা বেজে গেছে। শায়লা কিছুই মুখে নেয়নি। পরিচিত আত্মীয় স্বজন সবার কাছে খুঁজে নেওয়া হলো। কেউ রিতার কথা বলতে পারছে না। পুরো রাতটি শায়লা এক মুহূর্তের জন্য ঘুমাতে পারলো না। হাবীব অনেক জায়গায় খুঁজে এসেছে। রিতা নেই, কোথাও নেই। ভোরের আঁধার কেটে নতুন দিনের আলো ফুটে উঠতেই হাবীব বেরিয়ে পরলো রিতার খুঁজে। বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রিতাকে সাথে করে বাড়ি ফিরলো। মেয়ে হারানোর প্রচন্ড যন্ত্রনা নিয়ে শায়লা দরজায় বসে চোখের পানি ফেলছিল। হাবীবের সাথে মেয়েকে দেখে শায়লা বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেললো। অনেক কষ্টে উঠে দৌঁড়ে এসে রিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করলো। লক্ষীটা আমার সারাটি রাত কোথায় ছিলি ?
রিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাবীব বরফ শীতল গলায় বললো, মেয়েটাকে গতকাল আমার অফিসের কলিগ জাহানারার বাসায় রেখে এসেছিলাম। যেনো তুমি বুঝতে পারো সন্তান শুধু মাত্র একটি রাত দূরে থাকলে মায়েদের কতোটা কষ্ট হয়। বৃদ্ধাশ্রমে যদি আমার মাকে রেখে আসি, সন্তানের শূন্যতায় মায়ের ও ঠিক একই কষ্ট হবে। মায়ের এই কষ্টটা যদি ছেলে-মেয়েরা অনুভব করতে পারতো, তাহলে পৃথিবীর কোন সন্তানই তার পিতা মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার সাহস করতো না। মেয়েকে কাছে পেয়ে ও শায়লার চোখ দিয়ে পানি পরছে। এই পানি নিজের ভুল বুঝতে পারা পরিতৃপ্তির পানি।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত