সামনে কোনো গির্জা নেই, ফাদারও নেই, আবু সালেক ক্রিশ্চানও নয়, করেনি কোনো অপরাধ বা পাপ যে তাকে কনফেশান করতে হবে। তবু ফজল যখন তাকে প্রশ্নটা করে বসে, তার মধ্যে অকারণ একটা অস্বস্তি কাজ করতে থাকে। সেটা ঠিক অপরাধবোধ নয়, পাপবোধও নয়, তবু একটা ঊনতা মনকে অস্বস্তিতে ভর দেয়। ব্যাপারটা যে কী, সে নিজেও নিজেকে বুঝিয়ে উঠতে পারে না। এর মধ্যে তার কি কোনো ভূমিকা আছে?
বেলা সাড়ে দশটা। মধ্য ফাল্গুন। গ্রামের একমাত্র চিকিৎসক সালেক তার চেম্বারে বসে। আট বাই আট ছোট একটা কামরা। এটি সে বরাদ্দ পেয়েছে সবলসিংহপুর ইয়ুথ রিং ক্লাবের কাছ থেকে। পেছনে ক্লাবের দালান। মধ্যিখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা। তারপর ওপাশে আরেকটা দোতলা দালান। নিচে আলমের ওষুধের দোকান। ওপরে ডাক্তারের চেম্বার। শিশু-বিশেষজ্ঞ – সপ্তাহে দুদিন আসেন শহর থেকে। তদারকি করে আলম। দুদিন বেশ ভিড় হয়।
সবলসিংহপুর গ্রামটি হুগলীর খানাকুল থানার দুনম্বর ব্লকের আওতায়। বেশ বড় গ্রাম। জনসংখ্যা ১২-১৩ হাজার। হিন্দু-মুসলিম হার প্রায় সমান। এই গ্রামের পত্তন থেকে সম্প্রদায়গত হানাহানি কোনোদিন ঘটেনি। কৃষিপ্রধান উৎপাদন। ধান আর আলু ভালো হয়।
এক ঘণ্টা হয়ে গেল কোনো রোগীর দেখা নেই। সালেক চেম্বার থেকে বেরিয়ে মোড়ে গামার চায়ের দোকানের দিকে এগোয়। আলমের দোকানে তখন বেশ ভিড়। গ্রামের মধ্যে ওষুধের একমাত্র দোকান বলে খদ্দের লেগেই থাকে। একা মধ্য চল্লিশের আলমকে বেশ সচল থাকতে হয়। গোটা দোকানজুড়ে র্যাক। কাচের গ্লাস দিয়ে ঘেরা। সুন্দর করে সাজানো। একটা টুলে উঠে উঁচু আলমারি থেকে ওষুধ পাড়ছে – ধুলো ঝাড়ছে ঝাড়ন দিয়ে, তারপর সামনের র্যাকের ওপর রাখছে আওয়াজ করে। এর মধ্যে খবরের কাগজ এসে গেছে। লোকজনের ফাঁকে চট করে কাগজে বুলোচ্ছে চোখ। তাকে দশভুজার মতো সবদিক সামলাতে হয়।
সালেককে দোকানের সামনে দিয়ে যেতে দেখে আলমের হাঁক : সালেকভাই, কলাবের চাবিটা কোথায়?
আমার কাছে।
পকেটে, না চেম্বারে?
পকেটে।
কোথায় যাচ্ছেন?
চা খেতে।
ফজলভাই তো এখনই এসে পড়বেন।
আমার সামনে দিয়েই তো আসতে হবে, আমি চলে আসব।
ঠিক আছে। আলম আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
খানিক পর সালেক আর ফজলকে একসঙ্গে ফেরত আসতে দেখা গেল। সামান্য শীত আছে সকালের দিকে। ফজলের গায়ে একটা হালকা সামার কোট, মাথায় ক্রিকেট-ক্যাপ। এখন এটার খুব চল হয়েছে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ছেলে-বুড়ো সবাই মাথায় টুপি লাগায়। আগে গ্রামে যেমন ছিল মাথাল, অনেকটা সেরকম। মাথায় টুপি আর কোটে ফজলের বয়সটা অনেক কমেছে। সদ্য কানাডা-ফেরত, শরীরে ফর্সাটে ভাবটা এখনো লেগে আছে। আর কদিন থাকলেই গ্রামের ছাপ ধরবে। রং ক্রমশ তামাটে হতে থাকবে। বেরোবে আসল বাঙালি চেহারা।
ক্লাবঘরের তালা খোলে আবু সালেক। ঝাড়ন দিয়ে টেবিল-চেয়ারে ঝাপটা কষায়। একটা মাত্র বেঞ্চ, এটাকেও পরিচ্ছন্ন করে।
দক্ষিণের জানালা দুটো খুলে দেয়। পুবের জানালাও খোলে। ফজল জানালা দিয়ে সার দিয়ে লাগানো মাস দেড়েকের বেড়ে ওঠা ধানের চারা দেখতে থাকে। বাতাস খেলে – এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে… গুনগুন করতে থাকে…
পাখাটা চালিয়ে দেয় সালেক। ঘরের বদ্ধ বাতাসটা কাটুক।
আমি চেম্বারে একটু ঢুঁ মেরে আসি বলে সালেক বেরিয়ে যায়।
ক্লাবঘরের কামরাটা বেশ লম্বাটে। ফজল পায়চারি শুরু করে। বাইরে রাস্তায় হাঁটতে পারে না। সুরকি-ঢাকা রাস্তায় ট্রাক চলে। লাল হয়ে যায় দুপাশ। দশ বছর ধরে দেখছে রাস্তাটার কপালে পিচের দেখা মিলছে না।
এই সময় আলম ঢোকে। হাতে এক কাপ চা, আর কাগজ-মোড়া একটা ক্রিমক্র্যাকার বিস্কুট। এটা ফজলের জন্যে রোজকার বরাদ্দ হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় অবশ্য ওরা চপ-পেঁয়াজু খাওয়াতে চায়, ফজলের পেটে সইবে না বলে সে জোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। অগত্যা সেই একই ট্রেডমার্ক চা আর বিস্কুট!
আলম টেবিলের ওপর চা-বিস্কুট রেখে বেঞ্চে বসে পড়ে।
তোমার দোকান যে খালি পড়ে থাকল?
থাক। সবাই অপেক্ষা করবে।
বলো কি! কিছু খোয়া যাবে না?
না।
স্ট্রেঞ্জ! সালেকও দেখি চেম্বার খোলা রেখে বেরিয়ে যায়!
আমাদের এখানে দুনম্বর কিছু ঘটে না।
তাই তো দেখাছি। লোকে একটা টাকা ঠিকই ফেরত দেয়।
রেজকির অভাব আছে, কিন্তু ইচ্ছা করে কখনো কেউ টাকা ফেরত না দেবার চিন্তা করে না।
আমার খুব ভালো লাগছে। তোমরা দেখছি ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডের ভ্যালুজ ধরে ফেলেছ!
না, আমাদের গ্রামটা আগে থেকেই এরকম ছিল। চুরি হতো গাছ থেকে লাউটা, পেঁপেটা…
সবই তো ভালো, কিন্তু তোমাদের রাস্তার দুরবস্থা কেন?
এই সময় আবু সালেকের প্রবেশ। আলমের পাশে বেঞ্চিতে বসে।
আমাদের রাস্তার জন্যে তো স্যাংশন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই সময় রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটল, তাই এটা অন্যদিকের রাস্তায় চলে গেল। ওটা গেল হরিশ্চকের দিকে। আমাদেরটা পড়ে রইল, জবাব দেয় সালেক।
সরকার-বদল হলো তো কী হলো, আগের সরকারের বরাদ্দ কাজ পরের সরকার করবে, এটাই তো স্বাভাবিক।
এটা কি আপনি আপনার কানাডা পেয়েছেন, ইয়ে ইন্ডিয়া হাঁ মেরি জান… গানের সুরে বলে আলম।
হুঁ, বুঝলাম।
রাস্তাটা পাকা হলেই গ্রামটা অন্যরকম হয়ে যাবে। এর মূল্য অনেক বেড়ে যাবে। এখানে ছোট ইন্ডাস্ট্রি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে, বলে ফজল।
খারাপ দিকও আছে। সঙ্গে সঙ্গে জায়গার দাম বেড়ে যাবে, বলে আলম।
তা বাড়বে। মান বাড়লে দামও বাড়বে। এটা তো একটা দিক, কিন্তু সামনে অনেক সম্ভাবনা খুলে যাবে, আমি এটা বলতে চাচ্ছি। তোমাদের কি কষ্ট হচ্ছে না, প্রতিনিয়ত ধুলো পান করতে? স্বাস্থ্যের জন্যেও তো এটা খারাপ।
ষোলো আনা খারাপ, বলে আলম।
যা-ই বলো, তোমাদের ক্লাবঘরের অবস্থানটা খুবই সুন্দর। একদিকে মোড়ের হইচই থেকে বেঁচেছ, আবার ক্লাবের পেছনে আর পাশে পাচ্ছ ধানক্ষেত। রাস্তা পাকা হয়ে গেলে ধানক্ষেত কিছু কমে যাবে। তোমাদের ক্লাবের অ্যাকটিভিস্ট কাউকে দেখছি না কেন?
সন্ধ্যার পর টিভির বদৌলতে ইয়াংরা সব বাড়িতে, বলে সালেক।
ক্লাবে একটা টিভি বসাও, বলে ফজল।
আমরা নতুন করে সাজাবার চেষ্টা করছি, টিভির টাকাও জোগাড় হয়ে গেছে। বলে আলম।
সালেক-আলম তোমরা পাসপোর্ট করো, বাংলাদেশ যেতে হবে তো! সরাসরি গিয়ে উঠবে আমার বাসায়। দেখো, আমার চার-চারটা ন্যাশনালিটি। জন্মেছি ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায়, সেই হিসেবে ইন্ডিয়ান। বাবার সঙ্গে গেলাম পূর্ববাংলা, হলাম পাকিস্তানি। পূর্ব বাংলা হলো বাংলাদেশ, হলাম বাংলাদেশি। এখন বারো বছর ধরে আছি কানাডায়, গ্রিন কার্ড হোল্ডার, হলাম কানাডিয়ান… মোট চারটে ন্যাশনালিটি। তার মধ্যে বর্তমান দুটি। ইন্ডিয়ান আর পাকিস্তানি নট… কানাডিয়ান আর বাংলাদেশি।
না, পাসপোর্ট করব এবার, বলে আলম। আমার চাচারা তো সব ওখানে। শুধু আমার বাবা যাননি।
আমারও দুবোনকে বাংলাদেশে বিয়ে দিয়েছি। একজন থাকে খুলনায় আরেকজন রাজশাহীতে। বয়ান করে সালেক। এখানে ভালো ছেলে পাওয়া যায় না। হাতে ভালো মেয়ে থাকলে বলো, বাংলাদেশে আমার পরিচিত বেশ কিছু ছেলে আছে। আমি প্রস্তাব দিলে না করবে না।
আপনাকে জানাব, বলে সালেক।
ওদের কথার মাঝে মাঝবয়সী এক লোক প্রবেশ করে।
মামা সালাম।
চেনে না ফজল। বলে, মামা হলাম কীভাবে?
আপনার মামাবাড়ি ঝামটে না?
হ্যাঁ।
আমি সিতারার ছেলে।
সিতারা। মানে জনামামার মেয়ে?
হ্যাঁ।
আরে সিতারা, আর তোমার খালা আনজু দেশ ছাড়ার আগে ওরাই তো ছিল আমার খেলার সাথি! তোমার নাম কী?
সিদ্দিক।
কী করছ?
ছোটখাটো একটা ব্যবসা আছে।
ভালো।
এই সময় আলম উঠল।
একটু দোকানে যাই, বলে বেরিয়ে যায়।
ওর খালি জায়গায় বসে পড়ে সিদ্দিক।
আচ্ছা সালেক, একটা টেবিলক্লথ দেখাও না, টেবিল-টপটা শ্রীহীন হয়ে রয়েছে। ক্লাবের অনেকগুলো জিনিস কেনা হবে, লিস্ট করা আছে, এটাও যোগ করে দেবো।
এই সময় সিদ্দিক টেবিলটা বিঘত ছড়িয়ে মাপ নিল, দৈর্ঘ্য-প্রস্থ।
মাপ নিয়ে কী করবে? জিজ্ঞেস করে সালেক।
দেখছি কতটা লম্বা, কতটা চওড়া।
মামা, আমার এখানে যে একদিন যেতে হয়? সিদ্দিক ফজলের উদ্দেশে বলে।
দেখি। কখন কী করা যায়।
আমি একটু আসি, বলে সিদ্দিক বেরিয়ে গেল।
এই সময় ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা শঙ্কর পাত্রের প্রবেশ। ত্রিশ-বত্রিশ বয়সের শঙ্করের চেহারায় একটা সারল্য আছে।
কী শঙ্কর? তোমার যে একেবারে দেখা নেই? বলে ফজল।
দাদা, একেবারে সময় করতে পারিনি, আলুর চাষ করেছি, আলু তোলা হচ্ছে, নিজে না থাকলে ফসল অনেক নষ্ট হয়…
ফলন কেমন হয়েছে?
ভালো।
তোমার কি জ্যোতি আলু?
হ্যাঁ।
সন্ধ্যায় আসছ তো, ক্লাবের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হবে।
আসব। আমি এখন চলি। শুধু আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
ঠিক আছে, যাও।
আধঘণ্টা যায়নি আবার সিদ্দিককে ঢুকতে দেখা গেল। হাতে তার কাগজে মোড়া একটা পোঁটলার মতো।
হাতে কী? প্রশ্ন ফজলের।
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সিদ্দিক মোড়কটা উন্মোচন করে। বেরিয়ে আসে মেরুন রঙের একটা টুকরো কাপড়। ঝাপটা দিয়ে সমান করে টেবিলের ওপর বিছিয়ে দেয়।
বাঃ, সুন্দর হয়ে গেল। মুখে হাসি ফজলের। এতো তাড়াতাড়ি পেলে কী করে?
এখানে তো কোনো কাপড়ের দোকান নেই।
রাজহাটি গিয়েছিলাম।
অদ্দুর!
একজনের বাইকে গেলাম, চট করে হয়ে গেল।
কত পড়ল?
বলা যাবে না।
ফজল পকেট থেকে একশ টাকার একটা নোট বের করে।
না মামা, এটা আমার পক্ষ থেকে আপনার অনারে ক্লাবকে উপহার…
তাহলে ঠিক আছে, টাকাটা পকেটে রাখতে রাখতে বলে ফজল।
সে কিছুটা আনমনা হয়ে ওঠে। মনে পড়ে বাল্যের দিনগুলোর কথা। সিতারা ছিল তার সমবয়সী। পাতলা শার্প চেহারা, নাকে ছিল একটা নাকছাবি। উজ্জ্বল বর্ণ, সপ্রতিভ দৃষ্টি। খুব বুদ্ধিমতী ছিল। সেই সিতারার তাদের গ্রামে বিয়ে হলো। জীবন কাটাল, তারপর চলে গেল পরপারে। এর মধ্যে একবারও দেখা হয়নি। তার ছোট বোনরা ছিল ঢাকায়, ওদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। অবশ্য ওরাও আজ বেঁচে নেই। কিন্তু ওদের পরিণত বয়সের অবয়ব চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সিতারা সেই দশ বছরের বালিকা রয়ে গেছে। ওর কথা মনে হলে বালিকা সিতারা ছাড়া অন্যকিছু কল্পনা করতে পারে না।
মামা, কদিন আছেন?
সিদ্দিকের প্রশ্নে সচেতন হয় ফজল।
পাঁচদিন তো কেটে গেল। আর দিন-পাঁচেক।
আমার বাসায় একদিন…
এখনি কথা দিচ্ছি না। অনেকগুলো কাজ রয়েছে। গ্রামটা একটু হদিস করি।
ঠিক আছে মামা, আমি যোগাযোগ করব… বলে সিদ্দিক বেরিয়ে যায়।
সিদ্দিক বেরিয়ে গেলে আবার অতীতচারী হয় ফজল। তার মন চলে যায় ঝামটিয়ায়। তার মামাবাড়ির দক্ষিণে বেবহা মাঠ। মাঝে তাদের নানাদের বাগান। বড় বাগানটা বেশ দূরে চারটে প্লটে ভাগ করা। তার নানার ভাগের বাগানের দক্ষিণে ছিল একটা হিজলগাছ। বড় পুকুরের ঢালে ছিল গাছটা। গ্রীষ্মের সকালে ফুটে থাকা হিজলের ফুলের গন্ধ তার খুব প্রিয় ছিল। সারাগাছ ভরা ফুলের ঝুরি ঝুলছে। এক সকালে সিতারা আর সে গিয়েছিল ফুল তুলতে। সিতারা একেবারে তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সুতোয় গাঁথল দুটো মালা। একটা ফজলকে দিলো।
এটা তোমার। আর বাকিটা দেবো মাকে।
মালা পেয়ে ফজল খুব খুশি।
সে রীতিমতো গলায় পরে ফেলে।
বাহ্, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, বলে সিতারা।
আবার মেয়েছেলে মনে হচ্ছে না তো! রসিকতা করে ফজল।
তুমি মেয়ে হলে আরো মানাত, রস করতে সিতারাও কম যায় না।
তারপর দুজন গলা ধরাধরি করে বাড়িতে ফেরে। এখনো পষ্ট দৃশ্যটা মনের মধ্যে ভাসে ফজলের।
আমি একটু চেম্বারে যাই, বলে সালেক।
ও হ্যাঁ, যাও। আমি ততক্ষণ তোমাদের বইয়ের কালেকশনটা দেখি।
সালেক বেরিয়ে গেলে ফজল একটা বইয়ের আলমারি খুলে বই দেখতে থাকে। সে খোঁজ করছে ভগিনী নিবেদিতার ওপর কোনো বই পাওয়া যায় কি না। এই মহিলার জীবনধারা তাকে আকৃষ্ট করে। হাতের কাছে কিছু পেলে চটজলদি সম্যক জ্ঞানলাভ হয়।
দু-দুটো আলমারি ঘেঁটে নিবেদিতার ওপর কোনো বই পেল না। অগত্যা খানাকুল বার্তা নামক অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকায় মনোনিবেশ করে।
একটার দিকে সালেক হাজির। চলুন, আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিই। আরে, একা যেতে পারব… আবার কষ্ট করবে কেন!
আর কদিনই বা আছেন। একটু সঙ্গলাভটা বাড়ল।
ঠিক আছে। চলো।
সালেক পাঠাগারে তালা লাগিয়ে দেয়। তাদের দেখে আলমও দোকান বন্ধ করে।
মোড়ে ঘণ্টা তিনেক আগে যেখানে ভরাট বাজার ছিল তা শূন্য। সবকিছু পরিষ্কার। কোনো ময়লা-আবর্জনা পড়ে নেই। ভালো লাগে ফজলের। রাজনৈতিক হানাহানি বাদে এমনিতে মানুষ অনেকটা এগিয়েছে। যেখানে মাছ বিক্রি হতো সেই জায়গাটা কিছুটা ভেজা। একটা অাঁশটে গন্ধ উঠছে ধূপের তাতে।
কয়েকশ গজ পর মাদ্রাসার দিকে যেতে মোড়ের পাশে একটা নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে। ওটা পার হলেই ফজলদের ভিটে মেহেদি-মহল্লা।
তোমরা এবার যাও।
না চলেন, ভিটে পর্যন্ত যাই।
ভিটে নয়, একেবারে বাড়িতে পৌঁছে দেয় তারা।
বিকেলে দেখা হবে, বলে সালেক।
ঠিক আছে।
ফজলের চার ভাগ্নে ভিটেয় থাকে। তিনজন করেছে পাকা ঘর। একজন এখনো কিছুই করেনি। জায়গাটা ফাঁকা পড়ে আছে।
ফজলের চোখে ভাসে এ-জায়গাটা তখনো এমনি খালি ছিল। দাদি পুঁইমাচা করে পুঁইগাছ লাগাত। মাঝে মাঝে শাক কাটত।
শীতকালে পুঁইফুল পাড়ত। খেতে খুব স্বাদ। পাকা বিচি হলে কট কট করত – নরমগুলো তেমন আওয়াজ করত না। এগুলো সবচেয়ে ভালো হতো বমলা শুঁটকি দিয়ে। বমলা শুঁটকি মনে হতেই সে নীরবে হাসে। বাংলাদেশে বমলা কেউ চিনবে না। ওখানে বলে লইট্টা শুঁটকি। চট্টগ্রামে ধরা পড়ে লইট্টা মাছ। তারপর শুঁটকি হয়ে সারা বাংলাদেশে বিচরণ।
দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে ফজল ভাগ্নেদের ছেলেমেয়েদের ডাক দেয়। কে কোন ক্লাসে পড়ে জেনে নেয়। মোটামুটি ওদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার রোজই চেষ্টা চালায়। বয়স্ক লোক মনে করে ওরা যেন দূরে দূরে না থাকে।
ওদের সঙ্গে আলাপকালে কে কোন ক্লাসে পড়ে যখন জানতে চায়, সে প্রায়ই খেয়াল করেছে তার ধারণার চেয়ে ওরা দু-ক্লাস ওপরে পড়ে।
ও একটু অবাক। এরা তবে কি খুব অল্প বয়সে লেখাপড়া শুরু করেছে? আবার যখন বয়স জিজ্ঞেস করে তখন দেখে পড়ার সঙ্গে বয়সের মিলটা ঠিক মিলে যাচ্ছে। বড় ভাগ্নের ছেলে গফুরকে সে মনে করেছিল ক্লাস সেভেন হবে, অথচ সে পড়ে নাইনে। দেখে মনে হলো সেভেন, পড়ে নাইনে। আবার বয়স চৌদ্দ, নাইনের জন্যে ঠিক আছে। এটা সে তার সবকটা ভাগনের ছেলেমেয়ের মধ্যেই দেখল। এটা কি এ-পরিবারের জেনেটিক চরিত্র? এক পরিবারে একরকম ধারা অস্বাভাবিক নয়। তাই বা হবে কী করে? ছেলেরা এক ধারার, তাদের স্ত্রীরা তো আর সেই ধারার নয়। তাহলে? প্রশ্নটা তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।
বিকেলে ক্লাবে যাওয়ার পথে মাদ্রাসার রাস্তার মোড়ে দুটি ছেলেকে ডাংগুলি খেলতে দেখল। ওদের বয়স কত হবে দশ-বারো, ভাবে ফজল।
ডাক দেয়।
তোমরা একটু শোন?
ছেলে দুটি এগিয়ে আসে।
তোমাদের মধ্যে কে ভালো খেলো?
ও ভালো খেলে, একটি ছেলে অন্যটির দিকে আঙুল তোলে।
ইস্, আমারই তো তোমাদের সঙ্গে খেলতে ইচ্ছা করছে! জানো, আমিও কড়ে-ড্যাং ভালো খেলতাম। তোমরা কি একই ক্লাসে পড়ো?
হ্যাঁ।
ফজল ভাবে ওদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ক্লাস ফোর বা ফাইভ। সে জিজ্ঞেস করেই বসে, তোমরা কোন ক্লাসে পড়ো?
ক্লাস সেভেন।
সেভেন!
অবাক হলো ফজল। সব ক্ষেত্রেই তার আন্দাজ অকৃতকার্য হচ্ছে।
তোমাদের আর খেলার সাথিরা কোথায়?
ওরা আর একটু পরই এসে যাবে।
যাও। খেল গে, বলে ফজল রাস্তা ধরে। মাথায় প্রশ্নটা সমানে জাল বুনে চলে। চেহারা দেখে বয়স বলতে পারা তার একটা ভালো গুণ মনে করে সে বেশ গর্ববোধ করত, কিন্তু এখানে তার ধারণা প্রতিবার তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।
আলমের দোকান খোলা। তবে তাকে দেখা গেল না। সালেকের চেম্বারে সালেক উপস্থিত। সে যেতেই উঠে পড়ে।
চলুন, ক্লাবঘরে যাই।
ঘরে প্রবেশ করে দুটো বড় পাটি মেলে সালেক।
পাটি মেলছ যে?
ইয়াংদের সব আসতে বলেছি, ওরা একটু পরই এসে যাবে। ক্লাবটাকে আবার সচল করতে হবে।
ভালো। ইয়ুথ রিং ক্লাব… ওদেরই তো দরকার।
দেখতে দেখতে প্রায় ত্রিশজনের মতো যুবক হাজির।
সালেক ক্লাবের সম্পাদক হিসেবে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে প্রায় মিনিট কুড়ির মতো একটা যুক্তিপূর্ণ ভাষণ দিলো। সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ প্রশ্ন করল। জবাব দিলো সালেক। আর যারা আসতে পারেনি তাদের কাছে গ্রামের সব পাড়ায় সিদ্ধান্তগুলো পৌঁছে দিতে বলল।
সন্ধ্যার অন্ধকার নামছে বাইরে।
ফাল্গুনের হাওয়া এখনো তেমন করে ছাড়েনি। ছেলেরা বেরিয়ে গেলে ফজল বলে, সুন্দর বক্তৃতা দিলে। আমি তো এতো ভালো বক্তৃতা দিতে পারতাম না।
না, এ আর কী, সাধারণ কথা… তুমি বেশ গুছিয়ে বলতে পারো। দেখা যাক, বক্তৃতার ফল কী হয়।
আশা করি কিছুটা হবে। দেখা যাক। আমি একটু চেম্বারে যাই… এর মধ্যে আলম এসে পড়বে। অন্যরাও আসবে।
তাদের কথা শেষ হবার আগেই আলমের প্রবেশ।
কি, মিটিং হলো?
হ্যাঁ।
কাজ হবে বলে মনে হয়?
দেখা যাক। সবাই তো উৎসাহ দেখালো।
কিছুটা হবে, বলে ফজল। সালেক এত সুন্দর একটা উজ্জীবনমূলক বক্তৃতা দিলো যে, আমি ইমপ্রেসড।
ফজলভাই, একটা কথা – বলে আলম।
কী?
কাল দুপুরে আমার ওখানে খাবেন।
ঠিক আছে।
আর বিকেলে আমার ওখানে চায়ের নিমন্ত্রণ রইল। ওর ওখান থেকে রেস্ট নিয়ে বেরিয়েই পাবেন আমাদের ঘর। পড়বে রাস্তায়।
তা-ও ঠিক আছে।
কদিনই-বা আছেন। এলেন দশ বছর পর। আবার কবে আসবেন তার ঠিক কী, বলে আলম।
ঠিক আছে। ক্লাবটা জমিয়ে তোল, আমার পক্ষে যতোটা সম্ভব আমি চেষ্টা করব সাহয্য করতে।
পরদিন দুপুর ১টায় আলমের বাইকে চেপে ফজল রওনা দিলো। অল্প রাস্তা। বাঁশঝাড়ের মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় আলমের প্রতিক্রিয়া হয়। ছোটবেলা থেকে সে এই এঁদো ডোবা আর অন্ধকার করে থাকা বাঁশঝাড় পছন্দ করে না। এমন নয় যে, ভূতের ভয়! ও-ভয়টা তার কোনো কালে ছিল না। তবে গা ছমছম করা ব্যাপারটা ছিল। বরং সেটা সে উপভোগ করত। সে ভাবে, নিজের গ্রাম, অথচ এমনটা হলো কেন? প্রায়ই তার মনে হয় ছোটবেলায় বছরে ন-মাস মামাবাড়িতে থাকায় ওই জায়গাটার খোলামেলা দিগন্ত তাকে খুব প্রভাবিত করেছে। তাই এই ঘুপচি, অন্ধকার তার মনে বিরূপতা জাগায়।
আলমদের পৈতৃক বাড়িটি পাকা এবং দোতলা। এর সামনে সে করেছে আরো এক দোতলা বাড়ি। গ্রামের তুলনায় বেশ পরিকল্পিত। সামনে অঙ্গনটা বাঁধানো। এবং মাঝে একটা ফজলি আমের কলমের গাছ…। মুকুল শেষে গুটি ধরার পর্যায়ে। গাছভরা মৌমাছি। আলম সব খুঁটিনাটি বয়ান করতে থাকে। এই সময় তার ছেলেমেয়েরা স্কুলফেরতা। বড়টি ছেলে, ছোটটি মেয়ে।
এই তোমাদের চাচা, কানাডায় থাকেন। আমাদের গ্রামের মানুষ। দশ বছর বয়সে এই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। প্রফেসর।
ছেলেমেয়ে দুটি বেশ সুন্দর। এই সময় ফজলের মাথায় যে চিন্তাটা খুরপাক খাচ্ছিল তা পরীক্ষার জন্যে বলল, আলম, আমি বলব, তোমার ছেলে কোন ক্লাসে পড়ে?
বলুন।
ক্লাস নাইন।
ঠিক।
আর মেয়ে, ক্লাস ফোর।
তাও ঠিক।
কী করে বললেন?
চেহারা দেখে। নিজের তো একসময় এরকম একটা বয়স ছিল।
তা তো বটেই।
আলমের স্ত্রী তখনো রান্নাঘরে। ব্যস্ত। আলাপ হলো একেবারে খাবার টেবিলে। ভারি চেহারার খোলা মনের মানুষ। নানা উপাচার করেছেন। ফজল খুব খুশি।
অনেকদিন পর দিশি সব খাবার একসঙ্গে পেলাম। ভাবি, আপনি নিশ্চয় সকাল থেকে খাটছেন?
না না, আপনি কতদিন পর দেশে এলেন… আপনাদের কথা কত শুনেছি… আপনাদের পরিবার তো আমাদের গ্রামের গর্ব…
আরে না, না, পৃথিবীতে সব মানুষের প্রয়োজন আছে। শ্রোতা ছাড়া গায়কের কী দাম!
তবু, শ্রোতা তো আর গায়কের ভূমিকা নিতে পারে না।
যুক্তিটা বেশ জোরাল মনে হলো ফজলের। সে এই আলোচনায় আর রইল না। প্রসঙ্গ পালটায়।
আলম, তোমরা কোন ফ্লোরে থাকো?
আমরা নিচে থাকি।
দোতলা?
বোনরা বা অতিথি এলে থাকে। আপনি এবার এলে আমাদের এখানে থাকবেন।
খাওয়া-দাওয়া শেষে সব ঘুরিয়ে দেখায় আলম।
প্রাচীরঘেরা অঙ্গন। বেশ পরিচ্ছন্ন করে রাখা। ভালো লাগে ফজলের।
দেখা শেষে বলে, ঠিক আছে, নেক্সট বার এসে তোমার এখানে অতিথি।
মোস্ট ওয়েলকাম ফজলভাই।
আলম ফজলকে নিয় বেডরুমে ঢোকে। বড় খাট। বিছানায় বসে আলমের ছেলেমেয়ে ক্রিকেট খেলা দেখছে। তাদের সরিয়ে দিয়ে আলম ফজলকে বিশ্রাম নিতে বলে। ফজল বাচ্চাদের পাশে বসতে বলে নিজেও খেলা দেখায় শরিক হয়।
সাড়ে চারটের দিকে আলম ফজলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তার আগে কয়েকটা গ্রুপ ছবি তোলা হয়।
সালেক ভিটের নিচে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইল। ফজলকে স্বাগত জানায়। আলম রওনা হয় কর্মক্ষেত্রে।
সালেকদের ভিটেটা বেশ উঁচু। দোতলা মাটির বাড়ি।
আরে তোমাদের বাড়িটা দেখি একেবারে আমাদের বাড়ির মতো। ১৯৭৮-এর বানে ওটা বসে গেল। ওই বাড়িতে দশ বছর কাটিয়ে গেছি। আজ কোনো চিহ্ন নেই।
দোতলায় থাকে সালেক।
সিঁড়িটা বেশ অপ্রশস্ত এবং অন্ধকার। সালেক মোবাইলের বাতি ধরে। ফজল উপরে উঠে খুব চমৎকৃত হয়। কামরাটার চারদিকে জানালা। খুব আলো-বাতাস খেলে।
সালেকের স্ত্রী আর ছেলেমেয়ের সঙ্গে আলাপ শেষে আলমের ঘরে যা করেছিল সেই পরীক্ষায় লাগে ফজল। বলে, সালেক তোমার ছেলেমেয়েদের কে কোন ক্লাসে পড়ে বলি?
বলুন!
ছেলে পড়ে সেভেনে।
সালেক চুপ করে থাকে।
আর মেয়ে ক্লাস থ্রি।
সালেক গম্ভীরভাবে বলে, কাছাকাছি গেছেন…
মানে?
ছেলে পড়ে ক্লাস নাইনে। আর মেয়ে ক্লাস ফাইভ।
তাই!
হ্যাঁ। আপনি কি ধরে ওদের ক্লাসের কথা ধারণা করলেন?
কেন, গ্রোথ!
ওদের কি বেশি ছোট মনে হয়।
হ্যাঁ।
আমরা স্বামী-স্ত্রী দীর্ঘ চেহারার নই, তাই।
সেটা একটা ফ্যাক্টর বটে!
এর মধ্যে ছেলেমেয়েরা নিচ থেকে বিকেলের নাস্তা নিয়ে হাজির।
মুড়ি, কলা, বিস্কুট, চপ কি নেই! এতকিছু করেছ কেন? মাত্র আলমের বাসায় একপেট খেয়েছি।
তা বললে হয়! আবার কবে আসবেন…
আচ্ছা সালেক ওবেসিটি এখন সারা পৃথিবীতে বেড়েছে, কিন্তু সবলসিংহপুরে বড়-ছোট কাউকে তেমন দেখলাম না।
ওবেসিটি সারা পৃথিবীতে এখন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। ওটার মূল কারণ জাঙ্ক ফুড আর সফট ড্রিঙ্ক। তাছাড়া অতিভোজন তো আছেই। আমাদের গ্রামে ওটা না দেখতে পাওয়ারই কথা।
তুমি কি ইনকাম ট্যাক্স দাও? সালেকের ম্লান হাসি। শুধু মাথা নাড়ে।
কথাটা বলে ফেলে ফজল ভেতরে ভেতরে লজ্জিত হয়। গ্রামের চিকিৎসক, বেশিরভাগই তো বিনা-ফির রোগী। প্রশ্নটা তার করা উচিত হয়নি।
জানো সালেক, বাচ্চাদের চেহারা দেখে বলে দিতে পারতাম সে কোন ক্লাসে পড়ে। আমাদের গ্রামে তা মিলছে না। শুধু একটি ক্ষেত্রে আমি নির্ভুল। ব্যাপারটা কী বলো তো?
আপনার কী মনে হয়?
আমার যা মনে হয় সেটা তো একটা ধারণা। আমি তোমার কাছ থেকে জানতে চাই। তুমি মানুষের শরীরতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ, তোমার ধারণা বিজ্ঞানসম্মত হবে। আমারটা তো শুধুই ধারণা।
আমি বুঝতে পারছি আপনি কী ধারণা করেছেন। সত্যি বলতে কী, আমরাই দোষী। আমাদের দেশ পৃথিবীতে তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি হলেও আমরা বেশিরভাগ লোক বাচ্চাদের কেয়ার নেওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছতে পারিনি। বলে থেমে যায় সালেক।
ফজলের মনে হলো, দেশ সে-অবস্থা অর্জন করতে না পারার জন্যে সালেক যেন নিজেকেই দায়ী মনে করছে। তাই সরাসরি উত্তরটা দিতে তার কুণ্ঠা।
এই সময় সালেক আবার বলে, আপনার ধারণাটা শুনি না!
না। তুমি বলো।
সত্যি বলতে কী, গ্রামের নববইভাগ ছেলেমেয়েই ম্যাল নিউট্রিশন… মানে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।
আমার আর কিছু বলার নেই, বলে ফজল।