ডাটাপ্যাক

ডাটাপ্যাক
মেসেঞ্জারে একজনের সাথে তুমুল ঝগড়া করছিলাম। ঝগড়া যখন তুঙ্গে, তখন হঠাৎ করেই আমার মেসেঞ্জারে কোনো মেসেজ আসছিলো না। কোনো প্রকার মেসেজ যাচ্ছিলোও না৷ আমার আত্মা বারবার আমার দেহ থেকে বের হতে চাইলো। নিশ্চয়ই আমার আইডি হ্যাক হয়েছে। কোন বান্ধবীর সাথে কি কি চ্যাট করেছি একে একে সব উদয় হতে লাগলো মনে৷ আর হাত পা অসাড় হয়ে আসতে লাগলো।
আমি ফেসবুকে গেলাম। তখন স্বস্তি ফিরে আসলো। কারণ আমার ফেসবুক সক্রিয় ছিলো। তখন ভাবলাম হয়তো আমার মেসেঞ্জারে প্রব্লেম। অনেক সময় তো এরকম হয়। একবার স্ট্যাটাস দিতে চাইলাম,”কার কার মেসেঞ্জারে সমস্যা হচ্ছে?” কিন্তু ঝগড়ার কথা মনে পড়ার সাথে সাথে পোস্ট দেওয়ার চিন্তা ভুলে গেলাম৷ দ্রুত অপেরা মিনি থেকে ফেসবুকে লগ ইন করলাম। ঝগড়ায় আমাকে জিততেই হবে।
এমন সময় সদ্য এসএসসি পাশ করা এক জুনিয়র মেসেজ দিয়ে বললো,”আপু আপনাদের ফিজিক্স বইয়ে মোট চ্যাপ্টার কয়টা?” আমি পরলাম মহাবিপদে। কোয়ারেন্টাইনে লাস্ট কবে বই ধরেছিলাম মনে নাই। কয়টা সাব্জেক্ট আছে তাই-ই ভুলে গেছি আর অধ্যায় কয়টা আছে সেটা কিভাবে বলবো! আমি বই খুঁজতে লাগলাম। বই আর পাই না। খাটের নীচে পর্যন্ত খোঁজা শেষ। কোথাও নাই৷ চট করে মাথায় আইডিয়া আসলো গুগল করলেই তো হয়ে যায়! আমি দ্রুত সার্চ বারে লিখলাম,”এইচএসসি পদার্থ বিজ্ঞান বইয়ে কয়টা অধ্যায়?” আমার গুগল সুন্দর করে বললো,”You’re in offline. Try again after sometime.” অথচ আমার ডাটা অন করা৷ এখনও প্রায় ১ জিবির মতো আছে। বুঝলাম কোনো গন্ডগোল হয়েছে। জুনিয়রকে আন্দাজে ঢিল দিয়ে বললাম আমাদের তো ১১ টা অধ্যায়। তোমাদের নতুন বই বের হলে অধ্যায় কম বেশি হতে পারে। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার পেটে পেটে এত বুদ্ধি দেখে নিজেই নিজেকে বাহ্বা দিতে লাগলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মেসেঞ্জারে গেলাম। কোনো মেসেজ আসে নাই। তারমানে আমার মেসেঞ্জারে প্রব্লেম এখনও আছে। ফেসবুক চলছে ঠিকভাবেই। একটু পর খেয়াল করলাম আমার মেসেঞ্জার, মেসেঞ্জার লাইট, হোয়াটসঅ্যাপ, প্লেস্টোর, গুগুল কোনোটাই কাজ করছে না। ফোন বারবার রিস্টার্ট দিলাম। তারপরেও কাজ করছে না। ইন্সটাগ্রামে লগ ইন করা যায়। তাহলে এই অ্যাপগুলোতে কি সমস্যা হচ্ছে! গার্লস গ্রুপে পোস্ট দিলাম,”গতকাল থেকে মেসেঞ্জার, মেসেঞ্জার লাইট, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল, প্লেস্টোর কোনোটাই কাজ করছে না। ফোন বারবার রিস্টার্ট দেওয়ার পরেও না। কি করলে ঠিক হবে?” অনেকক্ষণ পর একটা কমেন্ট আসলো,”আপু প্লেস্টোর থেকে সব অ্যাপ আপডেট দেন। ঠিক হয়ে যাবে। ” এই কমেন্ট দেখে হাসবো না-কি কাঁদবো বুঝতে পারলাম না। মনে মনে বললাম বড়ই উপকার হইলো৷
সমাধান না পেয়ে নিজের আইডিতে সেইম কথা লিখে ডে দিলাম। একেকজন একেক সমাধান দিচ্ছে। যে যেটা বলছে সেটাই করছি। ডাটা ক্লিয়ার করতে বললো একজন। করলাম। তারপরেও কাজ হচ্ছে না। একজন বললো আপু ফোন রিসেট দেন। ঠিক হয়ে যাবে। তবে ফোন মেমোরিতে থাকা সব চলে যাবে। পরে কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবেন না। দোষের কথা উঠতেই আমার এই কথাটা খুব মনে ধরলো। সাত -পাঁচ না ভেবে দ্রুত ফোন রিসেট মারলাম। আলহামদুলিল্লাহ! আমার থেকে সব ইম্পর্ট্যান্ট ডকুমেন্টস চলে গেছে। একটা ফোন নাম্বারও নাই। কতগুলা ক্রাশের নাম্বার কত কষ্টে জোগাড় করেছিলাম! একটাও নাই। বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠলো।
আগে তো অন্তত ফেসবুক চলছিলো” এখন তো তাও চলছে না। ফেসবুক আপডেট দিতে বলছে। কিন্তু আপডেট কিভাবে দিব! আমার তো প্লেস্টোরই কাজ করছে না! রিসেট দেওয়ার পরেও কোনোকিছু ঠিক হয় নাই। কাউকে যে কল দিবো সেই উপায়ও নাই। একটা নাম্বার পর্যন্ত নাই। আমি রাগে, দুঃখে নিজের চুল ছিড়ছি। উপায়ান্তর না পেয়ে এই রাতের বেলাতেই পাশের বাসায় গেলাম তাদের মোবাইলটা একটু কিছুক্ষণের জন্য নিতে। সেখানে দেখি সিরিয়াস মুহুর্ত। ওরা আজ রাতে ঢাকা চলে যাবে। সবকিছু গোছাচ্ছে। সবাই ব্যস্ত। এই মুহুর্তে কিভাবে মোবাইল চাই! তারপরেও লজ্জা শরম বাদ দিয়ে মোবাইল চেয়ে বসলাম। মেসেঞ্জারে ঢুকে একটা ডে দিলাম,”ফোন রিসেট দেওয়ায় আমার সব নাম্বার ডিলিট হয়ে গেছে। আমার পরিচিতদের আমার এয়ারটেল নাম্বারে মেসেজ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।” বাসায় চলে আসলাম। অনেকক্ষণ যাবৎ কারোর মেসেজের আশায় বসে আছি। কেউ মেসেজ দিচ্ছে না। তখন মনে পড়লো,”শিট! আমার এয়ারটেল নাম্বার তো কেউ জানেই না!”
হতাশ হয়ে বসে আছি। এসময় আমার গ্রামীণে একটা মেসেজ আসলো,”আমি ‘ক’। কি হয়েছে ফোনের?” আমার সমস্ত রাগ এখন এই লোকের উপর পরলো। ইচ্ছামত মনে যা আসলো বলে গেলাম। বললাম আমি জানি না কি হয়েছে। আপনি আমার ফোন ঠিক করে দেন। দিতে না পারলে খবর আছে। এক্ষুনি দিবেন। ” সে আমাকে বললো,”আচ্ছা আমি মেসেঞ্জারে ছবি পাঠিয়েছি কিছু আর বলে দিয়েছি কিভাবে ঠিক করতে হবে।” আমি কি এখন হাসবো? আমার তো মেসেঞ্জারই চলছে না! তাহলে বুঝবো কিভাবে আজব!
কারোর উপর ভরসা না করে নিজেই বারবার চেষ্টা করছি কিভাবে ঠিক হয় ফোন। ফোন সম্পর্কে আমি অনভিজ্ঞ। তারপরেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ ভাবলাম গ্রামীণ থেকে ডাটা অন করি। যদিও গ্রামীণে একদম নেট পায় না। আমি জানালা দিয়ে ফোন বাইরে রেখে নেট আনার চেষ্টা করাচ্ছি। ঠিক তখনই জানালা দিয়ে আমার ফোন বাইরের জঙ্গলের ভেতর পড়ে গেলো। আর ষোলকলা পূর্ণ হলো। এত রাতে বাইরে বের হলে আম্মু আমার গাল আর আস্ত রাখবেন না। তারপরেও অনেক কাহিনী করে চুপিচুপি বের হলাম। কাঁদছি আর ফোন খুঁজছি। পেয়ে গেলাম। ফোন যদিও আর অক্ষত নাই।
গ্রামীণ থেকে নেট অন করার পর দেখলাম সব কাজ করছে। ফেসবুক আপডেট দিলাম। মেসেঞ্জার ইন্সটল করলাম। যদিও অনেক সময় লেগেছে নেট প্রব্লেমের জন্য৷ তারপর মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখলাম একেক জন একেক জনের ফোন নাম্বার দিয়ে রেখেছে। দিয়ে বলছে নাম্বার সেভ করতে। নাইস না? এয়ারটেলে এখনও ৯০০ এম্বির মতো আছে। আমি এয়ারটেল থেকে ডাটা অন করলাম৷ আবার আগের সমস্যা দেখা দিলো। ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম চলছে কিন্তু আর কোনো অ্যাপ চলছে না। তখন হঠাৎ মনে পড়লো,”ওহ্ আচ্ছা!! আমি না এয়ারটেল থেকে ১২ টাকায় ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রাম প্যাক কিনেছিলাম!”
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত