আমি পিয়াস, সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া বোকাসোকা চেহারার একটা ছেলে। বাবা নেই আর মা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা। ২০ বছরের তাগড়া যুবক হওয়ার পরেও কিন্তু মা আমাকে এখনো খোকা বলেই ডাকে। হোস্টেলের সবার চোখ যখন ৬ইঞ্চির মোবাইলে আটকে থাকতো তখন আমার চোখ শরৎচন্দ্র চট্যোপাধ্যায়ের পরিণীতা, রবি ঠাকুরের মাস্টার মশাই, আর সমরেশ মজুমদারের কালবেলা, উত্তরাধিকার আর সাতকাহনে পড়ে থাকতো। আমার রুমমেট বড় ভাই আবীর মজার চলে সব সময় আমায় বলতেন,
– এইসব ছাইপাঁশ বই পড়ে কোন লাভ নেই। আজকাল মেয়েরা কবিতা শুনে প্রেমে পড়েনা। মেয়ে পটাতে হলে আমার মত হতে হবে। দেখো না প্রতি মাসে মাসে প্রেমিকা পাল্টায়। আমি কোন উত্তর না দিয়ে শুধু মুচকি হাসতাম আর তারপর আবার সুনীলের কবিতার ভিতর ডুব দিতাম সেদিন ক্লাসে স্যার কেমেষ্ট্রির খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় পড়াচ্ছিলেন। পিছনের সারিতে বসা কিছু ছেলের সেখানে মন ছিলো না ওদের মন ছিলো সামনের সারিতে বসা ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে শ্রাবণীর ব্রা’র ফিতার দিকে। স্যার যখন বললো,
– সবাই বুঝতে পেরেছো? আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
— স্যার, আকাশ তো নীল আর নীল আকাশে সাদা মেঘ ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু সেই সাদা মেঘের আড়াল থেকে মাঝে মাঝে ভুল করে কিন্তু গোলাপি মেঘ উঁকি দেয়। এটা কিন্তু একদম ঠিক না স্যার আমার কথা শুনে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলেন৷ তারপর জোরে ধমক দিয়ে বললেন,
– এইখানে তুমি নীল আকাশ, সাদা মেঘ গোলাপি মেঘ কোথায় পেলে? তুমি গাঁজা খেয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়েছো না কি? যাও এই মুহূর্তে ক্লাস থেকে বের হয়ে যাও আমি কিছু না বলে চুপচাপ ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর কে যেন আমায় পিছন থেকে ডাকলো। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি শ্রাবণী৷ খোলা চুল কপালে কালো টিপ, নীল জামা আর সাদা ওড়নাতে খুব অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগছে শ্রাবণীকে। শ্রাবণী মিষ্টি হেসে বললো,
– আসলে সাদা মেঘের কোন দোষছিলো না। ভুল করে সে একটু সরে গিয়েছিলো তাই গোলাপি মেঘ উঁকি দিয়েছিলো। সাদা মেঘ আর কখনো ভুল করবে না আমি কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেলাম। শ্রাবণী পেছন থেকে বেশ কয়েকবার ডাকলো কিন্তু আমি ততক্ষণে হুমায়ূন আহমদের হিমুতে ডুব দিয়েছি প্রিয়তা তাড়াহুড়ো করে বাস থেকে নামতে গিয়ে বাসের সিটের হাতলে লেগে জামার পেটের দিকের অনেকটা অংশ ছিড়ে গেছে। প্রিয়তা হাতদিয়ে কোন রকমে ছেড়া জামাটা ঢেকে রেখেছে। মাঝ বয়সী ২টা লোক চোখঘুরিয়ে খুব চেষ্টা করছে ছেড়া জামার ফাঁক দিয়ে প্রিয়তার ফর্সা পেটটা দেখার জন্য। প্রিয়তা সেটা বুঝতে পেরেছে কিন্তু এই মুহুর্তে কি করবে সেটা বুঝতে পারছে না। লজ্জায় প্রিয়তা মাথা নিচু করে রেখেছে। পিছন থেকে একটা ছেলে ওর শার্টটা খুলে প্রিয়তাকে দিয়ে বললো,
– নেন আপি, এটা পেঁচিয়ে নেন। প্রিয়তা অবাক হয়ে বললো,
— কিন্তু আপনি তো খালি গা.. ছেলেটা মুচকি হেসে বললো,
– কয়েকমাস ধরে কত কষ্ট করে জিম করছি। লোকদের দেখাতে হবে না আমার জিম করা বডিটা। তারপর ছেলেটা সেই দুইটা লোকের কাছে গিয়ে বললো,
-আংকেল, দেখেন তো আমার বডিটা কিছুটা সালমান খানের মত না? পেঠটা দেখেন আংকেল থ্রি প্যাক হয়ে গেছে। সিক্স প্যাক হতে আর বেশি দেরি নেই লোক গুলো বিরক্ত হয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। তখন ছেলেটা বললো,
–আজ এই সমস্যার সম্মুখীন আপনার মেয়েও হতে পারতো। আর আপনাদের মত কিছু বিশিষ্ট ভদ্রলোক সেই সমস্যার ফায়দা খুঁজতো আবীর ভাইয়া আজ পার্টি দিলেন। হোস্টেলে খুব হইচই হচ্ছে সাথে ডিজে গান। পার্টি দেওয়ার মুল কারণ হলো আবীর ভাইয়া তিন তিনটা মেয়ের সাথে রুম ডেট করেছে। সেই উপলক্ষে পার্টি। হঠাৎ আবীর ভাই আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,
– কি কবি, শ্রাবণী তো তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। মাঝে মাঝে তো দেখি ক্যাম্পাসের এক কোণায় বসে তোমায় ও নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। তা শুধু কি নিজ হাতে রান্না করা খাবারি খাওয়ায় না কি সাথে আরো অনেক কিছু খেতে দেয়?
আমি আবীর ভাইয়ার কথার ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরেছিলাম। তাই মুচকি হেসে ভাইয়াকে বললাম,
— পৃথিবীতে এখনো কিছু মেয়ে আছে যার কবিতা শুনে এখনো মুগ্ধ হয় আবীর ভাই আমার কথা না বুঝেই অন্য বন্ধুদের সাথে ডিজে গানের সাথে নাচতে লাগলো একটু পর একটা অচেনা নাম্বার থেকে আমার ফোন আসলো। আমি ফোন রিসিভ করতেই ওপর প্রান্ত থেকে একজন বললো,
– হ্যালো, তুমি কি আবীরের রুমমেট পিয়াস? আমি বললাম,
— জ্বি, কিন্তু আপনি কে? উনি উত্তর দিলেন,
– আমি আবীরের মামা বলছি। তোমার নাম্বারটা অনেক আগে আবীর একবার দিয়েছিলো। তুমি একটা কাজ করতে পারবে? আবীরকে সাথে নিয়ে এখনিই আবীরদের বাসায় এসে পড়ো। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে বললাম,
— মামা, সব কিছু ঠিক আছে তো? উনি এবার কেঁদে দিয়ে বললেন,
– আবীরের বোনকে কে বা কারা ধর্ষণ করার পর মেরে ফেলেছে। আমি আবীরকে কথাটা বলার সাহস পাচ্ছি না। তুমি যেভাবেই হোক আবীরকে নিয়ে এখনি আসো লাশ দাফন করার পর আমি আবীর ভাইয়ার পাশে বসে উনার হাতটা ধরে বললাম,
— ভাইয়া, মাঝে মাঝে একজনের ভুলের শাস্তি অন্য জন পায়। আমি কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম করলাম, কয়জনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলাম এর মাঝে কিন্তু কোন বীরত্ব নেই। বরং আমি একটা মেয়েকে কয়টা কয়টা উপায়ে ভালোবাসলাম সেটার মাঝেই বীরত্ব আছে। আপনি অন্যের বোনকে যে চোখে দেখেছেন বিশ্বাস করেন অন্যজনও ঠিক একই চোখে আপনার বোনকে দেখেছিলো। খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি আপনার বোনের এই রকম ভাবে মৃত্যুর জন্য আপনি দায়ী। আপনার ভুলের প্রতিদান আপনার বোন দিলো আজ অনেকদিন পর বাড়ি ফিরলাম। ছোট বোন প্রিয়তার হাতে সমরেশ মজুমদারের কালপুরুষ বইটা হাতে দিতেই ছোটবোন বললো,
– ভাইয়া তকে তো বলা হয় নি, বাসে যে কি রকম লজ্জাজনক বিপদে পড়েছিলাম..
গল্পের বিষয়:
গল্প