মাছ

মাছ
টুটুল সাহেব বাজার থেকে আসতে দেরি করছে দেখে তার স্ত্রী লুবনা বিরক্ত হয়ে আছে। আজ শুক্রবার ছুটির দিন একটু তারাতাড়ি রান্না করে সব কাজ গুছিয়ে ফেলতে হবে, বিকেল বেলা লুবনা তার মা’কে দেখতে মায়ের বাসায় যাবে। অনেক ক্ষন পর টুটুল বসায় আসলো লুবনা রাগে গজগজ করতে করতে বাজার বের করছে, সব বাজারের সাথে ছোট এক প্যাকেট মাছ! লুবনা রুই মাছের প্যাকেট ঢেলে অবাক হয়ে গেলো মাছের মাথা হাফ!মাছের মাথা দেখেই বুঝতে পারছে এখানে পুরো মাছ টা নাই। লুবনা টুলল’কে ডাক দেয় আর জানতে চায় মাছের বাকি অংশ কোথায়?
টুটুল বলে আজ তিনি রুই মাছ হাফ কিনেছেন, লুবনা চট করে রেগে যায় এটা তার স্বাভাব। আর আজ টুটুল বাজারে এত দেরি করায় এমনিতেই রেগে ছিলো, লুবনা টুটুলের দিকে তাকিয়ে বলল হাফ মাছ কিনেছো মানে কি? তুমি কি ফকির মিসকিন হয়ে গেছো নাকি? যথেষ্ট বাজার করেছো, টাকা যদি শেষ হয়ে গিয়ে থাকে চলে আসবে হাফ রুই মাছ কিনবে কেন?
টুটুল সাহেব মন খারাপ করে রুই মাছ হাফ কেনার কাহিনি বলা শুরু করলো- লুবনা করোনা পরিস্থিতি আমরা কতটুকু মোকাবিলা করতে পারছি বা পারি নাই সেটা বিতর্কিত বিষয়, তা নিয়ে কিছু বলবো না। তবে এই করোনা পরিস্থিতির কারণে কত মানুষ যে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পঙ্গু হয়ে গেছে তার হিসাবও কি জানি আমরা?কত মানুষের চাকরি চলে গেছে, আবার চাকরি আছে বেতন হাফ, তাদের জীবন -যাপনের মান কোথায় নেমে গেছে তা আমরা এখনও জানি না।
শোন মুরগি আর টুকটাক সব কেনাকাটা শেষ করে মাছের বাজারে ঢুকলাম চিংড়ি মাছ কেনার সময়ই একজন ভদ্রলোক কে দেখেছি রুই মাছ ওলার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রুই মাছের দাম করছে,তার লোকটা আরো কয়েকটা মাছের দোকানে ঘুরে আবার রুই মাছ ওলার দোকানে এসে বলল, ভাই ছোট রুই মাছটাই দেন, আর বিশ টাকা কম রাখেন, ততক্ষনে আমিও রুই মাছের দোকানে ওনার পেছনে দাঁড়িয়ে আছি।তখন মাছ ওলা ওনাকে বলল, তখনই বললাম ছোট মাছ টা নিয়ে যান তখন তো নিলেন না খালি দাম কমান, আপনে যাওনের পরে আরো বিশ টাকা বেশি দিয়া আরেক স্যার মাছ টা নিয়া গেলো। আমি দেখলাম লোকটার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে সে মাছ ওলা কে বলল, বড় রুই মাছ টার দাম কত? রুই মাছ ওলা বলল ভাই দাম বইলা কি লাভ আপনে তো নিবেন না। তাও কই একদাম নয়শো পঞ্চাশ টাকা তিন কেজির বেশি হবে।
লোকটার মুখ মলিন হয়ে গেছে উনি তার পরে-ও বললেন ভাই মাছ কেটে ভগ করে বিক্রি হয় না? তখন মাছ ওলা বলল না ভাই এই মাছ আস্ত কেনার অনেক লোক আছে। তখন আমি পেছন থেকে বললাম মাছ টা কাটো মাছ ওলা হেসে বলল, দেখছেন কইতে না কইতে মাছ বেঁচা হইয়া গেলো।লোকটা চলে যেতে নিলে আমি বললাম, ভাই সাব এই মাছ আপনি আর আমি মিলে কিনলাম আপনি যান কোথায়? বিশ্বাস করবে না লুবনা আমি ওনার চোখে এমন কিছু একটা দেখেছি যা আমার চোখে পানি এনে দিয়েছে। তার পর উনি আর আমি সেই মাছ ভাগ করে নিয়ে এলাম।উনি শুধু আমাকে বলল ভাইজান আর বলেন না, আমার ছেলেটা রুই মাছের পেটি খুব পছন্দ করে খায়।
আজ আমি বাজারে আসার সময় বার বার বলে দিয়েছে বাবা আজ বাজার থেকে রুই মাছ আনবে। আগে এই রকম রুই মাছ আস্ত কিনতাম। করোনায় দুই মাস বেতন হয় নাই এখন অফিস হয় তবে বেতন হাফ, কি যে হবে সামনে।এখন করোনার চাইতে সংসার চালানোর চিন্তাই বেশি হয়। টুটুল সাহেব লুবনা কে বলল,এখন আমাকে আরো বকো কেমন। ততক্ষণে লুবনার চোখে পানি চলে এসেছে লুবনা বলল ওনাকে মাছটা দিয়ে দিতে, তখন টুটুল বলল কি বলো এসব? তাতে করে উনি মাছটা তো নিতোই না এবং অপমানিত হতো। মাছের প্যাকেট ঢালো দেখো আর পেটির পিছ মাত্র দুইটা! লুবনা এত সুন্দর একটা হাসি দিলো আবার প্রাণটা ভরে গেলো।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত