“রেস্টুরেন্টে সব মেয়েই ছেলেদের টাকায় খায়- একথা সত্যি নয়। তুমি টাকা খাওয়া মেয়ের সাথে প্রেম করলে বাকিদের কি দোষ? “— নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে এই স্ট্যাটাসে চোখ আটকে গেলো শাহেদের। মনে পড়ে গেলো ফেলে আসা দিনগুলো আর প্রাক্তনের কথা। শহরে নতুন রেস্টুরেন্ট খুলছে — শাহেদ খাওয়াও। অমুক রেস্টুরেন্টে ক্র্যান্চি ট্যাকো আসছে—চলো শাহেদ খাইতে যাই। বুমার্সের নতুন আউটলেট খুলছে —শাহেদ চলো চেক আউট করে আসি ! অমুক রেস্টুরেন্ট জায়গা চেঞ্জ করছে— শাহেদ খাওয়াবা না?
এদিকে শাহেদের অবস্থা প্রায় যায়যায়। পকেটে যা টাকা নিয়ে বের হয় সব তো শেষই, উল্টা বন্ধুদেরকে ফোন দিয়ে বিকাশ, নগদ,রকেটে টাকা ধার নিতে হয়। একদিন শাহেদ মেজাজ খারাপ করে বলেই ফেললো, “মাঝেমাঝে তোমার পেটটা দেখতে ইচ্ছা করে।” অনি দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো, “কালকে Takeout এ চলো তাহলে।” শাহেদ চিৎকার করে বললো, ” তোমার পেট না, পেটের মধ্যে ব্ল্যাকহোলটা দেখতে ইচ্ছা করে। এত খাবার কই যায় সেটা জানতে ইচ্ছা করে। একটা ডাইনোসরের সাথে প্রেম করলাম ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর আর অনির সাথে কখনো কথা হয় নি।
অথচ শাহেদ চেয়েছিলো একটি সাধারণ প্রেম। যেখানে বাদাম হাতে রাস্তার পর রাস্তা ভেজা মাটির ঘ্রাণ নিতে নিতে হাঁটা যাবে, ‘উবার কিংবা পাঠাও’ এর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। অস্তিত্ব থাকবে না Burger King, Nando’s কিংবা Domino’s Pizza ‘ র । বরং থাকবে পরিচিত ফুচকাওয়ালার হাসি যেখানে প্রতিদিন রচিত হয় অর্ধশত প্রেমের গল্প, কিংবা থাকবে কলাভর্তার একটুখানি ঝাল আর আচারের টকমিষ্টি কথা। অতীত আর কল্পনায় কিচ্ছুক্ষণ মাখামাখি করে বাস্তবে ফিরে এলো শাহেদ। স্ট্যাটাস দেখার পর শাহেদের মনে হলো মানবতা হারিয়ে যায়নি। আজও বেঁচে আছে বেড়ার ফাঁকে, পাখির ঠোঁটে কিংবা অন্য রমনীর ধমনীতে। মেয়েটাকে ভয়ে ভয়ে নক দিলো শাহেদ। টানা চোখ, চিকিমিকি পোশাক, আর প্রোফাইলে দেশ বিদেশ ভ্রমণের ছবি—সব মিলিয়ে এক আভিজাত্যের প্রতীক। শাহেদের চমৎকার লাগলো। ব্যক্তিত্ব আর আভিজাত্যের মিশ্রণ আজকাল দুর্লভ।
মেয়েটার নাম মালিহা। ঢাকার অভিজাত কলেজে পড়ে, বয়সে দুই এক বছরের ছোটো হবে। এই মেয়ের শাহেদের মতো সাধারণ ছেলেকে পাত্তা দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই ; অথচ এত নিরহংকার মেয়ে আগে কখনো দেখেইনি শাহেদ। মালিহার বিনয়, গোছানো কথা, দ্রুত রিপ্লাই–নিমিষেই শাহেদের মনে জায়গা করে নিলো।
বেশ কয়েকদিন কথাবার্তার পর এক অপরের প্রতি ভালো যখন সুনিশ্চিত, শাহেদ ঠিক করলো এখন দেখা করার কথা বলাই যায়। এতদিন যাকে নিয়ে জল্পনা কল্পনা, এবার তার চোখে চোখ রেখে কথা বলার পালা।
— মালিহা, আমার মনে হয় আমাদের দেখা করা উচিত।
—হুম।ফুচকা খাবো আমরা প্রথমদিন, ঠিক আছে? আর আমি বিল দিবো কিন্তু! নাহয় দেখা করবো না।
আহ ফুচকা!কাঙ্খিত প্রেমিকাকেই পেয়েছে শাহেদ। মাঝেমাঝে জীবনানন্দের মতো বলতে ইচ্ছে করে, ‘এতদিন কোথায় ছিলে?’ দিন তারিখ ঠিক হয়। কিছুটা সন্ত্রস্ত মন নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে শাহেদ। শরতের আকাশে সেদিন হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। দূর থেকে শাহেদ দেখলো একটা অপ্সরী দৌড়ে আসছে। মনে হচ্ছে এইমাত্র স্রেফ স্বর্গ থেকে নেমেছে। এত সুন্দর মেয়ে হয় নাকি!
দই ফুচকা অর্ডার হলো, রিনিঝিনি কন্ঠে হাসছে মালিহা, শাহেদ মুগ্ধ হয়ে দেখছে। এবার বিল দেওয়ার পালা। শাহেদ পকেটে হাত দেওয়ার আগেই মালিহা এক হাজার টাকার নোট দিয়ে বললো ‘চাচা, দাম রাখেন।” “এত বড় নোট ভাঙতি নাই”, চাচা বিরক্তমুখে উত্তর দিলো। শাহেদ বললো, ” আরে আমি দিচ্ছি! রাখো তো তুমি। ” শাহেদ মনে মনে বললো, ” কি বড়লোকের মেয়ে বাবা! ফুচকা খেতেই একহাজার টাকা নিয়ে আসলো।” এর কয়েকদিন পর গেলো বার্গারহাউজে। বিল আসলো প্রায় আড়াইহাজার টাকা। মালিহা বললো, “এখানে দেখি এটিএম বুথ নাই। আমি বাইরে থেকে টাকা তুলে আনি? ব্যাগে রাখলে টাকা হারাই, তাই রাখি না। ” শাহেদ ভদ্রতা করে বললো, ” না এখন আবার বাইরে যাবা নাকি,আমি দিচ্ছি।”
এরপর যতবার শাহেদ আর মালিহার দেখা হয়েছে ততবার মালিহার কাছে হয় একহাজার টাকার নোট—যার ভাঙতি দিতে পারে না দোকানদার, কিংবা এটিএম কার্ড—যার আশেপাশে বুথ পাওয়া যায় না। একদিন শাহেদ অনেক ভাঙতি নিয়ে গেলো। নিয়মমাফিক মালিহা যখন বললো, ‘ভাঙতি নাই, এখন কি করবো?’ শাহেদ বললো, “এই নাও ভাঙতি। এখন থেকে তোমার জন্য অনেক ভাঙতি রাখবো।” এরপর থেকে মালিহা আর কখনো শাহেদের সাথে যোগাযোগ করেনি।
গল্পের বিষয়:
গল্প