বউয়ের সাথে আমার তীব্র ঝগড়া চলছে। অবশ্য আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আর বউ ননস্টপ ঝাড়ি দিতেছে । এটাকে ঝগড়া বলে কি না তা আমি জানি না। বউ অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
__তুমি কী করে পারলে এইটা করতে? আমি মলিন মুখে বললাম-
__বিশ্বাস করো হয়ে গেছে, ইচ্ছে করে করিনি। কান ধরে বলছি আর জীবনেও হবে না সোনাবউ।” বউ কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো-
__আমি ভাবতেই পারছি না আমার স্বামী এমন একটা কাজ করতে পারে।
__স্যরি সোনাবউ।
__চুপ করো, এসব আদুরে নামে ডাকবা না আমাকে।
__কান ধরে উঠবোস করবো?
__চুপ একদম! তুমি তো জানোই যে আমি এসব পছন্দ করি না। আমার স্বামী কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে এটা তো আমি ভাবতেই পারি না।
__বলছি তো আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। বউ রাগে কেঁদেই ফেললো। কাঁদতে কাঁদতে বললো-
__প্রমিস করেছিলাম কখনও রাগ করে বাপেরবাড়ি যাবো না তাই এখনো দাঁড়িয়ে আছি।
__প্লিজ এসব বলো না! এমনিতেই আমি মরমে মরে যাচ্ছি।
বউ বেশ শব্দ করেই কাঁদতে শুরু করলো। আমি অসহায় চোখে আসামির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ রুমের ভেতরে আমার বন্ধু রনি ঢুকলো। সে রূপাকে এমন করে কাঁদতে দেখে হয়তো হতভম্ব হয়ে গেল। অবাক চোখে তাকিয়ে সে বলল-
__কী হয়েছে ভাবী? কাঁদছো কেন? স্যরি বিনাঅনুমতিতে প্রবেশের জন্য। রূপা তার কথায় কর্ণপাত না করে কেঁদেই
চলেছে। কোনো ভাবেই আমি কাঁন্না থামাতে পারছি না। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না যে, আমি কী বলবো! রনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
__তুই তো বল কী হয়েছে? এমন করে ভাবী কাঁদছে কেন?” আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো দাঁড়িয়েই রইলাম।
রনি রূপার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল-
__প্লিজ ভাবী বলো! টেনশন হচ্ছে তো! তার মুখ দেখেও মনে হচ্ছে তার টেনশন হচ্ছে। বউ কাঁন্না থামিয়ে বললো-
__আমি বলতে পারব না। যা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি কখনও তাই হয়েছে। যে এসব করেছে তার থেকেই শোনো।
বউ আবার কাঁন্না জুড়ে দিলো। আমি করুণ চোখে রনির দিকে তাকালাম। বুঝতে চাচ্ছি আমি এখন বলতে পারবো না। শেষে বউ কাঁন্না থামিয়ে বললো-
__তোমার আলাভোলা বন্ধু একটা মেয়ের পোস্টে লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছে। বউয়ের কথা শুনে রনি থ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়ল। তারপর অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
__ভাবী তুমি এই সামান্য কারণে এমন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদছো? বউ ঝাঁজালো স্বরে বললো-
__এটাকে তোমার সামান্য কারণ মনে হচ্ছে? ‘লাভ’ মানে কী জানো তুমি?”
__ভালোবাসা।
__রিয়্যাক্ট মানে কী?
__প্রতিক্রিয়া।
__তাহলে লাভ রিয়্যাক্ট দেয়া মানে হলো ভালোবাসার প্রতিক্রিয়া দেয়া। ওরে আল্লাহ গো বলে রূপা কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়লো। মেঝেতে রূপাকে বসতে দেখে রনি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। আমি ধীর পায়ে রূপার কাছে এগিয়ে এসে বললাম-
__সোনাবউ তুমি এমন করে কাঁদলে আমার কেমন লাগে বলো? বউ ঝাঁজালো স্বরে বলে উঠল-
__ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েকে লাভ রিয়্যাক্ট দেবার সময় এসব মনে ছিল না?
__মেয়েটার কথাগুলো বাস্তব ছিল তাই লাভ রিয়্যাক্ট দিয়ে ফেলেছি। যদি জানতাম তুমি এটা অপছন্দ করো তাহলে আমি কখনোই এটা করতাম না। স্যরি।
__আমার পছন্দ অপছন্দ তোমার জানা উচিত ছিল।
__তুমি তো কখনও এসব নিষেধ করোনি, তাহলে জানবো কী করে?”
__আগে তো লাভ রিয়্যাক্ট এর মিনিং খতিয়ে দেখিনি। তাই তো বলি লাভ রিয়্যাক্ট নিয়ে ব্রেকআপ কেন হয়। বলে আবার কাঁন্না জুড়ে দিল। আমি অসহায় চোখে তাকিয়ে বললাম-
__বলছি তো আর জীবনেও এমন হবে না, এই কান ধরে বলছি।
__তুমি ঘরে বউ রেখে। ওরে আল্লাহ গো! বউ কেঁদেই চলেছে। রনি আমাকে টেনে নিয়ে রূপার থেকে একটু দূরে দাঁড়াল।রনি আমাকে আস্তে করে বললো-
__তা কাকে লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছেন জনাব? আমি ঝাঁজালো স্বরে বললাম-
__এঞ্জেলা অনামিকাকে।
__ওহ আল্লাহ!
__এখন বুঝতে পারছিস তো যে, তুই আমার কী সর্বনাশ করেছিস? কল করে বললি রিয়্যাক্ট দিতে। এখন সামলা তুই।
__ভাবীকে তো লজ্জায় বলতেও পারব না যে, ওটা আমার ফেইক আইডি। আর এখন বললে তো সে বিশ্বাসও করবে না।
__সব দোষ তোর। কী দরকার ছিল মেয়ের নামের আইডি খোলার? কী মরতে যে তোর কথা শুনে লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছি তা আল্লাহই জানেন!
__টেনশন নিস না, আমি ভাবীকে পটিয়ে ফেলছি।
__এই এই হালা কি বললি তুই আমার বউকে পটাবি কেন?
__আরেহ বাবাহ পটিয়ে তাকে বুঝাব যে ওটা আসলে আমার আইডি। তুই শান্ত হ ভাই! তোর বউ তোরই থাকবে।
__কিচ্ছু বুঝানোর জন্য পটাতে হবে না। আমার বউ রাগ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। একটু পরেই সে নরমাল হয়ে যাবে।
__আচ্ছা পটালাম না।
__হুম , আমি আস্তে করে বললাম বুঝাতে গেলে বাঁশ খাবি দেখ ট্রাই করে । হঠাৎ রনি জোরে জোরে আমাকে বললো-
__তুই আসলেই বড়সড় একটা অপরাধ করেছিস। ঠিকই তো, ঘরে ভাবীকে রেখে এসব করে তুই ঠিক করিসনি। ভাবী কত কষ্ট পেয়েছে দেখ! আমি রেগে উঠে বললাম-
__এসব এর মানে? এই এই তুই কী বুঝাতে চাইছিস?
__লাভ রিয়্যাক্ট বুঝাতে চেয়েছি। বউকে সামলা এখন।
__কী এক বিপদে পড়েছি আল্লাহ্!আমারে উঠায় নাও প্লিজ! এদিকে বউ আবার কাঁদো কাঁদো স্বরে রনিকে বললো-
__তুমিই বলো, ঐ মেয়েটা কী আমার চেয়েও সুন্দর? রনি না সূচক মাথা ঝাঁকিয়ে বললো-
__একদম না। আমার ভাবীর চেয়ে সে বেশি সুন্দর হতেই পারে না। বউ কাঁন্না থামিয়ে অবাক হবার ভান করে বললো-
__তুমি জানলে কীকরে? তুমি কী তাকে দেখেছো? রনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল-
__না তো।
__না দেখেই বলছো কীকরে?
__আমার ধারণা আমার ভাবির চেয়ে সে বেশি সুন্দর হতেই পারে না। বউ আবার বলল –
__ধারণা?
__না না, ধারণা না। এটা আমার বিশ্বাস। বউ রেগে উঠে বললো-
__পাম দিচ্ছো কেন? আমি তোমার ভাবী, গার্লফ্রেন্ড নই।
__এই না না, বিশ্বাস করো একদম পাম দিচ্ছি না।
__এতক্ষণ ধরে পাম দেয়ার পরে বলছো পাম দিচ্ছি না?
এবার রনি আমার দিকে অসহায়ার মতো তাকিয়ে রইল। দুই বন্ধু পাশাপাশি আসামির মতো দাঁড়িয়ে আছি। বুঝতে পারলাম দুই বন্ধু আজ মাইনকার চিপায় পইড়া গেছি !!
গল্পের বিষয়:
গল্প