দস্যি বউ

দস্যি বউ
অফিস থেকে ঘরে ফিরতেই বউ শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে বেডরুমের দিকে নিয়ে গেল। অন্য হাতে একটা খুন্তি! অন্যান্য দিন অফিস থেকে ফেরার পরে সাধারণত বউ শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে আদুরে গলায় কিছু রোমান্টিক কথাবার্তা বলে। কিন্তু আজকে পরিস্থিতি ভিন্ন। দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছে। কি হবে কিছু বলা যাচ্ছে না। জানামতে কোন অপরাধ করি নি! অফিসে থাকাকালে তার ফোন ধরেছি, মেসেজের রিপ্লাই দিয়েছি, সময় মত ঘরে ফিরেছি। বউ হইল হোমমিনিষ্টার! তার কথা না শুনে উপায় আছে? তার হঠাৎ এই রুদ্রমূর্তি ধারণের কারণ কি বুঝতে পারলাম না বললাম ‘কি হইছে বউ? এমনে শার্টের কলার ধরে টানতাছো ক্যা? কেউ দেইখা ফেললে?’
বউ ঝাঁজালো কণ্ঠে বলল ‘এখন তো শুধু শার্টের কলার ধরে টানছি, এরপরে কোথায় কোথায় লাথাইমু আর কোথায় ধরে টান দিমু, বুঝবার পারবি না!’ ‘লাথি দিবা ক্যান, ব্যাথা পামু না? তাছাড়া নিজের স্বামীরে কেউ লাথি দেয়? কি কও এগুলা, মাথা ঠিক আছে?’ ‘আমার মাথা ঠিকই আছে, যা যা জানতে চাইমু, সঠিক সঠিক জবাব দিবি। নইলে তোর একদিন আর আমার যে কয়েকদিন লাগে! তুই আমারে চিনোস না, আমার দাদা সেইকালের ডাকাত ছিল’ তার দাদা ডাকাত ছিল, এই কথা শুনেই গলা শুকিয়ে গেল। এত বড় একটা সত্য কথা বিয়ের সময়ে লুকিয়ে গেছে। ব্যাপারটা মানতে পারলাম না। সে এখনো শার্টের কলার ধরে আছে। এমনিতে সে আমার থেকে কয়েক ইঞ্চি খাটো। কিন্তু এখন শার্টের কলার ধরার কারণে আমিই তারচেয়ে খাটো হয়ে গেছি। সে কি জানতে চায়, কি জন্য তার মাথা গরম?
ভাবতে ভাবতে ঘামতে শুরু করেছি। আমি বললাম ‘শার্টের কলার তো ছাড় আর একগ্লাস পানি দেও, বড্ড তিয়াস লাগছে’ ‘তোর তিয়াসের আমি গুল্লি মারি! আগে তুই ক ছাবিনা কেডা?’ ছাবিনার কথা শুনে ঢোক গিললাম। মেয়েটা একসময় আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল। খুবই অল্প দিনের সম্পর্ক। মেয়েটা দেখতে সুন্দর ছিল। আমি ওর জন্য পাগল ছিলাম। সে সত্যি সত্যি একদিন আমাকে পাগল বলে, আমাকে ফাকি দিয়ে অন্যের গলায় ঝুলে পড়েছে। দীর্ঘদিন তার কথা ভুলে ছিলাম। বউরে এই মেয়ের কথা কখনো বলা হয় নি। মেয়েরা এমনিতে তার থেকে সুন্দর কোন মেয়েকে স্বামী বা বয়ফ্রেন্ডের পাশে মেনে নিতে পারে না। কাজেই তার সাথে বিয়ের আগে বলছিলাম, আমি পিওর সিঙ্গেল।’ তা এতদিন পরে হঠাৎ ছাবিনা কোথা থেকে আসল আর সেই বা কেমনে জানল বুঝতে পারছি না। আমার চুপ করা থাকা দেখে বউ কলার ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে বলল ‘শয়তানের বাচ্চা চুপ করে আছিস ক্যান?’ তার হ্যাচকা টানে ভাবনা থেকে সম্বিত ফিরে পেয়ে বাস্তবে আসলাম। মনে হচ্ছে আজকে আর রক্ষা নাই।
পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নয় নম্বর বিপদ সংকেত। সাম্ভব্য বিপদ থেকে বাচতে, কাদো কাদো হয়ে বললাম ‘কোন ছাবিনা, কিসের ছাবিনা? বিশ্বাষ কর বউ, আমি ছাবিনা নামের কাউরে চিনি না, আমি ক্যান আমার বাপেও চেনে না’ ‘তুই সত্যি কইরা বলবি, নাকি হেই কাম শুরু করমু?’ হেই কাম কি কাম বুঝতে পারলাম না। তবে বউ যখন বলছে তখন নিশ্চয়ই কঠিন খারাপ কোন কাজ হবে। তাছাড়া এই মূহুর্তে তার হাতে খুন্তি আছে। রেগে গিয়ে লাথি দিতে পারে, খুন্তি দিয়েও পেটাতে পারে। বউয়ের হাতে মাইর খাওয়ার কোন ইচ্ছা না। তাছাড়া বউরা যখন ভয় দেখায় তখন স্বামীদের উচিত ভয় পাওয়া। আমি ভয় পেয়ে বললাম ‘কইতাছি, তবুও হেই কাম কইরো না। ছাবিনা আমার সাথে কলেজে পড়ত, একটু পরিচিত ছিল আরকি!’
‘একটু পরিচিত নাকি আরো বেশি কিছু?’
‘সে আমার বান্ধবি ছিল!’
‘শুধু বান্ধবি না আরো বেশি কিছু?
‘কিছুদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল’
‘কিছুদিনের প্রেমের সম্পর্ক নাকি ‘তারে নিয়ে কয়েকদিন ঘুরতে গেছিলাম বিশ্বাষ কর আর কিছুই করি নাই’ ‘সত্যি কথা ক, নইলে কিন্তু’ ‘একদিন জোড় করে ধরে চুমু খাইছিলাম। বিশ্বাষ কর, তোমার পেট ছুইয়া কইতাছি আর কিচ্ছু করি নাই।’ বউ ‘শয়াতেনর বাচ্চা’ বলে জায়গামত একটা লাথি দিল। ভাগ্যিস লাথিটা ঠিকমত লাগে নাই। লাগলে যে কি হত? তারপরেও আমি সেইটার সুযোগ নিলাম। একটা খাইছি তো খাইছিই আর খাওয়া যাবে না। আমি সেখানে দু- হাত চেপে ‘ও মাগো, বাবা গো’ বলতে বলতে ফ্লোরে গড়াগড়ি করা শুরু করে দিলাম। তাতে বউয়ের মায়া হল না। সে ছেড়ে দিল ঠিকই কিন্তু কোন দরদ দেখাল না, অনুতপ্তও হল না।
সে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল আর টেবিলের উপর থেকে একটা কার্ড ছুড়ে মেরে বলল, ‘কয়েকদিন পরে হালখাতা, এ কয়েকদিন না খাইয়া থাকবি তারপরে জন্মের খাওয়া খাবি সেদিন’ কার্ডটা হাতে নিয়া দেখলাম, ছাবিনা ভ্যারাইটিজ ষ্টোর থেকে হালখাতার কার্ড পাঠানো হয়েছে। ঘটনা বুঝতে পারলাম না। বউয়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে তাকালাম বউ কাদতে কাদতে বলল, ‘আমি তোরে ভালো মনে করছিলাম। আজকে যখন এই হালখাতার দাওয়াতের কার্ডটা দিয়ে গেল, তখন ভাবলাম এমনি একটু তোর সাথে মজা করলে কেমন হয়। আর তুই কিনা আচ্ছা, সে কি দেখতে আমার থেকে সুন্দর ছিল?’ ‘হ্যা, মানে না, না’ বউ আমার বিকট শব্দে তর্জনগর্জন করে উঠল। ঘরের ভিতরে আপাততো ভাঙ্গচুর চলছে। সামনে কি হয় বলা যাচ্ছে না। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ পরে জানানো হবে…
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত