কর্পূর কিংবা জাদুকর

কর্পূর কিংবা জাদুকর
আমি তখন বাইশ পেরোনো যুবতী। গায়ের সাদা চামড়াকে যারা সৌন্দর্য ভাবে তাদের চোখে আমি মহা সুন্দরী কিংবা আগ বাড়িয়ে বলা স্বর্গের অপ্সরা৷ আর যারা সৌন্দর্য বলতে ভেতরের গুণকে বোঝে, বিদ্যাবুদ্ধির ঝাঁঝ কিংবা সংসার জ্ঞান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকাকে বোঝে তাদের চোখেও আমি তখন মহা সুন্দরী, মহা গুণের যুবতী।
আমি ছিলাম ফিজিক্সের ছাত্রী। ডিপার্টমেন্টের কেউ কখনো আমায় টপকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে এমন রেকর্ড নেই। গল্প, উপন্যাসের সুন্দরী মেয়েদের পড়ালেখায় রাজ্যের অনীহা থাকলেও আমি ছিলাম ঠিক উল্টো। দিনের বেশিরভাগ সময়টা রিডিং রুমে আর ড্রেস ডিজাইনিং এ কাটিয়ে দিতাম। বাবা, মা আমাকে দিয়েছিলেন প্রজাপতির মতো স্বাধীনতা, যেভাবে যেমন করে পারো উড়ে বেড়াও। আমিও উড়েছি বেশ। তবে থামতে হয়েছিল, খুব বিচ্ছিরি ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে থামতে হয়েছে আমায়। সে গল্প বলছি পরে।
হাতে আমার দুটো স্বপ্নের রাস্তা ছিল। হয় কোনো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে ক্যারিয়ার গড়া কিংবা নিজে বড়ো একখানা মডার্ন টেইলার্স খুলে বসা। বাবাকে একদিন খাবার টেবিলে ভাত বেড়ে দিতে দিতে বলেছিলাম, “আচ্ছা বাবা, আমি যদি টেইলার্স খুলে বসি তবে তুমি রাগ করবে”?। বাবা আমার প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছিল, ” আমি যদি আ্যকাউন্টেন্সের চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতা করি তবে তুমি কি রাগ করবে”?। বাবার ওমন প্রশ্নের মাঝে উত্তর খুঁজে পেয়ে আমি নির্ভার হয়েছিলাম। কেননা কৈফিয়ত এই একটা মানুষকেই দিতে হতো আমার।
ড্রেস ডিজাইনিং আর পদার্থে বুঁদ হয়ে থাকায় অনুভূতি বিবর্জিতা হয়ে গিয়েছিলাম কখন তা টেরই পাইনি যতক্ষণ কিনা আমার খুব কাছের বান্ধবী শিরিন প্রেমে পড়েনি।
শিরিনের সাথে ভর দুপুরে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে আঙুলের ডগায় তেঁতুলের আচার, সাদা কাগজে জাম ভর্তা নিয়ে খেতে খেতে বাড়ি ফেরা কিংবা রিক্সায় বসে দুজনে বাহারি রঙের আইসক্রিমের কাঠি চুষে তার প্রাণের দফারফা করতে করতে বাড়ি ফেরা আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। সেই অভ্যাসে ভাটা পড়ে শিরিনের নব্য প্রেমে। নব্য প্রেমে পড়া আমার বান্ধবী তখন আমাকে ফেলে রেখেই রিক্সার হুড তুলে বাড়ি ফিরত তার প্রেমিকের সঙ্গে। মানুষ সঙ্গ হারালে একা হয়ে যায়, সবকিছু বিস্বাদ লাগে। আমারও নিজেকে একলা লাগতে শুরু করলো তখন। ঠিক ঐ সময়টাতেই ম্যাজিশিয়ানের মতো আমার সামনে আসলো শাহেদ। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম শেরে-বাংলা স্টেডিয়ামে। ওখান থেকেই পরিচয় শাহেদের সাথে। প্রায় ছ’ফুট উচ্চতা, চওড়া বুক, থুতনির কাটা দাগ আর খোচাখোচা দাড়িতে শাহেদকে যেকোনো সিনেমার নায়ক বলে চালিয়ে দেয়া যেত তখন।
অন্য মেয়েরা যেখানে শাড়ি,সেলোয়ার-কামিজ পরে ক্লাসে আসত তখন আমি জিন্স আর শার্ট পরে তামাম দুনিয়ায় ঘুরতাম। আমার স্বভাবে তখন ডোন্ট কেয়ার ভাবটা একটু বেশিই চলে এসেছিল৷ অন্য মেয়ে হলে কোনো ছেলের সাথে প্রথম সাক্ষাতে নিশ্চয়ই তার বাবার নাম, বাড়ি নম্বর, মোবাইল নম্বর দিয়ে আসত না। তবে আমি দিয়ে এসেছিলাম। খেলা দেখে রিক্সায় ফেরার পথে নিজেকে সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন আমি তাকে এত কিছু জানিয়ে এলাম? উত্তর পাইনি। ভেবেছিলাম শাহেদ পর্ব খেলার মাঠেই চুকে গেছে। দিন তিনেক পর আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে শাহেদ আমার ক্যাম্পাসে এসে হাজির।
তপন স্যারের ক্লাস না থাকায় সেদিন বেরিয়ে পড়ি শাহেদের সঙ্গে৷ এক রিক্সায় চড়ে বসার পর কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছিল, স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না। কেমন আছেন? কোথা থেকে ফিরলেন? এমন কিছু গৎবাঁধা প্রশ্নের বাইরে গিয়ে পুরো পথ জুড়েই আমি ভৌতবিজ্ঞান, নভোমিতি, স্নায়ুবিজ্ঞানের মতো খটমটে বিষয়কে বেছে নিয়েছিলাম নিজেকে স্বাভাবিক করতে। আর কর্পোরেট অফিসার শাহেদ জুড়ে দিয়েছিল মার্কেট দখল নেবার কৌশল কেমন হয়, ক্লায়েন্টদের কীভাবে কনভিন্স করতে হয় সেসব কৌশলের কথা। রিক্সা থেকে নামার সময় শাহেদ নিচু গলায় বলেছিল, কাল থেকে ছাতা তুমি নিয়ে আসবে নাকি আমি? রোদে পুড়ে তোমার ফর্সা মুখ বেশ লাল হয়ে গেছে, সহ্য করার মতো না৷ আমি উত্তরে কেবল শাহেদের চোখের দিকে সাহস করে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম।
প্রচ্ছন্ন ভালো লাগার ব্যাপারে কেউ সাহস দেখিয়ে দু’কদম এগোলেই সর্বনাশ হয়। হয় প্রেম আসে নয়তো প্রত্যাখান, আমার ব্যাপারে প্রথমটা এলো। দিন যেতেই আমার আইসক্রিম খাবার সঙ্গী জুটে গেলে, আঙুলের ডগায় তেঁতুল এলো, ঝুম বর্ষায় রিক্সায় হুড তোলা শুরু হলো। রমনা, চিড়িয়াখানা, শেরে-বাংলা স্টেডিয়াম কিংবা সিনেমা হল, কিচ্ছু বাদ রাখলাম না দুজন। বাড়ি থেকে তখনও জানত না যে তাদের মেয়ে তাদের অগোচরে প্রেমিককে নিয়ে সারা শহর চষে বেড়ায় যে। বাবা টের পেলেন মাস তিনেক যেতেই। সেবার আমার পক্স হলো। চোখে, মুখে, নাকেসহ সারা শরীর পক্সের দখলে। মোবাইলটাও তখন নষ্ট হয়ে গেলো পানিতে পড়ে। শাহেদের সাথে যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন। প্রেম যখন নেশা হয় তখন প্রেমিক যুগল ঐ নেশা না করলে ছটফট করে, ডানা ঝাপটায়, অস্থির হয়ে পড়ে৷
নেশাখোরদের মতো যেকোনো মূল্যে নেশার বস্তুকে পেতে চায়। শাহেদের বেলায়ও তাই হলো। আমার পক্স তখনো বেশ কাঁচা, শাহেদ দুদিন আমার খোঁজ না পেয়ে ভোর সকালে আমাদের বাড়িতে এসে হাজির। আমি ঘুমে বিভোর, বাবা আমার ঘুম ভাঙিয়ে বললেন, শাহেদ নামে একটা ছেলে এসেছে, তোমার বন্ধুর মিথ্যে পরিচয় দিচ্ছে আমার কাছে। তাকে নাস্তা খেতে বলব, নাকি বিদায় করে দিব? আমি উত্তরে চোখ নামিয়ে, মাথা নিচু করে ধরা গলায় বলেছিলাম, শাহেদ খুব ভালো ছেলে বাবা। বাবা ফিরে গিয়ে শাহেদকে আমার ঘরে পাঠিয়েছিলেন সবটা বুঝতে পেরে। শাহেদ সেদিন ঘরে ঢুকেই চিলের মতো ছোঁ মেরে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলেছিল, এভাবে আর থাকতে পারব না মীরা , তোমাকে ছাড়া পাগল পাগল লেগেছে এই দুটো দিন৷ বিয়ে করবে আমায়?
আমি সাতপাঁচ না ভেবে, ঐ মুহূর্তের উষ্ণ বুকের কাছে নিজেকে দেউলিয়া করে শাহেদকে খুব শক্ত করে জাপ্টে ধরে বলেছিলাম, সামনের ডিসেম্বরেই তবে শীত জেঁকে বসার আগেই আমাদের বিয়েটা হয়েছিল, ডিপার্টমেন্টের সবাই আমাকে চিনত স্বপ্নবাজ তরুণী হিসেবে, ওরা কল্পনাই করতে পারেনি গ্রাজুয়েশন শেষ হবার আগে আমি বিয়ের পর্ব চুকিয়ে নেব। আমাদের দিন স্বপ্নের মতোই যাচ্ছিল। আগের মতোই দুজন রিক্সায় বসে লাল-নীলের আইসক্রিমের কাঠিটুকু পর্যন্ত চুষে খেতাম, একসাথে সারা শহর চষে বেড়াতাম, সকালে রেঁধে বেড়ে দুজন খেয়ে একসঙ্গে বেরিয়ে পড়তাম। দুজনের প্রেমে প্রথম বিরহ আসে আমার জিন্স আর শার্ট পরা নিয়ে। সকালে দুজন একসঙ্গে বের হচ্ছিলাম, শাহেদ যন্ত্রের গলায় বলল, মীরা! এই শার্ট, জিন্স খুলে সালোয়ার-কামিজ পরে এসো।
-কিন্তু কেন? বাজে দেখাচ্ছে? না, বাজে দেখার জন্য না। তোমার এখন বিয়ে হয়েছে, তুমি কারো স্ত্রী, এটা তোমার সঙ্গে যায় না এখন। সেদিন আমি জিদ দেখিয়ে ঐ জিন্স আর শার্ট পরেই গিয়েছিলাম ক্যাম্পাসে। এই নিয়েই শাহেদের সাথে প্রথম বিরহ, ওমন বিরহ আমি দীর্ঘস্থায়ী হতে দেইনি। একদিন পরই আমি শাহেদের কথামতো সালোয়ার-কামিজ পরে ক্যাম্পাসে যেতে শুরু করলাম। সংসার কিংবা সম্পর্ক বেঁচে থাকে আপসে, নিজের কাছেও খারাপ লাগছিল শাহেদের তৈরি করা ওমন দূরত্বে, তাই নিজের পছন্দের জিন্স, শার্ট খুলে আলমারিতে রেখে দেই।
আমাদের দুজনের বিবাহ উত্তর বিরহ আবার মিলনে ফিরে আসলো। ফাইনাল ইয়ারের শেষ দিকে শিরিনের বিচ্ছেদ হওয়ায় তাকে নিয়ে আবার আগের মতো ঘুরে বেড়াতে শুরু করলাম শাহেদের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায়। শিরিনি আমাকে দেখে হিংসা করে বলত, কি লাকি রে তুই! বিয়ের পরও ব্যাচেলরের মতো লাইফ লিড করছিস! আমি হাসতাম ওর ওমন মেকি হিংসা দেখে। এক ছুটির দিনের দুপুরে নানা পদের তরকারি টেবিলে সাজিয়ে খেতে বসেছি শাহেদের সাথে। শাহেদ খাবার মাঝে খুব কঠিন গলায় বলল, তোমার এই ঘোরাঘুরি বন্ধ করবে না? এখনো বাচ্চা নেই তুমি। তুমি এখন কারো ঘরের বউ, এমন করলে লোকে কী বলবে?
আমি সেদিন জবাব দিতে পারিনি। শুধু চোখের সামনে একটা সাদা প্রজাপতির ডানা কেটে ফেলার করুণ, মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে দেখতে ভাতের দলার সাথে আমার উড়নচণ্ডীপনা, কিশোরী মনকেও গিলে খেয়ে এক নিমিষে বড়ো হয়ে উঠেছিলাম। পানির গ্লাসের সবটুকু পানি এক নিশ্বাসে খেয়ে নিয়ে বলেছিলাম, আর এমন হবে না। আসলে আমারও তখন মনে হয়েছিল, অনেক তো হলো, এবার একটু থিতু হই, একটু স্থির হই, আইসক্রিম, তেঁতুল কিংবা চিড়িয়াখানার বুলবুলির ডাক না হয় প্রতিদিনের বদলে মাসে একবার শুনব, তবুও আমার ঘরে শান্তি থাকুক।
হ্যাঁ, তারপর বেশ শান্তিতেই ছিলাম।
দেখতে দেখতে আমার গ্রাজুয়েশন শেষ হয়ে গেলো। আসল ঝড়টা ঠিক তখনই এলো। আমি বাবার কাছ থেকে টাকা এনে শাহেদকে বললাম, আমাকে একটা ভালো জায়গা দেখে দোকান রেখে দাও, মডার্ন টেইলার্স করব। শাহেদ সেদিন রাজ্যের অবাক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, তোমার মাথা খারাপ হয়েছে?তুমি ঘরের বউ হয়ে দোকানদারি কেন করবে? আসলে ঐ মুহূর্তে আমার ভেতরটা নাড়া দিয়েছিল, ইগোতে লেগেছিল খুব। খুব বাকবিতণ্ডা হলো, দিন তিনেক কথা বন্ধ ছিল আমাদের। পরে নিজে বুঝে দেখলাম টেইলার্সটা হয়তো শাহেদের স্ট্যাটাসের সাথে যাচ্ছে না। পরে ঠিক করলাম মামার কলেজে পদার্থ পড়াব। হায়! বিধি বাম! শাহেদ আঙুল উঁচিয়ে জানিয়ে দিল, ঘরের বউ ঘরে থাকবে, বাইরে তার যাবার দরকার কী? টাকাপয়সার তো কোনো সমস্যা নেই। তবে কেন? তারপর কী হলো? উকিল সাহেব আমাকে প্রশ্ন করলেন।
-তারপর আর কি? আমি বাবার বাসায় চলে এলাম রাগ করে। আসলে নিজের একটা আইডেনটিটি তৈরি করা কিংবা নিজের একটা ক্যারিয়ার গড়া মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো, বহুদিনের পোষা ইচ্ছের মতো। শাহেদ ভাবল আমি কেবল টাকার জন্যই বাইরে কাজ করতে চাচ্ছিলাম। এইযে দেখুন শাহেদ পড়াশোনা শেষে ঠিকই নিজের ক্যারিয়ার গড়ে নিল, ওর স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষে নিজের একটা চাকরি হবে। হয়েছে তো। আমারটাও ঠিক তেমন। দেখুন মীরা ম্যাম, আমার কাছে মনে হয় সংসার মানেই আপস। আপনি সেটা করেছেন। তবে সংসার মানে প্রভুত্ব নয়, অন্যায় আবদার নয়। আমার কাছে শাহেদ সাহেবের ভালোবাসাটাই প্রশ্নবিদ্ধ। আপনার কাছে কী?
– দেখুন, আমার কাছে ভালোবাসা মানে ধারণ করা। একটা ছেলের চাপা অভিমান, বদমেজাজ কিংবা একটা মেয়ের জিন্স পরার অভ্যাস অথবা মেয়েটার ভেতরের বাচ্চামিটাকে নিজের ভেতরে ধারণ করে, তার ঐ সমস্ত বাজে জিনিসগুলোকে নিজের মনে করে আঁকড়ে ধরে তার হাত ধরে হাঁটাটাকেই ভালোবাসা মনে হয়। শাহেদ আমার শরীরে পড়া ধুলোর আস্তরণকে ভালোবেসেছিল, আমার ভেতরটাকে নয়। বিয়ের আগে তাকে আমার স্বপ্নের কথা বলতাম, আমার ক্যারিয়ারের কথা বলতাম। সে চুপচাপ মুগ্ধ হয়ে শুনে যেত, মানে তার মৌন সম্মতি ছিল, সে না করেনি। শাহেদ দেখত আমার ঘুরে বেড়ানোর স্বভাব আছে, আমার লাইফস্টাইল জানত, সে বিয়ের আগে সেগুলোকেই ভালোবাসত। বিয়ের পরে নয় কেন তবে? উকিল সাহেব ঠান্ডা গলায় বললেন, তবে ভুলটা শাহেদ সাহেবেরই ছিল?
– না, ওর একার ভুল না। অর্ধেক ওর বাকি অর্ধেক আমার। আসলে ভালোবাসা দেখে অন্ধ হয়ে আমি ওর কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলাম। আমার আসলে বিয়ের আগেই একটা বোঝাপড়ার দরকার ছিল। তাকে বলা উচিত ছিল আমিও কিছু করতে চাই, আমারও স্বপ্ন আছে ক্যারিয়ার নিয়ে। আর শাহেদ যে ভুলটা করেছে সেটা হচ্ছে ও আমাকে জানত, ও জানত আমি কেমন, আমি কী চাই, সেটা জেনেশুনে ও আমাকে বিয়ে করল। বিয়ের পরই সে আমাকে হুট করে ভুলে গেল! সে আমাকে আগেই বলে নিলে পারত সে কী চায় তার বউয়ের কাছ থেকে। উকিল সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, আপনার বাবা চান ডিভোর্স হয়ে যাক। আপনার কী মত?
– আমি শাহেদকে ভালোবাসি, শাহেদও হয়তো আজকাল আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে কিংবা করবে । আমার বাবার বাড়ি চলে আসা, নিজে কিছু করতে চাইবার দৃঢ়তা দেখে ও হয়তো ওর ভেতরে আমাকে ধারণ করতে শুরু করেছে কিংবা করবে। দেখি কী হয়, তবে আমার তরফ থেকে ডিভোর্স হচ্ছে না এটা নিশ্চিত থাকুন, আমি আমার নিজ হাতে গুছিয়ে আসা কিচেনটাকেও ভালোবাসি। উকিল সাহবে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আজ তবে যাই। আমার এখানে কখনো আসার প্রয়োজন না পড়ুক। তবে একটা ব্যাপার জানতে খুব আগ্রহ হচ্ছে। কারো সাথে নিজেকে জড়াবার আগে আমি কেমন, আমি কী চাই এটা আমরা আগেভাগে পরিষ্কার না করে কেন স্রেফ মোহ, মায়ার বলে সম্পর্কে জড়াই?
-কারণ জাদুকরেরা মায়াতে বশ করে, বাস্তবতা থেকে সহস্র মাইল দূরে ঠেলে নিয়ে যায় আমাদের। জাদুকর যখন তার মন্ত্র ভুলে যায় তখন আমাদের সামনে দেখা দেয় বাস্তবতার রোদে পোড়া ফকফকে আকাশ। অতঃপর পেছনের সব মায়া, মোহ কর্পূর হয়ে উড়ে যায়।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত