ফিডব্যাক

ফিডব্যাক
– কতদিন তোমাকে কাছে পাই না,বলো তো? আমারও তো ফিজিক্যাল নিড বলে কিছু আছে।
– কিন্ত পারিজা….
– কোনো কথা না শায়ন। তুমি আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরছো,ওকে?
– উমম,ঠিক আছে কিন্তু একটা আবদার আছে।
– কি আবদার?
– আই ওয়ান্ট সামথিং নিউ। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো আমার,
– কাম সুন হানি।
– লাভ ইউ বেবী।
– লাভ ইউ টু।
শায়নের সাথে কথা শেষ করে ডেস্ক টা গুছিয়ে তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। করিডোরের সামনে মামুন ভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল। মামুন ভাই আমার তাড়াহুড়ো করে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন,
– পারিজা,আজ তোমার ইভিনিং শিফট আছে?
– ছিল মামুন ভাই। কিন্তু আজ আমার একটা জরুরী কাজ পড়ে যাওয়ায় সুস্মিতা কে ম্যানেজ করে দিতে বলেছি। কেন? মামুন ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন,
– আমি আরো ভাবলাম তোমাকে দিয়ে আমার নাইট শিফট টা ম্যানেজ করিয়ে নিবো। আজ আবার তোমার ভাবীর বার্থডে।
– ওহ্ স্যরি। কিন্তু কাল তো আপনার অফ আছে। সারাদিন ই সেলিব্রেট করতে পারবেন।
– তা ঠিক আছে। আসলে আমাদের বিয়ের পর ওর প্রথম জন্মদিন এটা,তাই একটু স্পেশাল করতে চেয়েছিলাম আর কি। আচ্ছা আমি স্যারের সাথে কথা বলে দেখি।
– হ্যাঁ তাই ভাল হবে। আসছি তাহলে?
– আচ্ছা সাবধানে যেও।
গাড়িতে উঠে বসতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। এ.সি অফ করে দিয়ে গ্লাস খুলে দিলাম। আজ থেকে ৭ বছর আগে এমনই এক বৃষ্টির দিনে শায়নের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। তখন আমি পড়াশুনার পাশাপাশি শখের বশে একটা রেডিও স্টেশনে পার্ট টাইম আরজে হিসেবে জব করতাম।
শায়নও একই সেক্টরে ছিল। এমনিতে একে অপরকে চিনতাম ঠিকই,কিন্তু কখনো সরাসরি কথা হয় নি। তবে ভেলেন্টাইন’স ডে’র একটা স্পেশাল শো যেদিন আমরা দুজন মিলে হোস্ট করেছিলাম,সেদিন শুধু কথা না,জমিয়ে আড্ডাও হয়েছিল। শুরু টা হয়েছিল ফ্রেন্ডশিপ দিয়ে,কিন্তু শুধু এই ফ্রেন্ডশিপে আমরা বেশিদিন নিজেদের আটকে রাখতে পারি নি। শায়নের মধ্যে এমন কিছু ছিল যা প্রতিনিয়ত আমায় বিমোহিত করে তুলতো। ওর স্মার্টনেস, কথা বলার ধরণ,কণ্ঠের মাদকতা,সাবলীল উপস্থাপন সব কিছু এক অদৃশ্য মায়ায় আটকে ফেলতো আমায়। তাই শায়নের ভালবাসা উপেক্ষা করার ক্ষমতা আমার ছিল না। তিন বছর চুটিয়ে প্রেম করে অবশেষে দুই পরিবারের সম্মতি তে আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। এর মধ্যে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে শায়নের জব হয়ে যায়।
আর বিয়ের কিছুদিন পর আমিও একটা বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে ঢুকে যাই। দুজনের মোটা অংকের স্যালারি তে সংসার খুব ভাল চলছিলো। কিন্তু দু’বছর যেতে না যেতেই আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে। আমরা দুজন যে যার মত ব্যস্ত হয়ে পড়ি। নিজেদের একটা আলাদা দুনিয়া বানিয়ে নিই নিজেদের অজান্তেই। দুজন একই সংসারে একই ছাদের নিচে আছি অথচ কেউ কারো খোঁজ রাখছি না। সম্পর্ক টা স্বামী-স্ত্রী থেকে প্রতিবেশী তে রূপ নিলো এক সময়। রাতের বিশেষ মুহূর্তটুকু ছাড়া একে অপরের মুখোমুখিও হতে পারতাম না। ধীরে ধীরে এটাও কমতে শুরু করলো। আমার মিসক্যারেজের পর এই দূরত্ব টা কে আমি প্রথম উপলব্ধি করতে পারলাম। সেই সময়টায় আমি খুব করে শায়নের সংগ চাইতাম। কিন্তু পেতাম না।
অফিস টাইমের পরও কোনো না কোনো বাহানা দেখিয়ে শায়ন রাত করে বাড়ি ফিরতো। কোনো কোনো দিন আবার ফিরতোই না। এত বড় ফ্ল্যাটে আমি একা নিঃসঙ্গ সময় কাটাতাম। দম বন্ধ হয়ে আসতো আমার। বুঝতে পারছিলাম,শায়ন আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু এটা বুঝতে পারছিলাম না আমার কি করা উচিৎ। শায়নের মনোযোগ ফিরে পাওয়ার জন্য কম চেষ্টা করি নি আমি। তার পছন্দগুলো কে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করলাম। বউ এবং প্রেমিকা দুটো চরিত্রই নিজের মধ্যে প্রয়োজন অনুসারে ধারণ করে নিলাম। সে আমাকে যখন যেভাবে চাইতো সেভাবেই নিজেকে সঁপে দিতাম তার কাছে। কিন্তু তাতেও যখন কাজ হচ্ছিলো না তখন উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলাম। শুনেছি,ভালবাসার এপিঠে থাকে গুরুত্ব আর অন্যপিঠে অবহেলা।
এই দুটো দিয়েই শায়ন কে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছিলাম আমি। কিন্তু আমার সব পরীক্ষার ফলাফল ছিল শূন্য। আমার কেন জানি মনে হত,শায়ন অন্য কোথাও জড়িয়ে গেছে। আমার ধারনা ধীরে ধীরে সত্য হতে শুরু করলো যখন শায়নের শার্টে আমি লেডিস পারফিউমের স্মেল পেতাম। শার্টের কলারে লিপস্টিকের দাগ দেখতাম। খুব ভেঙে পড়েছিলাম তখন।আমার খুব জানতে ইচ্ছে করতো,কেন ও আমার সাথে এমন করলো? আমার ভালোবাসায় তো কোনো কৃপণতা ছিল না। বরং এই ভালবাসার জন্যে সময়ে অসময়ে আমি আমার আত্নসম্মান বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করি নি। বিনিময়ে কি আমার এটা পাওনা ছিল? হিসেব মিলাতে পারতাম না কিছুতেই। কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে একদিন সরাসরি শায়ন কে প্রশ্ন করে বসলাম। প্রতিউত্তরে শায়ন বলেছিল,
– এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করো না তো। সারাদিন পরিশ্রম করে বাসায় এসে এই ফালতু ঘ্যানঘ্যানানি শুনতে ভাল লাগে না। তাছাড়া তোমার কোনো অভাব তো আমি রাখছি না। শারীরিক এবং আর্থিক দুটো প্রয়োজন ই নিয়ম করে মিটিয়ে দিচ্ছি। এভাবেই ভাল থাকার চেষ্টা করো।
কিন্তু আমি সেভাবে ভাল থাকতে পারছিলাম না। ভালবাসার মানুষ টা কে একটু একটু করে এভাবে অন্যের হয়ে যেতে দেখছিলাম,অথচ মেনে নিতে পারছিলাম না। প্রায় প্রতিদিন ই এ নিয়ে অশান্তি শুরু হতে লাগলো। এক সময় জানতে পারলাম,শায়ন শুধু একজনের সাথে না,একাধিক মেয়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক রাখছে। আমি চাইলেই পারতাম তখন ওর সংসার ছেড়ে চলে যেতে। আরেকটা সম্পর্কে জড়ানোর মত যোগ্যতা আমার আছে। খুব সহজেই একটা পুরুষ কে পুরোপুরিভাবে ঘায়েল করার মত শারীরিক সৌন্দর্য্যতাও আছে। কিন্তু শায়ন কে বড্ড ভালবাসি যে! ছেড়ে যাই কি করে! অথচ সবকিছু জানার পর ওর প্রতি যে আমার কোনো ঘৃণা জন্মায় নি,তা কিন্তু নয়। তবে ঘৃণার চেয়ে ভালবাসার পরিমাণটাই বরাবরের মত বেশি ছিল। নিজের সাথে অনেক বোঝাপড়া করেছি কিন্তু সেই ভালোবাসার জোরে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারি নি কখনো। তাই এক সময় আমিও হাল ছেড়ে দিলাম।
তবে আজ যাচ্ছি নতুন করে সবকিছু শুরু করতে। শায়ন কে হয়তো আমি ওর পথ থেকে ফেরাতে পারবো না কারণ ও আমার আয়ত্তে নেই। কিন্তু আমি নিজে তো নিজের আয়ত্তে আছি। আমার ভাল থাকাটা এখনো আমার হাতেই আছে। তাছাড়া জীবন তো একটাই,এই এক জীবনে তো মানুষ সব দিক থেকে সুখী হতে পারে না। আমি না হয় এভাবেই বেঁচে থাকলাম। তবুও ভালবাসার মানুষ টা কে তো সাথে পেলাম। বাসায় এসে শায়নের জন্য আলাদা রান্না করে আর সময় নষ্ট করলাম না। আমি জানি,ও আজও বাইরে থেকে খেয়ে আসবে। তাই শাওয়ার নিয়ে স্লিভলেস ব্লাউজের সাথে সবুজ জর্জেটের শাড়ি টা পড়ে নিলাম। বেলী ফুলের মালা গুঁজে দিলাম চুলের খোঁপায়। গাঁঢ় করে কাজল টেনে নিলাম চোখে আর ঠোঁটে ন্যুড লিপস্টিক।
রাত ১০.৩০। হঠাৎ করে কলিংবেল বেজে উঠলো। পারফিউম টা ঘাড়ে গলায় হাতে আবারো একটু স্প্রে করে নিয়ে তড়িঘড়ি করে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। আমাকে দেখে শায়ন সেই হাসি টা ই আবার দিলো যে হাসি তে বিয়ের প্রথম রাতে দ্বিতীয়বারের মত ঘায়েল করেছিলো আমায়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আজ আমার আর সেই একই অনুভূতি কাজ করছে না। আগের মত মাদকতা পাচ্ছি না সেই হাসি তে। শায়নের পিছু পিছু বেডরুমে এসে প্রতিদিনের মত ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ওর ব্লেজার টা খুলে দিলাম। শায়ন হাতঘড়ি টা খুলে টেবিলের উপর রেখে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হতে চলে গেল। এই সুযোগে আমি রুমের লাইট অফ করে ফেয়ারী লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিলাম। নিজেকে আরেকবার আয়নায় দেখে নিলাম সব ঠিকঠাক আছে কিনা। কিছুক্ষণ পর শায়ন ফ্রেশ হয়ে এলে আমি ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়াচ্ছিলাম,এমন সময় আচমকা শায়ন আমার ডান হাত টা ধরে হ্যাঁচকা টানে ওর বুকের কাছে নিয়ে গেল। তারপর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস শুরু করে দিলো,
– নেশা লাগিয়ে এখন কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
– খাবে না? টেবিলে খাবার দিতে যাচ্ছিলাম।
– পেটের ক্ষুধা মিটানোর খাবার বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।
আর শরীরের ক্ষুধা মিটানোর খাবার তো তোমার কাছে। আমাকে সামান্য লজ্জা পাওয়ার সুযোগটুকুও না দিয়ে মুহূর্তেই শায়ন আমার ঠোঁট দুটো দখল করে নিলো। এর মধ্যে ওর বাম হাতের আঙুলগুলো আমার কোমরে বিচরণ করতে শুরু করলো। এভাবে সুবিধে করতে পারছিলো না বলে আর দেরী না করে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো শায়ন। তারপর ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার উপর। আমি খেয়াল করলাম,আজ শায়নের এই বন্য আহবানে আমার সাড়া দিতে ইচ্ছে করছে না একদম। এই প্রথমবার ওর আদরটুকু আমি উপভোগ করতে পারছি না। কেমন যেন গা ঘিনঘিন করছে।
কিছুক্ষণ হল শায়ন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর আমি ওর ঘুমন্ত মুখটার দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছি। জাগ্রত অবস্থায় ওকে যতটা হিংস্র দেখায়,ঘুমন্ত অবস্থায় তার চেয়েও বেশি নিষ্পাপ দেখায়। প্রকৃতির কি অদ্ভুত নিয়ম! একটা মানুষ অথচ তার একাধিক রূপ! ছেঁড়া বেলী ফুলের মালাটা মেঝেতে পড়ে আছে এখনো। আর বিছানায় ছড়িয়ে আছে আমার পরনের জর্জেটের সবুজ শাড়ি টা। আমি উঠে চেঞ্জ করে এক মগ কফি নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। সকালে শায়নের ঘুম ভাঙল মেসেজের রিংটোনে। আমি তখন ওর পাশেই শুয়ে ছিলাম। কিন্তু ও আমাকে খেয়াল করে নি।ঘুমঘুম চোখে মেসেজ টা ওপেন করে হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো শায়ন। আমার দিকে চোখ পড়তেই আলতো করে আমার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,
– আই হ্যাভ টু গো। আমার গরম পানি টা রেডি করে দিবে প্লিজ?
– জানি তো, কুসুম গরম পানি ছাড়া আপনার সকালের গোসল হয় না। বাথরুমে দিয়ে এসেছি একটু আগে।
– ও,থ্যাংকস।
শায়ন উঠে যাওয়ার পর ওর ফোন টা হাতে নিলাম আমি। ভাগ্যিস,আড়চোখে পাসওয়ার্ড টা দেখে রেখেছিলাম। একটু আগের মেসেজ টা ওপেন করার সাথে সাথে আমার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল। মেসেজ টা ছিল, “আই এম ইনকমপ্লিট উইদাউট ইউ ডার্লিং। প্লিজ কাম সুন। আই এম ওয়েটিং ফর ইউ।” সম্বিত ফিরে পেলাম ওয়াশরুম থেকে ভেসে আসা শায়নের বিকট চিৎকার শুনে। টাওয়াল টা কোমরে পেঁচিয়ে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ছটফট করতে করতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এল শায়ন। আমি একটু সামনে এগিয়ে গেলাম। ততক্ষণে সে ছটফট করতে করতে মেঝেতে গড়িয়ে বিলাপ শুরু করে দিলো,
– পারিজা,বাঁচাও আমাকে,বাঁচাও। আমার মুখ ঝলসে যাচ্ছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না পারিজা। কিছু একটা করো প্লিজ। আমি ঠিক জানতাম শায়ন বেখেয়ালি হয়ে বালতির পানি দিয়ে আগে মুখ ধুয়ে নিবে। নিরুত্তাপভাবে মেঝেতে দু’হাটু ভাঁজ করে শায়নের কাছ থেকে এক হাত দূরত্বে বসলাম আমি,
– আমার যা করার তা তো করেই দিয়েছি। আর তো কিছু করার নেই। আচ্ছা শায়ন তুমি তোমার এই ঝলসানো চেহারা নিয়ে তোমার লায়লাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবে? মেনে নেবে এভাবে তোমাকে তোমার লায়লারা? হুম? বলো না শায়ন। আমার অট্টহাসি তে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে গেল। শায়ন তখন ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে চলেছে,
– পারিজা,তুমি জানো না তুমি কত বড় অন্যায় করেছো। তোমার কোনো ধারনা নেই এর শাস্তি কি হতে পারে। এ অন্যায়ের বিচার খুব কঠিন। অনেক ভুগতে হবে তোমাকে। আমি উঠে দাঁড়িয়ে তাচ্ছিল্য স্বরে প্রতিবাদ জানালাম,
– এই থামো তো। যে দেশে ধর্ষকের কোনো বিচার হয় না,সে দেশে নাকি হবে চরিত্রহীন স্বামী কে এসিডে পোড়াবার বিচার!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত