বইন তুই বিয়ে করবি না ভালো কথা। এত প্যারা নিস কেন? আমি যা বলি মনোযোগ দিয়ে শোন, যখন দেখবি কাকা তোরে বিয়ের জন্য প্রচুর চাপ দিচ্ছে তখন কী করবি জানিস?
– কী করমু?
– রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে টাক করে ফেলবি।
– কী বলছিস তুই এটা?
– হ্যাঁ একদম ঠিক বলছি।
কারণ টাকলু মেয়েরে কোনো ছেলে বিয়ে করবে না। মরে গেলেও বিয়ে করবে না। সো তোকে এই বুদ্ধিই অবলম্বন করতে হবে। আমার কথা শেষ না হতেই বোন দেখি ইশারা করছে চুপ করার জন্য। আমি তবুও বকবক করে যাচ্ছি। হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখি মা খুন্তি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি মাথায় হাত দিয়ে মনে মনে বললাম, হায় খোদা আমার সব কথা শুনে ফেললো এখন কী হবে? আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মা খুন্তির বারি দিতে এগিয়ে এলো আর ওমনি স্পাইডার ম্যানের মতো উড়ে এসে দূরে পড়লাম। তারপর একদৌঁড়ে মায়ের হাতের কাছ থেকে দূরে সরে আসলাম। পুকুরপাড়ে এসে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছি। এমন সময় চাচাতো ভাই এসে বলল, আমারে একটা বুদ্ধি দে তো।
– কিসের বুদ্ধি?
– এই যে আমি দিন দিন কালো হয়ে যাচ্ছি। ফর্সা হবো কেমনে?
– এক মাস সাবান, শ্যাম্পু, ছুনো, পাউডার কিছু নিবি না। এতদিনে মনে কর তোর গায়ে ধুলোবালি পড়ে একাকার হয়ে যাবে। তখন সবার চোখে তুই আরো কালো হয়ে যাবি। তারপর এক মাস পরে ক্ষার সাবান দিয়ে ভালোভাবে গোসল করবি। এতে তোর গায়ের ময়লা সব ধুয়েমুছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন সবার চোখে তোরে আগের তুলনায় ফর্সা মনে হবে। আমার কথা শুনে মনে হলো চাচাতো ভাই বেশ রেগে গেছে। উল্টো দুনিয়ার কথা শোনাল। আমিও কম কিসের! ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিছি। পানির মধ্যে মাথা ঠান্ডা কর। এতক্ষণ তো আল্লাহর দুনিয়ার কথা শুনিয়ে মাথা গরম করলি। পরেরদিন কলেজ থেকে ফিরে আসছি। অটোতে এক প্রতিবেশী আন্টি উঠেছে। কিছুক্ষণ পরে সে জিগাইলো, তামান্না কোথায় গেছিলে?
– কলেজে।
-পড়াশোনা কেমন চলছে মা?
– জি আন্টি বেশ ভালো।
এবার সে তার ছেলের গুনগান গাইতে শুরু করলো। ছেলে ভালো চাকরি করে, দেখতে সুন্দর। বিয়ের জন্য একটি মেয়ে খুঁজছে। ওর ইচ্ছে বিয়ের পরেও বউকে পড়াশোনা করাবে। মনে মনে বলতে লাগলাম, তো আমারে শুনান কেন এতকথা? আমি শুনতে চাইছি? আপনাগো মতলব আমি বুঝি। দাঁড়ান বুদ্ধি বের করি, কেমনে আপনার মুখ বন্ধ করা যায়। একটুপরে আন্টি জিজ্ঞেস করলো, তো তোমার আরো পড়ালেখা করার ইচ্ছে আছে নাকি?
– হ্যাঁ আন্টি ইচ্ছে আছে তো। এই ধরেন ভালো চাকরি করে, দেখতে সুন্দর এমন একটি ছেলেকে বিয়ে করে তার থেকে পড়াশোনা করার যাবতীয় খরচ নেব। তারপর মনে করুন ১০-১২ টা প্রাইভেট স্যার রাখবো বাসায়। তারা এসে আমাকে পড়িয়ে দিয়ে যাবে। তখন কী ভালোই না হবে, শাশুড়ি রান্না করে খাবার দিয়ে যাবে আমি আরামে খাবো আর পড়বো। আন্টির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেশ অবাক হয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো একবার। তারপর আর কোনো কথা বলল না বাকি পথটুকুতে। শান্তি মতো বাড়ি আসলাম তাই অটো থেকে নেমে মনে মনে একটু হাসলাম। এখন পর্যন্ত আন্টির মুখে আর কোনো কথা নেই। মনটা বেশ ফুরফরা লাগছে লা লা লালা,,,,,,,,,!!
গল্পের বিষয়:
গল্প