এক প্রকার অনিচ্ছা সত্বেই আমার বিয়েটা হয়ে যায়। মনকে শক্ত করে কপালের উপরেই ভবিষ্যৎ সপে দিয়েছি। প্রকৃত বাঙ্গালি মনের মেয়েরা বিয়ের বিষয়টাকে খুব গুরুত্ব দেয়। বর কোনো পোশাক নয় যে পছন্দ হলো না আর অমনি বদলে ফেলা হলো। আমিও তেমনই একজন। যতই আধুনিকতার সঙ্গে বসবাস করি না কেন, মস্তিষ্কে গেঁথে আছে চিরাচরিত সেই ভাবনা। অবশ্য এই ভাবনা কখনও তাড়াতে চাইও না। ‘আপনার কি খুব বেশি খিদে পেয়েছে?’ এহসানের কথায় অবাক হয়ে বললাম, ‘নাহ্ তো!’ ‘আপনাকে কিছুক্ষণ পর পরই শুধু পানি খেতে দেখছি!’ ‘পিপাসা লাগতেই পারে।’
এই এহসান নামের মানুষটাকে আমার একদম সহ্য হয় না। চেহারাটা দেখলেই বিরক্তি ধরে যায়। অবশ্য আজকের আগে তার সঙ্গে আমার কখনও দেখা বা কথা হয় নি। তার সঙ্গে প্রথম আলাপ কিংবা দর্শনে প্রায় জনই মুগ্ধ হয়ে যাবে ঠিক। কিন্তু আমি না হওয়ার কারণ তার সঙ্গেই আজ আমার বিয়ে হয়েছে। বাবা-মা’কে অনেক বুঝিয়েছি, আমি এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই। আমার স্বপ্নগুলোর এখনও কিছুই পূরণ হয়নি। আমার এখনও অনেক দূর যাওয়ার আছে। তারা বললেন, ‘বিয়ের পর সব হবে।’ চুপচাপ বসে আছি। খানিক বাদেই শ্বাশুড়ি মা খুব যত্ন করে খাবার নিয়ে এলেন। রাত কম হয় নি, এত দেরি করে আমি এর আগে কখনও খাইনি। খিদেও কম লাগে নি, পানি খেয়ে আর কতক্ষণ চেপে রাখা সম্ভব! খাওয়া শেষ করে কাপড় বদলে নিলাম। এত ভারী কাপড় আর সাজগোজে আমার ভীষণ অসস্তি লাগে। এতক্ষণ দায়ে পড়ে সহ্য করেছি।
বিয়ের কথা চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই আল্লাহর কাছে দোয়া করে যাচ্ছি যেন মানুষটিসহ তার পরিবারের সকলে মহৎ হৃদয়ের মানুষ হন। আমাকে বুঝতে পারেন। আমার পরিবারের মত যদি তারাও আমাকে বুঝতে না পারেন, তাহলে আমার যাওয়ার আর কোনো জায়গা রইবে না। অবশেষে বিপদ কক্ষে প্রবেশ করলো। এহসান এই মুহুর্তে আমার কাছে বিপদ, কেননা আমি তাকে ভেতরে ভীষণ ভয় পাচ্ছি।’আমার শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছে। খুব ঘুম পাচ্ছে।’ এহসান কপালে হাত দিবে বলে এগিয়ে আসতেই আমি বললাম, ‘তেমন কিছু নয়! ঘুমালোই ঠিক হয়ে যাবে।’ ‘শুভ রাত্রি’ আমি উত্তরে কিছু না বলেই শুয়ে পড়ি। যখনই চিন্তা করি, আমি সংসারে বাঁধা পড়েছি তখনই নিজের সব স্বপ্নগুলো ভাঙ্গে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাই। ভেতরটা চুরমার হয়। চোখ ভিজে আসে। আর ক্ষোভ জমে।
সকালে ঘুম ভাঙ্গলো বেশ দেরি করে। হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করে নিলাম। শ্বাশুড়ি ভীষণ যত্ন নিচ্ছেন। তবুও ভেতরে সস্তি মিলছে না। সবসময় কি এরকম আচারণ বজায় থাকবে? এই প্রশ্ন খুব জ্বালাচ্ছে ভেতরে। এদিকে বান্ধবীরা ফোনে খুব জ্বালিয়ে মারছে। প্রশ্ন তাদের, ‘কি রে! বাসর রাত কেমন কাটলো?’ আমি চার আলিফ টান মেরে বললাম, ‘খুউউউউউউব ভালো।’ বিয়ের পরে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়তো সকলেই হন। অন্য সবার বেলায় ঠিক কেমন লাগে আমার জানা নেই, তবে আমার ভীষণ বিরক্ত লাগে। একজনের ব্যক্তিগত বিষয়ে অন্যের জানতে হবে কেন! এহসান নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গিয়েছে আমি এই বিয়েতে খুশি নই। অবশ্য এ নিয়ে আমার চিন্তাও নেই। কেননা বিয়ের আগে এহসান আমার সঙ্গে কোনোরকমের কথা বলে নি। এই কারণেই তার উপরে আমার এত রাগ। মা ফোন করে জানতে চাইলো কেমন আছি।
খানিক চুপ থেকে বললাম, ‘বিয়ে দিয়ে বোঝা সরাতে চেয়েছিলে, করেছো। কেমন আছি সেটা আর জানার দরকার নেই।’ বিয়ের পরেরদিন মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে মেয়ের বাবা দেখতে আসেন, এটাই নিয়ম। আমায়ও দেখতে এসেছেন বাবা। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন আছিস মা?’ ছলছল চোখে বললাম, ‘আমার এখন স্বপ্ন পূরণের কথা ছিল, সংসার সামলানোর নয়।’ বাবা চলে গেলেন। সন্ধ্যা নেমে এলো। বাড়ি জুড়ে বিয়ের আমেজ। শুধু আমার মনে বাসা বেঁধেছে অসুখ। ছাদে যেতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু যাওয়া সম্ভব নয়, কেননা ছাদটা আমার মত এখন নিঃসঙ্গ নয়, অনেক মানুষের জটলা ওখানে। আগামীকাল এ বাড়িতে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান। আমি চুপচাপ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। বাহিরে মৃদু চাঁদের আলো। ‘বাড়ির জন্য কি খুব বেশি মন খারাপ হচ্ছে?’ এহসানের কথায় ঘুরে তাকালাম।
‘কিছু বলবেন?’
এহসান পাশে এসে দাঁড়ায়। চুপ থেকে খানিক বাদে বলে ওঠে, ‘আপনি কি এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না?’
‘শুধু এই বিয়ে না, আমি এখন বিয়ের জন্যই রাজি ছিলাম না।’
‘তাহলে করলেন কেন?’
‘আপনি এত ভালো চাকুরী করেন। তার উপর দেখতেও এত সুন্দর, পরিবারও ভালো।
এত ভালো পাত্র হাতছাড়া করতে কোন মেয়ের পরিবার চাইবে বলুন? পরে যদি আপনার মত পাত্র আর না পাওয়া যায়! এই চিন্তায় বাবা-মা এত বেশি চিন্তিত হয়ে পড়লেন যে আমার মতের বিরুদ্ধেই বিয়ে দিলেন।’ ‘বুঝলাম। কিন্তু অমতের কারণ ছিল কি? কাউকে ভালোবাসেন?’ ‘আমার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অনেক বড় স্বপ্ন ছিল।’ ‘ছিল? এখন নেই কেন?’ ‘স্বপ্নের জায়গায় সংসার বসিয়ে দিয়েছেন পরিবার।’ ‘সংসারে স্বপ্ন ধ্বংস হয় না। ইচ্ছে আর চেষ্টা প্রখর হলে সবজায়গাতেই পূরণ হওয়া সম্ভব।’ আমার নীরব থাকা দেখে এহসান নিজ থেকেই বলে উঠলো, ‘আচ্ছা, শুধু বরটা আমি বলেই কি আমাকে অপছন্দ করেন নাকি ব্যক্তিগতভাবেই আমাকে আপনার পছন্দ নয়?’ ‘বিয়ের আগে আপনার উচিৎ ছিল আমার সঙ্গে একবার কথা বলা। আমার মতামতটাও জানা। আমাকেও যদি একই কথা জিজ্ঞেস করেন। তবে বলবো, আমার পরিবার আমাকে সে সুযোগ দেয় নি। আপনার নিশ্চয়ই এমন কোনো সমস্যা ছিল না।’ ‘আসলে আমি বিয়ের বিষয়টা পরিবারের উপরেই সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়েছিলাম। তাই নিজ থেকে আর কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে নি। আমি দুঃখিত তবুও।’
‘ভালোবাসতেন না কাউকে? পরিবারের উপর নির্ভর হলেন যে!’ ‘যাকে বাসতাম সে তার পরিবারের দোহাই দিয়ে চলে গেল, তো আমি আমার পরিবারকে বঞ্চিত করবোইবা কেন!’ ‘সবকিছু মানিয়ে নিতে আমার একটু সময় লাগবে। আশা করি, আপনি সাহায্য করবেন।’ ‘অবশ্যই। মনের বিরুদ্ধের কিছু আমি প্রত্যাশাও করি না।’ এহসান চলে গেল। আমি বাহিরের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে আছি। মানুষটাকে আমার ভালোই মনে হলো। শুনেছিলাম, সুদর্শন মানুষের অহংবোধটা বেশি থাকে। আচারণও খুব একটা ভালো হয় না। কথাটা সবার ক্ষেত্রে সত্য নয়, আমি বিশ্বাস করতাম। এবার আমার ক্ষেত্রেই এই বিশ্বাস প্রমাণিত হলো। বিয়ের তিনদিন পরে বাবা বাড়ি এলাম। আমার আচারণে বাবা-মা নিশ্চিত হয়েছেন, আমি এখনও রেগে আছি তাদের উপর আর এখনও বিয়েটা মেনে নিতে পারিনি।
‘মা রে, যা হবার হয়েছে। মেনে নে না। তুই এরকম আচারণ করলে ওরা কি ভাববে! কথা শুনতে হবে তো শেষে তোকে।’ মায়ের কথায় চটে গিয়ে বললাম, ‘আমাকে কথা শুনাবে কেন? বিয়ের সময় কি আমাকে জিজ্ঞেস করে ওবাড়ির বউ করেছিল? তোমাদের সঙ্গে তখন সব কথা হয়েছে, যা বলার এখন থেকে তোমাদেরকেই বলবে। আমার কি তাতে!’ এহসানের বাবা-মা আর দাদা-দাদী নিজ বাড়ি খুলনাতেই থাকেন। এহসান চাকুরির জন্য ঢাকা থাকে। কেবল ছুটিতে বাড়িতে আসে।
বিয়ের পরে আমিও এহসানের সঙ্গে ঢাকা থাকবো আর ওখানেই মাস্টার্সটা শেষ করবো, এমনটাই কথা ছিল। কিন্তু মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার এখনও মাস দুয়েক বাকি আছে। তাই সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বললাম, ভর্তি না হওয়া অব্দি আমি এখানেই থেকে যাব। শ্বশুর শ্বাশুড়ি মহাখুশি হলেন আমার প্রস্তাবে। এহসানও আর না করলো না। এ কয়দিনে এবাড়ির মানুষগুলোর মায়ায় পড়ে গেলাম। খুব ভালোবাসেন তারা আমায়। উপরওয়ালা আমার দোয়া কবুল করেছেন, ভেবে শান্তি পাই। তবে এহসানের উপর থেকে এখনও আমার রাগ সরে নি। আমার সব কাজে তার নাক গলানো স্বভাবটা মোটেই ভালো লাগে না। এটা করবেন না, ওটা করেন, এটা করলে এই হবে, ওটা করলে ওই হবে, এত এত উপদেশে আমি আরও বেশি বিরক্ত হয়ে গিয়েছি।
এহসানের ছুটি শেষ হয়ে গেল। চলে যাওয়ার সময় বিন্দু পরিমাণ খারাপ তো লাগলোই না বরং খুশি হলাম। সস্তি লাগলো। সন্ধ্যায় ছাদে গিয়ে দাঁড়াই। ফুরফুরে বাতাস। কপালের সামনের ছোট ছোট চুলগুলোকে উড়িয়ে দেয় নীরবে। চাঁদটাকে দেখতেও বেশ লাগছিল। ঠিক তখনই আচমকা এহসানের কথা মনে পড়লো। এর আগে প্রতিদিন তিনিই আমার সঙ্গে ছাদে আসতেন। খুব খেয়াল রাখতেন আমার ঠান্ডা লাগছে কিনা, মশায় কামড়াচ্ছে কিনা। না চাইতেও ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো। বিষন্নতায় ছেয়ে গেল ছাদ। চাঁদ ছেড়ে বাসায় এসে শ্বশুর শ্বাশুড়ির সঙ্গে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখতে লাগলাম।
খাবার টেবিলে খেতে বসতেই কেমন যেন শূণ্যতা অনুভব করলাম। দাদা দাদি এহসানের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন। খেতে খেতে হঠাৎ ঝাল লেগে গেল। চোখের পানি নাকের পানি এক হয়ে গিয়েছে। শ্বাশুড়ি মা তাড়াতাড়ি পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন, দাদি চিনির বয়াম থেকে চিনি নিয়ে এলেন। বাবা আর দাদু আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে রইলেন। এত যত্নের মাঝেও কেন যেন এহসানকে মনে পড়লো। আমি ঝাল খেতে পারিনা কথাটা এহসান জানতো, তাই খাওয়ার সময় খুব খেয়াল রাখতো। একটুখানি ঝাল লাগতেই, পানি এগিয়ে দিত। দিন যত কাটছে এহসানের কথা তত মনে পড়ছে। তার সেই বিরক্ত লাগা কথাগুলোই যেন এখন গোপনে শূণ্যতা বাড়াচ্ছে। মুঠোফোনে যতটুকু কথা হয়, তাতে যেন মায়া আরও দ্বিগুন বাড়ে। আজ সারাদিন কেটে গেল এহসান একবারও কল করে নি। মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে বসে আছি কখন থেকে, বুঝে উঠতে পারছি না কল দিব কিনা৷ দ্বিধা কাটিয়ে কল দিয়েই ফেললাম অবশেষে।
‘আজ অনেক ব্যস্ত ছিলাম। তাই কারো খোঁজ নিতে পারিনি। আপনারা সবাই ভালে আছেন তো?’
‘আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?’
‘আমিও। তো কি করলেন সারাদিন?’
‘সব দিন যা করি। তাই।’
‘আমাকে তো এর আগে বলেন নি কখনও!’
‘মায়ের সঙ্গে রান্না, দাদুর সঙ্গে দাবা, বাবার সঙ্গে টিভি দেখা, দাদির সঙ্গে গল্প করা। এইতো।’
‘বাহ্! অনেক কাজ করেন তো দেখছি। তো আইসক্রিম এনে দেয় কে?’
‘বাবা এনে দেয়।’
আমি আইসক্রিম খেতে খুব ভালোবাসি, এই কথাটা জানার পর থেকে এহসান প্রায়ই আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসতো। এখন অবশ্য বাবা এনে দেয়। তবুও কেন যেন তৃপ্তি পাই না। ইদানীং এহসান কম খোঁজ খবর নেয়। কাজের ব্যস্ততা তার খুব। দিন দিন ভেতরটা এহসানকে খুঁজে বেড়ায় ভীষণ। আমি কি এহসানকে ভালোবাসি! এখনও বুঝে উঠতে পারছি না ঠিক। ‘আপনি ইদানীং বাড়ির সবার খোঁজ খবর কম রাখেন।’ আমার এমন অভিমান মিশ্রিত অভিযোগ এহসান ঠিক কতটা বুঝতে পেরেছে আমার জানা নেই। উত্তরে হেসে ফেলে বললো, ‘আসলেই আমি পর হয়ে যাচ্ছি৷ কাজের চাপ যাচ্ছে খুব। আর এমনিতেই আপনাকে পেয়ে বাড়ির সকলে আমাকে বেশ অনাদর করছে, এটা কিন্তু আমি ঠিকই বুঝতে পারি।’
‘একদম হিংসে করবেন না আমাকে। বাড়ির সবাই আপনাকে ভীষণ মনে করে।’
‘আপনি নিশ্চয়ই করেন না!’
‘আমি তো বাড়ির বাহিরের তাই না?’
‘নাহ্! অমনটা বলি নি।’
‘বাড়ি আসবেন কবে? নাকি ওখানে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন?’ হেসে ফেললো এহসান। ‘একদিন না জানিয়ে হুট করে এসে দেখে যাবেন আমার বাসায় কে কে আছে।’ ফোনটা রেখে দিলাম। খুব বলতে ইচ্ছে করছিল, আপনি কালই চলে আসেন। আপনাকে আমার বেজায় মনে পড়ে, আপনি ছাড়া ভালো নেই। কিন্তু বলতে পারলাম না কিছুই। জড়তা, সংশয় আর দ্বিধাই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ভেতরে। চুপচাপ দাদির কাছে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। দাদি আমার গোমড়া মুখ দেখে বললেন, ‘এবার নাতিটা এলে খুব করে বকে দিব৷ এতদিন বউকে রেখে কেউ দূরে থাকে!’ আমি গাল ফুলিয়ে বললাম, ‘মনে থাকে যেন বলতে।’ দাদি হেসে ফেললেন। হাসি সামাল দিতে আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।
দুইদিন পরই কাউকে কিছু না জানিয়ে হুট করে এহসান এসে হাজির। আমার চোখে বিশ্বাসই হচ্ছিল না৷ ভীষণ অবাক হয়েছি। খুশিতে ভেতরটা নেচে উঠলো। পরে জানলাম, কেবল আমি বাদে বাড়ির সলেই জানতো। সন্ধ্যায় ছাদটা চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে। আমি আর এহসান দাঁড়িয়ে আছি পাশাপাশি। শিরশিরে বাতাস বইছে।
গোমড়া মুখে বললাম, ‘আমাকে জানালেন না কেন?’ ‘আপনিও তো জানালেন না আমাকে।’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, ‘কি জানাইনি?’ ‘আমার জন্য মন খারাপ হওয়ার কথাটা।’ খানিকক্ষন চুপ থেকে বললাম, ‘দাদি বলেছে তাই না?’ ‘যে’ই বলুক। আপনি কিন্তু বলেন নি।’ এই মুহুর্তে কাজের বাহানা দিয়ে কেটে পড়া ছাড়া আর কোনো উপায় বা কথা খুঁজে পাচ্ছি না৷
সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই এহসান বলে উঠলো, ‘আমি কিন্তু অতটাও খারাপ মানুষ নয়। ভালোবাসা যায় আর বিশ্বাসও। স্বপ্নের জায়গায় চেপে বসা সংসার শব্দটাকে যতটুকু সহজ করা যায় আমি সাহায্য করবো। বন্ধু ভাবতে পারেন, বাঁধা নয়।’ আমি মুখ ঘুরে ফিরে তাকালাম এহসানের দিকে। চোখ বন্ধ করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে বললাম, ‘ভালোবাসি।’ এহসান চোখে মুখে আনন্দের রেখা নিয়ে বললো, ‘কতটা?’ আমি হেসে বললাম, ‘পুরোটা।’ এক এক পা করে সিঁড়ি থেকে নিচে নামছি আর ভাবছি, ‘অনুপস্থিতিই বুঝিয়ে দেয়, ঠিক কতটা জুড়ে সে ভেতরে বসবাস করে।’
গল্পের বিষয়:
গল্প