জায়ান্ট জিবরুল

জায়ান্ট জিবরুল
রিহানের আম্মুর বান্ধবী নৌমিতা এসেছে, উইথ হার জায়ান্ট হাসবেন্ড। প্রতি ঈদেই তারা আসে। রোজার ঈদ কোনো কারণে মিস হলেও কুরবানির ঈদ নো মিস।
নৌমিতা চিকনচাকন সুশ্রী মেয়ে কিন্তু তার হাসবেন্ড জিবরুল ভাই আকৃতিগত দিক দিয়ে অতিমানবীয়। উনাকে দেখলেই আমার ভয় লাগে। ভদ্রলোকের চেহারা বোকাসোকা কিন্তু ভুঁড়িটা উপজেলা খাদ্য গুদামের মতো বিশাল । গত কুরবানির ঈদে তিনবাটি মাংস খেয়ে আমাদের সারপ্রাইজ দিয়েছিলেন। এবার নাকি আরো বড় সারপ্রাইজ দিবেন। রিহানের আম্মু তার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে । বিফ কারি, বিফ কাবাব, মাটন কারি, চালের রুটি, চিকেন রোস্ট, কোনো কিছুর কমতি নাই। তবে বোরহানি এখনো রেডি হয়নি! সুসজ্জিত ডাইনিং দেখে জিবরুল ভাই যারপরনাই খুশি। তিনি সুখি সুখি মুখ নিয়ে সোফায় বসে আছেন। আমার দিকে তাকিয়ে একটা প্রশস্ত হাসি দিলেন, যে হাসির অর্থ “আজ খেলা হবে।” প্রত্যুত্তরে আমি একটি শুকনা হাসি দিলাম, যে হাসির অর্থ “রাক্ষস আমি তোকে রুখবো। ” রিহানকে ডেকে বললাম,
– রিহান তোর জিবরুল আঙ্কেলকে একগ্লাস লেবুর শরবত দে তো । শরবতের কথা শুনে জায়ান্ট জিবরুল বলে,
– না না অনি ভাই, একটু আগে শরবত খেয়েছি!
– আরে ভাই আরেক গ্লাস খান, বাচ্চা মানুষ নিয়ে এসেছে, না খেলে বেচারা কষ্ট পাবে।
ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে জায়ান্ট জিবরুলকে শরবত গিলানো হয়েছে। বিশাল গুদামে দুইগ্লাস লেবুর শরবত কিছুই না। লবণ দিয়ে আনারস খাওয়াতে পারলে ভালো হতো। বাসায় আনারস নাই তবে বাসার নিচে গলির মাথায় পাইনএপেল জুস পাওয়া যায়। রিহানের আম্মু নৌমিতাকে নিয়ে একাগ্রচিত্তে বোরহানি বানাচ্ছে। এই ফাঁকে জায়ান্ট জিবরুলকে ভুলিয়ে বালিয়ে নিচে নামাতে হবে।
– জিবরুল ভাই, চলেন নিচের দোকান থেকে কোক নিয়ে আসি। আমার প্রস্তাব শুনে রিহানের আম্মু কিচেন থেকে বলে উঠলো,
– দোকানে যাবে তুমি যাও উনাকে টানছো কেন?
– গল্প করতে করতে যাবো আরকি। জায়ান্ট জিবরুল অনড় সে যাবে বলে মনে হচ্ছে না।অবশ্য নৌমিতা আমাকে সাপোর্ট দিয়ে বললো,
– এই যাওনা একটু অনি ভাইয়ের সাথে। বউয়ের হুকুম জায়ান্ট জিবরুল অগ্রাহ্য করতে পারলোনা, সে উঠে দাঁড়ালো! বাসার সামনেই মসলা মাখিয়ে আনারস বিক্রি করছে। আমি জিবরুল ভাইকে বললাম,
– চলেন ভাই, হালকা আনারস খাই?
– এখন আনারস খাওয়া ঠিক হবে না?
– অসুবিধা নাই অল্প খাই।
১০ টাকার করে দুজনে ২০ টাকার আনারস খেলাম। অরুচি সত্ত্বেও জিবরুল ভাই খেয়েছেন। এখন আখের রস খাওয়াতে হবে।
– চলেন জিবরুল ভাই আখের রস খাই?
– আখের রস খাবো?
– চলেন অল্প খাই। আনারস আর আখের রস খেয়ে শরীর ঠাণ্ডা করেছি, এখন শরীর গরম করতে হবে।
– জিবরুল ভাই, চলেন গণি মিয়ার দোকান থেকে এককাপ রং চা খেয়ে উপরে উঠে যাই ?
– এখন চা খাওয়া কী ঠিক হবে ?
– অসুবিধা নাই এককাপ খাই।
চায়ে চুমুক দিয়েই জিবরুল ভাই মুখ কাছুমাছু করে ফেললেন। জিহ্বা পুড়াতে গণিমিয়ার রং চায়ের তুলনা নাই। মনে হচ্ছে অপারেশন সাকসেসফুল। অতঃপর সবাই মিলে খেতে বসেছি। রান্না অসাধারণ হয়েছে। কিন্তু জিবরুল ভাই তেমন খাবার টানতে পারছেন না। আনারস, আখের রস আর গরম চা খেয়ে তার জিহ্বার টেস্ট সেল ডেমেজ হয়ে গেছে। জিবরুল ভাই খাচ্ছেন না দেখে রিহানের আম্মু বললো,
– ভাইয়া খাচ্ছেন না কেন? রান্না ভালো হয়নি?
– না না ভাবি, অনেক ভালো হয়েছে! আসলে তেমন ক্ষিধা নেই!
নৌমিতা তার বরের কথা শুনে হতবাক। রিহানের আম্মুও অবাক সে আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।
আমি জাস্ট মাথা নিচু করে একটা ছোটলোকি হাসি দিলাম!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত