অন্ধকার কেটে আলো আসবেই

অন্ধকার কেটে আলো আসবেই
-তোমাকে না বলেছি আমার সামনে আসবে না তোমার মুখ দেখলে আমার বমি লাগে যাও।নিজের স্বামীর মুখে এই রকম কথা শুনে সব মেয়েদেরই কষ্ট হবে আমার ও হয় কিন্তু আমি কষ্ট গুলো কে ভালোবাসা ভেবে মেনে নিয়।আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই আমাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ।কিন্তু আমি এই গুলো ওদের ভালোবাসা ভাবি ।আমি কি
বোকা তাই না?
না বোকা না আমারা গৃহ বধূরা এমনই পরিবারের খুশি টা আগে দেখি ।পরিবারের খুশির কাছে আমাদের কষ্ট টা কিছুই না । বিয়ের আগে,বাবা মেয়ে বলে কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয় ।শ্বশুর বাড়ির সবার কাছে আমি চোখের বালি মা কে যদি এই সব বলি তাহলে মা বলে মেয়ে হয়ে জন্মেছিস যখন সহ্য করে থাক।আমি ঠোঁটের কোনে হাসি নিয়ে চলে আসি সেইদিন আর যায় নি।।আমি আলিশা আর আমার বর রহিম চৌধুরী ,মাত্র এক মাস আগে বিয়ে হয়েছে আমার ।বাসর রাতে স্বামী কে সালাম করতে গিয়ে, উনি বললেন, ,
-তোমার এই কুৎসিত চেহারা আমাকে দেখাবে না। আমি যখন উনার সামনে যায় ।তখন কাপড় দিয়ে মুখটা ঢেকে নিয় যাতে উনি আমার কুৎসিত মুখ না দেখে ।কিন্তু আজ খাবার টেবিলে খাবার দিতে গিয়ে ফ্যানের হাওয়াই কাপড়টা উড়ে যায় ।তাই ওই কথাটা শুনতে হলো ।এখনি আবার কথা শুনতে হবে । শাশুড়ি মা সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললেন ।
-এই মেয়ের জন্য বাড়িতে সবসময়ই চেঁচামেচি আমার এত সুন্দর সাজানো সংসার কে এ মেয়ে শেষ করেই ছাড়বে ।
আমি মাথা নিচু করে শুনছি । রহিম খাবার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে বলল, ,
-এটা আবার নতুন কি মা এই মেয়ে যখন থেকে এই বাড়িতে এসেছে তখন থেকেই তো অশান্তি ।
আমি এখন আসছি । বলে বেরিয়ে যায় ।শাশুড়ি মা টেবিলে খাবার খেতে বসে আমি ও বসতে যায় ।চেয়ারে বসে শাশুড়ি মা কে খাবার দিয়ে নিজে একটু খাবার নিলাম মুখে দিতে যাব এমনই শাশুড়ি মা বললেন ।
-এ তুমি খাচ্ছো কেনো ।আমার মেয়ে আর বড়ো ছেলে বউ এখনো খাইনি ওঠো ওঠো । আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে পড়ি আসলে কাল থেকে আমি কিছু খাইনি তাই খেতে বসে গিয়েছিলাম । উঠে গিয়ে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছি আমার ভাসুর আর বড়ো জা, ননদ তিন জনে এসে টেবিলে বসলো ।ভাসুর কড়া গলায় আমাকে বলল, ,
-দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছো খেতে দাও ।
-জী দাদা দিচ্ছি ।
বলে সবাই কে খাবার দিলাম ।সবাই খাচ্ছে আমি তাকিয়ে আছি । চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ছে আমার । সবাই খেয়ে উঠে গেলো ।আমি রান্না ঘরে গিয়ে দেখি আর খাবার নেয় । আমি সব কাজ সেরে রুমে চলে গেলাম । রুমে কিছু বিস্কুট ছিলো ওই গুলো খেয়ে দিন কাটিয়ে দিলাম ।রহিম সন্ধ্যা বেলা বাড়ি ফিরে ।আমি তখন রান্না ঘরে কাজ করছি ওনাকে খুব ক্লান্ত লাগছে দেখে তাই ছুটে গিয়ে বললাম, ,,
-আপনার কি শরীর খারাপ? (পানিটা এগিয়ে দিয়ে )।
-না তুমি যাও আমার সামনে থেকে ।
বলে রুমে চলে যায় ।আমি রান্নাঘরে গিয়ে কাজ করতে লাগি। আমার বড়ো জা কোনো কাজ করে না এমনকি বিয়ের পর বাড়ির কাজের লোকদের ও তাড়িয়ে দিয়েছে । ডিনারের সময় সবাই খাচ্ছে আমি টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছি ।বর টা বলল
-তুমি দাঁড়িয়ে কেনো বসো খেয়ে নাও ।
কথাটা শুনে আমি এত খুশি হয়েছিলাম বলে বুঝাতে পারব না ।আমি খুশি হয়ে টেবিলে বসতে যাবো তখনই শাশুড়ি মা বললেন, ,,
-একটু আগে ও খেয়েছে এখন খেলে শরীর খারাপ হয়ে যাবে ।
-বকার মতো কথা বলো কেনো (বর)।
-মা তো ঠিকই বলেছে ।
বলে ছুটে রুমে চলে এলাম । বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি ।দরজার খোলার শব্দে ঘুরে তাকালাম উনি এসেছেন ।উনি দরজা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েন । আমি ও শুয়ে পড়ি সকাল বেলা উঠে দেখি উনি এখনো শুয়ে ।একটু কাছে গেলাম দেখি উনি কাঁপছেন তাড়াতাড়ি করে ওনাকে কম্বল দিয়ে দিলাম কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে ।তারপর সবাই কে ডাকাডাকি শুরু করে দিলাম, ,
-মা দাদা ভাবি, ,রিযা তাড়াতাড়ি এসো সবাই ।
এত ডাকাডাকি করছি কেও আসছে না দেখে আমি ডাক্তার কে ফোন করি কিন্তু ডাক্তার ফোন তুলছে না । কি করবো বুঝতে পারছি না । ভাসুরের রুমে গিয়ে বললাম, ,,
-দাদা একবার আমার রুমে আসবেন আপনার ভাই এর খুব জ্বর ।
-এখন আমার শরীর খারাপ করছে পরে যাবো ।
আমি চলে আসি সেখান থেকে মা এর রুমে যায় মা ও এলো না কেউ এলো অবশেষে আমি নিজে উনাকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেলাম ।
-ওনার তো ক্যান্সার আছে জানেন না আর ঠান্ডা লেগেছে কারন উনি বৃষ্টিতে ভিজে ছেন। আমি আর কিছু বলতে পারছি না পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে ।নিজেকে সামলে বাড়ি গেলাম ।সবাই জিজ্ঞেস করছে অনেক কিছু আমি চুপ করে আছি । কিছু ক্ষন পর বললাম, ,,
-ওনার ক্যান্সার আছে উনি আর কিছু দিন বাঁচবে ।বলেই কাঁদতে লাগলাম ।
-এই মেয়ে তুমি ওকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাও এখানে থাকলে আমাদের ও হয়ে যাবে ।(ভাসুর )।
-হ্যা ঠিকই বলেছো (ভাবি)।
-ওরা ঠিকই বলছে তুমি ওকে নিয়ে অন্য কোথাও যাও। আমি আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলাম।আমার কিছু গয়না ছিলো সে গুলো বিক্রি করে একটা ঘর ভাড়া নিলাম  আস্তে আস্তে উনাকে সুস্থ করে তুললাম উনি বিছানায় শুয়ে আছে আমি রান্না করছিলাম ।
-আলিসা একবার শুনবে এই দিকে?
-জ্বী আসছি । ছুটে উনার কাছে এলাম ।
-বলুন?
-আলিসা আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি । তোমাকে কত কিছুই না বলেছি ।মা ভাই ভাবি সবার কথা ভেবেছি শুধু তোমার কথা ভাবিনি ।আমাকে ক্ষমা করে দাও ।(হাত ধরে )।
-আপনি শান্ত হন আর আপনি আমার স্বামী । এভাবে ক্ষমা চেয়ে ছোট করবেন না । উনি আমাকে বুকে টেনে নেয় ।হঠাত রিযা আর সাথে ডাক্তার ঢুকে ।
-হু হু (কাসির আওয়ামী করে রিযা ) আমি তাড়াতাড়ি করে নিজেকে ওনার কাছ থেকে ছাড়িয়ে বললাম ।
-রিযা তুমি আর ডাক্তার আপনি?
-হ্যা একটা সত্যি কথা বলতে এসেছি ।
-কি সত্যি কথা?
-আপনার স্বামীর ক্যানসার হয় নি ।সব মিথ্যা ।
-মানে কি বলছেন ডাক্তার? আপনি তো নিজেই বললেন ।
-হ্যা বলেছি কারন উনি আমাকে এই সব করতে বলে ছিলেন(রিযা কে উদ্দেশ্য করে )।
-রিযা তুমি কিন্তু কেনো ?
-কারন ভাবি ভাইয়ার এটা বোঝা খুব দরকার ছিলো । তুমি সেইদিন ভাইয়ার জ্বরের জন্য চেঁচামেচি করছিলে তখনই আমি ডাক্তার কে ফোন করে এই সব করতে বলি । ভাইয়া তুমি এবার বুঝেছো সবটা?
-হ্যা বুঝেছি ।
-এবার একবার বাড়িতে চলো । বাড়িতে এসে, ,
– রহিম তুই ভালো আছিস?
-তা তোমার জেনে কি হবে? তুমি তো আমাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলে ।ছি তোমাকে মা ভাবতেই আমার রুচিতে বাঁধছে ।
-কিন্তু তোর তো ক্যান্সার, ,(ভাসুর)। ভাসুর কে থামিয়ে দিয়ে রিযা সব বললো । সবার মুখ কালো হয়ে যায় । আমরা বাড়ি থেকে চলে আসি ।এখন একটা বাড়ি বড়ো করেছি সেখানেই থাকি ।আমার বর এখন আমাকে না দেখে এক মিনিট ও থাকতে পারে না । অন্ধকার কেটে আলো আসবেই।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত