আব্বার রুম থেকে কিসের যেন একটা দূর্গন্ধ আসছে,দূর্গন্ধে আমার তলপেট গুলিয়ে আসছে।মাহা(,আমার স্ত্রী) আমার দিকে চেঁচিয়েই বললো,আবার মনে হয় আব্বা রুমেই প্রস্রাব করেছে,উনার জন্য বাসায় কোন কাজের মেয়েই থাকতে চায় না।এবারের মেয়েটাকে অনেক কষ্টে বাড়ি থেকে এনেছি,দিনে চার-পাঁচবার প্রস্রাব করলে মেয়েটাও চলে যাবে।আমি অপরাধীর মতো মাহার দিকে তাকিয়ে আছি,আব্বার ডায়াবেটিকসের সমস্যা,ইনসুলিন নিতে হয় নিয়মিত।আগে উনার প্রস্রাবের সমস্যাটা হতো না,
এখন হয়তো সময়মতো ওশাশরুমে যেতে পারেন না কিংবা ঠিকমতো দরজা খুলতে পারেন না কাপড়েই প্রস্রাবের ফোঁটা পড়ে যায়।মাহার সাথে কথা না বাড়িয়ে আব্বার রুমে গেলাম,নাকে,-মুখে তোয়ালে দিয়ে আব্বার কাপড়টা বদলালাম,সারাটা ফ্লোর স্যাভনলের পানি দিয়ে পরিষ্কার করলাম।আব্বা তখন আস্তে করে বললো, বাপ আমারে একটা ভালা ডাক্তর দেখাও,আজকাইল পেসাবের বেগটা বাইড়া গেছে,আমার জন্য তোমাদের হগলের কষ্ট হইতাছে বাপ।আমি আব্বার কথা শুনে থ হয়ে গেলাম,আব্বাকে ঠাণ্ডা গলায় বললাম,আব্বা আপনি এসব কি বলেন.?আমাদের সবার কষ্ট কেন হবে.?আপনার তো হাই ডায়াবেটিকস তাই হয়তো এমন হচ্ছে,আমি শুক্রবার আপনাকে একজন ভালো ডাক্তার দেখাবো।
রুমে আসার পর আমার মেয়ে মৈত্রী আমার কানে কানে বললো, জানো বাবা,সোমা (,কাজের মেয়ে) বলেছে দাদু নাকি আবারো হিসু করেছে।আমিতো ও বাবা ছেটবেলায় কাপড়ে হিসু করতাম,তবে কি দাদু ও ছোট হয়ে গেছে..!!
রাতের বেলা শোয়ার সময় মাহা বললো,মৈত্রীর স্কুলতো বন্ধ,চলো কোথাও বেড়াতে যাই,কতোদিন কোথাও যাওয়া হয় না।আমি মনোযোগ সহকারে শুনছি মাহার কথা।সবশুনে বললাম বেড়াতে যাওয়া যাবে কিন্তু আব্বার যা অবস্থা উনাকে নিয়ে বাইরে যাওয়া যাবে না,মাহা বিরক্তমাখা কণ্ঠে বললো ওনাকে নিয়ে যেতে কে বললো,উনি বাসায় থাকবেন। আমি বললাম বাসায় একা সোমা পারবে আব্বার খেয়াল রাখতে…?তারচেয়ে ভালো হয় আব্বাকে আপার বাসায় কয়দিনের জন্য রেখে যাই।মাহাও আমার কথায় একমত হলো।
পরদিন আপাকে ফোন দিয়ে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করার পর বললাম,আপা মৈত্রীর স্কুল কিছুদিনের জন্য বন্ধ,আমারও অফিস থেকে অনেক ছুটি পাওনা, ভাবছি কদিনের জন্য বাইরে বেড়াতে যাবো। আব্বা ওইকদিন তোমার এখানে থাকুক।আপা তখন বললো আরে,তুই আগে বলবি না,আমি তোর দুলাভাইকে নিয়ে আজমীর শরীফ যাচ্ছি।এখন কি করি বলতো..?আমি চিন্তিত হয়েই ফোনটা রাখলাম।মাহা ব্যাগ গোঁজ-গাজ করতে আপার কাছে কখন আব্বাকে নিয়ে যাবো জানতো চাইলাম।আমি আমতাআমতা করে আপার সাথে সব কথোপকথন মাহাকে বললাম।শুনে মাহা রাগে গজরাতে লাগলো।রাগের মাথায় সে অনেককিছু বলতে লাগলো।বেড়াতে যাবো না শুনে মৈত্রী ও আজ বাবার সাথে রাগ করেছে।
অফিস থেকে ফেরার পর ফ্রেশ না হয়েই আজ আব্বার রুমে গেলাম,আব্বা আমাদের পুরনো সেই টিভিতে মান্নাদের গান শুনছেন।”ললিতা গো ওকে আজ চলে যেতে বল না,ছোটবেলায় আব্বা-আম্মার পাশে শুয়ে গানটা কতো হাজারবার শুনেছি। আব্বাকে বললাম, আপনার ঔষধ সোমা খাইয়েছে,উনি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেন,আব্বা তখন বললেন,বাজান,বউমার সাথে রাগ কইরো না,বউ না থাকলে স্বামীর কোন দাম নাই,তোমার আম্মা থাকলে আইজ আমার এমনভাবে থাকা লাগতো না।আমি কথাটা শুনে বেশীক্ষণ আব্বার রুমে থাকতে পারলাম না। মাঝরাতে ঘুমটা হুট করে ভেঙে গেলো,আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আব্বার কোলে করে নানাবাড়ি থেকে বাড়ি আসছি,আমি একটা সাইনবোর্ড দেখে বলছি আব্বা এটা কি.?বাড়ি আসতে আসতে রাস্তার সব সাইনবোর্ড দেখেই বলছি আব্বা ওটা কি?
বাড়ি ফেরার পর আব্বা আম্মাকে বলেছিলেন আব্বা নাকি ২১২ টা সাইনবোর্ড আমাকে পড়ে শুনিয়েছেন।আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ছোটবেলায় আমার পেট খারাপ হলে একদিন কাপড় নষ্ট করে ফেলি,আব্বা নিজহাতে আমার সেই ময়লা কাপড় পরিষ্কার করেন,আমি আমার কন্যাকে ঘুমের মাঝেই বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলি,মারে বড়ো বয়সে তুই ও কি ব্যস্ত হয়ে যাবি,আমিও কি তোর বোঝা হয়ে যাবো….!! সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই কাউকে কিছু না বলে আব্বাকে নিয়ে আব্বার বন্ধু সামাদ কাকার বাসায় গেলাম,এতোবছর পরে দুবন্ধুর দেখা হওয়ায় কি উচ্ছ্বাস.!! আসার সময় আম্মাকেও বাপ-ছেলে দেখে আসলাম..!!আম্মার কবরে আব্বার কফোঁটা অশ্রু গড়িয়েছে সে হিসাব হয়তো আব্বা রাখেননি।
গল্পের বিষয়:
গল্প