অযাচিত অনুপ্রবেশ

অযাচিত অনুপ্রবেশ
অর্পা কে নিয়ে আমাকে এভাবে পদে পদে ছোট হতে হবে ভাবিনি। অফিস শেষ করে আতিফ,সমীরের সাথে কফি হাউসে বসে আছি বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি, কতক্ষণে থামবে হিসেব নেই। আধ ঘন্টা হল বসে আছি, দেরী দেখে অর্পা কল করেছিল,লাইনটা কাটতেই আতিফ বলে উঠল,
-দোস্ত ভাবির দিকে একটু খেয়াল রাখিস।
কেন জানতে চাইলে,খুব চিন্তিত মুখে ও আমাকে যা বলল তার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলামনা। অর্পা আমার স্ত্রী, নাকি গত পরশু আমি যখন সিলেটে তখন আমার অনুস্থিতিতে এক ছেলের সাথে ৩২ নম্বর ধানমন্ডি লেক পার হচ্ছিল। তাও আবার অফিস শেষে বাসায় না ফিরে প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ। কথাটা শুনে মাথাটা গরম হয়ে গেল। তবুও সম্মান বাঁচাতে বললাম, কোন বন্ধু হবে হয়তবা। আতিফ বলল,বন্ধু হ্যাঁ সমস্যা টাতো এখানেই দোস্ত তুই ভাবিকে একটু বেশীই বিশ্বাস করছিস। ভাল ছেলে আর ভাল স্বামীদের ভাগ্যেই কিন্তু দূর্ঘটনাটা বেশী ঘটে। বললাম ঠিক বলেছিস দোস্ত, বলতে পারবি এ কথা অর্পার সামনে? কাল তো ছুটি সন্ধ্যায় বাসায় চলে আসিস। আড্ডা হবে সেই সাথে আর্পা কেও দেখে নেওয়া হবে।
পাশ থেকে সমীর বলল, আসলে তুই একটু বেশীই রিলাক্স, কিন্তু জানিস তো দিন কাল ভালনা বৌদের একটু সামলে রাখতে হয় অতো ছাড় দিতে নেই। প্রায়ই তো ভাবির ওয়ালে পোষ্ট দেখি ফ্রেন্ডদের সাথে হ্যাং আউট, গেট টু গেদার এখন বিয়ে হয়েছে কই সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকবে তা না। শোন এত ছেড়ে রাখিস না পরে পস্তাবী৷ আমার বৌতো প্রায় ই ঘ্যান ঘ্যান করে আমি ওসব ফেসবুক টেসবুক খুলে দেইনা বলি ওসব ভাল কিছুনা মন দিয়ে সংসার কর। সংসারের কাজ করতেই হিমশিম খাচ্ছে আবার কত শখ! আমিও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। এর ভেতর আতিফের ফোনে কল আসল, বেশ বিরক্তি নিয়ে দেরী হবে বলে রেখে দিয়ে বলল,
-মেয়ে মানুষের এই এক প্যাচাল বুঝলি,একটু যে দু মিনিট কোথাও বসব সে উপায় নাই। বাসায় ফিরতে দেরী হলেই হল ব্যস শুরু করে দিবে, কি দেখে তার বাপ তাকে এমন ছেলের হাতে তুলে দিল আমি বেশ আড় মোড় ভেঙ্গে বললাম, আমিই বেশ আছিরে এত সব পেইন নাই। বউ এখনো বাড়িই ফেরেনি। সমীর আঁতকে উঠল বলিস কি? সাড়ে সাতটা বাজে। ভাবি কোথায়?
-শপিং মলে। ফেরবার সময় ড্রপ করে নিব। আতিফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,হুম তুমি তো ভাই গাড়ী চড়, এক সাথে চাকরী করেও সে কপাল আমাদের হল কই। আমি ঈষৎ হাসলাম। সমীর আবারো বলল,তবে তুই যাই বলিস এভাবে ছেড়ে দিসনা, আর তোর তো স্যালারী ভালই আমাদের সংসার ওতো একই বেতনেই চলছে। চাকরীটা ভাবি না করলে এমন কিছু ক্ষতি তোর হবেনা। আর বলতে চাই ছিলাম না তবুও তোকে বোঝানের জন্যই বলছি, ভাবিকে আমিও গত সপ্তাহে এক ছেলের সাথে রিক্সায় দেখেছি। ব্যাপার টা লজ্জার। কিছু একটা ঘটলে তুই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবিনা, তোর প্রশ্রয় পেয়েই এসবের সুযোগ পাচ্ছে।
বৃষ্টির বেগ কমে আসছে, তোরা কাল ভাবি দের কে নিয়ে আমার বাসায় আয় তখনই অর্পার ব্যাপারটা মিমাংসা করব বলে আমি উঠলাম আসলে অর্পাকে নিয়ে বন্ধু মহল বাদেও পরিচিত,পরিবার অনেকের কাছেই আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়। আমার ভাল লাগেনা এসব শুনতে। কিন্তু কতই বা আর এভবে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় তবুও এড়িয়ে যাই। পান্থপথ সিগনালে দাঁড়িয়ে আছি, বৃষ্টির দিনে জ্যাম এর থেকে মুক্তি যেন অনন্তকালের অপেক্ষা। অর্পা কে দেখছিলাম এমন শান্ত অথচ প্রাণোচ্ছল মেয়েটা আমাকে ধোঁকা দিতে পারে,আমার বিশ্বাসের অমর্যাদা করতে পারে? অর্পা এক মনে রবীন্দ্র সংগীত শুনে যাচ্ছে জ্যাম,ক্লান্তি ওকে যেন স্পর্শ করছেনা। বৃষ্টি আর সুরের মাঝে যেন বুদ হয়ে আছে। আমি কি ভুল করেছি ওকে বিশ্বাস করে? সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে সংকোচ হচ্ছিল অর্পার হাতে হাত রাখলাম ও চমকে উঠে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল ,বললাম,আমাকে বিশ্বাস কর অর্পা?
-ওমা সে কি কথা,হঠাৎ এ কথা কেন?
– আমি যদি তোমাকে ধোকা দেই,বেঈমানী করি?
-শোন ইফতি,আমি তোমাকে আগেও বলেছি আবারও বলছি। আমি বিশ্বাস করিনা যে বিশ্বাসী ব্যক্তিরা কখনো বিশ্বাস ঘাতকতা করবেনা। আমি না আসলে কোন মানুষকেই অন্ধের মত বিশ্বাস করিনা তবে সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করি তিনি চান তো আমার মন ভাংবেন আবার তিনি চাইলে আমাকে পরিতৃপ্ত করবেন।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি। বর্ষায় চোখের সামনে সব ঘোলা দেখতে থাকি সিগনাল টাও ঠিক ঠাউরে উঠতে পারিনা আমার মাথায় শুধু এক চিন্তা এ সন্দেহের, প্রশ্নের অবসান ঘটাতে হবে এটা বয়ে বেড়াবার সময় বোধয় শেষ হয়ে এল।
পরদিন বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আতিফ, সমীর এল। দরজা খুলে আশ্বস্ত হলাম ভাবিরাও এসেছে। তবে ভেতরে ভেতরে ভয় অস্থিরতা আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। অর্পা ওদের কে দেখে ভীষন সারপ্রাইজড হল। মিনিট পাঁচেকের ভেতরেই আবারও কলিং বেলটা বেজে উঠল এবার অর্পার বিস্ময় সীমা ছাড়িয়ে গেল ওর তিন জন কাছের বন্ধুকে দেখে। আমি আতিফ,সমীর আর ভাবিদের কে দেখছিলাম ওরা যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলনা। আমি মুচকি হেসে ভাবিদেরকে বললাম,
-আজ অর্পার জন্মদিন আপনারা নিশ্চয়ই অর্পার ফেসবুক ফ্রেন্ড না তাই ধরতে পারেননি। সমীরের স্ত্রী চন্দ্রা মাথা নাড়ল কিভাবে জানব বলেন আমাদের তো একাউন্টই নাই। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম না থাকলে না জানা টাই স্বাভাবিক। আমার ছোট খালার সাথে ওদেরকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। খালা কে বেশ বিরক্ত দেখাচ্ছে যেন আগে জানলে উনি আসতেন না। উনাকে অবশ্য আমিই আসতে বলেছি, দুপুরেই চলে এসেছেন। আজ অর্পার বিরুদ্ধে একটা সিদ্ধান্ত হবে উনি না থাকলে কিভাবে হয়। খালা বেশ আদর করে আমার বন্ধুদের কাছে জানতে চাইলেন, তা বাবা তোমাদের বৌরাতো মাশাল্লাহ,তো তারাও চাকরি করে বুঝি?
দুজনেই সমস্বরে বলে উঠল,না খালা সময় কই বলেন। ঘরের কাজ করেই তে সময় পায়না আবার চাকরী। চন্দ্রা চুপ করে রইল। খানিকটা আনমোনাও হল বোধয়। খালাও বেশ জোর গলায় বললেন সেই ভাল বুঝলে বাবা, বাড়ীর বৌদের বেশী পাখা না গজানোই ভাল। তাতে সংসারটা সুখের হয়। উড়ু উড়ু মন নিয়ে কি আর সংসার হয়? আতিফের স্ত্রী শর্মি বলে উঠল,কেন হবেনা অর্পা ভাবিতো বেশ সামলে নিচ্ছেন। উনার সংসার কি সুখের না? আমিতো বসায় ঢুকেই অবাক হলাম এত্ত গোছানো,চট জলদি এত আয়োজন করা ঘরে-বাইরে সব কিছু সামলে কিন্তু চাট্টিখানি কথা না। আমাকে সুযোগ দিলে আমিও চাইতাম কিছু করি কিন্তু সে সুযোগ হল কই আতিফ যেন হামলে পড়ল,বেশী কথা বলাটা না তোমার স্বভাব এজন্যই কোথাও নিয়ে যাইনা। সমীর ইশারা করল, আতিফ দমে গেল।
অর্পা সবাই কে চা নাস্তা সার্ভ করছে। আতিফ এর যেন আর তর সইছেনা। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই উসখুস করছে। আমিও ইশারায় তাল দিয়ে যাচ্ছি সুযোগ বুঝেই কথাটা তুলতে হবে। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আতিফ বেশ হাসিমুখেই বলল, ভাবি গত পরশু আপনাকে দেখলাম। অর্পা চোখ তুলে চাইল,ওমা তাই কোথায়? ডাক দিলেন না যে। আমি আর সমীর ওৎ পেতে আছি। বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার এই সুযোগ। আতিফ বলল, ধানমন্ডি বত্রিশ,সাথের ভদ্রলোক… আপনিতো আমাকে খেয়ালই করলেন না। অর্পা আমার দিকে বিস্ময় নিয়ে চাইল। আমি ঘড়ির কাটা দেখতে লাগলাম।
সমীর বলল,ভাবি আমিও তো দেখলাম গত সপ্তাহে, আপনি রিক্সায় ছিলেন, সাথে এক ভদ্রলোক এমন সময় সৈকত ঘরে ঢুকল। আতিফ, সমীরের চোখ যেন কপালে উঠল। আমি ডাক দিলাম,সৈকত আয় বোস,আমার বন্ধুরা সৈকত হাত বাড়িয়ে দিল হাসি মুখে। আমি পরিচয় করিয়ে দিলাম, সৈকত আমার চাচাতো ভাই, চাচী আজ বারো দিন হল হাসপাতালে। ও সারাদিন থাকে ওখানে আর চাচা সারা রাত। আমার আর অর্পারতো সময় হয়না তাই রোজ অফিস শেষ করে আমরা হাসপাতালে একবার যাই ফেরবার সময় সৈকত কে নিয়ে আসি। তোরা বোধয় ওর সাথেই অর্পাকে দেখে ছিলি। আতিফ সমীরের চোয়াল ঝুলে গেল। আমি বলতে থাকি, আমার অনুপস্থিতিতে অর্পা কোথায় যায় কি করে তা তো আমি জানতে চাইনা কখনোইনা ঠিক যেমন অর্পা জানতে চায়না আমি সিলেটে কার সাথে গেলাম, অফিস শেষে কার সাথে কফি হাউসে বসলাম। তাহলে অর্পা কার সাথে মুভি দেখতে গেল,শপিং এ গেল, গেট টু গেদারে গেল সেটা নিয়ে সবার এত মাথা ব্যাথা না হলেও চলবে?
একটু দম নিয়ে আবারো বলি,অর্পা মেয়ে আর আমি পুরুষ এ জন্যই কি এত প্রশ্ন ওঠে ওকে নিয়ে? আরে এসব মেয়েরা ও তো মানুষ। আমার, আমাদের মত তো ওদের ও মন আছে, ওদের ও তো দিন শেষে কাছের মানুষদের সঙ্গ প্রয়োজন হয়, ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে ঘুরবার শখ হয়, বন্ধুদের সাথে মন খুলে আড্ডা দিতে ইচ্ছে হয়, ঘর সংসারের বাইরেও দু দন্ড বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে তো ওদের ও মন চায়। আচ্ছা তোরা ভাবিদের কে কখনো জিজ্ঞাসা করে দেখেছিস তারা আসলে কি চায়? নাকি শুধু নিজেদের চাওয়া গুলোকেই চাপিয়ে দিয়েছিস। ওরা যদি পারে সব দিক সামলাতে চলতে, একটু প্রাণবন্ত হয়ে বাঁচতে তবে আমাদের সমস্যা কোথায়? সমস্যাটা আসলে কোথায় জানিস আমাদের মনে৷ পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠীকে পিছে ঠেলাটাই যে আমাদের স্বভাব। ছোট খালা আমাকে থামিয়ে দিলেন,এসব কি হচ্ছে ইফতি। বাড়িতে মেহমান ডেকে এসব কি বলছিস?
– খুব বেশী কিছু কি বলে ফেললাম খালা? তাহলে তোমরা প্রিতিনিয়ত তোর বৌ কেন বাইরে কাজ করে,কেন বের হল,কেন ওমুকের সাথে মিশল,কেন ওমুক অনুষ্ঠানে গেল, ওমন ছবি নেটে কেন দিল, কেন তুই এমন ছেড়ে দিয়ে রাখিস,কেন বৌ এর লাগাম টেনে ধরছিস না বলে বলে আমাকে আঘাত করার চেষ্টা কর সেগুলা কি? খুব কৌশলে তোমরা যে ছুরিতে ধার দাও আজ শুনে নিও তা আমাদের সম্মান আর বিশ্বাসকে খন্ডন করতে পারবেনা। অহেতুক যেন তোমরা আর এসব বলে সময় নষ্ট না কর সেটা বোঝাতেই আমার আজ তোমাদের কে ডাকা।
আমি তোমাদেরকে আঘাত অথবা অপমান করার জন্য ডাকিনি ডেকেছি শুধু মাত্র এটা বোঝাতে যে সবারই নিজেস্ব চিন্তা ভাবনা মতামত আছে,আমি অর্পার মতামত ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেই সেটা তোমাদের ভাল নাই লাগতে পারে তাই বলে আমাকে বারবার এসব বলে প্রশ্নের সম্মুখীন করোনা। ছোট খালা নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছেন না যেন, বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে আছেন হয়তবা ভাবছেন ইফতির এত অধঃপতন! অর্পা আমার হাত ধরে বলল, ইফতি চুপ কর। এস আমার বন্ধুরা বসে আছে ওরা কেক এনেছে চল আমি কেক কাটব।
– আজ একটু বলতে দাও আমাকে। অবশ্য তুমি এসবের কি বুঝবে তোমাকে তো আর শুনতে হয় না৷ শুনতে হয় আমাকে আমি যে স্বামী তাও আবার স্ত্রী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী স্বামী। আমাকে যে পদে পদে কৈফিয়ত দিতে হয়। তুমি তো এসব কখনো বুঝতেই পারনা কিভাবে পারবে আমি তো তোমাকে বোঝাতে চাইনি।
সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললাম, অযথা অন্যের সম্পর্কে ফাটল ধরানোয় সময় অপচয় না করে নিজের ঘরের দিকে নজর দিও সবাই তাহলে স্পষ্ট দেখতে পাবে তোমাদের ঘরেও কত শত সূক্ষ ফাটলের অস্তিত্ব, হয়তোবা সেগুলার মেরামতের সময়ও ফুরিয়ে আসছে। আর এত দিন পর এত কথা বলার কারন টাও বলে দেই, অর্পা, হুম অর্পা যে মানুষটা তোমাদের চোখে উড়োনচন্ডি সে আজ আমাদের দুজনের সম্মতিতেই সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছায় গর্ভবতী। চার মাসের গর্ভের সন্তান নিয়েও মেয়েটা বাসা, হসপিটাল,অফিস,বাজার সব সামলাচ্ছে। তোমরা এত দিন অর্পাকে নিয়ে যত ইঙ্গিত করেছ আমি পাস কাটিয়ে গিয়েছি তবে আমার সন্তানের মা কে নিয়ে কোন কটু কথা হোক আমি সেটা চাইনা।
সম্পর্ক গুলোকে শ্রদ্ধা করে আমাদের প্রত্যেকেরই অনধিকার চর্চা বন্ধ করা উচিত। সমীর,আতিফ মুখ বাংলার পাঁচের মত করে রাখলেও ওদের বৌদের মুখ চকচক করতে লাগল যেন নিজেদের না বলতে পারা অনেক কথাই আজ ওরা বলতে শুনল। এমন সময় অর্পার বন্ধু মানহা, রত্না এসে তাড়া দিল সবাইকে একরকম জোর করেই জন্মদিনের আয়োজনে ব্যস্ত করে ফেলল। ছোট খালা মুখ গোমড়া করে টিভি খুলে বসলেন, আতিফ-সমীর যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। ছোট খালাকে বাড়িতে এগিয়ে দিয়ে বাসায় যখন ফিরলাম তখন রাত দশটায় চল্লিশ। সৈকত দরজা খুলে দিল। অর্পাকে কোথাও চোখে পড়লনা বেডরুমে ঢুকে দেখি ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছে। আমি ওর মাথায় হাত রাখলাম। ও শোয়া থেকে উঠে হাঁটুতে মুখগুজে ফুঁপিয়ে উঠল।
-কাঁদছ কেন?
– আমার জন্য তোমাকে এত কথা শুনতে হবে জানলে আমি কখনোই একটা স্বাধীন জীবনের আবদার বিয়ের সময় তোমার কাছে করতাম না,হয়তবা স্বাধীনতা না পেয়ে পেয়ে আমিও অনেকের মত একদিন আটপৌরে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যেতাম।
-এভাবে কেন বলছ? শুধু তুমি চেয়েছিলে বলেই কি? আমি তোমাকে তোমার মত করে বাঁচবার স্বাধীনতা দিতামনা? এ যে তোমার অধিকার, একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে বাঁচবার অধিকার। পায়ে শেকল পরিয়ে তোমাকে বেঁধে রাখবার কোন ইচ্ছাই যে আমার ছিলনা। অর্পার কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায়। আমি ওকে বুকে টেনে নেই। এমন তুচ্ছ কারনে তৃতীয় পক্ষের আঙ্গুলের ইশারায় চোখের জল বিসর্জন যেন এই প্রথম এই শেষ হয়। ভালবেসে যে বিশ্বাস আমরা অর্জন করেছি তা সযতনে বইবার দায়িত্বও শুধুই আমাদের আমরা যেন হেলায় তাকে হারিয়ে না ফেলি।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত