রজনীগন্ধা আর গোলাপে সাজানো খাট টাতে বসে আছি বউ সেজে।আজ আমার বাসর রাত,হঠাৎ করেই রুমে প্রবেশ করলো ৭০ বছর বয়সি লোকটা, শেরওয়ানী আর পাগড়ী পরে। ভালবাসার মানুষটাকে ছেড়ে বাবা মায়ের কথা মত, না দেখেই তাদের পছন্দ করা ছেলেটাকে বিয়ে করে নিলাম।কবুল বলার সময়ও দেখিনি আমি তাকে।আমি ছিলাম আমাদের ঘরে আর সে ছিলো বাইরে স্টেজে। বিয়ে করে চলে এলাম শশুড় বাড়ী। ফুলে সাজানো ঘর টায় বসে আছি,চোখ মুছছি বার বার,যাতে কেউ না দেখে আমি যে কাঁদছি।কেননা আজ কাল নাকি বিয়ে হলে কেউ কাঁদেনা।
যদি চোখে জল দেখে তবে বুঝে নিবে সবাই,আগে যে কারো সাথে রিলেশন ছিলো।ঝামেলা হবে,আমি চাইনা কোন ঝামেলা হোক। আম্মু বার বার বলে দিয়েছে,চোখে জল যেন না আসে। কান্না কাটি যেন না করি,ছেলের অনেক টাকা পয়সা আছে,ছেলে আমাকে খুব ভালো রাখবে। কিছু দিন আগে ঘটক এসে বাসায় বলেছিলো ৬০, ৭০ বছর বয়সি লোকেরাও নাকি আজ কাল বউ মরার পর বিয়ে করে।আর যুবতী মেয়েরাও নাকি খুশিতে তাদের বিয়ে করে নেয়।কেননা,তারা মরে গেলেই সব টাকা পয়সা,ঘর বাড়ী ওদের থেকে যায়,পরবর্তীতে নিজের পছন্দ মত আবার বিয়ে করতে পারে। আর কিছু কিছু ছেলেও নাকি আছে অন্যের বউ নিয়েও পালিয়ে যায়,কথা থাকে,টাকা পয়সা,স্বর্ণ গহনা সব নিয়ে আসার।তাই আর পরে সমস্যাও হয়না।
তাই বলে ঘটকের ওই সব কথা শুনে আম্মু আব্বু আমাকে এই বুড়োটার সাথে বিয়ে দিলো?টাকা পয়সার এতই লোভ এদের? বার বার মনে পরছে আদির কথা। কিছুতেই ওর স্মৃতি মাথা থেকে যাচ্ছেনা। কত স্বপ্ন দেখেছিলাম ওকে নিয়ে। বলেছিলো আর কয়টা দিন ওয়েট করো,চাকরীটা হলেই বিয়েটা করে নিবো। কিন্তু আমার মা বাবার আদিকে পছন্দ না। আদির কোন জব নেই,কবে হয় জব তারও ঠিক নেই। আমি নাকি আদিকে বিয়ে করলে তারা আমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখবেনা। বাধ্য হয়ে তাই আদিকে না করে দিয়ে বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করার মত দিয়ে দিয়েছি। শেষমেস বিয়ে করে চলেও এসেছি। কষ্ট হচ্ছে আদির জন্য।বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এদিকে বুড়ো লোকটাও এসে খাটে বসলো।
বসেই আমার ঘোমটা তুলে বল্লো, মাশাআল্লাহ্!কারো যেন নজর না লাগে। আমি চিৎকার করে কান্না শুরু করলাম। লোক টা আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। আমার কান্না আরো বেড়ে গেলো। আমি লোক টাকে বললাম,প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দিন। আমি একটু একা থাকতে চাই। লোক টা বল্লো,ঠিক আছে আমি ৩০ মিনিট পরে রুমে আসি।এখনো তো সারা রাত বাকি। সে বেরিয়ে গেলে আমি দ্রুত আমার মোবাইল টা বের করে আদির নাম্বার টা মোবাইলে তুলে আদিকে ফোন দেই। আদির মোবাইল নাম্বার টা পর্যন্ত ডিলিট করে দিয়েছিলাম। ভাগ্যিস নাম্বার টা মুখস্ত ছিলো। রিং বাজছে, আদি রিসিভ করছেনা। চার বারের বেলায় রিসিভ করে বল্লো, বাহ্ বাসর ঘর থেকে কনে আমাকে ফোন দিয়েছে, কি ভাগ্য আমার। কিসের জন্য ফোন দিয়েছেন বলেন। কোন হেল্প লাগবে?
-আদি আমার ভুল হয়েছে।আমাকে প্লিজ এখান থেকে নিয়ে যাও।আমি তোমার সাথে পালিয়ে যাবো। এই বুড়ার সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।তাছাড়া তোমাকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব।
-ভালোই বলেছো।টাকা পয়সার জন্য অন্য ছেলেকে বিয়ে করলে,আর এখন বলছো আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবেনা।
তোমার মত মেয়েকে নিয়ে জীবন কাটানো আমার পক্ষে সম্ভব না।যাকে বিয়ে করেছো তাকে নিয়ে সুখী হও।
আমাকে আর কখনো ফোন দিবেনা। এই বলে আদি লাইন কেটে দিয়ে মোবাইল টা বন্ধ করে দিলো। বার বার ট্রাই করেও কল আর ঢুকলো না। দরজায় নকের আওয়াজ। নিশ্চয়ই বুড়োটা এসেছে। আমি তাড়াতাড়ি করে বারান্দায় গেলাম, বারান্দার দরজা দিয়ে যেই না পালাবো, দেখি পেছন থেকে কে যেন আমার হাত ধরে ফেলেছে, আমি না তাকিয়েই বলতে লাগলাম,প্লিজ আমাকে যেতে দিন। আমার পক্ষে সম্ভব না আপনার মত বুড়োর সংসার করা। আমি আরেকজন কে ভালবাসি,আমি তার কাছে চলে যাচ্ছি।প্লিজ আমার হাত ছাড়ুন।
-২৬ বছরের ছেলেটাকে তোমার বুড়ো মনে হয়? এতো দেখছি আদির কন্ঠ। পিছে ঘুরে তাকাতেই দেখি আদি আমার হাত ধরেছে। আদিও দেখছি শেরওয়ানী পরা,মাথায় পাগড়ী ও পরা।
-তুমি?তুমি এখানে?
-আমার বাসায় আমি থাকবোনাতো কে থাকবে?
-এটা তোমার বাসা?
-হ্যাঁ আমার বাসা।
-ওই বুড়ো লোকটা তোমার কি হয়?
-আমার দাদা হয়।
-তবে আমি তোমার দাদী হয়ে গেছি এই বলে কাঁদতে লাগলাম।
-আরে গাধী,দাদী না দাদী না। তুমি আমার বউ হয়ে গেছো। আমার সাথেই তোমার বিয়ে হয়েছে।আমার দাদা ভাইকে তো আমি ফান করে পাঠিয়েছি।তোমাকে শিক্ষা দিতে।
-তাহলে যে শুনলাম আমার বরের নাম আদিবুর রহমান।
-হ্যাঁ,আমার ভালো নাম তো আদিবুর রহমানই।আদিতো আমার ডাক নাম।
-তাহলে আম্মু আব্বু?
-ওহ!উনারা রাজি হলেন কিভাবে?
-উনারা যখন তোমার জন্য অন্য একটা ছেলেকে ঠিক করছিলো,তখনি আমার জব টা হয়ে যায়।আর আমি তাদের গিয়ে বলি,অনেক বুঝাই যে এখন তো আমার জবও হয়ে গেছে।তাছাড়া আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি,এবার তো আমাদের বিয়ে টা দিন। অনেক অনুনয় মিনতির পর তারা রাজি হন।আর আমি তাদের বলেছি তুমি যেন এ বিষয়টা না জানো। ব্যস হয়ে গেলো আমাদের বিয়ে।
-তাই বলে তুমি আমাকে এতটা শাস্তি দিবে?যাও আমি যাবোনা তোমার সাথে।যাবোনা আমি তোমার বাসর ঘরে।
-আচ্ছা তাহলে আমিই আমার বাসর ঘরে যাই। তুমি এখানেই থাকো,আমি আমার দাদাকে পাঠাই।
-নায়ায়ায়ায়া,আমার ইয়াং বরই ভালো।বুড়ার দরকার নাই। তাড়াতাড়ি রুমে চলো,বুড়োটা আসার আগেই দরজা বন্ধ করে ঘুমাই।
গল্পের বিষয়:
গল্প