বোন

বোন
“ভাইয়া ভাইয়া দেখ তুর জন্য তুর ফেভারিট নুডলস করেছি….
-যাহ…!!সর তু সকাল সকাল তুর মুখ দেখলেই আমার দিন টাই খারাপ হবে
-ভাইয়া..!! এই দেখ আমি মুখ ঢেকে নিয়েছি,এবার খেয়ে দেখবি??
-তুই যা,আমি খাচ্ছি
তানি খুশি হয়ে চলে গেলো।।তানি ভাইকে প্রচুর ভালবাসে,,তানির বাবা দুইটা বিয়ে করে,,তানির ভাই হাসিব তার বাবার প্রথম বউয়ের ছেলে,তানি দ্বিতীয় বউয়ের মেয়ে,কিন্তু তানিকে জন্ম দিতে গিয়েই তানির মা মারা যায় সেই থেকেই তানিকে হাসিবের মা ই লালনপালন করে…সবাই তানিকে যতেষ্ট ভালবাসে,শুধু হাসিব ছাড়া,,হাসিবের ও একটা বোন আছে সে দেখতে যতেষ্ট সুন্দরী,কিন্তু তানি কালো,তাই ছোট থেকেই হাসিব তাকে পছন্দ করে না.
হাসিব তার নিজের ছোট বোনকে ভীষণ ভালবাসে,কিন্তু তার বোন তার ধারেকাছে ও থাকে না,,তার বোন ও অহংকার করে যেহেতু তানির চেয়ে সে সুন্দরী বেশি..হাসিব নিজের বোনের জন্য গিফট নিয়ে আসে,কিন্তু তানি এতে কিছু মনে করেনা,তার ভাইয়ের খুশি দেখলেই সব ভুলে যায় তানি মা-বাবা ভাই বোন সবাইকে খুব ভালবাসে,,সবার কি প্রয়োজন সব তানি ই দেখাশোনা করে তাইতো আজ ভাইয়ের ফেভারিট নুডলস বানিয়েছে,আজ যে ভাইয়ের কলেজের প্রথম দিন কিন্তু ভাই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলো এতে তানির একটু ও মন খারাপ হয়না,,তানির ধারণা কালোরা কখনো ভাইয়ের আদর পায়না…
হাসিব:তোদের বোনদের দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়,আর আমার আছে একটা কালো বোন,না সৎ বোন..!!দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়..
বন্ধু :সত্যি রে,আজকাল কালো মেয়ে দেখলেই ভাল লাগেনা,এদের বিয়ে দিতে ও অনেক কষ্ট করতে হয়….
হাসিব:আর কি,বাবা বুড়া হয়েছে,সব আমার ঘাড়ে ই চেপে দিবে আরকি,ভাল্লাগেনা..
বন্ধু:থাক দোস্ত এসব হাসিব সারাদিন কলেজ করেই মাথাটা ধরেছে ভীষণ…
তানি:ভাইয়া আসছিস?কেমন কাটলো প্রথম ক্লাস?আয় ভাত ভেড়ে দিচ্ছি..
হাসিব:সর তু,যাওয়ার সময় ঘ্যানঘ্যান আসার সময় ঘ্যানঘ্যান,,বলেছি না মুখ না দেখাতে তানি তাড়াতাড়ি উড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢাকে,,
তানি :ভাইয়া,,তুর মাথা টিপে দিবো,তুর কি মাথা ব্যাথা করছে..??নাহ মানে মুখ দেখাবো না,,এমনি ই টিপে দিবো..
হাসিব:দে টিপে হাসিবের প্রতিটা দরকারে তানি পাশেপাশে থাকে,,একদিন তানির ভীষণ জ্বর হয়..বাবা ডাঃ নিয়ে আসে..ঔষধ লিখে দেয়…
হাসিব:সব ই নাটক…নিজের মা কে তু খেয়েছে,,এখন আবার আমার বাবার টাকা উড়ানোর ধান্ধা….
বাবা:হাসিব..!!ও আমার মেয়ে…
তানি:বাবা।।ভাইয়া ঠিকি ই বলেছে আমার তেমন অসুখ হয়নি,আমাকে আর ঔষধ খাওয়াইও না…
বাবা:নাহ মা,তুর অনেক জ্বর..
তানি:নাহ বাবা,ভাল হয়ে যাবো আমি ঔষধ খাব না, “সকালের সূর্য উঠে চারদিকে আলোকিত করেছে,পাখিরা কিচিরমিচির ডাকছে…কিন্তু তানির রুম থেকে এখনো বের হয়নি তানিকে মা ডাকতে যায়..অসুখ কি আরো বেড়ে গেলো??
গিয়ে দেখে তানি ভাইয়ের ছবি বুকে নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে তানির মা আবার ফিরে আসে,কিন্তু এক ঘন্টা গেল,দু ঘন্টা গেল,এখনো কিসের ঘুম?? তানির বাবা গিয়ে তানির কপাল চেক করতে গেলেই,দেখে পুরা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে,,হ্যা তানি চিরদিনের মতো নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেছে হাসিবের বাবা তানির মৃত্যুতে হাসিবকে দায়ী করে,আর অনেক বকে,কিন্তু হাসিব মনে মনে খুশি,আর কেউ তাকে জালাবে না,অলুক্ষুনে মুখ দেখতে হবেনা,বিয়ে দেয়ার ঝামেলা থেকে ও বেচে গেলো তানি এখন কবরেই থাকে,,প্রিয় ভাইকে আর জালাতে আসেনা। ,কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর ই হাসিব তানির শূন্যতা অনূভব করে..অজান্তে তানিকে ডেকে ফেলে আজ ও হাসিবের প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা হচ্ছে,,তানি কে ডাক দিতেই মা এসে বলে-তানি তু আর নেই…তানিকে কেন ডাকিস??
হাসিব বলে-আমার বোন কে বলো মাথাটা টিপে দিতে?বোন এসে বলে-পারবে না অথচ এই বোন সুন্দরী যে,হাসিব কত অহংকার করতো,,আজ সে সুন্দর দিয়ে হাসিবের কি হবে??যেখানে ভালবাসা টুকুই নেই কাপড় ধুয়ার সময় তানিকে মনে করে চোখের জল চলে আসে,আজ কেন হাসিব কাঁদছে,,কেন সেদিন বোন টার যত্ন করলো না,,তার ছবি বুকে নিয়েই তু চলে গেলো,,আচ্ছা তানির কি খুব কষ্ট হয়েছিল?? হাসিব তানির কবরে গিয়ে বসে থাকে,,,
হাসিব:বোন রে,এক্টিবার ফিরে আয়,,তুর মুখ টা যে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে রে,,তুকে আর বকবো না..
হাসিব কাঁদতে কাঁদতে ওখানে ই মাটিতে চোখ লেগে আসে,,স্বপ্নে ও তানি ভাইকে প্রচুর ভালবাসে,,তাই তু ধরা দিয়েছে….
তানি:ভাইয়া,,কষ্ট পাস না?এইতো আমি!তুই যতদিন আমায় মনে রাখবি তুর মাঝে ততদিন আমি বেচে থাকবো,আমায় ভুলিস না ভাইয়া!!! হাসিব জেগে গিয়ে..
হাসিব:তানি!!ফিরে আয় ফিরে আয় “দাত থাকতেই দাতের মর্যাদা দিতে হয়,,প্রিয়মানুষ হারিয়ে যাওয়ার পর সে ভালবাসা বুঝে কি লাভ?যেখান থেকে চাইলে ফিরে আসা যায় না প্রিয়জন থাকতেই ভালবাসার দাম দেয়া উচিত….
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত