আজকে আমাকে দেখতে আসবে।শুনেছি পাত্র নাকি অনেক ভালো চাকরি করে,দেখতেও সুন্দর।এর চেয়ে বেশী কিছু জানা হয়ে উঠেনি বা বলা যায় জানার আগ্রহটা হারিয়ে ফেলেছি।কারণ,ইনি হচ্ছেন আমাকে দেখতে আসা ৫ নম্বর পাত্র।হয়তো উনিও দেখার পর কোন না কোন কারণ দেখিয়ে আমাকে রিজেক্ট করে দিবেন।কারণ,আমার গায়ের রং শ্যামলা।আজকাল এইসব এ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।
সকাল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।এর মধ্যেই পাত্রপক্ষ হাজির হলো। এই মুহূর্তে তাদের সামনে বসে আছি।আঁড়চোখে পাত্রকে একবার দেখে নিলাম।দেখলাম আসলেই পাত্র দেখতে অনেক সুন্দর।তাই ধরেই নিলাম এত সুন্দর মানুষ আমার মতো শ্যামলা মেয়েকে পছন্দ করবে না।তারা চলে গেল আর যাওয়ার সময় বলে গেল রাতে ফোন করে জানিয়ে দিবে তাদের মতামত।কিন্তু রাতে তারা কোন ফোন দিলো না।আমিও নিশ্চিত হয়ে গেলাম তাদের আমাকে পছন্দ হয়নি। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গলো এক অপরিচিত নাম্বারের কলে।কল ধরে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে বললো
-আমি শোয়েব।
-কে শোয়েব??
-কাল যে আপনাকে দেখতে এসেছিলাম আমি সেই পাত্র।
একথা শুনে শোয়া থেকে উঠে বসলাম।আর নিজেকে বকতে লাগলাম মনে মনে পাত্রের নামটাও জানি না।না জানি কি ভাববে উনি।আমি বসে বসে এসব ভাবছি ওপাশে যে কেউ লাইনে আছে ভুলেই গেলাম।
-হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন?
-জ্বি জ্বি বলুন শুনতে পাচ্ছি।
-আপনি আজ একটু দেখা করতে পারবেন?
-কেন?
-আপনার সাথে কিছু জরুরী কথা ছিল।দেখা করলে ভালো হতো।
-ঠিক আছে আপনি সময় আর লোকেশানটা টেক্সট করে দিন। উনি আচ্ছা বলে ফোনটা রেখে দিলো।কি লোকরে বাবা নিজের কথা শেষ ওমনি ঠাস করে ফোনটা রেখে দিলো!! খুব অপমানিত বোধ হচ্ছিলো।ঠিক করলাম সময়মতো যাবো না।
আধা ঘন্টা লেট করে সেখানে গেলাম।ফোনটাও অফ করে রাখলাম যাতে বারবার কল না দেয়।গিয়ে কোথাও উনাকে খুঁজে না পেয়ে কল দিলাম।ওমা উনি বলে যে আমি আসতে লেট করায় উনি অন্য কাজে চলে গিয়েছে।আমার ফোন বন্ধ থাকায় আমাকে জানাতে পারেনি।আমি যেন একটু অপেক্ষা করি।শুনে নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে।শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেই শাস্তি পেলাম।ঠিক আধা ঘন্টা পর উনি আসলেন।এসেই এমন ভাব যে উনি কিছুই করেননি।ওয়েটার ডেকে নিজেই অর্ডার করলো দুজনের জন্য।আমাকে একবার জিজ্ঞেসও করলো না কি খাবো।রাগে উঠে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।তখনই উনি বলা শুরু করলেন- ঠিক ২ বছর আগে গতকালকের দিনে আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম।প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো।বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।সেখানেই তাকে প্রথম দেখি।সেও বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলো।এরপর বাস আসলো চলে আসলাম।এভাবে প্রতিদিন তাকে দেখতাম।
ভালোই লাগতো।মাঝে মাঝে দেখতাম সেও আমার দিকে তাকায়।ব্যাস এতটুকুই।আর কোন কথা হয়নি।একদিন বাসে সিট না থাকায় দু’জনই দাড়িয়ে যাচ্ছিলাম।বাস হঠাৎ ব্রেক করাতে সে পড়ে যাচ্ছিলো।আমি তাকে ধরলাম।সে একটা কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে ধন্যবাদ বললো।আর আমিও একটা হাসি দিলাম।সেদিনই প্রথম তার স্পর্শ পাওয়া আর তার সাথে কথা বলা।এভাবে প্রতিদিনই আমরা একই বাসে আসা যাওয়া করতাম।চোখাচোখি হলে একটা হাসি এটুকুই ছিল আমাদের ভাব বিনিময়।এভাবেই দুই মাস কেটে যায়।একদিন বাসের জন্য অপেক্ষা করছি দু’জন।সাহস করে নিজে থেকেই তার সাথে কথা বলতে গেলাম।জানলাম তার নাম নিশা। এখানকারই এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ে সে।এর মধ্যে বাস চলে আসায় আর কিছু জানা হয়ে উঠেনি।এরপর ২ সপ্তাহ কেটে যায়।নিশাকে আর দেখতে পাইনি।২ সপ্তাহ ধরে তার জন্য অপেক্ষা রইলাম এই ভেবে যে সে আসবে।
তার বাসার ঠিকানাও জানি না যে খোঁজ নিবো।তার ভার্সিটিতে গিয়ে খোঁজ নিলাম।তারা বললো এই নামে তাদের কোন স্টুডেন্ট নেই।সে প্রতিদিন বাস থেকে যেখানে নামতো তার আশেপাশেও তার খোঁজ নিলাম।কিন্তু কেউ তাকে চিনতে পারলো না।আমি তাকে অনেক খুঁজেছি।১ বছর ধরে প্রতিদিন ঐ জায়গায় তার জন্য অপেক্ষা করেছি ঘন্টার পর ঘন্টা।কিন্তু আমি নিশাকে হারিয়ে ফেলেছি। তাকিয়ে দেখলাম শোয়েবের চোখ চিকচিক করছে পানিতে।তার ফোনটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো- এই যে নিশার ছবি।একদিন না বলেই তার ছবি তুলেছিলাম।ভেবেছিলাম তার বাসার ঠিকানা নিয়ে বাবা মা কে তার ছবি দেখাবো।তার বাসায় বিয়ের প্রপোজাল দিবো।কিন্তু তা আর হলো না। ছবিটা দেখেই ধাক্কা খেলাম।কারণ,২ বছর আগে একদিন ক্লাস করে বাসায় আসার পথে দেখলাম একটা মেয়েকে রেপ করে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে।মেয়েটা মারা গিয়েছে।আর সেই মেয়েটা ছিল শোয়েবের নিশা।
নিজেকে সামলে নিয়ে শোয়েবকে জিজ্ঞেস করলাম এগুলো আমাকে কেন বলছেন? আসলে গত ১ বছর ধরে বাবা মা আমাকে বিয়ে করানোর জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে।১ বছর যাবৎ নিশাকে না খুঁজলেও তাকে আমি ভুলতে পারিনি।মনে হতো তাকে খুঁজে পাবো একদিন।তাই বাবা মা যে মেয়েই দেখাতো আমি কোন না কোন দোষ ধরে মানা করে দিতাম।কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে করার আগে মা অসুস্থ হয়ে গেলো।কান্নাকাটি শুরু করলো বিয়ে করার জন্য।তাই কাল দেখতে যাই।যদিও আমার উদ্দেশ্য ছিলো কোন না কোন ভাবে মানা করে দিবো।কিন্তু হঠাৎ যখন আপনার দিকে তাকাই দেখলাম আপনার আর নিশার হাসিটা অবিকল একই রকম।বাসায় এসে বাবা-মা বললো তাদের আপনাকে বেশ পছন্দ হয়েছে।তাই, ভাবলাম আমার মতামত দেওয়ার আগে আপনাকে সব জানাই।মেয়েটা কেন তার মিথ্যা পরিচয় দিয়েছে বা কোথায় হারিয়ে গিয়েছে আজও জানতে পারলাম না।
সব শুনার পর আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।আপনি আপনার মতামত জানাতে পারেন। আমি রাজী আছি বলে সেখান থেকে বের হয়ে এলাম।কারণ,আমি জানি নিশা আর কোনদিন ফিরে আসবে না।কেন জানি শোয়েবকে তার নিশার রেপ আর মৃত্যুর খবরটা দিতে মন সায় দিলো না। “হয়তোবা প্রিয় মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর শুনার চেয়ে অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়।”
গল্পের বিষয়:
গল্প