অসময়ের বৃষ্টি

অসময়ের বৃষ্টি
-কোন ক্লাসে পড়ো?
-ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।
-বয়স কত?
-আঠারো হবে।
-আমার পড়াশোনা শেষ হয়ে জব খুজতে খুজতে তোমার বয়স হয়ে যাবে চব্বিশ।
-আমি আপনাকে পছন্দ করি।ভালবাসি।আমি অপেক্ষা করবো ততদিন।
-পারবে না।আমাদের চারপাশের পরিবেশ পারতে দেবে না।আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তোমার কোলে তখন দুই বছরের একটা বাচ্চা থাকবে।জমজ হলে দুইটাও থাকতেও পারে।
-আমি অপেক্ষা করবো।দু বছর প্রয়োজনে বিশ বছর।
অনুর কথায় সাহেদ হাসে,মুচকি হাসে।যে হাসির কোন অর্থ পাওয়া যায় না।যায় না পাওয়া অন্য কিছু।সাহেদ আর দাড়ায় না।এই গরমে হাটতে ইচ্ছে না হলেও মাঝে মাঝে হাটতে হয়।এটাই নিয়ম।মানুষ নানা কারনে হাটে।সুগার বেড়ে গেলে হাটে,মন খারাপে হাটে,পকেটে টাকা না থাকলেও হাটে।সাহেদের সুগার বাড়ার কোন প্রশ্নই আসে না।সে সব ধনীব্যাক্তিদের বেড়ে থাকে।যত আরাম আয়েস তত অসুস্থতা। এ যেন এক ধনবানদের ফিক্সড ডিপোজিট। এই যে সাহেদ সাহেব। মেস মালিকের ডাকে সাহেদ আর পা বাড়ায় না।সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়েও থেমে যায়।ভদ্রলোকের এত মিষ্টি করে ডাক দেওয়ার পেছনে নিশ্চিত কোন খারাপ কারন আছে।এর আগে উনি আমাকে এভাবে ডেকেছিলেন মাস ছয়েক আগে।দু মাসের মেস ভাড়া বাকি পড়ে ছিল।আমি মেস মালিক ইদ্রিস মিয়ার সামনে দাড়াতেই বললো,
-কেমন আছো বাবা?
-জ্বী চাচা ভাল।আপনার শরীর কেমন?
-আমার আর শরীর।এই সুস্থ এই অসুস্থ।এত চিন্তায় কি সুস্থ থাকা যায়, তুমিই বলো?
-বয়স হয়েছে,এখন এসব চিন্তা না করাই উচিত আপনার।
-সেটা মন্দ বলোনি।কিন্তু কিছু কিছু ভাড়াটিয়ার জন্যে তো আর চিন্তা ছাড়া যায় না।
একেক জনের দু তিন মাস করে ভাড়া বাকি। ইদ্রিস মিয়ার কথায় সাহেদ কি বলবে ভেবে পায় না।লোকটা যে তাকে উদ্দেশ্যে করেই বলছে এসব,সাহেদ সেটা ভালভাবেই বুঝতে পারে।মাসের আজ পাচ তারিখ।খালা টাকা পাঠায় ঠিক এক তারিখে।এবার না পাঠানোর কারন তো অবশ্যই একটা আছে।আর সেটা খুব একটা তুচ্ছ কারন ও মনে হচ্ছে না।সাহেদ ইদ্রিস মিয়ার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে,
-টেনশন করবেন না চাচা,মেসের ভাড়া সবাই দিয়ে দেবে।দ্রুত দিয়ে দেবে।কথাটি বলে সাহেদ আর দাড়ায় না।এ লোকটা একবার শুরু করলে আর থামবে না।চলতেই থাকবে। “এই যে,এইদিকে। ইদ্রিস মিয়ার ডাকে সাহেদের ধ্যান ভাঙে।একটু এগিয়ে এসে সালাম দেয়, আসসালামু আলাইকুম চাচা। ওয়ালাইকুম আসসালাম।তা বাবা শরীর স্বাস্থ্য ভাল?জ্বী চাচা।আপনি কেমন আছেন?
-জ্বী ভাল ভাল।তা সারাদিন কোই থাকো।পড়াশোনা কি বাদ দিয়ে দিলে নাকি?
-জ্বী না চাচা।তবে ভাবছি।
-কি ভাবছো?
-পড়াশোনা বাদ দিয়ে দেবো।
সাহেদের কথায় ইদ্রিস মিয়ার স্বাভাবিক মুখটা হুট করেই অস্বাভাবিক হয়ে যায়।বলে কি ছেলেটা,পড়াশোনা ছেড়ে দেবে!সাহেদের সাথে আর কথা বলতে ইচ্ছে করে না ইদ্রিস মিয়ার।সাহেদের দিকে একটা চিঠি বাড়িয়ে দিতে দিতে বলে, তোমার খালা এসেছিলেন।ঘরের সবকিছু নিয়ে গেছেন।সাথে মেসটাও ছেড়ে দিয়েছেন।যাওয়ার আগে এই চিঠিটা দিয়েছেন। সাহেদ চিঠিটা হাতে নিতে নিতে ইদ্রিস মিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-চাচা,আপনার মেস ভাড়া কি খালা পরিশোধ করে গেছেন? সাহেদের প্রশ্নের উত্তর ইদ্রিস মিয়ার দিতে ইচ্ছে করে না।কপাল কুচকে এদিক ওদিক তাকিয়ে কেয়ারটেকারকে ধমক দিয়ে বলে, ওদিকের ফুলগাছটার এ অবস্থা কেন?সারাদিন কি করো?পানিও দিতে পারো না ঠিকঠাক দেখছি। সাহেদ চিঠি হাতে রাস্তায় এসে দাড়ায়।এসময় রুমের দিকে যাওয়াটা বোকামি। দেখা যাবে লম্বা একটা তালা ঝুলে আছে।এই তপ্ত গরমে সাহেদের চিঠি পড়তে ইচ্ছে করে না।কিন্তু পরবর্তী গন্তব্যের জন্যে পড়তে হয়।
” প্রিয় সাহেদ। কেমন আছিস? ভাল নয়তো খারাপ।তোর মেসে গিয়েছিলাম তোকে ধরতে। পাইনি।তোকে না পেয়ে তোর জিনিসপত্র নিয়ে এসেছি।মেস ছেড়ে দিয়েছি।তোকে কতবার বলেছি এসব মেস টেস বাদ দে।আমার এখানে থাক।শুনিসনি।এর জন্যে তোর মেস ভাড়াও আমি ইচ্ছে করেই আটকে দিয়েছিলাম।তুই সেদিন কি বলেছিলি মনে আছে?মনে না থাকলে মনে করিয়ে দিচ্ছি।বলেছিলি খালা, এবারের মত ভাড়াটা দিয়ে দাও।সামনের মাসে মেস ছেড়ে তোমার সাথে থাকবো।আমি তোকে বিশ্বাস করে দিয়েছিলাম।এরপর কেটে গেছে প্রায় সাত মাস।তোর মাঝে কোন পরিবর্তন নেই।তাই আর তোকে কোন খোজ দেইনি।আমি নিজেই গিয়েছি।এখন অন্তত ভদ্রছেলের মত চলে আয়।
(তোর খালুও চায় তুই এখানে থেকে পড়াশোনা কর)
ইতি
তোর রেহানা খালা ফোনের যুগে কেও এভাবে সময় নষ্ট করে চিঠি লেখে সাহেদের জানা ছিল না।এসব কথা ফোনে বললেই পারতো।আমার এই মেসের দিকে অন্তত আসা লাগতো না।তপ্ত গরম থেকে বাচাতে সূর্য খানিকটা মেঘে ঢেকে গেছে।চারিদিকে আসছে অন্ধকার ঘনিয়ে। যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে।সাহেদ আর দাড়ায় না।এ বৃষ্টিতে মোটেই ভেজা যাবে না।মোটেই না। আফজাল সাহেব।নামটার মধ্যে বেশ ভাব, গাম্ভীর্য থাকলেও ছোট খালুর মধ্যে এরকম কোন কিছু আমি দেখতে পাইনি।নামের সাথে তার ব্যাবহারিক সনদপত্র পুরোটাই ভিন্ন।খালু চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন,
-উপর তলার ঘটনা কিছু শুনেছো? খালুর কথায় আমি হ্যা না কিছুই বললাম না।বিজ্ঞ লোকদের মত একটা ভারী নিশ্বাস ফেললাম।যে নিশ্বাসের অনেক মানে থাকে।যে কেও যে কোন কিছু ভাবতে পারে।খালু সাহেব ও সেরকম কিছুই ভেবে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-জানো তাহলে।তবে মেয়েটা কার সাথে পালিয়েছে সেটা কি জানো? খালুর কথায় আমি আবারও চুপ করে রইলাম।না জানা ব্যাপারগুলাতে চুপ থাকাটা বেটার।এতে করে না জানা সকল জিনিস সহজেই জানা যায়।খালুর কথায় এটুকু বুঝলাম,উপর তলায় থাকা মেয়েটা পালিয়েছে।হয়তো প্রেম ছিল,নয়তো হয়েছে।একই কথা।খালু আমার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললেন,
-প্রেম ছিল।ছেলে ভবগন্ডা।কিছু করে না।বেকার ছেলের সাথে কি কোন বুদ্ধিমান মেয়ে পালায়?তুমিই বলো,পালায়?
-মোটেই না।এটা অসম্ভব। মেয়েটার হয়তো পুষ্টি জনিত সমস্যা ছিল খালু।
-হতে পারে।পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব।যার জন্যে বুদ্ধিতে ঘাটতি।তোমাকে যে কারনে ডেকেছি।জানোই তো মায়া আমার একমাত্র মেয়ে।তোমার একমাত্র খালাতো বোন।তাই তো?
-জ্বী খালু।
আফজাল সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।হয়তো ভাবছেন কথাটা আমাকে বলা যাবে কি যাবে না।নয়তো অন্যকিছু তার ভাবনায়।খালু আমার দিকে আরও একটু ঝুকে এসে বললেন,
-তোমার কি মনে হয় মায়ার ওরকম কোন প্রেম টেম আছে?থাক এখন কিছু বলতে হবে না।তুমি এসেছো। থাকো।তারপর মায়ার সাথে কথা বলে জেনে আমাকে জানাও।সমস্যা নেই।আমার বিশ্বাস ও তোমাকে সবকিছু বলবে। খালুর বিশ্বাসে আমি উঠে দাড়াই।কোমর ধরে গেছে।এতক্ষন বসে থাকবে যার কাজ নেই।কিন্তু আমার কাজ আছে।মায়ার সাথে কি এখনই কথা বলবো।ওর রুমের দিকে যাওয়া যাক। মেয়েটার সাথে এখনও কথা হয়নি। খাবার টেবিলে আজ নানা পদের তরকারি।অনেকটা বাড়িতে মেহমান আসলে যেমন টা করা হয়।দুপুরের খাবার খেয়ে ঠিক সন্ধের আগে বিদেয় হওয়া।কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটা মনে হয় হচ্ছে না।খালা ইলিশ মাছের পেটিটা আমার প্লেটে দিতে দিতে বললেন,
-পড়াশোনার কি অবস্থা,কিছু ভেবেছিস?
ইলিশ মাছে কাটার ভয় থাকলেও এটা সাহেদের বেশ পছন্দের।এসময় কেও কথা বললে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।কিন্তু আজ হচ্ছে না।সাহেদ খালার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,
-ভাবছি পড়াশোনাটা ছেলে দেবো।
-কি বললি? খালার এরকম চমকে যাওয়া মুখ দেখে সাহেদের হাসি পায়।তবে সেটা প্রকাশ করা বোকামী।
-পড়াশোনা ছেড়ে কি করবি?
-সেটা এখনও ভাবিনি।
-তা ভাববি কেন?সেটা তো ভাবতে হবে না।
তোর মায়ের ইচ্ছে ছিল ছেলেকে মাস্টার্স পাস করাবে।এর জন্যে তোর মায়ের ইচ্ছে পূরনের জন্যে আমি এখনও তোর পেছনে লেগে আছি।আজ তোর মা বেচে থাকলে এই কথা শুনে নিশ্চিত হার্ট এটাক করে মারা যেতেন। খালার কথায় আমি কিছু বললাম না।বেশ রেগে গেছে।ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে।আজ আম্মা বেচে থাকলে হয়তো মাস্টার্সে ওনার মন ভরতো না।উনি নতুন কিছুর ইচ্ছে পোষণ করতেন।ছেলে বিসিএস পরীক্ষা দেবে।ক্যাডার হবে।তবে আজ আম্মা না থাকায় এই ক্যাডার হওয়ার শখ আমার মেটাতে হচ্ছে না।এটা খারাপ না।ভাল।মাছে ঝালটা আজ বেশিই হয়েছে।চোখ ভিজে উঠেছে।আর খাওয়া উচিত হবে না।কোন ভাবেই না। শীতের বিকেলে রিক্সায় চেপে বসলে যেন বাতাসে শীত আরও বেশি লাগে।ঠান্ডা বাতাস,রিক্সাওয়ালার সাথে পেছনে বসা লোকদেরও কাপুনি।আজ শীত নেই।বেশ গরম।এই গরমেও কেমন যেন সাহেদের আজ শীত শীত লাগছে।এর মাঝেও মায়া সাহেদের দিকে আরও একটু চেপে বসে।বলতে গেলে গরমেও আজ শীতের প্রকোপ।সাহেদ মায়ার দিকে তাকায় না।আস্তে করে বলে,
-মেয়েটা কখন পালিয়েছে?
-কোন মেয়ে?
-উপর তলার।যাকে তুই পালাতে সাহায্য করেছিস।
সাহেদের কথায় মায়া কিছু বলে না।চুপ করে থাকে।সাহেদ ভাইকে মিথ্যে বলে লাভ নেই।সে মাঝে মাঝে সবকিছুই বুঝতে পারে।এই যেমন এখন বুঝলো।মায়া চুপ থেকে বলে,
-ভোর বেলা।ফজরের নামাজের পর।
-গেইটে কেও ছিল না?
-দারওয়ান চাচা নামাজে বসেছিল।
মায়ার কথায় সাহেদ আর কিছু বলে না।চুপ করে থাকে।বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হয়ে যায়।তাদের জার্নি বাই রিক্সা শেষ হয় না।সাহেদ হেলে যাওয়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে মায়াকে ডাকে,
-মায়া।
-হু।
-তোর কি ওরকম কেও আছে?
-কোন রকম?
-পালিয়ে যাওয়ার মত। মায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে আস্তে করে বলে,
-সাহেদ ভাই,তোমাকে আমার অনেক ভাল লাগে।বেশ কাছের মনে হয়।খুব কাছের।
-ভাইকে ভাললাগা ঠিক আছে।ভাইদের সবাই পছন্দ করে।তবে বাইরের কোন ছেলেকে যেন ভাল না লাগে।এতে করে তোর ও বিপদ,অন্যদেরও।
সাহেদের কথায় মায়া আর কিছু বলে না।ওর গলা ধরে আসে।চোখ ভিজে ওঠে।হুট করে কি হলো মায়া বুঝতে পারে না।সাহেদ ভাই কি ওকে একটুও বোঝে না।কিছুই বুঝতে পারে না।ভাবতেই মায়ার দম বন্ধ হয়ে আসে।নিশ্বাস ভারী হয়।আকাশ বাতাস কাপিয়ে কাদতে ইচ্ছে করে।ইচ্ছে করে সাহেদ ভাইয়ের হাত ধরে দূরের ওই ঢলে পড়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে।যার তাপ ক্রমশ কমতে থাকে।কমতে থাকে সবকিছু।সবকিছু। ঘড়িতে সময় দশটা বেজে ত্রিশ মিনিট।এসময় সূর্যের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার কথা থাকলেও সেটা আজ হচ্ছেনা।আজ আকাশ ভরা মেঘ।ঘন কালো মেঘ।মাঝে মাঝে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।একবার থামে আবার শুরু হয়।সাহেদ এই থামা শুরুই মাঝেই বের হয়।হাতের ছাতাটা মাথায় ধরে।দু এক ফোটা এই বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে হলেও সাহেদ ভেজে না।এসময় ভেজা উচিত ও না।
চেয়ার টেনে বসতে বসতে সাহেদ আশেপাশে আরও একবার তাকায়।জায়গাটা বেশ গোছানো।নিরিবিলিও বটে।তবে এসব জায়গা অতটাও নিরিবিলি থাকে না।লোকজনের আসা যাওয়ার মাঝে চাপা শব্দও শোনা যায়।সাহেদ ঘড়ির দিকে আবারও তাকায়।দশটা বেজে চল্লিশ মিনিট।ইন্টারভিউ শুরু হতে আরও বিশ মিনিট। ‘সাহেদ ভাই। ঘড়ি ছেড়ে সাহেদ শব্দের দিকে তাকায়।শব্দের দিকে আবার তাকানো যায় নাকি!হয়তো যায়।যেদিক থেকে শব্দ আসে,সেই দিকে।আশেপাশে নয়,সামনের দিকে।নাক বরাবর দাড়িয়ে কেও একজন ডাকে,সাহেদ ভাই।সাহেদ তাকায়,চোখ বন্ধ করে আবারও তাকায়।সাহেদের তাকানোয় মেয়েটা মুচকি হাসে।যে হাসি বলে দিচ্ছে, আপনি আমাকে চেনেননি সাহেদ ভাই।সাহেদ উঠে দাড়ায়। মেয়েটা নরম গলায় বলে,
-আমি অনু,চিনেছেন?
সাহেদ অনুর কথায় কিছু বলে না।ওকে না চেনার কোন প্রশ্নই ওঠে না।এতদিন পর অনুকে এভাবে দেখবে সাহেদ ভাবতেও পারেনি।সাহেদ সামলে নেয় নিজেকে।আস্তে করে বলে,
-কেমন আছো অনু?
-জ্বী ভাল।আপনি?
-আলহামদুলিল্লাহ। অনু একটু চুপ থেকে বলে,
-এখানে, কোন ইন্টারভিউ আছে? সাহেদ মাথা নাড়ায়।অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,
-তুমি এখানে? অনু হাসে।মুচকি হেসে বলে,
-আপনি চাইলে আমি ভেতরে বলে দিতে পারি।চাকরীটা হয়ে যাবে।
-তোমার অফিস?
-নাহ আমার বরের।
অনুর কথায় সাহেদ কিছু বলতে পারে না।কথা আটকে আসে।সাহেদ তাকায় অনুর কোলে হাস্যজ্বল মুখে খেলতে থাকা বাচ্চাটার দিকে।ছেলে না মেয়ে সাহেদ বুঝতে পারে না।সাহেদের এই না বোঝাটা যেন অনু হুট করেই বুঝে ফেলে।সাহেদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,
-আমার মেয়ে।ইচ্ছে ছিল জমজ হোক,কিন্তু হয়নি।আপনার কথাটাও সত্তি হয়নি।তবে একে আংশিক সত্যি বলা যায়।
অনুর কথায় সাহেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে।কিছু বলতে পারে না।কিছু বলতে চায় না।সাহেদ আর দাড়ায় না।ইন্টারভিউ রুমে আর ঢুকতে ইচ্ছে করে না। আসি’ বলেই সাহেদ হাটা দেয়। অনু তাকিয়ে থাকে,সাহেদের চলে যাওয়ার দিকে।অনুর ইচ্ছে করে সাহেদ ভাইকে আরও একবার ডাক দিতে।পারে না।আটকে যায়।আটকে যাওয়ার মাঝেও অনু ডেকে ওঠে, সাহেদ ভাই। সাহেদ দাড়ায়। কাপা গলায় বলে,
-জ্বী।
-আমি আপনাকে এখনও ভালবাসি।
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির বেগ এখন বেড়ে গেছে।হাতের ছাতাটা সাহেদ আর মাথায় ধরেনি।এই বৃষ্টিতে আজ ভিজতে ইচ্ছে করছে।যে যার মত ছুটছে এদিক থেকে ওদিক।নিজেকে বাচানোর জন্যে,এই অসময়ের বৃষ্টি থেকে।সাহেদের বাচানোর কিছু নেই।ছোট বেলা থেকে তার হারানোর অভ্যাস।যা এখনও চলছে।হয়তো চলবে।এত কিছুর মাঝেও কেও এই বৃষ্টিতে চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি আলাদা করতে পারবে না।এইটা ভেবেই সাহেদের হাসি পাচ্ছে।যে হাসি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পিচঢালা রাস্তায়।পিচঢালা রাস্তায়।বৃষ্টির শব্দেও সাহেদের কানে অনুর শেষ কথাটা এখনও বাজছে, সাহেদ ভাই আমি আপনাকে এখনও ভালবাসি।এখনও ভালবাসি।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত